সোহাগী
সম্ভবত বিগত তিন মাস হচ্ছে ভদ্র মহিলা আমাদের বাসায় গৃহস্থালির কাজ করে। যদিও ভদ্রমহিলা অন্য ধর্মালম্বীর, তবে এই ব্যাপারটা আমার কাছে খুব একটা বেশি মাথা ব্যাথার কারন না। আমার কাছে তার প্রথম ও শেষ পরিচয়, সে মানুষ ।
এই বিগত তিন মাসে তাকে মনেহয় সম্ভবত দুই থেকে তিন দিন দেখেছিলাম, তাও কোনরকমে ঘুম কাতুরে চোখে। আসলে সে যখন মূলত বাসায় কাজে আসে, তখন আমি ঘুমিয়ে থাকি। আর এতো সকালে ঘুম থেকে কোন ভাবেই ওঠা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তাই হয়তো তেমন একটা দেখা বা কথা হয় নি।
একদিক থেকে অবশ্য, দোতলার বৌদিকে ধন্যবাদ দিতে হয়। কারণ বৌদি, সোহাগী দিদির খোঁজ করে দিয়েছিল। আর তাছাড়া হীরা একা কোনভাবেই বাবুকে সামলানো ও সঙ্গে বাসার কাজ একত্রে করে, পেরে উঠতে পারছিল না। হয়তো সেই চিন্তাধারা থেকেই মূলত হীরাও রাজি ছিল সোহাগী দিদিকে কাজে নিতে ।
ঐ যে বললাম তিন মাসে সম্ভবত আজকে নিয়ে তাকে আমি কোন রকমে, তিনবার দেখেছি। সে আসলে কখন আসে, কখন কাজ করে আবার কখন চলে যায়, এইসব কিছুই আমি জানিনা। যদিও এসব জেনেও আমার কোন লাভ নেই।
এ শহরের একদম শেষ প্রান্তে সোহাগী দিদির বাড়ি। যতদূর শুনেছিলাম, তার স্বামী পেশায় একজন রিক্সাচালক আর দিদি আমাদের বিল্ডিং এই অনেকের বাসাতেই গৃহস্থালির কাজ করে । এভাবেই চলে যাচ্ছে সোহাগী দিদির জীবন । দুটো মেয়ে সন্তানের মা সে। বড় মেয়েটার নাকি ইতিমধ্যে বিয়েও দিয়েছে। আপাতত এর বেশি তথ্য আমার কাছে আর নেই। যদি এসব তথ্য আমার গিন্নির মারফতেই পেয়েছিলাম।
এখনো মাসের শেষ হয়নি তাতেই অগ্রিম পয়সা চাচ্ছে দিদি । হীরা সকালবেলায় আমাকে ঘুমের মাঝে ডাক দিয়েছে। যদিও আমি একদম শেষ রাতের দিকে ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম। তা জানা সত্বেও হীরা আমাকে ডেকেছে। আমি বুঝতে পারলাম যে, হয়তো গুরুত্বপূর্ণ কোন বিষয়। তাই চেষ্টা করলাম তার কথায় কর্ণপাত করার জন্য ।
শুনছো,দিদির নাকি মেয়ে আর তার জামাই গতরাত্রে তাদের বাড়িতে বেড়াতে এসেছে। এজন্য দিদি এ মাসের পয়সাটা একটু দ্রুত চাচ্ছে। তুমি যদি ব্যাপারটা একটু সহজে গ্রহণ করতা, তাহলে বেশ ভালো হতো তার জন্য । দিদি আসলে অন্য বাসাতেও মনে হয় বলেছিল, তবে আশানুরূপ তেমন কোন উত্তর পায়নি ।
কিছু মানুষের মুখের কোনে হাসি দেখতে আমার সব সময়ই ভালো লাগে। এই হাসি গুলো অনেকটা প্রশান্তির হয়। সকালবেলা এরকম প্রশান্তিপূর্ণ একটা হাসি দেখব, সেটা কখনোই ভেবে উঠতে পারিনি। হীরাকে বললাম, কম্পিউটার টেবিলের কোনায় মানিব্যাগ রাখা আছে। ওখান থেকে দিদিকে তার পারিশ্রমিকটা দিয়ে দাও ।
শরীরে কালো রংয়ের একটা চাদর মোড়ানো। সম্ভবত খয়েরী রংয়ের একটা শাড়ি পড়নে ছিল। বেশ পরিশ্রম যে বাসার কাজে করেছে, তা তার চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে। সম্ভবত কেবল হাতে-মুখে পানি দিয়ে এসেছে। তবে তারপরেও সিঁথিতে তার লাল রংয়ের সিঁদুর দেখতে বেশ ভালই লাগছিল। পয়সাটা পাওয়ার পরেই, দু হাত করজোড় করার মতো করে উপরের দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে নিজে নিজে কি যেন বলছিল আর মুখের কোনায় সেই ক্ষুদ্র হাসি।
হাসিটা মনে হয় প্রাপ্তির, এটা মনে হয় পূর্ণতার। হয়তো পয়সাটা তার আসলেই খুব দরকার ছিল। তাই হয়তো তার বহিঃপ্রকাশ এভাবে ঘটেছে। ঘুমকাতুরে চোখে কোনরকম যখন সোহাগী দিদির মুখের প্রশান্তির হাসিটা দেখলাম। যাইহোক তখন নিজের কাছেও বেশ ভালোই লাগছিল।
ভালো থাকুক সোহাগী দিদি, তার পুরো পরিবার নিয়ে। এমন হাসি প্রতিনিয়তই লেগে থাকুক তার মুখে ।
ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
VOTE @bangla.witness as witness
OR
সোহাগী দিদির জীবনের কিছুটা গল্প শুনলাম আপনার মাধ্যমে। কিছু মানুষ জীবনের প্রয়োজনে কাজ করে, সেখানে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতায় কারোর একটু সহানুভূতি পেলে তাদের মনে সত্যিই আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। বোঝা গেলো তার টাকাটা ভীষণ প্রয়োজন ছিল, কয়েকটি বাসায় হয়তো চেয়ে পায়নি। যাক আপনার মাধ্যমে তার সমস্যা সমাধান হয়েছে এবং আপনার জন্য দোয়া করেছে এটাই বড় বিষয়।
ভালো লাগলো ভাই সোহাগী দিদিকে ঘিরে আপনার পোস্টটি।
একজন মানুষের মুখে হাসি ফোটানো সত্যি অনেক প্রশান্তির। আসলে আপনি তাকে এই সময় সাহায্য করেছেন বলেই হয়তো তার মুখের কোনে হাসি ফুটে উঠেছে। হয়তো তার কাজের প্রাপ্য টাকা সে কিছুদিন পরে পেত। কিন্তু তার বিপদে আপনি তার পাশে দাঁড়িয়েছেন এবং সময়ের আগেই তার টাকাটা দিয়েছেন জেনে সত্যিই ভালো লাগলো ভাইয়া। আসলে আপনার মত করে যদি সবাই চিন্তা করত তাহলে হয়তো সোহাগী দিদিদের মত মানুষরা আরো একটু ভালোভাবে বাঁচতে পারতো। ভালো লাগলো ভাইয়া আপনার লেখাগুলো পড়ে। আপনার লেখাগুলো যতই পড়ি ততই নিজেকে পরিবর্তন করার চেষ্টা করি। এরকম পরিবর্তন হয়তো সবার মাঝেই দরকার।
আপনি ঠিক করেছেন ভাইয়া সোহাগী দিদিকে তার বেতন গুলো অগ্রিম দিয়ে।আসলে অনেক প্রয়োজন ছাড়া হয়তো সে মুখ খুলেনি।এ ক্ষেত্রে আমি প্রথমে হীরা ভাবিকে অনেক ধন্যবাদ জানায় কারণ অনেক মহিলারা হয়তো নিজে থেকে বলে দিত মাস শেষ হয়নি, এখন কিসের টাকা,এতো সকালে ঢাকা যাবে না। সত্যি ভাইয়া সোহাগীর একটু হাসি টাকার থেকে ও অনেক মূল্যবান।আপনার জন্য শুভকামনা রইল।
কারো মুখে হাসি ফোটানোর সত্যিই অনেক প্রশংসাযোগ্য একটি কাজ। আপনার ঘটনাটি শুনে আপনার জন্য শ্রদ্ধা আরও মন থেকে বেড়ে গেল। এরকম মানুষের জন্যই আমাদের জীবন গুলা এত সুন্দর এবং সুষ্ঠভাবে পরিচালিত হচ্ছে। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই।
আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া। আশাকরি ভাল আছেন।আজ আপনার পোস্টের মাধ্যমে সোহাগী দিদির জীবনের গল্প শুনলাম।খুব ভাল লাগলো পড়ে আপনি তার প্রয়োজনে সময়ের আগেই টাকাটা দিয়েছেন, এতে তার মন থেকেই আনন্দের হাসি দেখা গেল।সত্যি আপনি মহৎ একজন মানুষ। আপনার মতো মানুষ আছে বলেই, পৃথিবী এত সুন্দর। ধন্যবাদ ভাইয়া, সব সময় ভালো থাকবেন এমনটাই আশাকরি।