পোড়ো জাহাজের গুপ্তধন||পর্ব-১
জমির আলী। বয়স প্রায় পঞ্চাশ ছুই ছুই।কিন্তু বয়সের ভার তাকে কাবু করতে পারে নি। ধনী মানুষ হইলে হয়ত এতদিনে ভুড়িটুড়ি ভারে, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে ঘরে থাকতে হত। কিন্তু সৌভাগ্যের বিষয় হল সে মোটেই ধনী মানুষ নয়। ধনী তো দূর সে নেহাৎ মধ্যবিত্তও নয়।সে গরীব। এতটাই গরীব যে নুন আনতে পানতা ফুরোয়।
পেশায় সে একজন মাঝি। তবে সে নদীতে মাছ ধরে না। মাঝ ধরে গভীর সমুদ্রে। তার নিজের ট্রলার নাই।সে কালাম মাঝির ট্রলারে মাছ ধরে। যেহেতু ট্রলার কালাম মিয়ার তাই কালাম মিয়া হেড মাঝি,আর মাছ বিক্রির পর তারা ট্রলারের খরচ বাদ দিয়ে বাকি টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয়। তবে কালাম মিয়ার ভাগই বেশি।যাই হোক জমির আলী এগুলো নিয়ে মাথা ঘামায় না।
সে অনেকটা দার্শনিক টাইপের। লেখাপড়া না করলেও জীবনের উত্থানপতন দেখতে দেখতে জীবন তাকে দার্শনিক বানিয়ে দিয়েছে।তার কাছে জীবন মানেই যন্ত্রনা আর সেই যন্ত্রনা নিয়ে বেশি মাথা ঘামালে যন্ত্রনা আরো দ্বিগুণ হয়ে যায়।তবে কপাল যেন বরাবরই এই মানুষ গুলোর সাথে তামশা করে।জমির দার্শনিক হলেও তার বৌ তীব্র বাস্তববাদী।
সংসার এর প্রতি উদাসীন থাকায় জমিরের সাথে জমিরের বউয়ের ঝগড়া প্রতিদিনের। শেষ কবে ঝগড়া ছাড়া একটা দিন কেটেছে সেটা জমির জানে না। এই বিষয়টা তাকে সংসার এর প্রতি মনযোগী করার বদলে তাকে আরো বেশি উদাসীন করে তুলেছে।বাড়ির প্রতি উদাসীনতার কারনে সে তার কাজকে আরো বেশি করে ভালবাসা শুরু করেছে। নীল সাগর,নীল আকাশ তাকে টানে। পরিশ্রম হোক,কিন্তু তাও বাড়ির মত মানসিক অশান্তি নেই।
হ্যা রিক্স আছে বটে,মাঝে মাঝে সাগরে প্রচন্ড ঝড় ওঠে।তখন কিছুই আর নিজের হাতে থাকে না,ঝড়ের দাপটে দুলতে দুলতে সৃষ্টিকর্তাকে ডাকা ছাড়া।হয়ত তিনি বাচাবেন অথবা এখানেই সলিল সমাধি হবে।কিন্তু সব পেশাতেই ঝুকি থাকেই।ঝুকি ছাড়া কোন কাজ সম্ভব নাকি?
ট্রলারে বসে বসে এবারের যাত্রা নিয়ে ভাবছে,গতবার বেশ ভাল পরিমানের মাছ পেয়েছিল তারা। কিন্তু এবার তার গতবারের থেকেও বেশি মাছ প্রয়োজন।কারন সামনে বর্ষা আসছে,বাড়িটা মেরামত করতে হবে।এছাড়া আরো ছোট খাট কিছু কাজ আছে যার জন্য টাকা প্রয়োজন।শুধু তারই না ট্রলারের মাঝিদের সবারই প্রচুর টাকার দরকার,এমনকি কালাম মিয়ার পর্যন্ত টাকার দরকার। এদিকে আকাশটার লক্ষণ ও কেন জানি ভাল নয়।জলদি জলদি রওনা দিয়ে, যত তারাতারি ফিরে আসা যায় ততই ভাল।
একে একে সব মাঝি ও কালাম মিয়ে এসে হাজির হল।কিছু ছোট খাট কাজ সেরে নিয়ে ট্রলার রওনা দিলো সমুদ্রের দিকে।সবাই মনে মনে স্মরণ করছে সৃষ্টিকর্তা কে।
আমি বৃত্ত মোহন্ত (শ্যামসুন্দর)। বর্তমানে ছাত্র। নতুন কিছু শিখতে, নতুন মানুষের সাথে মিশতে আমার খুব ভাল লাগে। তেমনি বই পড়া আর ঘুরে বেড়ানো আমার পছন্দের কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম। মুক্তমনে সব কিছু গ্রহণ করার চেষ্টা করি আর মনে প্রাণে বিশ্বাস করি,"বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর, সবার আমি ছাত্র"।
অনেক সুন্দর হয়েছে ভাই আপনার পোস্টটি। আসলে প্রতিটা কাজেই ঝুঁকি থাকে। জমির আলী একজন মাঝি। সে হয়তো বা নীল আকাশের নিচে সমুদ্রের মাঝে থেকে থেকে দার্শনিক এর মত হয়ে গেছে। আর তার এই দার্শনিকতা হয়তো বা তার বউ পছন্দ করে না তাই প্রতিদিনই পরিবারে সমস্যা দেখা দেয়।
সংসারের এই অশান্তি সবার কাছেই বেশ তিক্ত অভিজ্ঞতা ভাই। অনেকদিন পরে বেশ ইউনিক একটা গল্প পড়ছি এখানে। আর দিনশেষে সবাই দর্শন বোঝে না ঐ টাকা টাই কিন্তু সব দাদা। পরবর্তী পর্বের জন্য অপেক্ষায় থাকলাম।
অশান্তি সব সংসার এ কমবেশি রয়েছে, তবে পোস্ট পড়তে পড়তে ভাবছিলাম যে শেষের দিকে হয়তো একটু খানি হলেও গুপ্তধন নিয়ে কিছু লিখবেন। তবে তেমন কিছুই তো খুঁজে পেলাম না। শুধুমাত্র লোকটার সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানতে পারলাম। যাই হোক অবশ্যই আশায় থাকলাম পরবর্তী পর্বের জন্য। কারণ এই ধরনের গল্প গুলো আমার কাছে অনেক বেশি ইন্টারেস্টিং লাগে।
ক্যারেক্টার টার মনস্তত্ব না বলে দিলে পরে তো মজা পাবেন না।তাই আগে ক্যারেক্টার ডেভলপমেন্ট করে নিলাম।ধন্যবাদ দাদা গঠণ মূলক মন্তব্যের জন্য।
অনেকদিন পর আসলে আমার পছন্দ মত একটা এডভেঞ্চারাস গল্প খুঁজে পেলাম। যদিও প্রথম পর্বে তেমন কিছুই খুঁজে পাইনি। তবে অবশ্যই পরবর্তী পর্বে কিছু পাব এ আশায় রইলাম। সবে মাত্র তারা ট্রলার নিয়ে মাঝ সমুদ্রের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে, গল্প তো এখনো অনেক বাকি তাহলে।
হ্যা দিদি মাত্র ক্যারেক্টার ডেভলপমেন্ট হল। রহস্য সামনে পর্ব থেকে শুরু হবে। ধন্যবাদ দিদি সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।