অব্যক্ত কথা
সময় কত দ্রুত চলে যায়, এইতো মনে হচ্ছে সেদিন, দেখতে দেখতে দুটো বছর কিভাবে কিভাবে যে কেটে গেল তা যেন বুঝে উঠতেই পারলাম না। সেসময় জীবন মোটেও সহজ ছিল না, এখন হয়তো কিছুটা ধারাবাহিকতার ভিতরে আছে, তবে সেই সময়ের কথা চিন্তা করলে, এখনো শরীরের লোমগুলো যেন দাঁড়িয়ে যায়।
অনেকটা অভিমানে বাসা থেকে বেরিয়ে পড়েছিলাম বউ নিয়ে। সদ্য পাশ করা নবীন চিকিৎসক। এ শহরে দীর্ঘ ২৮ টা বছর ধরে ছিলাম তবে যেদিন বাসা থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলাম, সেদিন থেকেই এই শহরের রূপরেখা আমার কাছে অনেকটাই পরিবর্তন লাগছিল। সবকিছুই পরিচিত তবে তারপরেও যেন সবকিছু, অনেকটাই নতুন করে দেখছিলাম।
একবার চিন্তা করে দেখুন, পকেটে এগারোশো টাকা, সঙ্গে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আর বেরিয়ে পড়েছিলাম অনেকটা অজানার উদ্দেশ্যে। যে শহরে আমার এতো আত্মীয়-স্বজন,বন্ধু-বান্ধব,পরিবার-প্রিয়জন ছিল, তারপরেও মুহূর্তেই যেন সবকিছু ফাঁকা ফাঁকা লাগছিল।
কোনরকমে গ্রামে গিয়ে শ্বশুরবাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলাম। তারপর দিনরাত পরিশ্রম, অনেকটা অমানবিক। সেই সকাল সাতটায় বেরিয়ে আসতাম সারাদিন শহরের চেম্বারে রোগী দেখা আবার বিকেলবেলা করে গ্রামের চেম্বারে রোগী দেখা, সঙ্গে তো লেখালেখি ও কমিউনিটির কাজকর্ম গুলো ছিলই। চেম্বারে গেলেই যে রোগী পেতাম ব্যাপারটা কিন্তু তেমন না। ঐ যে বললাম, সদ্য নবীন চিকিৎসক। অনেকটা সেই সময় মানুষ আমাকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে পর্যবেক্ষণ করে দেখেছিল।
অর্থনৈতিক দিক থেকে খুব একটা স্বাবলম্বী ছিলাম না। বলা যায়, অর্থ ইনকামের জন্য প্রায় পাগল হয়ে গিয়েছিলাম। সেই পরিশ্রমের সময় গুলোর কথা এখন যখন মনে পড়ছে, তখন যেন চোখের কোনা দিয়ে এমনিতেই পানি গড়িয়ে পড়ছে। মাতৃগর্ভে শায়ান প্রতিনিয়ত বেড়ে উঠছিল, একটা সময়ের পরে মোটামুটি শায়ানের পৃথিবীতে আগমনের বার্তা বেশ ভালোভাবেই জেনে গেলাম।
তারপর থেকে যেন দায়িত্ববোধটা আরো অনেকটাই বেড়ে গিয়েছিল। যত সময় ঘনিয়ে আসছিল, ততই যেন উত্তেজনা আর মনের ভিতরে সংশয় কাজ করতো। ৭ দিনে পঞ্চাশ হাজার টাকা লেগেছিল, সেই অপারেশন খরচ থেকে শুরু করে ক্লিনিকে অবস্থানকালীন খরচ এবং কিছু সামাজিক নিয়মকানুন রক্ষার ব্যাপারে। পকেটে পয়সা না থাকলে আর যাই বলুন না কেন, নিজেকে অহেতুক সান্ত্বনা দিয়ে লাভ হয় না।
ভাগ্যিস আমার বাংলা ব্লগের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম, পয়সা নিয়ে খুব একটা ভাবতে হয়নি। কিভাবে কিভাবে যে এতগুলো টাকা ম্যানেজ হয়ে গিয়েছিল তা যেন বুঝে উঠতেই পারিনি। সেদিন ২৮ আগস্ট বিকেল পাঁচটার দিকে অপারেশন রুমের সামনে দাঁড়িয়ে যখন ছিলাম, কি যে পরিমাণ মানসিক চাপের ভিতরে ছিলাম, তা হয়তো বলে বোঝাতে পারবো না। বারবার মুঠো ফোনটা বের করছিলাম আর ডিসকর্ডে নজর রাখছিলাম। কলিগরা মানসিকভাবে সর্বদাই আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছিল। বিশেষ করে অর্থনৈতিক সাপোর্টের ক্ষেত্রে @rme দাদা ও @blacks দাদার অবদান ছিল অপরিহার্য।
কিছু মানুষকে বাস্তবে চিনি না জানি না, তাও যেন অদ্ভুত ভাবে ছায়ার মতন আমার পিছনে প্রতিনিয়ত লেগেছিল বা এখনো আছে।
বারবার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছিলাম একটু পরেই বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে সম্ভবত বাবুর কান্নার আওয়াজ শুনতে পেলাম। এই অনুভূতি আসলে মুখে বলে প্রকাশ করার মতো না। আমার ডাক্তার কলিগ যখন জানালো, বাচ্চা ও মা দুজনেই সুস্থ আছে, তখন যেন কিছুটা চিন্তা কমে গিয়েছিল। অবশেষে ডিসকর্ডে সবাইকে জানিয়ে দিলাম, একটা আনন্দঘন মুহূর্ত যেন সবার মাঝেই তৈরি হয়ে গিয়েছিল।
এখন আমি একজন বাবা বা পরিবারের কর্তা , আমার কাঁধটা এখন আরো প্রশস্ত হয়ে গিয়েছে। দিন যত গড়িয়ে গিয়েছে ততই যেন নতুন নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। দেখতে দেখতে আজ বাবুর ২ বছর পূর্ণ হল। হঠাৎই যখন ফেলে আসা দিনগুলোর কথা ভাবছিলাম, তখন যেন মুহূর্তেই আবেগপ্রবণ হয়ে গিয়েছিলাম। আমি সত্যিই কৃতজ্ঞ তাদের কাছে, বিশেষ করে যারা আমার কঠিন সময়ে প্রতিনিয়ত সুপরামর্শ, অর্থনৈতিক ও মানসিকভাবে সাপোর্ট দিয়েছে। তাদের ঋণ আমি কোন ভাবেই পরিশোধ করতে পারবো না।
https://twitter.com/sharifShuvo11/status/1697184264654324162?t=nf1ljAiRCZY0TyML0mzPdg&s=19
বাস্তবতা আসলেই ভাইয়া কঠিন অনেক! পকেটে টাকা না থাকলে কেউই দাম দেয় না। এমন কঠিন সময়ে কাউকেও পাওয়া যায় না। আর যাদের পাওয়া যায় তারা আমাদের আপনজন, অথবা খুব কাছের কেউ। তেমনি আপনাকে দাদা যথেষ্ট সাপোর্ট দিয়েছে এটা খুব ভালো লাগলো জেনে। যাক, শায়ানের দেখতে দেখতে দুটি বছর চলে গেল। দোয়া করি আল্লাহ তায়ালা যেন শায়ানকে নেক হায়াত দান করে 🦋
এটা সত্য আমার কঠিন সময়ে দাদাদের ভূমিকা ছিল একদম অপরিসীম, তা আমি কখনোই শোধ করতে পারবোনা।
টাকার অপর নাম শক্তি বা সাহস। পকেটে টাকা থাকলে মনের মধ্যে অন্যরকম সাহস থাকে। মনে হয় যেন সবকিছু জয় করতে পারবো। অনেক কঠিন একটা সময় পার করেছেন তখন। আমাদের প্রতিষ্ঠাতা এবং উইঙ্কলেস দাদা অপারেশনের সময় অর্থনৈতিক ভাবে এতোটা সাহায্য করেছে,এটা জানা ছিলো না। যাইহোক শায়ান বাবুকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। বড় হয়ে মানুষের মতো মানুষ হোক সেই কামনা করছি। পোস্টটি শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই।
আসলে আমার দীর্ঘ ব্লগিং ক্যারিয়ারে দাদাদের অবদান অনেকটাই বেশি। যা এক কথায় অপরিসীম।
কথায় আছে ভাই অসময়ের বন্ধুত্বই প্রকৃত বন্ধুত্ব । আপনার পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ছ দেখলাম আপনি অনেক কঠিন দিনগুলো পার করে এসেছেন। আসলে ভাই সফল ব্যক্তি হলে অনেক ধৈর্য ধারণ করতে হয় এবং কঠিন পথ পাড়ি দিয়েই সফলতা অর্জন করতে হয়। আপনার বাকি দিনগুলো অনেক সুখে শান্তিতে কাটুক এই প্রত্যাশাই করি। ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন নিজের খেয়াল রাখবেন। ধন্যবাদ
আপনাদের ভালোবাসায় আমি সত্যিই সিক্ত। শুভেচ্ছা রইল আপনার জন্য।
ভাইয়া পোস্টটি পড়তে পড়তে কখন যে চোখ দিয়ে গড়িয়ে পানি পড়ে গেলে বুঝতে পারলাম না। খুবই দুর্বিষহ জীবন যাপন করেছিলেন আপনি। মানসিকভাবে অনেক বিপর্যস্ত ছিলেন। ভাগ্যিস বড় দাদা এবং ছোট দাদা আপনার সঙ্গে ছিল। সঙ্গী ছিল পুরো আমার বাংলা ব্লক কমিউনিটি। তবুও সায়ন বাবুর জন্মদিনের এই লগ্নে আশা করব সকল সমস্যা কাটিয়ে জয় করে নিবেন স্বচ্ছলতাকে।
আসলেই আমার শুরুটা খুব একটা সেইসময় ভালো ছিল না, তবে আমি কৃতজ্ঞ বাংলা ব্লগের কাছে।
মানুষের জীবনে কত কঠিন কঠিন সময় আসে। যত কঠিন পরিস্থিতিই হোক না কেন, নিজে চেষ্টা চালিয়ে গেলে, উপরওয়ালাও হেল্প করে। সেটাই যে মনে হলো আপনার আজকের পোষ্ট টি পড়ে। আপনার এবং আপনার পরিবারের সকলের জন্যই শুভকামনা রইলো।
ধন্যবাদ আপনার সাবলীল মন্তব্যের জন্য।