হারানো শৈশব-১
শৈশব শব্দটি শুনলেই আপনাদের মাথায় কি আসে? আমার মাথায় তো আসে কাদার মাঝে ফুটবল খেলা,চড়া রোদের মাঝে ক্রিকেট খেলা,নদী বা পুকুরে ঘন্টার পর ঘন্টা গোসল করে চোখ লাল করে ফেলা,স্কুলের ছুটির ঘন্টা বাজতে না বাজতেই বই খাতা নিয়ে দৌড়। বাড়িতে বাজার আছে কি নেই? পরীক্ষায় ফার্স্ট হতে হবে সে ভাবনা নেই মন জুড়ে শুধু একটাই চিন্তা কখন বিকেল হবে বন্ধুরা জানালা দিয়ে উকিঝুকি দিয়ে ডাকা শুরু করবে।
অনেকেই হয়ত আমার কথা গুলোর সাথে নিজের শৈশব মেলাতে পারবেন আবার অনেকেই পারবেন না। অনেকেরই শৈশব কেটেছে চার দেওয়ালে বন্দীঅবস্থায়।কিন্তু সৌভাগ্যবশত আমার শৈশব এমন ছিল না।আমি ছিলাম মুক্ত বিহঙ্গ। পড়াশোনার জন্য বাড়ি থেকে কখনো কোন চাপ ছিল না,কখনো পড়াতে ফাকিও দিতাম না।ফলে বাড়ি থেকে অবাধ স্বাধীনতা ছিল। আবার এখনকার বাবা মা যেমন বাচ্চাদের খেলতে দিতে ভয় পায় বলে যে আঘাত লাগবে, হাত পা ভাঙ্গবে আমার বাবা মা মোটেই তেমন ভীতু ছিলেন না।
আমি আরো আমার পরিবার থেকে চিরদিন সাপোর্ট পেয়ে এসেছি খেলাধুলায়। আমাদের পাড়ায় কোন খেলার মাঠ ছিল না,ফলে গলির মাঝে ইট দিয়ে স্ট্যাম্প বানিয়ে খেলা হত প্রতি বিকেলে।ছুটির দিনে তো শুরু হত সকাল ৮টা থেকে চলত দুপুর হওয়া পর্যন্ত তারপর আবার জুম্মার নামাজের পর থেকে শুরু হত।
শৈশব টা অনেক দিন আগে পেরিয়ে এসেছি।এখন ধরতে গেলে যুবক।ইনকোর্স,টেস্ট,মিড,ফাইনাল এর চিন্তা তারপর টিউশনের স্টুডেন্ট দের পরীক্ষার চিন্তা,বয়স হচ্ছে চাকুরিবাকুরি করতে হবে সেই চিন্তা।এইসব চিন্তার ভিড়ে রাত যে কখন হয় আর দিন যে কখন আসে বুঝতেই পারিনা।খেলাধুলা বন্ধ হয়েছে সেই ইন্টারের শুরু থেকে। তবে খেলারমাঠ এখনো খুব টানে আমাকে।
যাই হোক আসল কথায় আসি। গতকাল বিকেলে টিউশন পড়িয়ে ফিরে আসছিলাম,সন্ধ্যার প্রাইভেট টা ছিল না।ফলে মনে মনে বেশ খুশি ছিলাম।এমন সময় পাড়ার ছোটরা ক্রিকেট খেলছে। এই দৃশ্য সচরাচর দেখে যায় না।কারন এখনকার ছেলে মেয়েরা পড়ার চাপে দিনের আলো দেখার সময় পায় না সেখানে খেলাধুলা অনেক দুরের বিষয়। আমি দূরে থেকে দাঁড়িয়ে ওদের খেলা দেখছিলাম।
অনেক ইচ্ছা হচ্ছিল ওদের বলি যে আমিও খেলব।কিন্তু ছোট বেলায় আমরা যখন খেলতাম তখন কোন বড় ভাই এভাবে খেলতে চাইলে খুবই বিরক্ত হতাম আমরা, তাই ওদের আর খেলার কথা না বলে চুপচাপ দেখছিলাম।কিন্তু ওরা দেখলাম ব্যাট টাও ভুলভাবে ধরছে আর বোলিং এর কথা নাইবা বললাম ওয়াইড এর ও একহাত বাইরে দিয়ে বল করছিল।তখন মনে হল এদের একটু খেলা শেখানো যাক,এরাই তো ভবিষ্যত প্রজন্ম।এভাবে চলতে থাকলে একসময় খেলাধুলা উঠেই যাবে।
তখন ওদের একটু একটু করে শিখিয়ে দিতে লাগলাম।আমার শিখিয়ে দেওয়া পদ্ধতিতে ওরা ভালই করতে লাগল। বোলিং ব্যাটিং দুইটাই বেশ আয়ত্ব করল।তখন এক পিচ্ছি বলল ভাইয়া তুমিও আমাদের সাথে খেলে আমাদের দেখিয়ে দাও। এটা শুনে আমি মনে মনে বেশ খুশি হলাম।কিন্তু ছোটবেলায় এরকম বড় ভাইয়েরা আমাদের দিয়ে বল করিয়ে নিয়ে নিজেরা ব্যাটিং করতেন খালি। আমি তা না করে ওদেরকেই সুযোগ দিলাম।আমি খালি মাঝে মাঝে ২-১টা বল করে দেখিয়ে দিচ্ছিলাম বা কোন বল কিভাবে খেলতে হয় শিখিয়ে দিচ্ছিলাম।
এভাবে প্রায় ঘন্টাখানেকের মাঝেই ওরা দারুন উন্নতি করে ফেলল।বল লাইনে ফেলতে পারছিল আবার ব্যাটিংয়েও বেশ ভাল শট খেলতে পারছিল।নিজের ছাত্রদের উন্নতি দেখে বেশ গর্বই হল।ওরাও দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়ে খেলতে শুরু করল।এভাবে শিখতে শেখাতে কখন যে সন্ধ্যা লেগে গেছে তা বুঝতেই পারিনি। আমার মনে হচ্ছিল আমি যেন ওদের বয়সি হয়ে গেছি।খুবই উপভোগ করেছি,ওরাও পরে বলল ভাইয়া তুমি প্রতিদিন খেলতে আসিও। আমিও আসব বলে চলে আসলাম। অনেকদিন পর বিকেলটা দারুন উপভোগ করেছি।
আমি বৃত্ত মোহন্ত (শ্যামসুন্দর)। বর্তমানে ছাত্র। নতুন কিছু শিখতে, নতুন মানুষের সাথে মিশতে আমার খুব ভাল লাগে। তেমনি বই পড়া আর ঘুরে বেড়ানো আমার পছন্দের কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম। মুক্তমনে সব কিছু গ্রহণ করার চেষ্টা করি আর মনে প্রাণে বিশ্বাস করি,"বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর, সবার আমি ছাত্র"।
মারামারি আসে।😂😂 ছোটবেলায় ছেলেপেলেদের প্রচুর পরিমাণে মারতাম। তবে আপনার মাথায় যেগুলো আসে ওগুলো ও যে নিতান্তই আমার মাথায় আসে না তা কিন্তু নয়।
যাই হোক বাচ্চা কাচ্চাদের ক্রিকেট খেলা শিখিয়ে বেশ ভালই করেছেন। ওই যে বললাম না যে আপনার সাথে যেরকম হয়েছে আমার সাথে অনেকটা ওরকমই হয়েছে। ছোটবেলা আমরা যখন ব্যাট বল খেলতাম তখন আমাদের সিনিয়ররা এসে আমাদের টা নিয়ে খেলা শুরু করে দিত, আমরাই সুযোগ পেতাম না। এক্ষেত্রে আপনি কিন্তু ব্যতিক্রম সিনিয়র।
আমি অবশ্য মারামারিটা কম করেছি,আমি নেতাদের মত অন্যকে দিয়ে করিয়ে নিতাম,এই গল্পটা লেখব একদিন। ধন্যবাদ দাদা সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
আমি আসলে ছোটবেলায় তেমন খেলাধুলো করার সুযোগ পাইনি। চার দেয়ালের ভিতর বন্দি থাকতে হতো।তবে মাঝেমধ্যে বৃষ্টি হলেই কাদায় নেমে পড়তাম। আপনি কিন্তু বেশ ভালো শিক্ষক সেটা পড়ানোর ক্ষেত্রেই হোক বা ক্রিকেট খেলানো শেখার ক্ষেত্রেই হোক। আসলে সত্যি কথা কি জানেন তো যখন আমরা আমাদের ছোটদের খেলাধুলা বা অন্যান্য কাজ করতে দেখি, তখন আমাদের সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়ে যায় যেগুলো আমরা ওদের বয়সে পার করে এসেছি।