বলদ
আচ্ছা রক্তে মাংসে গড়া মানুষগুলো এমন হয় কেন। যখন কিছু বিষয় নিয়ে গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে যাই, তখন যেন বড্ড গুলিয়ে যাই পারিপার্শ্বিক অবস্থা দেখে। মাঝে মাঝে মনে হয় যেসব দেখছি বা যা হচ্ছে, তাকে কি সঠিক হচ্ছে নাকি আমি ভ্রান্তিতে আছি। সাম্প্রতিক সময়ে এমন একটা ঘটনার চাক্ষুষ সাক্ষী আমি হয়েছি, যা আমাকে বেশ ভাবিয়ে তোলে।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশেও জুলহাম কখনো যেতে পারেনি। তবে তার বাবার অর্থনৈতিক অবস্থা বেশ ভালোই স্বচ্ছল ছিল বিধায় শুধুমাত্র পয়সার জোরেই ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ সে পেয়েছিল। আমি এখানে পাবলিক আর প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের তফাৎ করছি না। তফাৎ করছি মেধা আর পয়সার, শুরুমাত্র এতটুকুই ।
অনার্স মাস্টার্স মোটামুটি শেষ হয়েছে তার। একটা চাকরিও জুটে গিয়েছে এই ঊর্ধ্বগতির দ্রব্যমূল্যের বাজারে। চাকরি যেহেতু পাকাপোক্ত তাই একটু ভবিষ্যৎ নিয়ে বেশ চিন্তিত জুলহাম। তবে শিক্ষকতার মত সম্মানীয় পেশাতে থেকেও যে তার দ্বারা এমন আচরণ হবে, এটা ভাবতেই আমার যেন শরীরের লোমগুলো দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। আজ যে মানুষগুলোকে আমি চোখে দেখলাম, আদৌ তাদেরকে মানুষ বলব কিনা, এটা নিয়ে আমি বেশ দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে গিয়েছি।
চাকরি হয়েছে তাও প্রাইভেট একটা কলেজে, লেকচারার পদে । বয়স হয়েছে তাই বিয়ে-শাদীর মনোবাসনা জাগ্রত হয়েছে তার। তবে বিয়ে-শাদীর বাজারে যে এত হাঁক-ডাক হয়, তা সত্যিই আমার জানা ছিল না, যদি না তা আজ নিজ চোখে দেখতাম।
জুলহামের বাবা জুলহামের গলায় একটা সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিয়েছে। তার এই বলদ ছেলেকে যে বিয়ে করবে তাকে পনের লাখ টাকা গুনতে হবে আর তাছাড়া ছেলের মন যোগাড় করার জন্য মেয়ে পক্ষকে আলাদাভাবে আরও কিছুটা খুশি করতে হবে ।
জুলহামের বাবার সহজ কথা, ছেলেকে পড়াশোনা করাতে হয়েছে, অনেক বড় করতে হয়েছে, ওর পিছনে আমার অনেক পয়সা গিয়েছে। সেগুলো তো আর এমনি এমনি হয়নি।
এত হাকঁ-ডাকের পরেও জুলহামের কপালে একটা পাত্রী জোটা জোটা ভাব। তবে বিয়ের বাজারের জন্য ত্রিশ হাজার টাকা জুলহামের পছন্দ হয়নি। তার আরেকটু বেশি দরকার। সে তো সরাসরি বলেই দিয়েছে ত্রিশ হাজার টাকা দিয়ে কি বিয়ের শপিং হয়।
এই দর-কষাকষির মাঝে যখন একটা ফাঁকা সুযোগ পেয়ে গিয়েছিলাম তখন জুলহামের কানে একটা কথা পৌঁছে দিতে পেরেছিলাম । মেয়ের বাবা আমার দিকে তখন এমন ভাবে তাকিয়ে ছিল,আমি মনে করি ঐ তাকানোর মাঝে একটা শান্তি আছে, যেটা আমি উপলব্ধি করতে পেরেছিলাম।
যেহেতু এই এলাকাতে মোটামুটি দীর্ঘদিন যাবত থেকে আছি এবং কমবেশি সকলের সঙ্গে পরিচিত, তাই বিয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজের কথাবার্তার সময় হয়তো আমার ডাক পড়েছিল। তাছাড়া জুলহামকেও চিনি অনেক আগে থেকেই কিন্তু মানুষ বড় হলে তার নাকি মনুষত্ব ও মানবিক দিকগুলো বিভিন্ন ভাবে ফুটিয়ে ওঠে, হয়তো আমি বুঝলাম তার বাবার শিক্ষার কিছুটা অভাব আছে কিন্তু এতদিন বাহিরে থেকে পড়াশোনা করেও যে জুলহাম তার বাবার মতো বলদ হয়েছে, তা আমার জানা ছিল না।
দেখো ভাই জুলহাম, তুমি আমার থেকে বয়সে খুব একটা ছোট না। তবে তুমি এই মানসিকতা নিয়ে কিভাবে শিক্ষকতার মত পেশার সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছো, সেটা ভাবতেই আমার বেশ অবাক লাগছে। তবে কিছু মনে করো না ভাই, আমাদের এই মহল্লাতে আর যাইহোক, তোমার মত বলদ জামাইয়ের দরকার নেই। তুমি বরং নিজেকে অন্য হাটে তুলে বিক্রি করে দিও।
ফেরার পথে মেয়ের বাবাকে বলে আসলাম আর যাই করেন, বলদের গলায় নিজের মেয়েকে ঝুলিয়ে দিয়েন না, নইলে বড্ড পস্তাতে হবে ।
ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
![Heroism_3rd.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmRejDSNMUFmRz2tgu4LdFxkyoZYmsyGkCsepm3DPAocEx/Heroism_3rd.png)
VOTE @bangla.witness as witness
![witness_vote.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmW8HnxaSZVKBJJ9fRD93ELcrH8wXJ4AMNPhrke3iAj5dX/witness_vote.png)
OR
জুলহামের মতো এমন হাজারো মানুষ আছে যারা নিজের আত্মসম্মানবোধ বজায় রেখে চলতে পারে না। তারা একপর্যায়ে নিজেকে বিক্রি করে দিতে প্রস্তুত থাকে। নিজেকে অন্যের কাছে কতটা নিলজ্জ প্রমাণ করছে তারা নিজেরাও বোঝেনা। যাইহোক এরকম মানুষের কাছে নিজের পরিবারের কাউকে তুলে দেওয়াও চিন্তার বিষয়। সমাজের বাস্তব চিত্র আপনার লেখনীর মাঝে প্রকাশ করেছেন ভাইয়া। ভালো লাগলো আপনার লেখা পড়ে।
ধন্যবাদ আপু সুন্দর মন্তব্য করার জন্য। আপনাদের মতো পাঠকের জন্যই বারবার লেখার অনুপ্রেরণা পাই আমি। 🙏
যেসব মেয়ের বাবারা জেনে শুনে এরকম বলদের গলায় মেয়েদেরকে তুলে দেয় তাদের থেকে বলদ আর কেউ হতে পারে না। তাদের টাকার ডিমান্ড এবং অন্যান্য চাহিদা দেখে এদের মন মানসিকতার পরিচয় পাওয়া যায়। ছেলেদের ফ্যামিলির বা ছেলের যদি মন মানসিকতাই ভালো না থাকে তাহলে সেখানে যত টাকা পয়সা দিয়েই মেয়েকে বিয়ে দেওয়া হোক সেই মেয়ে কি সেখানে সুখী হতে পারবে? জুলহামদের মত এমন বলদ বর্তমান সমাজে অনেক অনেক বেশি। এদেরকে বলদ বললে ভুল হবে। অর্থলোভী পিচাশ বললে ঠিক হবে।
আসলে মেয়ের পরিবারের দিকেও হয়তো কিছুটা ত্রুটি ছিল, তবে এখানে ঘটকের কারসাজি বেশ বেশি উপস্থিত ছিল,তাছাড়াও আপনার কথায় বেশ যুক্তি ছিল আপু।
এগুলোতো ভাইয়া সেই আদিকালের অবস্থা। জুলহামের মত হাজারো জুলহাম সমাজে আনাচে কানাচে পাওয়া যাবে। আসলে শিক্ষা হলো এদের লেভাস। কষ্টের বিষয় হলো এত শিক্ষা গ্রহণ করেও যারা নিজেদের আত্মসম্মান বজায় রাখতে পারে না, কি দরকার তাদের শিক্ষা গ্রহণ করার। তাই তো বলে পুথিঁগত বিদ্যা আর পর হস্তে ধন নহে বিদ্যা নহে ধন হলে প্রয়োজন। হা হা হা
আমাদের সমাজে এমন অসংখ্য বলদ রয়েছে যারা নিজের মনুষ্যত্ববোধ বিক্রি করে দেয় খোলা বাজারে। নিজের ভেতরের বোধ বুদ্ধি না থাকলে তাকে বলদ বলাই শ্রেয়। একদম উপযুক্ত কাজ হয়েছে অন্তত বলদের গলায় মালা পরায় নি।
সত্যি বলতে আত্মসম্মান টিকিয়ে রাখা যার তার কাজ নয়। আর যে নিজের সম্মান নিজে টিকিয়ে রাখতে পারে না, সে আসলে বলদের সমতুল্য। যাই হোক অনেক ভালো লাগলো। আর বিশেষ করে আপনার রাইটিং পোস্ট গুলো অনেক বেশি ভালো লাগে।