দীর্ঘদিন পরে সাইকেলে ঘোরাঘুরি
প্রাইমারিতে বৃত্তি পাওয়ার পরে সেই সময় মা আমাকে একটা সাইকেল কিনে দিয়েছিল। যদিও আগে থেকেই শর্ত দিয়ে রেখেছিলাম, যদি আমি বৃত্তি পাই তাহলে আমাকে সেদিনই যেন সাইকেল কিনে দেওয়া হয়। সেসময় মা তার কথা রেখেছিল, যেদিন রেজাল্ট হয়েছিল সেদিন বিকেলেই লাল রংয়ের একটা বাইসাইকেল আমার জন্য নিয়ে আসা হয়েছিল ।
সেটা দিয়ে দিব্যি পরের পাঁচ বছর অনায়াসেই সাইকেল চালিয়ে এখানে সেখানে কতো ঘোরাঘুরি করেছি তার কোন হিসেব নেই। এভাবে কখন যে মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে গিয়েছিলাম, তা আর খেয়াল করে উঠতে পারিনি। যদিও পরবর্তীতে সেই লাল রঙের সাইকেলটা আমার নানুবাড়ির এক আত্মীয়ের ছেলেকে দিয়েছিলাম, যেন সাইকেলটা অহেতুক বাসায় পড়ে না থেকে, যেন এর সঠিক ব্যবহার হয়, ঠিক এজন্য।
তারপর তো দীর্ঘ বহু বছর বলা যায়, প্রায় ১০ বছরের অধিক আর সেভাবে কখনো সাইকেল চালানো হয়নি বা কারো সাইকেলের পিছনে চড়ে কোথাও ঘুরে বেড়ানোও হয়নি। যত উপরের দিকে উঠছিলাম, জীবন থেকে তত সবকিছু যেন দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছিল।
আজ প্রায় দীর্ঘ ১০ বছর পরে আবারো সাইকেলের পিছনে চড়ার স্বাদ উপভোগ করলাম। গ্রামের যে জায়গাটাতে আছি, সেখান থেকে গ্রামের বাজারের দূরত্ব কমপক্ষে ২ কিলোমিটার আর এই দুই কিলোমিটার গ্রামীণ মেঠোপথে মাঝে মাঝেই যানবাহন পাওয়া যায় না, তাই বাধ্য হয়ে পায়ে হেঁটেই বাজারে যেতে হয়।
কিছুটা প্রয়োজনের তাগিদে পায়ে হেঁটেই আজ বিকেলের দিকে বাজারের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলাম , পথিমধ্যেই মান্নান কাকুর সঙ্গে দেখা। সে আমার পূর্ব পরিচিত, তারথেকেও বড় বিষয় গ্রাম সম্পর্কে সে আমার আত্মীয় হয়। যেহেতু আমাকে পায়ে হেঁটেই গ্রামের বাজারের দিকে যেতে দেখছে, তাই সে স্বেচ্ছায় তার সাইকেল থামিয়ে দিয়েছে রাস্তার ভিতরে।
৬৫ বছর বয়সেও একদম শক্তপোক্ত মানুষ সে। রোজ বিকেলে এই পথ ধরেই সে সাইকেল নিয়ে গ্রামের বাজারে যায়। আর আজ যেহেতু সে আমাকে দেখেছে, তাই আমাকে বলেই ফেলল, উঠে পড়ো ভাতিজা আমার সাইকেলের পিছনে, পায়ে হেঁটে কতক্ষণে যাবে। কাকুর কথা শুনে প্রথমে আমি কিছুটা ভ্যাবাচেকা খেয়ে ছিলাম, তারপরে প্রস্তাব ফেলতে পারিনি, অবশেষে এক প্রকার রাজি হতে বাধ্য হয়েছিলাম।
কাকু এই বয়সে এসেও, যেভাবে দিব্যি আমাকে সহকারে সাইকেল চালিয়ে গ্রামের বাজারে এলো, তা ভেবে রীতিমতো আমি অবাক। অনেকটা পথ গল্প গুজব করেই দুজন মিলে চলে আসলাম। আমাকে যাত্রাপথে বারবার বলছিল, তোমার ওজন আর কতখানিই হবে, তারথেকেও বেশি ওজনের বস্তা আমি সাইকেলে নিয়ে এদিক-সেদিক এখনো ঘোরাঘুরি করি।
তার আত্মবিশ্বাস আমাকে অনেকটাই মুগ্ধ করেছে। বাজারে আসার পরেই তাকে নিজের থেকেই চায়ের প্রস্তাব দিলাম, যদিও প্রথমে রাজি হতে চাননি, পরে এক প্রকার তাকে বাধ্য করেই মজনু কাকুর দোকানে বসে দুজন মিলে চা খেয়ে নিলাম।
কঠোর পরিশ্রমী এই মানুষগুলো। আমার বয়স কতই হবে, এইতো সবেমাত্র ৩০ অতিক্রম হল আর তাতেই আমার শরীরের যে অবস্থা, সেই তুলনায় কাকুর মত বয়স আসতে আসতে, আমার শরীরের যে কি অবস্থা হবে,তা যেন ভেবেই পাচ্ছি না। যেহেতু দীর্ঘদিন পরে সাইকেলে ওঠার সুযোগ হয়েছিল, তাই বলব মুহূর্তটা আমার কাছে এক কথায় দারুন ছিল।
ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
VOTE @bangla.witness as witness
OR
https://twitter.com/sharifShuvo11/status/1703316216948129892?t=hmHZ0Hity2_9QH-Xu7wzNg&s=19
You've got a free upvote from witness fuli.
Peace & Love!
আসলে গ্রামের এই মানুষ গুলো কঠোর পরিশ্রম করে যার কারণে এদের শারীরিক সক্ষমতা অনেক বেশি থাকে। বেশ ভালো লাগলো দীর্ঘদিন পরে আপনার সাইকেলে চলার অভিজ্ঞতা শুনে ।আসলে সাইকেলে চড়তে বেশ ভালই লাগে, অনেক ছোটবেলায় চড়ে ছিলাম।ধন্যবাদ আপনাকে।
আপু, আমার কাছেও সময়টা বেশ ভালই রোমাঞ্চকর ছিল।
ভাই সাইকেলের কথা শুনে সেই শৈশবের কথা মনে পড়ে গেল। বাবা-মা যখনই কোন কিছু কিনে দিতে চাইতো তখনই শর্ত ঢুকে দিতো। সেই সময় সাইকেল খুব মজার একটা যানবাহন। যখন সাইকেল চড়েছি তখন মনে হয়েছিল কি পেলাম। যে কোন প্রয়োজনের তাগিদে দুই কিলোমিটার পথও হেঁটে যেতে হয়। ভাই পরিবারে দেওয়া সেই সাইকেল থাকলে কিন্তু এই কষ্টটা করা লাগত না।
হাহা! ভাইয়া মান্নান কাকা কিন্তু বেশ শক্ত লোক! এই বয়সে এসে যে আপনাকে সাইকেলে তুললো। আমি ভাবছিলাম কোথাও পরে যাননি তো আবার! যাক, অনেকদিন পর তো সাইকেলে চড়ার একটা ফিলিংস পেলেন। আহা! কত চালিয়েছি সাইকেল! এখন সাইকেল পরে থাকে, চালানোর মানুষ যেন নেয় 🙂
পড়ে যাওয়ার ভয় প্রথমে আমার কিছুটা ছিল, তবে ভদ্রলোকের সাহসিকতা আমাকে মুগ্ধ করেছে।
আসলেই ভাই আগেকার মানুষগুলো আমাদের থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী। এটা বেশ অবাক করে আমাকে। এতো বছর পরে আবার সেই সাইকেলে উঠলেন বিষয়টি বেশ রমাঞ্চকর বলতেই হয়। আমি নিজেও সেই বছর দুই আগে সাইকেল ছেড়েছি। বিকেলে বাজারে যাওয়ার সময় আপনার সাইকেলে উঠার ব্যাপার টা ভালো লাগল ভাই। ধন্যবাদ আপনাকে।।
ভাই আগের দিনের মানুষ গুলো বেশ পরিশ্রমী ছিলো। তারা নির্ভেজাল খাবার খেতে পেরেছিল। তাই তাদের শরীরে প্রচুর শক্তি। ছোটবেলা আমিও সাইকেল চালিয়ে এদিক সেদিক অনেক ঘুরাঘুরি করেছিলাম। আপনার পোস্ট পড়ে সেই ছোটবেলার স্মৃতি মনে পড়ে গেল। অনেক দিন পর সাইকেলে চড়ে অনেকটা পথ পাড়ি দিলেন। যাইহোক এতো সুন্দর অনুভূতি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
আসলেই ভাই আগের দিনের মানুষগুলো বেশ ভালই পরিশ্রমী, সেটার যেন জলজ্যান্ত প্রমাণ আমি সেদিন পেয়েছিলাম।