যেখানেই যাও গোপাল,সঙ্গে যাবে কপাল
শুক্রবার। সাপ্তাহিক ছুটি।আমার মত ব্যস্ত,অলস মানুষের কাছে মোটামুটি ঈদের দিন।সারা সপ্তাহ টিউশনে গিয়ে ব্রেইন এর বারোটা বাজানোর পর এই একটাদিন সময় পাওয়া যায় ব্রেইনটাকে একটু শান্তি দেওয়ার।সকালে ঘুম থেকে ওঠার কোন জলদি নাই,আহ শুধু খাও আর শুয়ে থাকো। আর আজ আমার এক ফ্রেন্ডের বিয়ে ছিল।
যাই হোক আমিও কাল রাতে এটাই ভেবেছিলাম যে, ইচ্ছামত ঘুমাব,ঘুম থেকে উঠে বিয়ে তে যাব।মা কেও বলে রেখেছিলাম সকালে যাতে ডাক না দেয় আর ফোনের অ্যালার্ম ও অফ করেছিলাম,তারপর মুভি দেখা শুরু করি। মুভি দেখতে দেখতে প্রায় তিনটা বেজে যায়। আমি অতটা ভাবি নি,কারন আজ জলদি ওঠার দরকার ছিল না। কিন্তু মানুষ ভাবে এক হয় আরেক।
ভোর হতে না হতেই মা ডাকাডাকি শুরু করল।চিন্তা করুন তিনটায় ঘুমানো একজন কে ছয়টায় ডাকাডাকি করলে কি অবস্থা হবে।আমি তো ভেবেছিলাম বাড়িতে ডাকাত পড়েছে,একটুর জন্য হার্ট টা বের হয়ে দৌড় মারে নি। যাই হোক শান্ত হতে একটু সময় লাগল।তারপর মা বলল ট্রান্সপোর্ট এর গাড়ি এসেছে,আমাকে গিয়ে মাল গুলো নামিয়ে নিতে হবে।
এখন বলি আমাদের ব্যবসা ট্রান্সপোর্ট এর।এর মানে হল মালপত্র একজায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া,অনেকটা কুরিয়া সার্ভিস এর মত। তবে কুরিয়া সার্ভিস উভমুখী আর আমাদের টা একমুখী। অর্থাৎ খালি আসে কিন্তু যায়না৷ যাই হোক আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। কারন ঘুম পুরোপুরি হয়নি,আর মাল নামাতে কমপক্ষে ৪-৫ঘন্টা লাগবে।ফলে আমার বিয়েতে যাওয়ার বারোটা বাজবে। মা কে আমি সিচুয়েশন টা বুঝিয়ে বললাম।
কিন্তু আপনি খেয়াল করবেন দুনিয়ায় আপনার সমস্যা আপনি ছাড়া কেউ বুঝবে না। সে যত আপন লোকই হোক।যাই হোক বাবা কে বলতেই একটা ধমক দিলেন। আমি অসহায়ের মত কিছুক্ষণ বসে থাকলাম যাতে আমার প্রতি একটু মায়া হয়। কিন্তু কথায় আছে না,যেখানেই যাও গোপাল,সঙ্গে যাবে কপাল। চিড়ে ভিজল না।বরং আরো জলদি যেতে বলল।
উপায় না পেয়ে গেলাম দোকানে। কিন্তু সে গাড়ির আর দেখা নেই৷ ৭টা থেকে আস্তে আস্তে ৯টা বাজল তাও গাড়ির দেখা নেই। বার বার ফোন দিচ্ছি ফোন ধরার নাম নেই। একে তো ঘুম হয়নি,তারউপর ফোন না ধরাতে মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। ফলে লাগাতার ফোন দিতে লাগলাম।কারন বিয়েতে যেতে দেরি হচ্ছে।
এক পর্যায়ে ফোন ধরে বলল সে অর্ধেক রাস্তায় এসে ঘুমাচ্ছে,আর তার জন্য আমি কাচা ঘুম থেকে উঠে ৭টা থেকে বসে আছি। প্রচুর রাগ লাগতেছিল, কিন্তু কিছু না বলে জলদি আসতে বললাম।এই ফাকে আমিও বাসায় এসে স্নান খাওয়াদাওয়া করে নিলাম।মনে মনে আশা ছিল তখনো বিয়েতে যাওয়ার।কিন্তু ঐযে সকাল টাই খারাপ ভাবে শুরু হয়েছে, ভাল আর হবে কিভাবে। গাড়ি আসল বিকেল ৩টায়।
আর আজকে মালপত্র ও ছিল গাড়ি ভরা ফলে তারাতারি কাজ শেষ করার উপায় দেখছিলাম।একপর্যায়ে বন্ধুকে ফোন করে জানিয়ে দিলাম যে আমি যেতে পারছি না। বন্ধু মন খারাপ করল। কিন্তু কি আর করা যাবে।সব কাজ শেষ করে ফ্রি হতে হতে সন্ধ্যা লেগে গেল। ফলে আমার করা সব প্ল্যান প্রোগ্রাম এর তো বারোটা বেজেছেই সেই সাথে বিশ্রাম তো হলই না উলটো আরো দ্বিগুণ পরিশ্রম হলো। বন্ধুর বিয়ের দাওয়াত মিস হয়ে গেল,বন্ধু আর বন্ধুর শালীরা মন খারাপ করল।
আমি বৃত্ত মোহন্ত (শ্যামসুন্দর)। বর্তমানে ছাত্র। নতুন কিছু শিখতে, নতুন মানুষের সাথে মিশতে আমার খুব ভাল লাগে। তেমনি বই পড়া আর ঘুরে বেড়ানো আমার পছন্দের কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম। মুক্তমনে সব কিছু গ্রহণ করার চেষ্টা করি আর মনে প্রাণে বিশ্বাস করি,"বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর, সবার আমি ছাত্র"।
ইস কি কষ্ট না পেয়েছে বন্ধুর শালিরা।যাইহোক গোপালের সাথে কপাল যাবেই। আসলে অনেক সময় দেখা যায় যেদিন ভাবি আজ একটু বেশি ঘুমাব। সেই দিন আর ঘুম হয় না। যাইহোক ছেলে হিসেবে দ্বায়িত্ব তো পালন করতেই হবে।আপনার পোস্ট পড়ে অনেক ভালো লাগল। ধন্যবাদ আপনাকে।
হ্যা দায়িত্ব থেকে পালানোর উপায় নেই। ধন্যবাদ আপু সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।
মন খারাপ হয় কার আর ওদিকে নাম হয় কাদের!! যাই হোক, এমন অনিয়ম করা কিন্তু একদমই ঠিক না। শুক্রবার সকালে বেশিক্ষণ ঘুমানো যাবে বলে রাত ৩ টা পর্যন্ত মুভি দেখার কোন মানে হয় না। কারণ, সময়ের কাজ সময়ে করাটাই শ্রেয়। রাতের ঘুম দিনে কভার হয় না। ব্রেইনে এক্সট্রা চাপ পরে। আর এতকিছুর মধ্যে একটা ভালো দিকে হচ্ছে, আজকে রাতের ঘুমটা কিন্তু ভালো হবে।
না না ওরাই মন খারাপ করেছিল। হাহাহা। আচ্ছা এখন থেকে সময় মত সব করব। ধন্যবাদ সুন্দর উপদেশ দেওয়ার জন্য।
ওয়াও টাইটেলটি কিন্তু সেরকম। টাইটেল পড়েই মজা পেলাম। আমিও কিন্তু এমন অনেক ফাকিঁ খাই। শুক্রবারে একটু ঘুমানোর উদ্দেশ্যে আর কি সারা রাত ঘুম আসে। কিন্তু ঐ যে যেখানে যাবে গোপাল সেখানে যায় কপাল। হি হি হি। বেশ সুন্দর ছিল কিন্তু দাদা আজকের পোস্টটি।
কারো পৌষ মাস,কারো সর্বনাশ। ধন্যবাদ আপু মজার মন্তব্য করার জন্য