প্রদীপ মাস্টার

in আমার বাংলা ব্লগ11 months ago (edited)

bag-1868758_1280.jpg
source

যখন প্রাইমারিতে পড়তাম, তখন রোজ সকালবেলা করে প্রদীপ মাস্টারের কাছে পড়তে যেতাম। বেশ ছিমছাম গড়নের এবং অত্যন্ত বিনয়ী ছিলেন মাস্টারমশাই। সেসময় বেশ স্নেহ করতেন মাস্টারমশাই আমাকে এবং আমি যখন প্রাইমারিতে বৃত্তি পেয়েছিলাম, আমি মনে করি সেই সময় তার অবদান ছিল অনেকটাই বেশি।

মাস্টারমশাই বেশ ভালোই মেধাবী ছিলেন, তবে পয়সার অভাবে একটা চাকরি জুটিয়ে নিতে পারেননি। এটাকে অবশ্য তার ব্যর্থতা বলবো না। আর ব্যর্থতার কথা যদি বলতেই হয়, তাহলে এই ব্যর্থতা তাদের , যারা আসলে মাস্টারমশাই কে চাকুরী দিতে পিছপা হয়েছে। তারা হয়তো মাস্টারমশাই কে মূল্যায়ন করার যোগ্যতা রাখে নি।

সেই ছোটবেলা থেকেই দেখছি অনেকটা জীবিকার তাগিদেই সে প্রতিনিয়ত প্রাইভেট পড়িয়েই যেত, একটা সময় তো তার বেশ ভালই নাম-ডাক ছিল। সেই ছোট্ট গলির ভিতর দিয়ে ক্রমাগত তার বাড়িতে পড়তে যাওয়ার জন্য ছাত্র-ছাত্রীদের প্রচুর ভিড় থাকত।

এখন সময় অনেকটাই পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে, জীবন সব সময় সবার একরকম থাকে না। তবে মেধাবী মানুষগুলো শেষ বয়সে এসে যখন বেঁচে থাকার জন্য ভীষণ কষ্ট করে, তখন সেটা দেখে যেমন কিছুটা ব্যথিত হই এবং তেমন ধিক্কার জানাতে ইচ্ছা করে সেই সকল তথাকথিত কর্তৃপক্ষ বা কুচক্রী মহলকে, যারা মানুষটার আজকের এই পরিণতির জন্য দায়ী।

এখন আর আগের মতো তেমন তার বয়স নেই। বয়সের ভারে শরীর অনেকটাই এখন নুইয়ে পড়েছে, তবে মাস্টারমশাই এখনো আগের মতো সেই ছিমছাম ও হালকা গড়নেই আছেন। সেদিন সন্ধ্যায় আমাকে দেখে তিনি তেমনটা চিনতে পারেননি, তবে আমি তাকে ঠিকই চিনতে পেরেছিলাম। দেখছিলাম নিজের হাতে ছোট কাগজের পোস্টারে আঠা মেরে দেয়ালের সঙ্গে লাগিয়ে দিচ্ছিলেন এবং সেই পোস্টার গুলোত লেখা, বাসায় গিয়ে যত্ন সহকারে প্রাইভেট পড়ানো হয়।

এবার নিজের থেকেই তার কাছে এগিয়ে গেলাম, বললাম আমাকে দুটো পোস্টার দিন, আমি লাগিয়ে দিচ্ছি। মাস্টারমশাই আমি আপনার ছাত্র, শুভ। এবার মাস্টারমশাই আমার দিকে খেয়াল করার চেষ্টা করলেন, বলল তুই তো অনেক বড় হয়ে গেছিস রে, এই বলে আমার খোঁজ খবর নেওয়ার চেষ্টা করল।

মাস্টারমশাইয়ের সময়টা যে খুব একটা ভালো যাচ্ছে না, তা আর নতুন করে বলার কিছুই নেই। কতটা পরিমাণ কঠিন সময় পার করলে, এমন কাজ সে নিজের থেকেই করতে পারে, সেটাই আমি ভাবছি। সে তো এবার বলেই ফেলল, সময়টা আর আগের মত যাচ্ছে না রে, ছাত্র-ছাত্রীর আনাগোনা বাড়িতে এখন অনেকটাই কমে গেছে। এই ঊর্ধ্বগতির বাজারে পরিবার নিয়ে বেশ হিমশিম খেতে হচ্ছে।

মাস্টারমশাইয়ের কথাগুলো যখন আমার কানে আসছিল তখন যেন অনেকটাই রক্তাক্ত হয়ে যাচ্ছিল হৃদয়টা। তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা আমার জানা নেই, তবে সেই সময় যারা তাকে একটা চাকরির জন্য প্রতিনিয়ত দ্বারে দ্বারে ঘুরিয়েছিল এবং শেষমেষ চাকরিটা দিতে পিছপা হয়েছিল, আমি মনেকরি সেই সকল মুখোশধারী কীট গুলোর একটা সময় বেঁচে থাকাটাও যেন এমনটাই দুর্বিষহ হয়ে যায়, তেমনটাই অবলীলায় বলে দিলাম।

Banner-16.png

ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht


20211003_112202.gif


JOIN WITH US ON DISCORD SERVER

banner-abb4.png

Follow @amarbanglablog for last updates


Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png

Sort:  
 11 months ago 

প্রদীপ মাস্টারকে নিয়ে লেখা পোস্ট টি পড়ছিলাম আর সবটা যেনো আমার সামনে দেখতে পাচ্ছিলাম।প্রদীপ মাস্টারের আজকের পরিনতি পড়ে দুচোখে আমার জল অনুভব করছি।খুব খারাপ লাগলো। একজন মাস্টার আজ পোস্টার লাগায় দেয়ালে পড়াতে চাইবলে।সত্যি সান্ত্বনা দেয়ার ভাষা নেই।আমরা আমাদের নিজেকেও সান্ত্বনা দিতে পারছিনা।না পারছি এসব সহ্য করতে, না পারছি এসব থেকে দূরে যেতে।অনুভূতি গুলো শেয়ার করার জন্য অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া আপনাকে।

 11 months ago 

ব্যাপারটা আসলেই অনেকটা জটিলতা সম্পন্ন আপু, সবকিছু চলে গিয়েছে নষ্টের দখলে, সেখানে আসলে ভালো মানুষের টিকে থাকা খুব মুশকিল।

 11 months ago 

আমাদের সমাজে শিক্ষক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে একটা জাতি গঠন করতে।কিন্তু শিক্ষকদের সেই মূল্যায়ন টা করা হয়না আমাদের দেশে।আপনার প্রবীণ স্যার এই বয়সে এসে টিউশন পাওয়ার জন্য পোস্টার লাগিয়ে যাচ্ছে।যদি শিক্ষকদের সঠিক মূল্যায়ন থাকতো তাহলে এটা করতে হতো না তার।আগের যুগের অনেককেই দেখেছি এরকম, টাকা পয়সার অভাবে অনেক জ্ঞানী মানুষ চাকরি থেকে বঞ্চিত।যেমনটি আপনার মাষ্টারমশাই হয়েছেন।অনেক খারাপ লাগলো আপনার স্যারের জন্য।ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর পোস্টটি শেয়ার করার জন্য।

Posted using SteemPro Mobile

 11 months ago 

আসলেই মাস্টারমশাই কিন্তু বেশ মেধাবী ছিলেন, তার একটা চাকরি পাওয়া সেই সময় খুব দরকার ছিল, যা থেকে তিনি বঞ্চিত হয়েছিলেন।

 11 months ago 

দক্ষিণ কোরিয়াতে শিক্ষকদের এবং পুলিশদের বেতন দেওয়া হয় অনেক বেশি। যাতে করে পুলিশ কোনো দুর্নীতি না করে। আর শিক্ষক হচ্ছে শিক্ষিত জাতি গড়ার কারিগর। তাই তারা শিক্ষকদের যথাযথ মূল্যায়ন করে। কিন্তু আমাদের দেশে শিক্ষকদের সঠিক মূল্যায়ন করা হয় না। তাইতো অনেক শিক্ষকদের শেষ বয়সে এতো কষ্ট করতে হয়। আপনার শিক্ষকের ব্যাপারটা জেনে খুব খারাপ লাগলো ভাই। উনি যদি আগে চাকরি পেতেন, তাহলে হয়তোবা এই দিন দেখতে হতো না। যাইহোক পোস্টটি শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

 11 months ago 

এটা বাংলাদেশ ভাই, এখানে আসলে সবকিছুই সম্ভব।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.13
JST 0.028
BTC 59834.01
ETH 2665.66
USDT 1.00
SBD 2.46