চিরকুট

in আমার বাংলা ব্লগ11 months ago (edited)

school-work-851328_1280.jpg
Source

সেই ফার্স্ট ইয়ার থেকেই দেখেছি, সিফাত আর স্বপ্নার ভালোবাসার সম্পর্ক। দীর্ঘ কলেজ জীবন একসঙ্গে একত্রে চুটিয়ে প্রেম করেছিল। ওদের সম্পর্কের সূত্রপাত কিভাবে হয়েছিল তা আমার জানা নেই, তবে ওদের দুজনকে দেখে অনেকেই সেই সময় বেশ উৎসাহ দিয়েছিল। কারণ ছেলে-মেয়ে দুজন একই ডিপার্টমেন্টে পড়ে আর তাছাড়া গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করলেই উভয়ই ডাক্তার হবে।

বড্ড মেধাবী ছিল দুজন, সেই ছাত্র জীবন থেকেই। কোন ইয়ারেই তারা ফেল করেনি। দুজনই পড়াশোনার প্রতি বেশ ভালো সিরিয়াস ছিল। দেখতে দেখতে কখন যে একসঙ্গে সবাই ফাইনাল ইয়ার পাস করে ফেললাম, তা যেন বুঝে উঠতেই পারলাম না। ওরা আমার কলেজ জীবন থেকেই বেশ ভালো বন্ধু ছিল। এখনো আছে তবে কিছুটা দূরত্ব, তৈরি হয়ে গিয়েছে।

আসলে কলেজের আর তেমন কারো সঙ্গেই আমার যোগাযোগ নেই। আগে সকলের সঙ্গেই যোগাযোগ করতাম, যেহেতু একই প্রফেশনে সকলেই ছিলাম তাই টুকটাক কোন সমস্যা হলে, ওদের কাছ থেকেই সমাধান জেনে নিতাম। তবে এখন তো প্রফেশনই ছেড়ে দিয়েছি, তাই ওদের সাথে আর কথা বাড়িয়ে লাভ কোথায়।

ইন্টার্নশিপের পর থেকেই সবাই ভীষণ সিরিয়াস হয়ে গিয়েছিল, সরকারি চাকরির পরীক্ষার জন্য। আমি অবশ্য সেদিকে কখনো এত কর্ণপাত করিনি। আমার আসলে দিনকাল চলে গেলেই হল, আমি আগে থেকেই এমন স্বভাবের ছিলাম। ইন্টার্নশিপ শেষ হওয়ার পরেই, শুনেছিলাম সিফাত আর স্বপ্না বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবে অনেকটা পারিবারিকভাবেই।

বেশ ভালই লেগেছিল শুনে, যেহেতু দীর্ঘ সময়ের সম্পর্ক, তাই তারা বেশ সাবলীল ভাবেই এই ব্যাপারটাকে গ্রহণ করেছিল। বিবাহ পরবর্তী জীবনে, স্বপ্না তেমনভাবে আর পরবর্তীতে উচ্চতর ডিগ্রীর জন্য পড়াশোনাটা ঠিকমত সেরকম ভাবে চালিয়ে যেতে পারেনি। ঐ শ্বশুরবাড়ি এলাকাতেই, স্বামী-স্ত্রী দুজনে মিলে চেম্বার খুলে ছিল আর স্বপ্না ওখানেই চেম্বার করতো।

সিফাতের অবশ্য ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয়েছিল প্রথমবারের দেওয়া সরকারি চাকরির পরীক্ষাতেই। ঢাকার অদূরে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের হাসপাতালে, ও মেডিকেল অফিসার হিসেবে যুক্ত হয়েছিল। এখনো সম্ভবত ও ওখানেই কর্মরত আছে। আর এদিকে স্বপ্না সিফাতের বাড়িতে থেকেই চেম্বার করতো।

দীর্ঘদিনের সম্পর্ক, অতঃপর একটা সময়ের পরে বিয়ে, তবে এত কিছুর পরেও কিছু সম্পর্কে যেন হঠাৎই পরিবর্তন চলে আসে এবং সেই পরিবর্তনগুলো মেনে নেওয়া একপ্রকার কষ্টসাধ্যই হয়ে যায়। যেমনটা হয়েছিল স্বপ্নার ক্ষেত্রে। সিফাত যে তার কাছ থেকে দূরে দূরে থাকে বা সিফাতের যে অন্যত্র কোন কিছু চলছে সেটা স্বপ্না বুঝতে পেরেছিল, সিফাতকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিল, তবে ব্যাপারটা অনেকটাই জটিলতা সম্পন্ন হয়ে গিয়েছিল।

মূলত সিফাত যেখানে চাকরি করতো সেখানকার জুনিয়র কলিগের সঙ্গে সিফাতের একটা সম্পর্ক তৈরি হয়ে যায়। এটা আসলে কিভাবে হয়ে যায়, সিফাত নিজেও সেটা বুঝতে পারে না। এই যে সিফাত আর স্বপ্নার সম্পর্কের মাঝে ভাঙ্গন শুরু, তা যেন ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছিল। কতো সুন্দর সম্পর্কটা, আজকাল ক্রমেই নিষ্প্রাণ হয়ে যেত লাগলো।

সিফাত আসলে এতটাই জটিলতা সম্পন্ন ভাবে জুনিয়র কলিগের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে গিয়েছে সেখান থেকে আসলে তার পক্ষে বেরিয়ে আসা অনেকটাই মুশকিল। একপ্রকার চাপে পড়ে সেখানেও তাকে বিবাহবন্ধনে জড়িত হতে হচ্ছে আর এমন খবর যখন স্বপ্নার কানে এসেছে তখন স্বপ্না যেন অনেকটা পাগলের মতো হয়েছে।

কি করবে সেটা সঠিক বুঝে উঠতে পারছে না, এদিকে বারবার ফোনে সিফাতকে কল করেও পাচ্ছে না। নিজের পরিবারকে যে ব্যাপারটা খোলাসা করে বলবে সেই সুযোগটাও সে রাখেনি এবং সিফাতের পরিবারকে যে বলবে, তেমনটা মানসিক অবস্থাতেও সে নেই।

স্বপ্না মেয়েটা আসলে নিজের থেকেই অনেকটা নিজেকে গুলিয়ে ফেলেছে। সকালবেলা চেম্বার করতে এসেছে, দুটো রোগী দেখার পরেই, রিসিপশনের লোককে ডেকে বলল, বাকী রোগীগুলো সে আজ আর দেখবে না। তাদেরকে অন্য দিন আসার কথা বলে দিল। রিসিপশনের লোকটা বারবার স্বপ্নাকে জিজ্ঞাসা করার চেষ্টা করছিল, ম্যাডাম আপনার কোন সমস্যা হয়েছে নাকি, তখন আসলে স্বপ্না তার কথারও সেভাবে উত্তর দেয়নি।

ঘন্টা দুয়েক পরে রিসিপশনের লোকটা যখন দেখলো স্বপ্নার রুম থেকে কোন প্রকার সাড়া শব্দ আসছে না তখন সে নিজেই স্বপ্নার কক্ষে প্রবেশ করার চেষ্টা করল এবং গিয়ে দেখল স্বপ্না মাথা নিচু করে, টেবিলের উপর শুয়ে আছে আর ছোট্ট একটা চিরকুট সামনে, তাতে স্পষ্ট করে লেখা আছে, তোমার পাশে আমি অন্য কাউকে সহ্য করতে পারবো না, ভালো থেকো।

রিসিপশনের লোকটা যখন স্বপ্নার একটু কাছে গিয়ে চেয়ার নেড়ে ডাকার চেষ্টা করলো আর তাতেই যেন মুহূর্তেই স্বপ্নার শরীরটা মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। ঘটনা আসলে অন্যদিকে ঘটেছে তা বুঝতে পেরেছে রিসিপশনের লোকটা। ভদ্রলোক দ্রুত অ্যাম্বুলেন্স ডেকে স্বপ্নাকে হসপিটালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করল এবং তাদের পরিবারের লোকজনকে খবর দেওয়ার চেষ্টা করল।

এখন স্বপ্না আইসিইউতে ভর্তি আছে, ডাক্তার প্রাথমিকভাবে ডায়াগনোসিস করে যা বুঝতে পেরেছে, তা মূলত অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ সেবনের কারণে স্বপ্নার এই অবস্থা, আপাতত কিছুই বলা যাচ্ছে না,তবে শারীরিক অবস্থা ভীষণ সঙ্কটাপন্ন। আজ যখন সন্ধ্যেবেলা সোশ্যাল মিডিয়ার নিউজ ফিড ঘাঁটছিলাম, হুট করেই স্বপ্নার এমন সংবাদটা আমার এক কলেজের বন্ধুর পোস্টে দেখলাম। বেশ ভালই ব্যথিত হয়েছি, খবরটা শোনার পর থেকে। বারবার পুরনো দিনের স্মৃতিগুলো চোখের সামনে ভাসছিল। সিফাত, স্বপ্না আর বাকি সব কলেজ জীবনের বন্ধুদের কথা।

স্বপ্না আসলে কতটা কষ্টে এরকম ভয়ংকর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা আসলে বলা বেশ কষ্টসাধ্য। তার থেকেও বেশি দুঃখ লাগে ঠিক তখন, যখন সিফাতের মত মানুষরা হঠাৎই নিজেদের স্বার্থে তাদের রূপ বদলে ফেলে। তবে আর যাইহোক, সিফাতের মতো মানুষকে এখন আর কোন অবস্থাতেই, বন্ধু বলে পরিচয় দিতে ইচ্ছে করছে না ।

Banner-16.png

ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht


20211003_112202.gif


JOIN WITH US ON DISCORD SERVER

banner-abb4.png

Follow @amarbanglablog for last updates


Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png

Sort:  
 11 months ago 

আপনার বন্ধু স্বপ্না আর সিফাতের ঘটনা পড়ে খারাপ লাগলো। আমাদের সমাজে এধরণের ঘটনা সচারচার ঘটে থাকে। মানুষের মন কার উপর কখন ভর করে বোঝা মুশকিল। তবে নীতি-নৈতিকতা বলে যে একটা কথা আছে তা অনেকেই ভুলতে বসেছে। বিশেষ করে শিক্ষিতরা যখন এসব ভুলে যায়, তখন বলার মত কিছুই থাকেনা। সিফাত যেমন বউ থাকার পরেও আর একজনের সাথে জড়িয়ে যায় তা ভীষণ অন্যায় এবং অনৈতিক। স্বপ্নার জন্য শুভ কামনা। কিন্তু একজন সিফাতের জন্য নিজেকে শেষ করে দেয়ার চেষ্টা স্বপ্নার সেটাও ঠিক না। লেখাটি শেয়ার করার জন্য অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।

 11 months ago 

কেউ তো আর ইচ্ছা করে এমন ভয়ানক সিদ্ধান্ত নেয় না, হয়তো স্বপ্নার কাছে পৃথিবীটা অনেকটাই নরক লাগছিল, তাই হয়তো এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।

 11 months ago 

মুনীর চৌধুরী যথার্থই বলেছিলেন, " মানুষ বেঁচে থাকলে বদলায়। কারণে-অকারণে বদলায়। " আসলেই তাই। তবে এমন পরিবর্তন গুলো কাম্য নয় যা কারণ ছাড়াই কাছের মানুষ গুলোকে কষ্ট তো দেয়ই আবার এমন মৃত্যুর মুখেও ঠেলে দেয়। আপনার বান্ধবী স্বপ্নার জন্য দোয়া রইলো যেন বেঁচে যায়। আর আপনার বন্ধুর এমন অপকর্মের সঠিক কর্মফল দিতে পারে।

Posted using SteemPro Mobile

 11 months ago 

আসলেই কখন কে বদলে যায় তা বলা মুশকিল।

 11 months ago 

ভাইয়া আপনার পোস্ট পড়ে সত্যি অনেক খারাপ লাগল। আসলে ভাইয়া স্বপ্না কেন আমার মনে হয় পৃথিবীর কেউ এমন সম্পর্ক মেনে নেবে না।আসলে যাইহোক সিফাতের এমন করা মোটেও উচিত হয়নি।হাজার বিপদের মধ্যে ও সিফাতের বিয়ে করা উচিত হয়নি।দোয়া করি স্বপ্না সুস্থ হয়ে ফিরে আসুক।

 11 months ago 

ব্যাপারটা আসলেই অনেকটাই জটিলতা সম্পন্ন ছিল আপু।

 11 months ago 

নিজের প্রিয়জনকে হারানো নিজের প্রিয়জনের পাশে অন্য কাউকে দেখা মোটেই সহজ না। এটা যেন একেবারে নরক যন্ত্রণা দেয়। তার চেয়ে যেন আত্মহত্যায় ভালো উপায়। যেমনটা স্বপ্নার ক্ষেএেও দেখা গিয়েছে। আর সিফাত সে আসলেই একজন হতভাগা যে স্বপ্নার ভালোবাসার মর্যাদা রাখতে পারেনি। বিষয়টি খুবই খারাপ লাগল জেনে। আশাকরি উনি খুব দ্রুতই সুস্থ হয়ে যাবেন।।

Posted using SteemPro Mobile

 11 months ago 

আত্মহত্যা তো আসলে কোন অবস্থাতেই সমাধান হতে পারে না, তবে স্বপ্না অনেকটাই ভয়ানক সিদ্ধান্ত নিয়েছিল , হয়তো সেটা নিজেকে নিয়ন্ত্রিত করতে না পেরে।

 11 months ago 

সিফাতের মতো মানুষদের জন্যই বর্তমানে ঘরে ঘরে এতো অশান্তি। স্বপ্নার এতোদিনের ভালোবাসা তুচ্ছ হয়ে গিয়েছে সিফাতের স্বার্থের কাছে। সিফাত যদি স্বপ্নাকে মন থেকে ভালোবাসতো, তাহলে এমনটা কখনোই করতে পারতো না। কারণ যারা প্রকৃতভাবে ভালোবাসে,তারা কোনো অবস্থাতেই অন্য কারো সাথে জড়াতে পারে না। সিফাতের মতো মানুষেরা ভালোবাসার অযোগ্য। পোস্টটি পড়ে সত্যিই ব্যথিত হলাম।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.13
JST 0.028
BTC 59871.00
ETH 2671.84
USDT 1.00
SBD 2.47