অত:পর কবি মঞ্চে উঠিলেন||বুক রিভিউ
কেউ যদি আমাকে জিজ্ঞেস করি তোমার কোন উপহার টা সব থেকে বেশি পছন্দ,আমি নির্দ্বিধায় উত্তর দিব বই অথবা বই কেনার জন্য টাকা।বই আমার নিত্যদিনের সঙ্গী। বই পেলে আর অন্য কিছুর দরকার নেই। যদিও এখন পরিস্থিতির চাপে বই পড়া অনেক কমে গেছে। আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করব আমার পড়া বাংলাদেশের অন্যতম একটি বেস্ট থ্রিলার বইয়ের রিভিউ।
| বইয়ের নাম | অত:পর কবি মঞ্চে উঠিলেন |
|---|---|
| লেখক | মনোয়ারুল ইসলাম |
| জনরা | ক্রাইম থ্রিলার |
| পৃষ্ঠা | ২৪৯ |
| প্রকাশনী | নালন্দা |
কাহিনী সংক্ষেপ (স্পয়লার ছাড়া)
কবি বলতে আপনার চোখের সামনে কি ভেসে ওঠে? একজন অগোছালো লোক,চোখে ভাবালুতা,কাধে ঝোলা একটি ব্যাগ তাই তো? কবিরা তো এমনই হয়। তবে আমরা বইয়ে যে কবির গল্প পড়ব সে কিন্তু মোটেই এমন নয়।তার কাজ অনেক গোছালো,আর তা হাতে কলমের বদলে থাকে ধারালো চাকু।
আচ্ছা বক বক বাদ দিয়ে গল্পের প্লটে চলে আসি। গল্পটা প্রধানত ৫জন মানুষকে ঘিরে। কবির,রমেশ,পিবিআই ইন্সপেক্টর শাকিল ও কমিশনার আসিফ আলী ও আফজাল আজিম।
কবির একজন অবসর প্রাপ্ত বিচারপতির একমাত্র সন্তান।যদিও নিজের সন্তান নয়,দত্তক নেওয়া সন্তান।মৃত্যুর আগে নিজের বিশাল সাম্রাজ্য তিনি কবির কে দিয়ে যান। কবির শিক্ষিত।কিন্তু কাজে-কর্মে, সম্পদে তার মন নাই।
রমেশ একজন নাপিত।যশোরের বেনাপোলের এক প্রত্যন্ত শহরতলিতে তার দোকান।লোক হিসেবে আমায়িক।তবে সময় বিশেষে তার মেজাজটা বড় তিরিক্ষি হয়ে ওঠে।এলাকায় তার বেশ সুনাম আছে। তবে তিনকুলে তার কেউ নেই।ছোট বেলায় ঘুরতে ঘুরতে ইন্ডিয়া চলে যায়।সেখানেই একজন তাকে দত্তক নেয়,বড় করে তোলে তারপর নাপিতের কাজ শেখায়। তারপর সেই ব্যক্তি মারা যাবার পর সে বাংলাদেশ চলে আসে।তার কাছে একটি ডায়রি আছে।যে ডায়েরি তে শুধু একটা নাম।কিন্তু এই ডায়েরি কার বা কিভাবে তার কাছে আসল এ ব্যাপারে সে কিছুই জানে না।কিন্তু তার মন তাকে বলে এটাই হয়ত তাকে তার বাবা মার খোজ দেবে।
পিবিআই এসআই শাকিল।তারও তিনকুলে কেউ নেই।থাকার মাঝে আছে শুধু এক গার্লফ্রেন্ড।কিন্তু গার্লফ্রেন্ড এর বাবা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন কোন পুলিশের সাথে তিনি মেয়ের বিবাহ দেবেন না।
আসিফ আলী পিবিআই উপকমিশনার। শাকিলের সিনিয়র৷ আমাদের কেসের তদন্তভার প্রধানত এই আসিফ আলীর উপরেই।
আফজাল আজিম,অবসরপ্রাপ্ত পিবিআই কমিশনার।ইনি আসিফ আলীর সিনিয়র ছিলেন।আজ আসিফ আলীর যতটুকু নাম গান সব ইনার শিক্ষার গুণেই।অর্থাৎ ইনিই ছিলেন আসিফ আলির মেন্টর। ইনার জীবন ট্র্যাজেডিময়,বর্তমানে তিনি আর তার স্ত্রী থাকেন।স্ত্রী আবার ক্যান্সার এর লাস্ট স্টেজে।সারাদিন অকথ্য গালিগালাজ এবং সন্দেহ করেন আজিম সাহেব কে।আজিম সাহেবের দুজন সন্তান হারিয়ে যায়।একজন জন্মানোর পরেই হাসপাতাল থেকে আরেকজন বালক অবস্থায়।এখন চলে আসি কেসে
শহর থেকে প্রতিনিয়ত হারিয়ে যাচ্ছে তরুণী। শুধু হারিয়ে গেলে হত,কিন্তু হারিয়ে যাওয়ার কিছুদিন পরেই পাওয়া যাচ্ছে তাদের মৃতদেহ।তাদের সারাদেহে কোন অত্যাচারের চিহ্ন নেই। শুধুমাত্র গলাটা ধারালো কিছু দিয়ে কাটা। আর সেই সাথে পাওয়া যাচ্ছে একটি চিরকুট।সেই চিরকুটে লেখা থাকে জীবনানন্দ দাসের কবিতার কিছু লাইন। তাই এই খুনির নাম দেওয়া হয় কবি।
এই মৃতদেহ দেখে আসিফ আলীর মনে পড়ে যায় তার ক্যারিয়ার এর প্রথম দিকের একটি কেসের কথা।সেখানেও লাশের কাছে পাওয়া গিয়েছিল দুইটি চিরকুট।তবে তাদের খুন করা হয়েছিল পিটিয়ে মাথা থেতলে।তবে সেখানেও পাওয়া গিয়েছিল চিরকুট।আর চিরকুটে জীবনানন্দদাসের কবিতা। তখন আসিফ আলী কাজ করতেন আজিম সাহেবের জুনিয়র হিসেবে।সেই কেসের কোন সুরাহা হয়নি।এই ব্যার্থতার গ্লানি মাথায় নিয়েই অবসর নেন আজিম সাহেব।এই খুনির ও কোড নেম দেওয়া হয় কবি।
তবে কি সেই কবি আবার ফিরে এসেছে এত বছর পর? পুলিশ কে ফাকি দিতে নতুন স্টাইলে খুন করছে? কিভাবে এই পাচটি মানুষের জীবন জড়িয়ে গেল একসূত্রে? কে সেই খুনি? জানতে হলে পড়ে ফেলুন দুর্দান্ত থ্রিলার বইটি।
ব্যাক্তিগত মতামত
বইটির প্রতি আমার আগ্রহ জন্মে এর নাম দেখে। নামটি আমাকে দারুন ভাবে আকর্ষণ করেছিল।এরপর বইয়ের প্রচ্ছদ দেখে ঠিক করি বইটি কিনতেই হবে।কথায় বলে না আগে দর্শধারী তারপত গুণবিচারি।হাহাহা। কিন্তু যখন গল্প পড়া শুরু করলাম তখন ক্রমেই যেন চোরাবালির মত গল্পে ডুবে যেতে লাগলাম।এতদারুন গল্প অনেকদিন পড়িনি। একদিনের মধ্যেই পুরাও গল্প শেষ করেছি। খুন আর সম্পর্কের টানাপোড়ান, সেই সাথে দুর্দান্ত তদন্ত। সব মিলিয়ে একদম সুখপাঠ্য যাকে বলে।ব্যাক্তিগত রেটিং ১০/১০।এত প্লট টুইস্ট আছে যে মাথা নষ্ট হয়ে যাবে।




যে যত বই পড়বে তার তত জ্ঞান বাড়বে এটাই হচ্ছে বই পড়ার সবচেয়ে বড় ক্ষমতা। তবে আপনি আমাদের মাঝে দারুণ একটি বই নিয়ে রিভিউ করেছেন দেখে খুব ভালো লেগেছে আমার। তবে কখনো আমার পড়া হয়নি এই বইটা। চেষ্টা করব পড়ার জন্য।
ধন্যবাদ পড়লে আসা করি মজা পাবেন। ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।