ব্যর্থ হয়ে বাড়ি ফেরার গল্প 🌀( অরজিনাল স্টোরি )

in আমার বাংলা ব্লগ28 days ago

আসসালামু আলাইকুম। আমার বাংলা ব্লগ এর সকল বন্ধুদের শুভেচ্ছা। আশা করছি সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর অশেষ রহমতে আপনারা সকলে বেশ ভাল আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আপনাদের অনেক অনেক দোয়া এবং আল্লাহর অশেষ রহমতে আমিও বেশ ভাল আছি। আমরা যেন সদা সর্বদা সুস্থ সুন্দর এবং ভালো থাকতে পারি সেই কারণে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি।

গতকাল আমার একটি অসভ্য ভ্রমণ ছিল এবং ব্যর্থ হয়ে ঢাকা থেকে বাড়ি ফেরার দিন ছিল। পুরো দিনের কার্যক্রম বেশ কঠোর এবং অশুভ একটি যাত্রা ছিল। চলুন আমরা মূল গল্পে ফিরে আসি এবং উপভোগ করার জন্য আপনারা সকলে আমন্ত্রিত।

20240630_122711.jpg

অসুস্থতার কারণে আমি প্রায় ৮ মাস যাবত চাকুরী থেকে অবসর নিয়েছি। গার্মেন্টসে একই রুলস মেনে চাকরি করতে গিয়ে আমাকে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছিল এবং আমি প্রায় 18 ঘন্টা প্রতিদিন দাঁড়িয়ে থাকতাম।। এর ফলে আমার শরীরে সমস্যা দেখা দিয়েছে এবং আমাকে ডাক্তার এখন পূর্ণ বিশ্রাম নিতে বলেছে।

তবে পরিবারকে আমি আমার সমস্যার কথা কোনভাবেই জানাতে পারিনি। সে কারণে শুধুমাত্র বেকার বসে থাকার কারণে গত ঈদে বাবা আমাকে এবং আমার মাকে রাগ করে বাসায় রেখে ঢাকায় চলে গিয়েছে। তবে ঢাকায় যখন আমরা বসবাস করতাম এবং ঈদের আগে বিষয়টি বাবা আমাকে অবগত করেনি এবং আমার বেশ কিছু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আমি সেখানে রেখে এসেছিলাম।

গতকাল সকাল ১০ঃ০০ টা বাজে। মন থেকে ওঠার পরেই হঠাৎ করে মনে হল আমি ঢাকায় গিয়ে আমার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রগুলো বাসায় নিয়ে আসব। আমি যথারীতি রওনা দিয়েছিলাম আমি রাস্তার ভেতরে আমার যাত্রা শুরু করি।

20240630_122713.jpg

আমি প্রায় দুপুরে বনপাড়া এবং এরপর আমি প্রায় দুপুরের মাঝামাঝি সময়ে সিরাজগঞ্জ ও যমুনা সেতু অতিক্রম করি। তবে সেতুর উপরে প্রচন্ড ঝড় বৃষ্টি শুরু হয়েছিল এবং আমার সেখানে পৌঁছাতে প্রায় সন্ধ্যা লেগে গিয়েছিল।

তাছাড়াও অসুস্থ থাকার কারণে আমাকে ডাক্তারের কাছে যেতে হয়েছিল এবং আমি প্রায় সন্ধ্যা সাতটায় ডাক্তার দেখানো হলে ওষুধ পত্র নিয়ে আমি আমার গাজীপুরের বাসায় ফিরে গিয়েছিলাম। বাসায় গিয়ে রুমের ভেতরে কেউ ছিলনা এবং পুরো বাড়িতে কোন মানুষ ছিল না। আমি রুমের দরজা খুলে প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো একটি ব্যাগে নিয়ে পুনরায় বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলাম।

তবে যদিও আমার বাবা এখনো গাজীপুর আছে তবে বাবার প্রতি মনের ভেতরে রাগ থাকার কারণে আমি বাবাকে কোন ফোন করিনি। তবে নিজেকে যেন অনেক বড় অপরাধী মনে হচ্ছিল। কারণ সেই রাজশাহী থেকে গাজীপুর গিয়েছে কিন্তু বাবার সাথে দেখা করিনি। মনের ভেতরটা কান্নায় ভেঙে পড়ছিল। তবে তারপরেও বাবার প্রতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অভিমানগুলো আমার মনে বাসা বেধেছিল এবং অবশেষে সমস্ত বাধা ভেঙে গেল এবং আমি বাবাকে ফোন করেছিলাম।

প্রথমে বলার সাহস না পেলেও পরবর্তীতে বলে ফেলেছি যে আমি গাজীপুর থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছি। বাবা আমার এই কথা শুনে অনেক কষ্ট পেয়েছিল এবং আমার সাথে কথা না বলে ফোন কেটে দিয়েছিল। আমি বারবার বাবাকে ফোন করেছিলাম এবং বাবা বারবার ফোন কেটে দিয়েছিল এবং আমার প্রতি অনেক রাগ এবং অভিমান দেখিয়েছিল।

কারণ আমি এত দূর থেকে শহরে গিয়েছি কিন্তু বাবার সাথে দেখা করিনি। বাবা আমার প্রতি এক বছর অনুরাগের বাণী ছুড়ে মেরেছিল কিন্তু আমি শুধুমাত্র তখন কান্না করছিলাম এবং আমি কি করবো বুঝতে পারছিলাম না।

অবশেষে রাত বারোটায় আমার ফুফু আমাকে আবারও ফোন করলো। আমি ফুপুর সিদ্ধান্তে আবারো ওই রাত্রে গাড়ি বিপরীত দিকে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলাম।আমি গাড়ি থেকে নেমে বিপরীত দিকে আবারো একটি গাড়ি ভাড়া করলাম এবং আমি প্রায় মধ্যরাতে বাবার সাথে দেখা করার জন্য পুনরায় ফিরে গিয়েছিলাম।

যখন বাবার সাথে দেখা হলে তখন বাবা আমাকে মুখের দিকে তাকিয়ে ছিল। যদিও আমার প্রতি বাবার অনেক রাগ এবং অভিমান ছিল তবে বাবা আমাকে কিছু বলেন। অবশেষে আমি এত কষ্ট করে বাবার সাথে দেখা করতে গিয়েছি এজন্য বাবা অনেক আনন্দিত ছিল এবং আমি রাতে আমার ফুফুর বাসায় খাওয়া দাওয়া করলাম।

20240701_144155.jpg

রাত্রে গোসল করে খাওয়া দাওয়া শেষ করলাম এবং আমি আমার ফুফাতো ভাইয়ের রুমে ঘুমিয়ে গেলাম। রাত্রে বাবা এসে গল্প করেছিল এবং যাইহোক এরপর আমি একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিলাম।

এরপর সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে আমি সকালে নাস্তা করলাম। তখন ইতিপূর্বেই সকাল ১০ টা বেজে গিয়েছিল। বাবা অফিসে চলে গেল এবং আমি ঘুম থেকে উঠে সকালে নাস্তা করে বাবাকে ফোন করলাম এবং আমি বাড়ি ফিরে আসবো বিষয়টি অবগত করলাম। তবে বাবা তারপরেও আমাকে আরো দুইদিন থাকার কথা বলেছিল। তবে থাকার জন্য আমার যথেষ্ট প্রস্তুতি ছিল না তাই আমি বাড়ি চলে আসবে বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলাম।

বাসা থেকে বাবার অফিস খুব কাছে ছিল। তাই আমি বাবাকে ফোন করলাম এবং বাবা আমার সাথে দেখা করলো এবং আমি বাবাকে এবং আমার ফুফুকে বিদায় দিয়ে আমি বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলাম।

আসলে, এই পৃথিবীতে আমাদেরকে সকলের মন জয় করে বেঁচে থাকতে হবে। কখনোই কারো মনে আঘাত দিয়ে কিংবা কারো মনে কষ্ট দিয়ে আমরা কখনো ই সফলতা কিংবা শান্তি পাবো না। তবে উপরের বিষয়টির জন্য আমি পুরোপুরি ভাবে নিজেকে লজ্জিত এবং আমি একটি বড় ভুল করেছি বিষয়টি আমি বুঝতে পেরেছি। কারণ রক্তের সম্পর্ক কখনোই ছিন্ন করা সম্ভব না। যাইহোক আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনাদেরকে অবগত করতে চাই, কখনোই পিতা মাতার অবাধ্য হয়ে কোন কিছু করার চেষ্টা করবেন না। যাইহোক অবশেষে আমি আমার নিজের ভুল বুঝতে পেরেছি এবং ভুল সংশোধন করতে পেরে নিজেকে অনেক বেশি গর্বিত এবং আনন্দিত মনে হচ্ছে। আমি একটি বিষয় পরে উপলব্ধি করতে পারলাম, আসলে পরিবার ছাড়া কখনোই নিজের মনে প্রশান্তি আনা সম্ভব না।।

কেমন ছিল আমার ব্যর্থ হয়ে বাড়ি ফেরার গল্প। আমি আশাবাদী এটা কোন ব্যর্থ হয়ে বাড়ি ফেরার গল্প না। এটা ছিল আমার সফল হয়ে বাড়ি ফেরার গল্প। কারণ ভুল করার পরেও যখন বাবার মন জয় করতে পেরেছি তখন আমি পুরোপুরি সফল এবং পৃথিবীর ভেতরে একমাত্র সফল ব্যক্তি।

চমৎকার এই টপিক নিয়ে #lifestyle ব্লগ উপভোগ করার জন্য আপনাকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ.। পরবর্তী ব্লগ এর জন্য অপেক্ষা করুন। ধন্যবাদ আমার লাইফ স্টাইল ব্লগ উপভোগ করার জন্য।




VOTE @bangla.witness as witness



witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png


Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power


|250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |



ezgif.com-video-to-gif (6).gif

আমি


আমি মোহাম্মদ আকাশ সরদার। জাতীয়তা বাংলাদেশী। আমি ব্লগিং করতে অনেক বেশি ভালোবাসি। যদিও আর্ট আমার অনেক বেশি পছন্দ তবে আর্টওয়ার্ক কাজের জন্য আমার হাত একদম বাজে। ভ্রমণ এবং ফটোগ্রাফি আমার সব থেকে প্রিয় বিষয়। নতুন নতুন জায়গা ভ্রমণ এবং নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচিত হতে বেশ ভালো লাগে। অসহায় মানুষদেরকে সাহায্য করতে পারলে মনের ভেতরে আনন্দ আসে। সততা এবং নিষ্ঠার সঙ্গে মানুষের সেবা করতে চাই এবং সকলের প্রিয় ব্যক্তি হয়ে এই সমাজে বসবাস করতে চাই।

উষ্ণ শুভেচ্ছা


20221105_225033.jpg

@steem-for-future

Sort:  

Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.

 28 days ago 

আর যাই হোক গাজীপুরে থাকা আপনার বাবার সাথে কথা বলা দরকার ছিল। আর যাই হোক না কেন, বাবা সব সময় সন্তানদের ভালোই চায়, যাই হোক আপনার গল্পটি পড়ে অনেকটাই ভালো লাগলো ভাই।

 28 days ago 

আসলে আপু আমিও বেশ অনুরাগে ছিলাম। বাবার প্রতি যদিও অনেক ভালোবাসা রয়েছে তবে বাড়িতে রেখে যাওয়ার জন্য বাবার প্রতি অনেক রাগ হচ্ছিল
যাইহোক অবশেষে সমস্ত সমস্যার সমাধান হয়েছে এজন্য সৃষ্টিকর্তার প্রতি ধন্যবাদ।

 28 days ago 

শুনে অনেক ভালো লাগলো।

Coin Marketplace

STEEM 0.21
TRX 0.14
JST 0.030
BTC 69662.55
ETH 3388.96
USDT 1.00
SBD 2.77