অনেক দিন পর সিনেমা হলে
আমার একটা পোস্টে আমি আমাদের ছোট বেলায় টিভি দেখার অনুভূতি শেয়ার করেছিলাম।সেই অনুভূতি শেয়ার করেছিলাম।তখন আমার একটা বিষয় মনে ছিল না,সেটা হল সিনেমা হল।আমাদের বর্তমান প্রজন্ম যাদের হাতে হাতে মোবাইল ট্যাব তারা হয়ত এই সিনেমা হলে মর্ম টা বুঝবে না।কিন্তু এই কিছুদিন আগে পর্যন্ত আমাদের সংস্কৃতিতে সিনেমা হল ছিল অনস্বীকার্য একটি বিনোদন মাধ্যম।
আমি অন্যান্য দেশের অবস্থা জানিনা। কিন্তু যখন বাংলার ঘরে ঘরে টেলিভিশন ছিল না,সবাই হাতে হাতে মোবাইল ছিল না তখন সিনেমা হলের কদর ছিল। মানুষ একটু অবসর পেলেই চলে যেত সিনেমা হলে।সেকালের মুভি গুলোও ছিল পারিবারিক। ফলে সম্পুর্ণ পরিবার নিয়ে দারুন অবসর সময় কাটানো যেত। হল কখনো দর্শক শুণ্য হত না।
কিন্তু বর্তমান চিত্র আলাদা। বর্তমানে মানুষ হল মুখো মোটেই নয়।দর্শক এর অভাবে লোকশান দিতে দিতে বন্ধ হয়ে গেছে প্রায় ৯০শতাংশ হল।আগে যেখানে মানুষে গম গম করত এখন তাদের অধিকাংশরই অস্তিত্ব নেই।সিনেমার পোস্টারে দেওয়াল ভরে যেত,সারাদিন চলত মাইকিং।"আসিতেছে,চলিতেছে"মাইকিং শুনতে শুনতে সিনেমার নায়ক নায়িকা পরিচালকের নাম পর্যন্ত মুখস্ত হয়ে যেত। কিন্তু বর্তমানে সব ফাকা। এরপেছনে দোষ আমাদের দেশের পরিচালক দের। তারা যেসব ছবি বানায় তার ৯৯% বস্তাপচা। পরিবার নিয়ে তো দূরে থাক,নিজেদেরই রুচিতে বাধে দেখতে।
যাই হোক ধান ভানতে শিবের গীত অনেক তো বললাম এখন আমার অভিজ্ঞতায় আসি।আমি মানুষটা মুভি লাভার।বেকার বাড়িতে বসে থাকি তাই সময় কাটাতে প্রচুর মুভি, সিরিজ দেখি।তবে হলে গিয়ে সিনেমা দেখার যে মজা সেটা একদম আলাদা। সিনেমা হলে লাস্ট গিয়েছিলাম আয়নাবাজি মুভিটি দেখতে। আমাদের দেশে যেখানে হল থাকে শূণ্য সেখানে ব্ল্যাকে ২০টাকার টিকিট ১০০ টাকা দিয়ে কিনে মুভি দেখতে হয়েছিল।তাও ২ঘন্টা লাইনে দাড়িয়ে।
যাই হোক কিছুদিন আগে আমার দাদার বিয়েতে সৈয়দপুর গিয়েছিলাম।ছেলের বিয়েতে খাটুনি কম হলেও, বৌভাতের দিন প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়েছে।সারাদিন পর ক্লান্ত হয়ে বসেছি সেই সময় দ্বীপ বলল ভাই চল সিনেমা দেখে আসি। অনেকদিন হলে সিনেমা দেখা হয়না।প্রস্তাবটা বেশ মনপূত হল।আরো ২ভাই ছিল ওদের বলতে ওরাও রাজি হয়ে গেল। তখন জামাইবাবুদের বললাম,দুইজন রাজি হল একজন ব্যস্ত থাকায় যেতে পারল না।আর যে দুজন রাজি হয়েছিল তার মাঝে একজন লাস্ট মোমেন্ট এ বাদ যায়,কারন তার জুতা হারিয়ে গেছে। বেচারার শখের নতুন জুতো।উনি একদম মুষড়ে পড়লেন।ফলে শেষ পর্যন্ত গেলেন না।আমরা তিনভাই আর এক জামাইবাবু রওনা দিলাম।
আমরা যখন বের হই তখন ৮.৩০বাজে। সিনেমা হল ২০মিনিট দূরে। আর রাতের শো ৯টা থেকে। আমরা জলদি বের হলাম। হলে গিয়ে শুনলাম শো শুরু হবে ৯.৩০ থেকে। আশে পাশে কোন দর্শক দেখতে পাচ্ছিলাম না।ও ভাল কথা মুভির নাম টাই তো বলা হয়নি,আমরা এবার ঈদের মুভি সুরঙ্গ দেখতে গিয়েছিলাম।দর্শক না দেখে একটু হতাশ হলাম,তখন মনে পড়ল আরে ঈদের তো একমাস হয়ে গিয়েছে,এখন এত দর্শক হবে কিভাবে। কিন্তু যতই সময় এগিয়ে আসতে লাগল দর্শক এর আনাগোনাও বাড়তে লাগল।
আমরা টিকেট আগেই কিনে রেখেছিলাম।এবার আমি কয়েকটা চিপস কিনে নিলাম।কারন খালি মুখ মুভি বা সিনেমা দেখতে পারিনা। আমরা যে সিনেমা হলে গিয়েছিলাম সেটা কিন্তু কোন মাল্টিপ্লেক্স সিনেমাহল নয়।আগেকার নর্মাল সিনেমা হল। আমরা যে জায়গার টিকেট নিয়েছিলাম সেটাকে সম্ভবত শৌখিন বলে। ফ্যান আছে,সাথে লোহার চেয়ার দেয়া। শো এর ঘন্টা পড়ার সাথে সাথে আমরা ভেতরে প্রবেশ করলাম।
ভেতরে প্রবেশ করে দেখি সিনেমাহলের চেহারা বিশেষ পালটায় নি। সেই আগের মতই আছে।
আমরা যখন ঢুকি তখন আমাদের সাথে দশ-বারো জন দর্শক।কিন্তু পাচ মিনিটের মাঝে পিলপিল করে দর্শক ভরে গেল। প্রায় শ-তিনেক দর্শক।আমি অবাক হয়ে গেলাম এত দর্শক দেখে।যাই হোক যথা সময়ে জাতীয় সঙ্গীত এর মাধ্যমে সিনেমা শুরু হল। আমরাও পতাকা কে দাঁড়িয়ে সম্মান জানালাম।এরপর মনযোগ দিয়ে সিনেমা দেখা শুরু করলাম। কেমন লাগল মুভি? সে তো রিভিউতেই জানতে পারবেন।
আমি বৃত্ত মোহন্ত (শ্যামসুন্দর)। বর্তমানে ছাত্র। নতুন কিছু শিখতে, নতুন মানুষের সাথে মিশতে আমার খুব ভাল লাগে। তেমনি বই পড়া আর ঘুরে বেড়ানো আমার পছন্দের কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম। মুক্তমনে সব কিছু গ্রহণ করার চেষ্টা করি আর মনে প্রাণে বিশ্বাস করি,"বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর, সবার আমি ছাত্র"।
ভাই আমি বরাবরি সিনেমা দেখতে খুব একটা ভালোবাসি না। আমার জীবনে আমি যখন অষ্টম শ্রেণীতে পড়ি তখন একবার হলে সিনেমা দেখেছি। সেটা আমার প্রথম এবং ওটা আমার শেষ। তবে আপনি যে আপনার সময় গুলো সিনেমা দেখে কাটান বেশ ভালো। ২০ টাকার টিকিট ১০০ টাকা কেটেছেন তারা দুই ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে। এর অর্থ হল সিনেমা দেখতে বেশ প্যারা পেতে হয়েছে আপনাদের। যাক তারপর অবশেষে দেখতে পেরেছেন। সিনেমা দেখার অভিজ্ঞতা আমাদের মধ্যে শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।
২০টাকার ১০০ টাকা এটা অনেক আগের ঘটনা ভাই৷ যাই হোক আপনার মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
হলে মুভি দেখার মজাই আলাদা ভাই। এখন পর্যন্ত ৩ বার হল এ ছবি দেখেছি। ৩ বারই ভালো লেগেছিলো। আসলে বর্তমানে ইন্টার্নেট আর ৪কে ৮কে টিভির ভিড়ে হল হারিয়ে যাচ্ছে। বেশির ভাগ মুভি গুলো অনলাইনেই পাওয়া যাচ্ছে । তবে হল এ ছবি দেখার মজা অন্য রকম। আপনারা হল এ মুভি দেখে ভালোই উপভোগ করেছেন।
হ্যা ভাইয়া আপনার কথা গুলো একদম সত্য। আর দারুন উপভোগ করেছি হলে। ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
আগেরকার সিনেমাগুলোর সাথে এখনকার সিনেমার আসলে মিল খুজাটাই ব্যর্থতা। কারণ আগের কালের মানুষ সিনেমা তৈরি করত মানুষকে বিনোদন দেয়ার জন্য, আর এখন সিনেমা তৈরি হয় টাকা ইনকাম করার জন্য। তবে সিনেমা হলে গিয়ে রাতের শো দেখার মজাই আলাদা। আমি তো মাঝেমধ্যে রাত এগারোটা নাগাদ চলে যাই সিনেমা দেখার জন্য। যাইহোক আশা করি সুরঙ্গ সিনেমার রিভিউ দেখতে পাবো। আর সিনেমা হলে 300 লোক কিন্তু একেবারে কম নয়।
একদম ঠিক দাদা। এখন যাস্ট পয়সার জন্য মশলা মুভি চলে। আমাদের এদিকে হল গুলো ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে। ধন্যবাদ দাদা সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।
আগে দেশের সিনেমা হল অনেক ছিল এবং অনেক সুন্দর সুন্দর সিনেমা ও চলতো। এখন সিনেমা তৈরি করা হয় শুধু টাকা ইনকামের জন্য এন্টারটেইনমেন্ট দেয়ার জন্য না। তারপরেও এবার ঈদে কয়েকটি ভালো ভালো সিনেমা দর্শক দেখতে পেরেছে। সুরঙ্গ সিনেমা আমিও দুইবার দেখেছি কিন্তু কিছু সিন 18 প্লাস আছে এটাই সমস্যা। আশা করি আপনার সিনেমা রিভিউ পাব ধন্যবাদ আপনাকে।
সিনেমা হলে বেশ সুন্দর মুহূর্ত অতিবাহিত করেছেন। অনেকক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে অবশেষে সিনেমা দেখতে ফেললেন । আসলে সিনেমা হলে ছবি দেখার মজাটাই অন্যরকম। ছবি দেখে চমৎকার অনুভূতি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। মুভি রিভিউ জানার জন্য অপেক্ষায় রইলাম ধন্যবাদ ভাই।