বিকর্ষণ || @shy-fox 10% beneficiary
এই গ্রামে আমি দেড়টা বছরের মতো সময় অতিবাহিত করেছিলাম । তার পেছনে অবশ্য ব্যক্তিগত কারণ ছিল । আমি মনেকরি যে, আমার জীবনে হঠাৎ করে গ্রামে চলে আসা আবারও সেই গ্রাম থেকে পরবর্তীতে শহরে চলে গিয়ে বাসস্থানের ব্যবস্থা করা । এইটা অনেকটাই দীর্ঘতর পূর্ণ ব্যক্তিগত ট্রাজেডি ছিল । তবে আমি মনেকরি যে মানুষের জীবনে মাঝে মাঝে এরকম ট্রাজেডি আসা দরকার তাহলে মানুষ জীবনের আসল রুপ গুলোকে খুব কাছ থেকে আরও ভালভাবে দেখতে পারে ।
যদিও মোটামুটিভাবে মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান ছিলাম আর তাছাড়াও পারিবারিকভাবে বাবা-মা দুজনই সরকারি চাকুরির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল কিন্তু তারপরেও আমি মানুষটা ভীষণ স্বাধীনচেতা স্বভাবের ছিলাম এবং আমি বেশি প্রাধান্য দিতাম আমার নিজের চিন্তাচেতনা ও স্বাধীনতাকে । আমার কাছে যেটা যৌক্তিক সেটা নিতান্তই যৌক্তিক আর আমার কাছে যেটা অযৌক্তিক সেটাকে আমি কখনোই যৌক্তিক বলে দাবী করি না ।
মুক্তমনা মানুষ আমি তাই মুক্ত ভাবেই চেষ্টা করি নিজেকে প্রতিনিয়ত উপস্থাপন করতে এবং সবকিছু ভাবতে । যাইহোক অতীতের কথা আর না বলি । তবে আমার খুব কঠিন সময়ে আমি আমার শ্বশুরবাড়িতে অবস্থান করেছিলাম এবং দীর্ঘ দেড় বছর সেখানেই ছিলাম এবং সেই সময় বাবু তখন হীরার গর্ভে এবং হীরা নিজেও বেশ মানসিক সমস্যার ভিতরে ছিল । আমি এ যাত্রায় বেশ কৃতজ্ঞ আমার শ্বশুর-শ্বাশুড়ির সকলের কাছে কারণ তারা আমাকে যথেষ্ট মানসিক সাপোর্ট দিয়েছিল সেই সময়টাতে।
আসলে যারা জীবনে স্বাধীনভাবে বাঁচতে চায় তাদের আসলে জীবনে বেশ ভালোই ঝুট-ঝামেলা ও ধাক্কা খেতে হয় । তার মনেহয় বাস্তব প্রমাণ আমি নিজেই । তবে আমি আর কারো উপর কোন অভিমান বা অভিযোগ রাখিনি । তবে দীর্ঘ ২৮ বছর যে শহরে থেকে আমি বড় হয়েছি সেই শহরটা হঠাৎ করেই সেদিন আমার কাছে যেন বড় অচেনা লাগছিল ।
তারপরেও তো আবারও সেই শহরে এখন থাকছি তবে এই শহরটাকে এখন চিনছি নিজের মতো করে । যেটা আমি আগে জানতাম সেক্ষেত্রে আমার জানায় বেশ ভুল ছিল । তবে এখন যেভাবে জানছি আমি মনেকরি এটাই শতভাগ সত্য ও বাস্তব ।
গ্রাম থেকে শহর আবার শহর থেকে গ্রাম, সর্বোপরি দুটো চেম্বার সামলানো নিয়ে বেশ কঠিন একটা সময় পার করেছি । সেই ঝড়-বৃষ্টি থেকে শুরু করে এই কাদামাখা রাস্তায় আমি ক্রমাগত হেঁটে গিয়েছি আবার পিচ ঢালা রাস্তা থেকে নতুন করে ভাড়া গাড়ি নিয়ে আবারো শহরের চেম্বারে আবার সেখান থেকে সারাদিন প্রাকটিস করে বিকেলবেলা আবারো গ্রামের চেম্বার প্রাকটিস করে তারপরে আবারো এই গ্রামের কাঁচা রাস্তা দিয়েই বাড়িতে ফিরেছি । বেশ ভালোই শারীরিক পরিশ্রম গিয়েছিল সেই সময় । আজ হুট করেই যেন সেই সময় গুলোর কথা মনে পড়ছে ।
হয়তো বর্তমানে আমার জীবন-জীবিকাতে অনেকটাই পরিবর্তন এসেছে । তবে আমি আসলে কোনোভাবেই আমার অতীতটাকে ভুলে যেতে পারি না । এই গ্রামেই দীর্ঘ দেড়টা বছর আমি কাটিয়েছি এবং এখানে থেকেই মোটামুটি কর্মের দিকেও ছোটাছুটি করেছি । যদিও বেশ কষ্ট হয়েছিল তবে তারপরেও মানিয়ে নিয়েছিলাম । আসলে আমি চেষ্টা করেছিলাম জীবনটাকে খুব কাছ থেকে দেখার জন্য । আমি জানিনা জীবনের কতটা কঠিন বাস্তব রূপ আমি দেখেছি । তবে এই পর্যন্ত জীবনে যতটুকু আমি দেখেছি ততটুকুই আমার কাছে বেশ পরিপক্ক অভিজ্ঞতা দিয়ে গিয়েছে ।
এই গ্রামের প্রধান সমস্যায় হচ্ছেই যাতায়াত ব্যবস্থার করুন অবনতি । সেই সময় এই বর্ষার দিনে গ্রামে ভ্যান গাড়ি পর্যন্ত আসতে চাইতো না । যার কারণে মোটামুটি কাদামাখা খালি পায়ে হেঁটে যেতে হতো বাজার পর্যন্ত । তারপরে ওখানে গিয়ে পা পানি দিয়ে পরিষ্কার করে তারপরে আবার অন্য গন্তব্যে যেতে হতো । তাহলে একটা বার চিন্তা করে দেখুন কি পরিমাণ একটা মানসিক চাপে থাকতে হতো প্রতিনিয়ত সেই বর্ষাকালীন সময়ে ।
যাইহোক সেই সব তো অতীতের কথা । যদিও আর নতুন করে মনে করতে চাচ্ছি না । তবে শুধুমাত্র বলবো যে মানুষের হয়তো সাময়িক সুখটাকে দেখে আপনার অনেক কিছুই মনে হতে পারে কিন্তু এই সাময়িক সুখের জন্য মানুষ যে কি পরিমাণ অতীত জীবনে কষ্ট করেছে, সেটা হয়তো কেউ সহজে বুঝে উঠতে চায় না ।
আমি ও হীরা যখন আজ বিকেলবেলা বাহিরে বের হয়েছি তখন মূলত চেষ্টা করছিলাম আশেপাশের প্রকৃতির ছবি তোলার জন্য । যদিও গতদিন কিছু ছবি দিয়েছিলাম হয়তো সেগুলো অনেকের দৃষ্টি কেড়েছিল । তবে আজকে যে ছবি গুলো শেয়ার করলাম, তাতে অনেকের আকর্ষণ না হয়ে বিকর্ষণ হতে পারে । তবে এইটা একদম প্রকৃত সত্য কথা যে , এইটাই আপামর গ্রাম বাংলার বর্ষাকালের প্রকৃত চিত্র ।
ডিসকর্ড লিংক:
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
ভাইয়া আপনি একদম ঠিক বলেছেন আমাদের প্রত্যেকেরই জীবনে মাঝে মাঝে ট্রাজেডি আসা উচিত। আসলে বিপদের সময় আশেপাশের মানুষগুলোকে চেনা যায়। তখন মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে থাকা মানুষগুলোর আসল চেহারা বেরিয়ে আসে। আর যারা আপনজন তারা আমাদেরকে আরো বেশি আপন করে নেয়। ভাইয়া আপনি অতীতের স্মৃতি গুলো সুন্দর ভাবে তুলে ধরেছেন এজন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
জীবনে ট্রাজেডি না থাকলে ,জীবনের আসল মানেই তো খুঁজে পাওয়া যায় না আপু ।
ভাইয়া কোথায় আছে নদীর এক কুল ভাঙ্গে অন্য কূল গড়ে। আপনার জীবনেও ঠিক এরকমই হয়েছে বলে আমার মনে হচ্ছে। আপনার জীবনে ট্রাজেডির সময় আপনার শ্বশুরবাড়ির পক্ষ থেকে সাপোর্ট পাওয়াটা ছিল আপনার জীবন গড়ার এক ধরনের ভিত্তি। আর গ্রাম বাংলার কথা আর কি বল ভাইয়া আমি নিজেও গ্রামে বসবাস করি। সেক্ষেত্রে বর্ষাকালে গ্রামের চিত্র দেখে কেমন হয় সেটা আমার খুবই ভালোভাবেই জানা। প্রিয় ভাইয়া আপনার জন্য অনেক অনেক দোয়া ও আশীর্বাদ রইল। সৃষ্টিকর্তা আপনাকে দীর্ঘজীবন দান করুক।
ভাইয়া আপনার এই কথা সাথে আমি ১০০%একমত ,মানুষের বর্তমানটা সবাই দেখে তবে সেই মানুষটা কোন জায়গা থেকে কষ্টের পরে আজ এতো উন্নত তা কিন্তু কেউ জানতে ও চাইবে না। তবে আজকের পোস্ট থেকে অনেক কিছু বুঝার ছিল। ধন্যবাদ।
ফেলে আসা অতীত কি সকলে দেখতে চায় সবাই তো শুধু বর্তমান দেখে হা-হুতাশ করে ম্যাম ।
ভাই জীবনটা এমনি সবকিছুর স্বাদ গ্রহণ করতে হয় ৷আপনার গ্রামে দেড় বছর কাটানো মুহূর্ত কথা গুলো পড়ে অনেক ভালো লাগলো ৷আসলে কি ভাই জীবনটা এমনি ছুটতে হয় অবিরাম ৷আপনি এক সময় গ্রামের এই কাচা কাদা রাস্তা দিয়ে রোজ যেতেন আর এখন বড় শহরের রাস্তা দিয়ে রোজ হাটেন ৷তবুও অতীত টাকে কখনো ই ভোলা যায় না ৷
যাই বলেন ভাই ভাবি কিন্তু গ্রামে এখন দেখতে পুরো বাঙালি বধু গিন্নির মতো লাগতেছে হাহাহাহা হাহাহা!!!!!
ঘটনা ক্রমেই জীবনের নতুন মোড়ক উন্মোচিত হয়।আর এভাবেই প্রভাবিত হয় জীবন।জীবনে ভালো খারাপ দুইটা সময় এই আসে তবে সবকিছুকে ছাপিয়ে নিজের মতো বাঁচতে পারাটা অনেক শান্তির।আর রাস্তা গুলো দেখে মনে হচ্ছে চাষ না করেই ধান লাগানো যাবে😁😝
রাস্তার যে অবস্থা তাতে কথাটা নেহাত মন্দ বলো নি ভাই ।
ভাইয়া আপনি বাড়ি থেকে বাহির হয়ে,এই গ্রামে থেকে যে সময়টা অতিবাহিত করেছেন,বর্তমানে আমিও এমন সময় অতিবাহিত করতেছি। আপনার পোষ্ট পড়ে অবশ্য ভরসা পাচ্ছি,আমার সময়ও একসময় পরিবর্তন হবে। সেই আশায় চেষ্টা করে যাচ্ছি। আপনি আজকে যে ফটোগ্রাফি গুলো সেয়ার করেছেন, সেটা প্রকৃত গ্রামের বর্তমান চিত্র। ধন্যবাদ ভাইয়া।
জীবন আসলেই পরিবর্তনশীল লেগে থাকুন সফল একদিন হবেন । শুভেচ্ছা রইল।