স্বপ্নবাজ
আজকাল তো তেমন খুব একটা ভালো কিছু চোখে পড়েই না। সব চলে গিয়েছে নষ্টের দখলে, তারপরেও ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে যখন হঠাৎ ভালো কিছু দৃশ্য নজরে পড়ে, তখন যেন কিছুটা হলেও নিজের মাঝে ভালোলাগা বোধ কাজ করে।
তারিফের বয়স কতই বা হবে দশ ছুঁই ছুঁই। এই মফস্বল শহরে থেকে ভবিষ্যৎ ক্রিকেটার হিসেবে নিজেকে প্রস্তুত করা, অনেকটাই স্বপ্নের মত।
আপনি হয়তো ভাবতেই পারেন, ক্রিকেটার হওয়ার জন্য এত কিছু আবার করতে হয় নাকি। তাহলে বলবো, আপনার চিন্তাধারাতে কিছুটা পরিবর্তন নিয়ে আসে খুবই জরুরী। মাঠে গিয়ে ব্যাট বল হাতে নিয়ে খেললেই যদি ক্রিকেটার হওয়া যেত, তাহলে হয়তো প্রতিনিয়ত অসংখ্য ক্রিকেটার আনাচে-কানাচে বের হতো।
তবে বাস্তবচিত্র বড্ড ভয়ানক। তবে এই ভয়ানক চিত্রটাকে বুকে লালন করে নিয়েই, একদম মধ্যবিত্ত পরিবারে থেকে প্রতিনিয়ত পড়াশোনার পাশাপাশি, নিয়ম মেনে ক্রিকেট অনুশীলন করা , শরীর ঠিক রাখা এবং বিভাগীয় শহরে সপ্তাহে একদিন করে গিয়ে ক্রিকেট একাডেমির খেলোয়ারদের সঙ্গে অনুশীলন করা বা স্থানীয় কোচদের সঙ্গে পরামর্শ করা, ব্যাপারটা আমি-আপনি যতটা সহজে ভাবছি, বাস্তবে কিন্তু তেমনটা সহজ না। এসবের জন্য একমাত্র পরিবার থেকেই যথেষ্ট সহযোগিতার দরকার হয় ।
তবে তারিফের এদিক থেকে ভাগ্য কিছুটা সুপ্রসন্ন, কারণ তার বাবা ও মা এই বিষয়ে খুবই সচেতন ও সহযোগিতা পূর্ণ হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ওর দিকে। যদিও ক্রিকেট খেলার সামগ্রী থেকে শুরু করে, ফিটনেস ধরে রাখা ও প্রতিনিয়ত নিয়মের ভিতরে থেকে অনুশীলন করা বেশ খরচ সাধ্য ব্যাপার। তারপরেও ওর বাবা-মা বড্ড আশাবাদী। হাজারো প্রতিকূলতাকে পাশ কাটিয়ে তাদের ছেলেকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তারা সদা প্রস্তুত।
জীবন বড়ই অদ্ভুত, হয়তো ঘটনাচক্রে অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়ে যায়। তারিফের বাবা মোটামুটি উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান ছিল, তবে সে আজ ভাগ্যের নির্মম পরিহাসের শিকার। থাক সেসব কথা, তারিফ যখন ছোট তখন তার বাবা ঢাকা থেকে ফিরে সোজা রাজশাহীতে গিয়ে কর্মে নিযুক্ত হয়েছিল। তারিফের তখন বয়স, সাড়ে তিন থেকে চারের ঘরে। তারিফের ক্রিকেট খেলার প্রতি আগ্রহ দেখে, কোনভাবেই বারণ করেনি তার বাবা-মা বরং ছেলের সুপ্ত ইচ্ছেকে পূর্ণ করানোর জন্য, সেই সময়েই ওর বাবা-মা রাজশাহী বিভাগের স্থানীয় কোচদের শরণাপন্ন হয়েছিল এবং ছেলেকে কিছুদিন ক্রিকেট একাডেমিতে নিয়ে গিয়েছিল, সেখানেও বেশ ভালোই অনুশীলন করেছিল তারিফ। আসলে স্থানীয় কোচরা তারিফের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেছিল, শুধুমাত্র ওর বাম হাতের সুন্দর ব্যাটিং এর জন্য।
বিভাগীয় একাডেমিতে সেইসময় প্রায়ই, সাংবাদিকরা খেলোয়ারদের রিপোর্ট সংগ্রহ করতে আসতো। একবার তো তখন, সময় টিভির সাংবাদিকের ক্যামেরায় তারিফের ব্যাটিং ফুটেজটা অল্প কিছুক্ষণের জন্য ক্যামেরা বন্দি হয়েছিল।
রাজশাহীর সুদিন তারিফের জীবনে খুব একটা বেশি প্রভাব ফেলতে পারেনি। ওর ভাগ্যে আবারো জটলা পাকা শুরু হয় । হঠাৎই ওর বাবা রাজশাহীতে যে কর্মে নিযুক্ত ছিল, তা করোনাকালীন সময়ে ইস্তফা দিয়েছিল। পরবর্তীতে ওদের গন্তব্য হয় এই মফস্বলে।
তারপর তো অনেকটা দীর্ঘ বিরতি। আসলে শুরুতেই বেশ বাধাগ্রস্ত হয়ে যায় তারিফের ক্রিকেট খেলাটা। তবে এখন তারিফের বাবা-মা উভয়েই স্বপ্ন দেখে, তারিফ কে পরিপক্কভাবে ক্রিকেটে এগিয়ে নিয়ে যেতে ।
এখন তারিফের বয়স দশ ছুঁই ছুঁই। তার বাবা-মা তাকে কোনভাবেই সারাদিন অন্য কিছু নিয়ে খুব একটা জোরাজুরি করে না বরং উৎসাহ দেয়, কোন বলটা কিভাবে খেলতে হবে, কোন শর্ট কোন দিকে মারতে হবে।
তারিফের বাবার ছোট্ট একটা ফটোকপির দোকান, ওর বাবা সারাদিন দোকানদারি করে আর বিকেল বেলা করে তারিফ স্কুল থেকে ফিরলেই, ওর বাবা ওকে আর ওর ক্রিকেট খেলার সামগ্রী নিয়ে সোজা চলে যায় অনুশীলনে।
তারিফের ক্রিকেট খেলার পিছনে ওর বাবাই এখন ভীষণ অনুপ্রেরণা জুগিয়ে যাচ্ছে। বলতে গেলে, অনেকটা কোচের ভূমিকা পালন করছে।
তারিফের বাবা, সুমন সাহেব। তার সঙ্গে আমার, খুব একটা পরিচয় ছিল না বললেই চলে। আজকাল কুঠিবাড়ির এদিকটাতে আমার প্রায়ই আসা হয়। নিজের বাবুকে রোজ কোলে করে নিয়ে এদিকটাতে ঘুরে বেড়াই, হয়তো সেই সুবাদেই তারিফের ক্রিকেট খেলার অনুশীলনের ব্যাপারটা আমার নজরে পড়েছিল ।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, তারিফের বাবা প্রতিনিয়ত তারিফ কে যেভাবে ক্রিকেট অনুশীলন করায়, সেগুলোর ভিডিও তার সোশ্যাল মিডিয়ার প্রোফাইলে শেয়ার করার চেষ্টা করে। বেশ অনেকটা দিন ধরেই ব্যাপারগুলো আমি দেখছিলাম, তবে সেভাবে কখনো সুমন সাহেবের সঙ্গে আমার কথা বলার সুযোগ হয়ে ওঠেনি।
সেদিন রাতে নিজের থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সুমন সাহেবের সঙ্গে পরিচিত হলাম। বলা যায়, অনেকটা নিজের আগ্রহ থেকেই তাকে বলেই ফেললাম, আপনার ছেলের ক্রিকেট অনুশীলনের ব্যাপারটা আমার কাছে বেশ ভালো লেগেছে। আমি তারিফ কে নিয়ে লিখতে চাই।
ভদ্রলোক আমাকে বেশ সাদরেই অভ্যর্থনা জানিয়েছিল। দীর্ঘ সময় ধরে সেদিন কথা হয়েছিল সুমন সাহেব, তার স্ত্রী আর তারিফের সঙ্গে। অনেকটা নিজের স্বচক্ষেই খুব কাছ থেকে সেদিন তারিফের ক্রিকেট অনুশীলন দেখলাম। দেখলাম একজন বাবা, কতটা পরিমাণ আন্তরিক ও সহযোগিতা পূর্ণ হাত বাড়িয়ে দিয়েছে, ছেলের শখকে পরিপূর্ণ করার জন্য।
তারিফের মাঝে আমি বড্ড সম্ভাবনা দেখছি, তবে এভাবে ও কতদূর লেগে থাকতে পারবে, এটাই হচ্ছে এখন ভাবনার বিষয়। সাফল্যের পথ তো বড্ড মন্থর ও পিচ্ছিল, কত যে আরো চড়াই-উতরাই পার করতে হবে, কে জানে তা । হোক সেটা তারিফ কে নতুবা তার বাবা-মা কে।
আমি ক্রিকেট খুব একটা বুঝিনা, তবে ওর বাবা-মার চোখের চাহনি আর তারিফের স্বপ্নবাজ যে মনোভাবটা দেখেছি, তা হয়তো তারিফের ভবিষ্যৎ ক্রিকেটার হওয়ার কঠিনতম ধাপগুলো অতিক্রম করতে, ওকে অনেকটাই সহযোগিতা করবে।
ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
VOTE @bangla.witness as witness
OR
https://twitter.com/sharifShuvo11/status/1696446651022676463?t=amJpEILA9q6e8ZKICaxiAg&s=19
স্বপ্নবাজ ছেলেটা এভাবেই এগিয়ে যেতে থাকুক এই কামনা করছি। আসলে এধরনের প্রতিভা গুলো একটু সাপোর্ট পেলেই অনেকদূর এগিয়ে যেতে পারবে। তবে তার পিতা-মাতা অনেক সাপোর্টিভ, ইনশাআল্লাহ এভাবে সাপোর্ট করতে থাকলে সে বহুদূর এগিয়ে যেতে পারবে।
আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ এই প্রতিভাবান ছেলেটাকে নিয়ে পোস্ট করার জন্য।
আমার কাছেও বেশ ভালো লেগেছে আসলে ছেলেটার ব্যাপারটা, তাই এই লেখার ক্ষুদ্র প্রয়াস।
তারিফ ও তারিফের বাবা-মার সবার স্বপ্নই পূরণ হোক, এমনটাই প্রত্যাশা ব্যক্ত করি।
ছোটবেলায় আমারও ইচ্ছে ছিলো ক্রিকেটার হওয়ার। প্রায়ই স্বপ্ন দেখতাম। তবে পরিবার থেকে তেমন সাপোর্ট পাইনি। তবে তারিফ এদিক থেকে খুবই ভাগ্যবান। মা বাবার উচিত নিজের সন্তানের ইচ্ছেটাকে গুরুত্ব দেওয়া। এতে করে সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটে। কিন্তু সবকিছু ম্যানেজ করা বেশ ব্যয়বহুল। দোয়া করি তারিফের বাবা যেন সম্পূর্ণ খরচ বহন করতে পারে এবং তারিফ সব ধরনের বাঁধা অতিক্রম করে একজন সফল ক্রিকেটার হিসেবে পরিণত হোক,সেই কামনা করছি। তারিফের জন্য শুভকামনা রইল।
স্বপ্নগুলো পূরণের সামনে আসলে খরচ গুলো অনেকটা বাধা হয়ে দাঁড়ায়, তারপরেও যদি কপালে থাকে তবে সৌভাগ্যক্রমে সবকিছু আবার ম্যানেজ হয়ে যায়।
ভাইয়া মোটামুটি তারিফকে নিয়ে অনেক তথ্য প্রকাশ করলেন। আপনার ব্লগ পড়ে মোটামুটি বুঝতে পারলাম তারিফের অনেক বড় শখ আর ইচ্ছা আছে। সেই সাথে তার বাবা মাও তাকে সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছে। জাতীয় দলে যেতে অনেক কষ্টের রাস্তা অতিক্রম করতে হবে। আশা করি তার আর তার বাবা মায়ের ইচ্ছা শক্তি তাকে সেই জাগায় নিয়ে পৌছে দিবে। ধন্যবাদ।
তারিফ এবং তারিফের বাবা-মার ইচ্ছে পূরণ হোক, এমনটা আমিও প্রত্যাশা করি ভাই।