মাইকেল মধুসূদন দত্ত ও বিদেশী সাহিত্য।।
নমস্কার বন্ধুরা,
আশা করি সবাই ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন।আজ আমি মাইকেল মধুসূদন দত্ত ও বিদেশী সাহিত্য সম্পর্কে আলোচনা করবো।
মাইকেল মধুসূদন দত্ত (১৮২৪-১৮৭৩) বাংলা সাহিত্যের একজন অগ্রগণ্য কবি এবং নাট্যকার যিনি বাংলা সাহিত্যে আধুনিকতার প্রবর্তন করেন।তাঁর সাহিত্যিক যাত্রায় বিদেশী সাহিত্য, বিশেষ করে পাশ্চাত্য সাহিত্য, একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রেখেছিল।মধুসূদনের সাহিত্যিক চিন্তা-চেতনা এবং শৈলীতে বিদেশী সাহিত্য গভীরভাবে প্রতিফলিত হয়েছে যা তাঁকে বাংলা সাহিত্যে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দেয়।
১.ইংরেজি সাহিত্যের প্রভাব
মধুসূদন দত্ত মূলত ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত ছিলেন এবং তাঁর সাহিত্যিক চেতনার বিকাশে ইংরেজি সাহিত্যের গভীর প্রভাব ছিল।তিনি প্রথম জীবনে ইংরেজিতে কবিতা লিখতে শুরু করেন এবং ইংরেজি সাহিত্যের বিভিন্ন ধারাকে আত্মস্থ করেন।তাঁর ইংরেজি কবিতাগুলিতে জন মিল্টনের মতো কবির ছায়া পাওয়া যায়।ইংরেজি কাব্যরীতি এবং ছন্দের উপর তাঁর দখল এতটাই গভীর ছিল যে তিনি বাংলা কবিতায়ও ইংরেজি সাহিত্যের চেতনা ও ধাঁচকে নিয়ে আসেন।
২. গ্রিক ও রোমান সাহিত্য
মধুসূদন দত্ত গ্রিক ও রোমান সাহিত্যের প্রতি গভীর আকৃষ্ট ছিলেন।বিশেষ করে হোমার, ভিরগিল এবং অন্যান্য প্রাচীন রোমান ও গ্রিক কবিদের থেকে তিনি অনুপ্রাণিত হন। মহাকাব্য রচনার ক্ষেত্রে এই প্রাচীন সাহিত্যের শৈলী তাঁকে প্রভাবিত করেছিল।তাঁর রচিত ‘মেঘনাদবধ কাব্য’ অনেকাংশে রোমান মহাকাব্যিক ধাঁচে লেখা যেখানে তিনি ভিরগিলের ‘Aeneid’-এর মতো ছন্দ ও আঙ্গিক ব্যবহার করেছেন।মহাকাব্যিক চরিত্র ও যুদ্ধের বর্ণনায় এই প্রাচীন সাহিত্যের ধারা লক্ষ্য করা যায়।
৩. ইতালিয় সাহিত্য
মধুসূদন দত্ত ইতালীয় কবি দান্তে আলিগিয়েরি এবং তাঁর বিখ্যাত রচনা ‘ডিভাইন কমেডি’ থেকেও অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন।দান্তের লেখায় দেখা যায় নৈতিকতার গভীর অনুসন্ধান এবং মানব আত্মার যাত্রার ছবি যা মধুসূদনের নিজের লেখায়ও কিছুটা প্রকাশ পেয়েছে।তিনি তাঁর কবিতায় ইটালিয় শৈলীর মহাকাব্যিক উপাদান অন্তর্ভুক্ত করেছেন।
৪. ফরাসি সাহিত্য ও নাটক
মধুসূদন তাঁর জীবনের একটি সময় প্যারিসে কাটিয়েছিলেন এবং ফরাসি সাহিত্য ও নাটকের গভীর প্রভাব তিনি অনুভব করেছিলেন।বিশেষ করে ফরাসি ক্লাসিক নাট্যরচনার শৈলী যেমন রাসিন এবং কর্নেই-এর কাজ, মধুসূদনের নাটক রচনায় প্রতিফলিত হয়েছে। তাঁর নাটক ‘শর্মিষ্ঠা’ এবং ‘পদ্মাবতী’-তে ক্লাসিক্যাল ফরাসি নাট্যশৈলীর ছাপ পাওয়া যায় যেখানে ট্র্যাজেডির পরিণতি এবং চরিত্রের মানসিক জটিলতা গুরুত্ব পেয়েছে।
৫. শেক্সপিয়ারীয় প্রভাব
মধুসূদনের নাট্যকার জীবনে শেক্সপিয়ারের নাটকও গভীর প্রভাব ফেলেছিল।শেক্সপিয়ারের নাটকের মতো মধুসূদনের রচনায়ও মানবচরিত্রের গভীর অনুসন্ধান এবং ট্র্যাজেডির চিত্রায়ণ দেখা যায়।মধুসূদন শেক্সপিয়ারের ট্র্যাজিক চরিত্রের মতো নিজের চরিত্রগুলোকেও জটিল ও বহুমাত্রিকভাবে উপস্থাপন করেছেন। যেমন, তাঁর নাটক ‘কৃষ্ণকুমারী’-তে শেক্সপিয়ারের ট্র্যাজিক নায়িকাদের প্রভাব স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।
৬. ক্লাসিক ও আধুনিকের সমন্বয়
মধুসূদন কেবল প্রাচীন মহাকাব্যিক এবং শেক্সপিয়ারীয় প্রভাব গ্রহণ করেননি তিনি তাঁর রচনায় আধুনিক পাশ্চাত্য সাহিত্যের ভাবনা এবং ধ্যান-ধারণাও অন্তর্ভুক্ত করেছেন।তিনি পাশ্চাত্য কাব্যশৈলী ও ভাবনার সাথে বাঙালি চেতনাকে মিশিয়ে একটি নতুন ধারা তৈরি করেন যা বাংলা সাহিত্যে বিপ্লব ঘটায়।
৭. বাংলা সাহিত্যে বিদেশী ধারার প্রয়োগ
মধুসূদন দত্ত বাংলা সাহিত্যে প্রথমবারের মতো অমিত্রাক্ষর ছন্দের ব্যবহার করেন যা ইংরেজি সাহিত্য থেকে ধার করা।তাঁর ‘মেঘনাদবধ কাব্য’ বাংলা সাহিত্যে একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হয় যেখানে তিনি পাশ্চাত্য কাব্যশৈলী এবং বাংলা ভাষার নিজস্বতাকে মিশিয়ে নতুন এক কাব্যধারা প্রবর্তন করেন।তাঁর এই ধাঁচটি বাংলা সাহিত্যে আধুনিকতার সূচনা করে।
মাইকেল মধুসূদন দত্ত ছিলেন একাধারে একজন আন্তর্জাতিক মানের সাহিত্যিক এবং বাংলার সংস্কৃতির প্রতিনিধি।বিদেশী সাহিত্য থেকে তিনি যে গভীর অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন তা তাঁর সৃষ্টিশীলতাকে সমৃদ্ধ করেছে এবং বাংলা সাহিত্যে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
VOTE @bangla.witness as witness
OR
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
এ বছর মধুসূদন দত্তের ২০০ বছর জন্মপুর্তি। তাই মধুসূদন দত্ত কে নিয়ে নানান ধরনের আলোচনা দেখে দেখে হয়ে যাচ্ছে। আপনার লেখাটি পরিবেশ ভালো লাগলো এবং খুব স্পষ্ট করে দেখিয়েছেন মধুসূদন দত্তের ভেতর ইংরেজি সাহিত্যের ঠিক কোন কোন জায়গায় গুলো ছিল। মধুসূদন দত্তের বাবা-ই এই বিদেশি সাহিত্য বা বিদেশি ভাষার প্রতি আগ্রহটা তার মধ্যে বুনে দিয়েছিলেন। যার ফলেই তৎকালীন সংস্কৃতময় বাংলা সমাজের থেকেও তিনি বিদেশি সাহিত্যের প্রতি অনেক বেশি অনুরাগী হয়েছিলেন। বেশ তথ্যবহুল লেখায় সমৃদ্ধ হল এই লেখাটি।
অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক তিনি। পাশাপাশি মেঘনাদবধ কাব্য সনেটের মতো বিখ্যাত তার কিছু কাজ রয়েছে। তবে তর উপর বিভিন্ন সাহিত্যর প্রভাব যে এমন ভাবে রয়েছে এটা জানা ছিল না। এটা দেখে বেশ ভালো লাগল। নতুন কিছু জানতে পারলাম। ধন্যবাদ আমাদের সাথে পোস্ট টা শেয়ার করে নেওয়ার জন্য আপনাকে।।
মাইকেল মধুসূদন দত্তকে পেয়ে আমরা সত্যিই গর্ববোধ করি। বিদেশী সাহিত্যে উনার যেমন প্রভাব রয়েছে, তেমনি বাংলা সাহিত্যেও উনার প্রভাব রয়েছে। উনার কবিতাগুলো পড়তে আমার খুব ভালো লাগে। দারুণ লিখেছেন বৌদি। বেশ ভালো লাগলো পোস্টটি পড়ে। যাইহোক এতো চমৎকার একটি পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ বৌদি।
মাইকেল মধুসূদন দত্ত সত্যি অনেক গুণী মানুষ ছিলেন। সব বিষয়েই তিনি পারদর্শী ছিলেন। সব ভাষায় উনার পারদর্শিতা দেখে সত্যিই মুগ্ধ হয়েছি। গুণী মানুষরা সবকিছুতেই বেশ এগিয়ে থাকে। আর সাহিত্যকর্মগুলো সত্যিই অসাধারণ ছিল। দিদি আপনার এই পোস্ট পড়ে অনেক ভালো লাগলো। অনেক কিছু জানতে পারলাম।