আগুন
একবার সম্ভবত বলেছিলাম যে, আমার প্রায় রাতেই ঘুমোতে অনেকটা দেরি হয়ে যায়। বলা যায়, ভোর রাতের দিকে ঘুমিয়ে যাই। আজকেও ঠিক তার ব্যতিক্রম না। সবেমাত্র ঘুমোতে গিয়েছি, তাতেই যেন দূর থেকে লোকজনের জোরালো আওয়াজের শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম।
শেষরাতের দিকে বাহির থেকে আসা লোকজনের এতো জোরালো আওয়াজকে ইচ্ছে করেই কর্ণপাত করার চেষ্টা করলাম। দরজাটা খুলে গলির ভিতরে দাঁড়িয়ে, আকাশের দিকে তাকিয়ে যা দেখলাম, তা দেখে মোটামুটি এই শেষ রাতের দিকে অনেকটাই ব্যথিত হয়ে গেলাম।
বাসার খুব সন্নিকটেই মাছ বাজার, প্রায়ই সেখান থেকে মাছ কিনে থাকি। আর মাছ বাজারের সংলগ্নই হচ্ছে কাপড়ের পাইকারী বাজার। কিভাবে যে এই রাতের বেলা কাপড়ের পাইকারী বাজারের দোকানে আগুন লেগেছে, তা বলা যাচ্ছে না। মুহূর্তেই দাউদাউ করে আগুনের লেলিহান শিখা প্রজ্জ্বলিত হচ্ছিল।
পুরো আকাশ লালচে রুপ ধারণ করেছে,প্রচুর কালো ধোঁয়া উড়ছে উপরের দিকে। যেহেতু কাপড়ের দোকান তাই আগুন জ্বলছেও চরমভাবে। ইচ্ছে করেই এগিয়ে গিয়ে দেখার চেষ্টা করলাম, দূর থেকেই বেশ আগুনের তাপ পাওয়া যাচ্ছে। আগুন যে বেশ ভালোই লেগেছে,তা বুঝতে আর বাকি রইল না।
সবাই বলছে হয়তো শর্ট সার্কিট থেকে এমনটা হতে পারে। তাছাড়া প্রায়ই মাছ বাজারের এই জায়গাটাতে, বিশেষ করে পাইকারী বাজারের দোকানগুলো থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। ভিতরের পরিবেশ এতটাই গাদাগাদি, সেখানে যে মানুষ সুস্থভাবে হেঁটে চলাচল করবে, দিনের বেলাতেই যেন তেমনটা অবস্থা থাকে না।
আমি খুব একটা বেশি কাছে যাইনি, তবে সবাই যেভাবে মোবাইল বের করে ভিডিও করা শুরু করেছিল, তা দেখে এক প্রকার বিরক্তই লেগেছিল। একটু পরেই উচ্চ শব্দে সাইরেন বাজিয়ে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি বাজারের ভিতরে প্রবেশ করলো। এসেই তাদের রিজার্ভে যতটুকু পানি ছিল, তা দিয়ে কিছুটা চেষ্টা করেছে আগুন নেভানোর জন্য।
তবে আগুন ক্রমাগত ছড়িয়ে গিয়েছে সর্বত্র। ফায়ার সার্ভিসের লোকরা আপ্রাণ চেষ্টা করছে আগুন নেভানোর জন্য, সঙ্গে স্থানীয় লোকজন বা দোকান মালিক যারা আছে তারাও চেষ্টা করছে নিজেদের সাধ্য অনুযায়ী, আগুন নেভানোর জন্য। এত বড় একটা বাজার, আশেপাশে আবাসিক এলাকা, তবে কোথাও জলাশয় নেই। ফায়ার সার্ভিসের যখন রিজার্ভের পানি শেষ হয়ে গিয়েছে, তখনই মূলত বিপত্তিটা শুরু হয়েছে।
হতাহতের পরিমাণ এখানে নেই বললেই চলে, তবে সবাই চিন্তিত নিজের দোকানের পণ্যগুলোকে আগুনের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য। ইতিমধ্যেই অনেকগুলো দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে, তবে বাকি যা আছে তা যদি বাঁচানো না যায়, তাহলে পুরো বাজারটা চোখের সামনেই পুড়ে শেষ হয়ে যাবে।
জলাশয়ের ব্যবস্থা যেহেতু আশেপাশে নেই, তাই কিছুটা বিপাকে পড়তে হয়েছে ফায়ার সার্ভিসের লোকদের। অবশেষে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে থেকে পাইপের মাধ্যমে জলাশয় থেকে পানি তাদের গাড়ির ট্যাংকিতে সংগ্রহ করে নিয়ে গিয়ে, আগুন নেভানোর চেষ্টা করছিল। মুহূর্তেই আরও বেশ কয়েকটি ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট চলে এসেছিল এবং তারাও একই পদ্ধতিতে পানি সংগ্রহ করে নিয়ে গিয়ে , বাজারের আগুন শেষমেষ নেভাতে সক্ষম হয়েছিল।
বাজারে আগুন লেগে, তাতে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা নিয়ে আর নতুন করে বলতে চাচ্ছি না। তবে যে লোকগুলোর দোকানে আগুন লেগেছিল এবং যাদের দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে, তাদের আহাজারি গুলো যখন দেখছিলাম, তখন আসলে নিজেকে স্থির রাখা বড্ড কঠিন হয়ে যাচ্ছিল। শেষ রাতের দিকে এসে যে এমন একটা পরিস্থিতি দেখতে হবে, তা যেন মোটেও কল্পনা করিনি। অনেকটাই মানসিকভাবে বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছি। বারবার চোখের সামনে সেই দৃশ্যগুলো ভাসছিল। মুহূর্তেই আগুন কতগুলো স্বপ্ন পুড়ে ছাই করে দিল আর নিঃস্ব হয়ে গেল স্বপ্ন দেখা মানুষগুলো।
ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
VOTE @bangla.witness as witness
OR
https://twitter.com/sharifShuvo11/status/1697877326808371248?t=8tirL0AKqulVCHXvZy69Jg&s=19
You've got a free upvote from witness fuli.
Peace & Love!
আসলে এখনকার মানুষদের কমনসেন্সের বড্ড অভাব ভাইয়া। এই যে আগুন লাগলো, পন্য পুড়ে যাচ্ছে, কোথায় গিয়ে পানি এনে সাহায্য করবে তা না করে সবাই মোবাইল দিয়ে ভিডিও করা শুরু করে দিয়েছে! সেটা তারপর সোস্যাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে দিবে। কিন্তু লাভ বা ক্ষতি কার বেশি হলো! নিশ্চয় যার গেছে সেই বুঝবে। শেষ রাতের এমন দূর্ঘটনা সত্যিই মর্মান্তক। নিমিষেই সব পুড়ে ছাই, সাথে দোকানদারদের সব স্বপ্ন শেষ। খুব খারাপ লাগলো আসলে ভাইয়া
আসলেই ব্যাপারটা বেশ দুঃখজনক ভাই।
আসলে এরকম পরিস্থিতি গুলো চোখের সামনে দেখলে ভীষণ খারাপ লাগে। আর মানুষের কষ্টের আহাজারি ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে দেয়। তবে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা বেশ কষ্ট করে নিভিয়েছে আগুনটা বোঝাই যাচ্ছে। আর ক্ষয়ক্ষতির হিসাব বরাবরই গরীবের ভাগ্যে তোলা থাকে।
বাস্তবতা বড্ড নিষ্ঠুর, চোখের সামনে মুহূর্তেই যেন সব শেষ।
ঘটনা সত্যিই খুব দুঃখজনক অনেক স্বপ্ন আজ আগুনে পুড়ে শেষ হয়ে গিয়েছে। তাদের সেই হাহাকার দাঁড়িয়ে থেকে দেখা যায় না। মাঝে খুব খারাপ লাগছিল যখন জানতে পারলাম। একটি মাত্র ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি এসেছে তাও জল শেষ হয়ে গিয়েছে । ধারে কাছেও জলের কোন ব্যবস্থা ছিল না এক কিলোমিটার দূর থেকে জল সরবরাহ করতে হয়েছে। যাইহোক অবশেষ তারা আগুন নিভাতে পেরেছে তা না হলে আরো অনেক স্বপ্ন হয়তো সেই রাতে শেষ হয়ে যেত।
এটা অবশ্য ঠিক বলেছেন ভাই, যদি পুরোপুরি আগুন নেভাতে না পারতো, তাহলে হয়তো পুরো বাজারটাই শেষ হয়ে যেত। ধন্যবাদ ভাই, আপনার সাবলীল মন্তব্যের জন্য।
খুবই দুঃখজনক একটি ঘটনা এ ধরনের ঘটনাগুলো চোখের সামনে দেখলে অনেক খারাপ লাগে। এখন বেশিরভাগ সময় মানুষ মানুষের বিপদের সময়ে সহযোগিতা না করে মোবাইল বের করে ভিডিও করে।ছোটবেলায় শুনেছি মানুষ মানুষের জন্য আর এখন দেখি বিপদের সময় ফটো আর ভিডিও করার জন্য। পোস্টটি পড়ে খুবই খারাপ লাগলো ভাই।এরকম ঘটনা চোখের সামনে দেখলে মেনে নেওয়া যায় না।
ধন্যবাদ ভাই, আমার অনুভূতি বুঝতে পেরে মন্তব্য করার জন্য।
ডাকাতি হলেও কিছু থেকে যায়, তবে আগুন লাগলে সবকিছু শেষ হয়ে যায়। ফায়ার সার্ভিসেরও তেমন কিছু করার থাকে না। কারণ জলাশয়ের বড্ড অভাব এখন। আগুন নেভাতে নেভাতে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়ে যায়। ছোটবেলায় দেখতাম আমাদের এখানে তুলার মেশিন থেকে প্রায়ই আগুন লাগতো। তবে এখন অনেকটা কমেছে। কারণ সবার মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। যাইহোক পোস্টটি পড়ে সত্যিই খুব খারাপ লাগলো ভাই। কতো মানুষের স্বপ্ন এক নিমিষেই নিঃশেষ হয়ে গেল।
বাজারে আগুন লাগার বিষয়টি পড়ছিলাম আর ভাবছিলাম যে কত সহজেই আগুনের দাবানরে পড়ে মানুষের স্বপ্নগুলো বিলিন হয়ে গেল। মাঝ রাতে এরকম আগুন লাগলে কিন্তু নিভানো কঠিন হয়ে পড়ে। কারন তখন সমস্ত শহর স্তব্দ হয়ে যায়। আর এখন তো জলাশয় খুঁজে পাওয়াটাই মুশকিল। দোয়া করি ঐ সকল নিঃস্ব মানুষ গুলোর জন্য।