দু:খী কেনো?
পোস্ট শুরু করার আগে প্রথমে কেমেস্ট্রি নিয়ে একটু জ্ঞান দেওয়া যাক।এই যে আমাদের চারপাশে হাজার হাজার রাসায়নিক বিক্রিয়া সংঘটিত হচ্ছে এর মেইন কারন কি জানেন? এর কারন হচ্ছে প্রত্যেকটি পরমাণুই চায় তার সর্বশেষ শক্তিস্তরে আটটি ইলেকট্রন থাক।এর একটা বেশিও না একটা কমও না। এই আটটা ইলেকট্রন পূর্ণ হবার পরে সে আর কোন রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে না সাধারণত। আর করাতে চাইলেও প্রচুর শক্তিপ্রয়োগ করতে হয়।
এখন আপনারা অবাক হচ্ছেন হয়ত লেখা শুরু করলাম সুখ নিয়ে,কিন্তু আমি আপনাকে জ্ঞান দিচ্ছি কেমেস্ট্রি নিয়ে।আমি কি পাগল হয়ে গেলাম নাকি? না আসলে পাগল হইনি। টিউশন করাতে করাতে বদঅভ্যাস হয়ে গেছে আসলে।উদাহরণ দিয়ে বুঝালে কোন একটা বিষয়কে খুব সহজে বুঝানো যায়।তাই উপরের উদাহরণ টা দিলাম।
দেখুন যে মৌল গুলো বিক্রিয়া করে সেগুলো হলাম আমরা অর্থাৎ মানুষ। আমাদের সবার জীবনের লক্ষ্য মোটামুটি একটাই থাকে একটুখানি সুখ। যেমন ইলেকট্রন গুলো তার সর্বশেষ শক্তিস্তরে আটটি ইলেকট্রন চায়। এই আটটি ইলেকট্রন থুড়ি একটুখানি সুখের জন্য আমাদের এত হাঙ্গামা।এই যে সকাল বেলা অফিস দৌড়ানো,ব্যবসার টেনশন এ সব কিছু কেন? শুধু একটু সুখের জন্য।খালি নিজের সুখ অবশ্য না,সেই সাথে পুরো পরিবার,পরবর্তী প্রজন্ম সবার সুখের জন্য।
তবে পরমাণু গুলো যেমন আটটি ইলেকট্রন নিয়ে ক্ষান্ত হয়, কিন্তু আমরা মানুষরা তা পারিনা৷ আমরা প্রথমে চেষ্টা করি ক্ষুধা মিটাতে,কারন ক্ষুধা আমাদের জীবনের পরম এক সত্য। যখনই ক্ষুধা মিটল তখন আমরা চেষ্টা করি আমাদের পোশাকটা যেন একটু সুন্দর হয়,পোশাক সুন্দর হলে চেষ্টা করি আমাদের বসবাসের জায়গা যেন একটু পরিপাটি হয়। এভাবে একটার পর একটা মৌলিক চাহিদা পূরণের চেষ্টা করে যাই।
একসময় গিয়ে সেই মৌলিক চাহিদা গুলো পুর্ণ হয়।যেমনটা আমাদের পরমাণু গুলো আটটি ইলেকট্রন পেয়ে গিয়ে হয়। এখন এখান থেকেই শুরু হয় আমাদের ও পরমানু গুলোর মাঝে পার্থক্য।পরমাণু আটটি ইলেকট্রন পেয়ে থেমে যায়।অর্থাৎ তারা আর কিছুই চায় না। কিন্তু আমাদের হয় তার উলটো।আমরা নতুন নতুন চাহিদা বানিয়ে নেই। এই চাহিদার জিনিসগুলো কিন্তু আমাদের দরকার পর্যন্ত নেই৷ এই চাহিদা পূরনের জন্য আমাদের ব্যয় করতে হয় অতিরিক্ত শক্তি,অর্থাৎ অতিরিক্ত টাকা।
কিন্তু অতিরিক্ত টাকা তো মুখের কথা নয়,এটার জন্য শুরু হয় অতিরিক্ত পরিশ্রম। তারপর একসময় হয়ত সেই চাহিদাটা পূরণ হয়,এরপরে চাহিদা টা হয় তার থেকেও বড়। ফলে আবার অতিরিক্ত পরিশ্রম। একপর্যায়ে এমন হয়ে যায় যে, আমরা যে জিনিসটার জন্য এত পরিশ্রম করছি সেই জিনিসটাই আমরা উপভোগ করতে পারি না।আমাদের সারাদিন কেটে যায় অতিরিক্ত শক্তি যোগাতে। আমরা না পারি পরিবার কে সময় দিতে,না পারি আশেপাশের প্রকৃতিকে উপভোগ করতে। ফলে জীবন ক্রমেই দুর্বিষহ হয়ে ওঠে।জীবনের লক্ষ্যই হারিয়ে যায়।
এটা গেল কিন্তু একপ্রকার লোকের কথা,আরেক প্রজাতির লোক আছে যারা প্রথম জীবনে ব্যস্ত থাকে বই পড়ার কাজে।বই ছাড়া আশেপাশে কোথাও তাকাবে না,তারপর যুবক বয়স কাটায় অর্থ উপার্জনে, এই অর্থ কিন্তু তারা ব্যয় করে না।তারা ভাবে ভবিষ্যতে ব্যয় করার জন্য।এই ভবিষ্যত টা কখনোই আসে না। এভাবে চলতে চলতেই তারা জীবনে এমন পর্যায়ে চলে আসে যেখানে আর সেই টাকা কাজে লাগে না।তখন তাদের জীবনে চলে আসে হতাশা, আর সেই সাথে আসে দু:খ।
আরেক ধরনের মানুষ আছে,এদের থাকে যথেস্ট। এরা সুখেই থাকে ততক্ষণ পর্যন্ত যতক্ষণ পর্যন্ত এদের আশেপাশের মানুষ জীবনে ভাল সময় না আসে। আশেপাশের মানুষ ভাল থাকলে, ভাল খেলে এদের জীবন থেকে সুখ হারাম হয়ে যায়,এরা জ্বলেপুড়ে যেতে থাকে৷ কিভাবে তাদের এই সুখ নষ্ট করা যায় সেই চিন্তায় এদের সুখ পালায়।
আরেকধরনের মানুষ আছে যারা অভার থিংকার,অর্থাৎ এরা অতিরিক্ত ভাবে। কোন কাজ করার আগে সেই কাজ নিয়ে এতটা ভেবে ফেলে যে সেই কাজটাতেই আর হাত দেওয়া হয়ে ওঠে না। এদের কে দিবা স্বপ্ন দেখা লোক বললেও ভুল হবে না। এই ওভার থিংকিং ই এদের জীবনে নিয়ে আসে মারাত্মক দু:খ।
তাহলে কি বুঝলেন? আমাদের জীবন কিন্তু খুব জটিল না।আমরাই আমাদের জীবনকে অতিরিক্ত চাহিদা,ওভার থিংকিং হিংসা, ভবিষ্যত নিয়ে অতিরিক্ত ভাবনা ইত্যাদির মাধ্যমে করে তুলছি দুর্বিষহ।তাই এরপর থেকে যা আছে তাই নিয়ে সন্তুষ্ট থাকুন,ভবিষ্যত নিয়ে বেশি না ভাবা ও বর্তমান কে উপভোগ করুন।টাকা আয় করা দরকার কিন্তু তাতে এতটাও ব্যস্ত হয়ে যাবেন না যেন পরিবারের সাথেই সময় কাটাতে ভুলে যান। টাকা গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু পরিবারের গুরুত্ব তার থেকেও বেশি। তাই সর্বোপরি জীবন কে উপভোগ করুন।
আমি বৃত্ত মোহন্ত (শ্যামসুন্দর)। বর্তমানে ছাত্র। নতুন কিছু শিখতে, নতুন মানুষের সাথে মিশতে আমার খুব ভাল লাগে। তেমনি বই পড়া আর ঘুরে বেড়ানো আমার পছন্দের কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম। মুক্তমনে সব কিছু গ্রহণ করার চেষ্টা করি আর মনে প্রাণে বিশ্বাস করি,"বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর, সবার আমি ছাত্র"।
Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
আসলে ভাইয়া আমাদের জীবন অনেক সহজ কিন্তু আমরা জীবনকে কঠিন করে তুলছি।সত্যি জীবনে বেঁচে থাকতে হলে টাকার প্রয়োজন তবে তার থেকে বেশি প্রয়োজন পরিবারের সাথে সময় দেওয়া।আর আমাদের একটা চাহিদা পূণ্য হলে আরো হাজার চাহিদা সামনে এসে দাঁড়ায়। আর এই কারণে আমরা কখনো সুখী হতে পারি না। ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর লিখেছেন।
আমিও তো একটু অবাক হয়ে গেলাম কেমিস্ট্রির ক্লাসে ঢুকে পড়লাম না তো হাহাহা, যাই বলেন উদাহরণটা কিন্তু চমৎকার ছিল একদম বৈজ্ঞানিক ভাষায়।
এটা আমার কাছে দারুণ লেগেছে দাদা যে মৌল শেষ কক্ষপথে আটটি ইলেকট্রন পেলেই খুশি। কিন্তু মানুষ ঠিক তার উল্টা। মানুষ যত পাই ততই চাই। মৌলের সঙ্গে মানুষের সুখের বাহ চাহিদার বিষয়ে দারুণ একটা মেলবন্ধন তৈরি করেছেন ভাই। অনেকদিন পর আবার কেমিস্ট্রি পড়লাম মনে হচ্ছে। জীবন কখনোই জটিল না আমাদের অতিরিক্ত চাহিদাই জীবনকে কঠিন করে দেয়।
অনেক সুন্দর পোস্ট শেয়ার করেছো আজ আমাদের মাঝে।উদাহরণ সহ বুঝিয়ে দিয়েছো খুব ভালো লাগলো।মানুষ আসলেই অনেক রকমের হয়।একেক জনের চিন্তা ভাবনা একেক রকমের হয়ে থাকে।ধন্যবাদ সুন্দর পোস্ট শেয়ার করার জন্য।