মান্না ভাইয়ের মেয়ের সাফল্য
মান্না ভাইয়ের সঙ্গে সম্পর্ক আমার দীর্ঘদিনের। তার অবশ্য যথাযথ কারণ আছে। বিশেষ করে বাসা থেকে খুব বেশি দূরে কোথাও না গেলে, তার সিএনজি টা মাঝে মাঝে আমি ভাড়া নিয়ে থাকি। বিশেষ করে শ্বশুর বাড়ি বা গ্রামের বাড়িতে গেলে। কারণ যেহেতু খুবই স্বল্প দূরত্বের রাস্তা। তাই মোটামুটি অন্য গাড়ি আর নেই না। এজন্য তার সিএনজি টাই ভাড়া নিয়ে থাকি ।
মান্না ভাই পেশায় সিএনজি চালক হলেও, তার অনেক রকম কাজে দক্ষতা আছে। বিশেষ করে সে সকল প্রকার ইলেকট্রিক কাজ থেকে শুরু করে, পানির লাইনের কাজগুলো সে নিজের থেকেই শিখেছে। আসলে একটা মানুষ চাইলেই অনেক কিছু শিখতে পারে, যদি তার ইচ্ছা শক্তি থাকে ।
একবার তার সঙ্গে যাত্রাপথে, আমি তার মনের ইচ্ছের কথা জেনেছিলাম। সে আমাকে বেশ আগ্রহ নিয়েই বলেছিল, তার আসলে মনে যতটুকু ইচ্ছা ছিল, সেটা আসলে সে পূরণ করতে পেরেছে। তার এখন আসলে, তেমন কোন চাওয়া পাওয়া নেই বললেই চলে।
কথাটা শুনে রীতিমতো আমি খুবই অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। আমরা আসলে প্রতিনিয়ত নিজেদের চাওয়া পাওয়ার পেছনে ছোটাছুটি করছি আর উনি এত তাড়াতাড়ি তার মনে চাওয়া কিভাবে পূরণ করে ফেলেছে, এটা আমি অনেকটা নিজের কৌতুহলের জায়গা থেকেই, তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম ।
সে এক কথায় বলে দিয়েছিল, তার আসলে আকাশ কুসুম তেমন কোন চাহিদা ছিল না। তার চাহিদা ছিল, তার বাড়ির ভিতরে একটা লিচু গাছ থাকবে আর কবুতরের ছোট খামার হবে। তার এতটুকুই চাহিদা ছিল এবং সে যেহেতু তার চাহিদাগুলো পূরণ করতে পেরেছে, তাই তাতেই খুশি সে ।
সত্যি বলতে গেলে কি,খেটে খাওয়া মানুষগুলোর আসলে আকাশ কুসুম চিন্তা থাকে না। তাদের চাওয়া পাওয়া গুলোও অনেক ছোট থাকে। যাইহোক তার চাওয়া পুর্নতা পেয়েছে, এটাই তো অনেক বেশি ।
যেহেতু আমি দন্ত চিকিৎসক ছিলাম, এ সম্পর্কে মান্না ভাই আগে থেকেই জানতো। তার মেয়েটা যখন ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেছিল, তারপরে বেশ সে চিন্তিত ছিল। কারণ তার মেয়ে মোটামুটি মেধাবী ছাত্রী ছিল। সে আমার কাছে সেবার পরামর্শ চেয়েছিল। আমি তাকে বলে দিয়েছিলাম, যেহেতু মেধাবী ছাত্রী আপনার মেয়ে, তাইলে তাকে চেষ্টা করতে বলেন মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য ।
আসলে মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষা যে দেবে, তার জন্য তো কোচিং করতে হবে, সেই খরচটা পর্যন্ত সে তার মেয়ের জন্য জোগাড় করতে পারছিল না। তবে তার মেয়ের অদম্য ইচ্ছা শক্তির কারণে আসলে সবকিছু জয় করতে পেরেছিল। সেবার তো ফোন দিয়ে মান্না ভাই, আমার কাছে বেশ আনন্দে আবেগপ্রবণ হয়ে গিয়েছিল এবং আমাকে মিষ্টি খাওয়ানোর জন্য প্রচুর ভাবে জোরাজুরি করেছিলো। আমি যখন শুনলাম যে, তার মেয়ে ডেন্টালে চান্স পেয়েছে । তখন নিজের ভিতরে একটা গর্ববোধ কাজ করছিল, মান্না ভাই ও তার মেয়ের জন্য ।
আসলে একটা কথা হচ্ছে, মেধা আসলে কার কোথায় কিভাবে লুকিয়ে আছে, এটা আসলে বলা খুব মুশকিল। মান্না ভাইয়ের মেয়ের কথাই চিন্তা করুন তো, ঠিকমতো কোচিং করতে পারেনি, নিজে যতটুকু পড়াশোনা করেছিল ততটুকু দিয়েই সে ভর্তি পরীক্ষার মতন যুদ্ধে প্রস্তুতি নিয়েছিল এবং পরীক্ষাও দিয়েছিল। অবশেষে টিকে গিয়েছিল ঢাকা ডেন্টাল কলেজে।
মান্না ভাইয়ের সেবার গর্বের ব্যাপারটা খুব ভালো বুঝতে পারছিলাম। কারণ তাদের মতো নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে তার মেয়ে যখন ডাক্তারি বিদ্যায় চান্স পেয়েছে, এটা সত্যিই অনেকটা সাফল্যের বিষয়। তার মেয়ের পরবর্তী জীবন আরো সুখকর হোক, এমনটাই প্রত্যাশা ব্যক্ত করছি, একজন প্রাক্তন দন্ত চিকিৎসক হিসেবে ।
ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
VOTE @bangla.witness as witness
OR
অদম্য ইচ্ছা শক্তি মানুষকে সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেয়। সাধারণ পরিবার থেকে উঠে আসা অনেকেই জীবনে সফল হয়েছে। আসলে মান্না ভাইয়ের মত মানুষদের হয়তো চাওয়া পাওয়া গুলো খুবই অল্প। কিন্তু তারা জীবনে সুখী হতে জানে। অল্প চাওয়া গুলোর মাঝেও নিজের সুখ খুঁজে নিতে জানে। উনার মেয়ের সফলতায় সত্যিই ভালো লাগলো। আসলে সফলতার গল্প গুলো শুনলে নিজের ভেতর আলাদা রকমের ভালোলাগা তৈরি হয়। এই ভর্তি পরীক্ষার যুদ্ধে টিকে থাকা এবং নিজের অবস্থান নিশ্চিত করা সত্যি অনেক কঠিন ছিল। তার জন্য শুভকামনা রইল।
মান্না ভাইয়ের মত এরকম দারিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসা অনেক মেধাবী স্টুডেন্ট অনেক ভালো পজিশনে গিয়েছে। তাদের অদম্য সাহস নিজের চেষ্টা সেই লক্ষ্যে পৌঁছে যায় দিয়েছে। মান্না ভাইয়ের মেয়ে ডেন্টালে চান্স পেয়েছে সেটা তার স্বপ্নের চেয়েও অনেক বড় পাওয়া। অনেক ভালো লাগলো তার সফলতা চেষ্টার গল্প পড়ে।