সবুজ দ্বীপের রাজা||বুক রিভিউ
বই পড়া আমার প্রধান শখ গুলোর মধ্যে একটি। একটা সময় তিনবেলা ভাত যেমন খেতে হতো আমার তেমন প্রতিদিন একটি করে বই শেষ করা লাগত।এখন নানা ব্যস্ততায় আর বই পড়ার সময়ই হয় না।তারপরেও কিন্তু টুকটাক বই পড়িই।আগে বই পড়তাম ট্যাবে। ট্যাবে মেইনলি ফ্রি ইবুক গুলো পড়তাম।ট্যাব নষ্ট হওয়ায় ফোনের ছোট স্ক্রিনে আর বই পড়তে ভাল লাগে না। তাই এখন বই কিনে পড়তে হয়।প্রতি মাসে বই কেনা সম্ভব হয়না।কিন্তু গত মাসে কাকা বাবু সিরিজের বই কিনেছি।আজ সারাদিন বৃষ্টি বাইরে যাওয়ার উপায় নেই।ছুটির দিন হওয়ায় টিউশন ও ছিল না।রহস্য বই পড়ার জন্য আদর্শ আবহাওয়া। তাই বসে পড়লাম বই নিয়ে।সেটারই রিভিউ দিব আজ।
বইয়ের নাম | সবুজ দ্বীপের রাজা |
---|---|
লেখক | সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় |
জনরা | রহস্য |
পৃষ্ঠা সংখ্যা | ৬৯ |
রেটিং | ৮/১০ |
গল্পের সংক্ষিপ্ত প্লট
প্রথমেই দু একটা কথা বলে নেই,আপনারা হ্যাংআউটে দাদার কুইজে অনেকবার সেন্টিনেল আইল্যান্ড এর নাম শুনেছেন হয়ত? যেখানে এখনো এমন মানুষ বাস করে, সভ্য সমাজের সাথে যাদের কোন যোগাযোগ নেই৷ এই গল্পটি সেই দ্বীপ কে কেন্দ্র করে।
এবার বলি গল্পের দুই প্রধান চরিত্র কাকাবাবু ও সন্তু কে নিয়ে। কাকাবাবু যার নাম রাজা রায় চৌধুরি, সন্তুর ভাল নাম সুনন্দ রায় চৌধুরী।কাকাবাবু ও সন্তু নানা অ্যাডভেঞ্চারে যায়,সেই অ্যাডভেঞ্চার সন্তু নিজের ভাষায় লেখে তাই এখানে গল্পে রাজা রায় চৌধুরিকে কাকাবাবু বলা হয়েছে।
কাকাবাবু একসময় ভারতের প্রত্নতত্ব বিভাগে বেশ ভাল পদে চাকুরি করতেন। উপর মহলে তার ভাল প্রভাব রয়েছে। তবে একবার গাড়ি দুর্ঘটনায় তার একটি পা পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়।কিন্তু তারপরেও উনি বিভিন্ন অ্যাডভেঞ্চার এ যান বিভিন্ন প্রত্নবস্তুর খোজে বা রহস্য সমাধানে।আর তার সহকারী হিসেবে থাকে সন্তু।চলুন এই অ্যাডভেঞ্চার এ কাকাবাবু ও সন্তুর সঙ্গী হওয়া যাক।
সন্তুর পরীক্ষা শেষ। সামনে দীর্ঘ ছুটি।প্রথমবার কাকাবাবুর সাথে অ্যাডভেঞ্চারে যাওয়ার পর থেকে অ্যাডভেঞ্চার টা যেন নেশার মত হয়ে গেছে।কিন্তু অনেক দিন থেকেই কাকাবাবুর অ্যাডভেঞ্চারে যাওয়ার কোন লক্ষণ নেই। এদিকে সন্তুর ঘরে কিছুতেই মন টিকছে না।ছুটিতে বন্ধুরাও সবাই বাইরে গেছে।তাই তার মন আরো খারাপ।
এর মাঝেই একদিন কাকাবাবু সন্তুকে বললেন, প্লেনে যাবে নাকি জাহাজে? এটা শুনে তো সন্তু প্রায় লাফিয়ে উঠছিল।সে বলল প্লেনে। এরপর কাকাবাবু তাকে নিয়ে গেলেন পাসপোর্ট অফিসে।যেহেতু উপরের মহলে কাকাবাবুর যথেস্ট খাতির থাকায় পাসপোর্ট ভিসা পেতে কোন সমস্যাই হলো না তার। কিন্তু পাসপোর্ট নিয়ে বেরোতে গিয়ে বাধল বিপত্তি। সন্তু যখন নতুন পাসপোর্ট পেয়ে খুশি হয়ে পাসপোর্ট দেখছে,তখনই তার পাসপোর্ট চুরি করার চেষ্টা করা হয়,এবং কাকাবাবু না থাকলে সেটা চুরিই হয়ে যেত।
পাসপোর্ট পেয়ে সন্তু ভেবেছিল এবার বুঝি তারা দেশের বাইরে কোথাও যাবে,কিন্তু প্লেনে ওঠার পর ও জানতে পারল ওরা যাচ্ছে আন্দামান দ্বীপে।যেটি ব্রিটিশ আমলে ব্যবহার করা হত অপরাধীদের শাস্তি দেওয়ার জেলখানা হিসেবে।সন্তু একটু হতাশ হল।কিন্তু তারা যখন এয়ারপোর্টে নামবে তখন উপর থেকে এই দ্বীপের সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়ে গেল সন্তু। সন্তুদের গাইড হিসেবে ভারত সরকারের তরফ থেকে একজন লোক দেওয়া হয়েছে। প্লেন থেকে নেমেই দাশগুপ্ত দেখা করল সন্তু ও কাকাবাবুর সাথে।
তখন কাকাবাবু তাকে দুইজন বিদেশীর উপর নজর রাখার নির্দেশ দিলেন ও হোটেলে গেলেন।হোটেলে ফেরার পথে সন্তু অনেক কিছু দেখল।হোটেলে গিয়ে তারা বিশ্রাম নিল।পরের দিন দাশগুপ্ত কাকাবাবুকে জানালেন সেই সাহেব দুজন কে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না।এটা শুনে কাকাবাবু ভীষণ রাগ হয়ে গেলেন। তিনি তাকে নির্দেশ দিলেন জলদি তাদের খুজে বের করতে। তখন দাশগুপ্ত কাকা বাবুর কাছে জানতে চায় তিনি কোন রহস্যের খোজে এসেছেন?
কাকাবাবু তখন তাদের বলা শুরু করলেন, এই আন্দামান দ্বীপ পুঞ্জ খুব বেশিদিন হলো লোকজন বসবাস করা শুরু করে নি।আগে এখানে ৫ধরনের আদিবাসী থাকত।তাদের মাঝে তিন ধরনের এখন সভ্য হলেও বাকিরা এখন অসভ্যই রয়ে গেছে।সভ্য সমাজের সাথে এদের কোন যোগাযোগ নেই। এরাই হলো জরোয়া।সভ্য মানুষ এদের সাথে যোগাযোগের অনেক চেষ্টা করেছে।কিন্তু এরা সভ্য মানুষ দেখলেই তাদের মেরে ফেলে।তাই বর্তমানে সরকার এর তরফ থেকে এদের বাসস্থান যে দ্বীপ তার আশেপাশেও সরকার এর অনুমতি ব্যতীত যাওয়া নিষেধ।
কিন্তু তারপরেও বিভিন্ন সময়ে বাইরের দেশের বিজ্ঞানীরা এখানে এসেছে,নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও তারা জরোয়াদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেছে আর বরণ করেছে মৃত্যু কে।বিজ্ঞানীরা কেন বিনা কারনে এত বড় ঝুকি নেবে? কি এমন লুকানো আছে এই দ্বীপে?যা আছে তা অবশ্যই মূল্যবান কিছু না হলে তো আর এত বড় ঝুকি নিত না বিজ্ঞানীরা। তখন সন্তু বলল তবে কি এই সাহেবরাও এজন্যই এসেছে? আর সেজন্যই আপনি তাদের উপর নজর রাখতে বললেন?
কাকা বাবু বললেন হ্যা।কিন্তু সেই সাহেবদের আর খুজে পাওয়া গেল না। এজন্য কাকাবাবুরা মোটর বোট নিয়ে তাদের খুজতে বের হলেন। কিন্তু যখন মোটরবোট জরোয়াদের দ্বীপের কাছে চলে আসল তখন তিনি সেই দ্বীপে নামতে চাইলেন।দাশগুপ্ত তাকে নিষেধ করলেও তিনি বোটের পাইলট কে পিস্তলের মুখে জিম্মি করে সেই দ্বীপে নেমে যান।
কাকাবাবু কে পারবে জরোয়াদের হাত থেকে বেচে ফিরতে? কি আছে সেই দ্বীপে যার জন্য প্রাণের মায়া ত্যাগ করে সেখানে যায়? জানতে চাইলে পড়ে ফেলুন বইটি।
ব্যক্তিগত মতামত
আমি বরাবরই রহস্য উপন্যাসের অনেক বড় ভক্ত।এখানে বাড়তি পাওনা হিসেবে রয়েছে অ্যাডভেঞ্চার। তার মধ্যে সন্তু আমাদের সম বয়সী হওয়ায় রিলেট করা যায় বেশি গল্পগুলোর সাথে। সহজ বর্ণনায় দারুন উপভোগ্য হয়ে উঠেছিল।আমি একবসায় গল্পটি শেষ করেছি।প্রত্যেক পৃষ্ঠায় রহস্য যেন আরো বেশি ঘনীভূত হয়েছে। হাতে সময় থাকলে পড়ে নিতে পারেন গল্পটি।আশা করি দারুন উপভোগ করবেন
আমি বৃত্ত মোহন্ত (শ্যামসুন্দর)। বর্তমানে ছাত্র। নতুন কিছু শিখতে, নতুন মানুষের সাথে মিশতে আমার খুব ভাল লাগে। তেমনি বই পড়া আর ঘুরে বেড়ানো আমার পছন্দের কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম। মুক্তমনে সব কিছু গ্রহণ করার চেষ্টা করি আর মনে প্রাণে বিশ্বাস করি,"বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর, সবার আমি ছাত্র"।
Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
আমার বাংলা ব্লগে বুক রিভিউ খুবই কম দেখতে পাওয়া যায়। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এর আমাদের মাঝে খুব সুন্দর ভাবে তুলে ধরেছেন দেখে খুব ভালো লাগলো ভাই। প্রতিনিয়ত এভাবে বুক রিভিউ তুলে ধরলে অনেকেই পড়তে পারবে। ধন্যবাদ আপনাকে ভালো থাকবেন।
ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।
এই কমিউনিটিতে বই পড়ুয়া বোধ হয় খুব কমই আছে। কারণ বুক রিভিউ পোস্ট এই নিয়ে মাত্র দুইটা চোখে পড়েছে আমার। আগে প্রতিদিন একটা করে বই পড়তে?? ও মা গো!! সেই রকম বই পড়ুয়া তো তুমি!! কাকাবাবু সমগ্র আসলেই এডভেঞ্চার এ ভরা! না শেষ করে ওঠা যায় না! তোমার বুক রিভিউ পড়ে খুবই ভালো লাগলো...
আসলে আমার মত বেকার মেম্বার আর নাই তো।তাই বুক রিভিউ কম পাওয়া যায়। বই শেষ না করে উঠলে ভাল লাগত না,তাই দিনেই বই শেষ হয়ে যেত।ধন্যবাদ উৎসাহিত করার জন্য।
সবুজ দ্বিপের রাজা বইটা আমি পড়িনি ভাই। তবে এটা নিয়ে তৈরি অ্যানিমেশন কার্টুন এবং মুভিটা আমি দেখেছি। সত্যি বেশ অসাধারন একটা অ্যাডভেঞ্চার। পাশাপাশি আপনার রিভিউ টা ভালো লেগেছে। যদিও আপনি পুরোটা রিভিউ না করে একটা কৌতূহল রেখে দিয়েছেন এটা ভালো লেগেছে। দারুণ ছিল আপনার পোস্ট টা।
পুরো বইয়ের রহস্য ফাস করে দিলে কেউ আর বই পড়বে না।তাই পুরো টা লিখি নি। ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্য এবং উৎসাহিত করার জন্য।