অনিশ্চিত জীবন
হারুন মিয়া দীর্ঘ সময় ধরে এনজিও কর্মী হিসেবে কাজ করছে। প্রান্তিক অঞ্চলে কৃষকদের ঋণ দেওয়া আবার ঋণের টাকা সংগ্রহ করা মূলত এটাই তার কাজ। যেহেতু দীর্ঘ সময় মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে, তাই বর্তমানে তার কাজের অবস্থা বিবেচনা করে এনজিও কর্তৃপক্ষ তার পদোন্নতির ব্যবস্থা করেছে।
পদোন্নতি হলে কি হবে, এখন তার কর্মস্থল আর বাড়ির কাছে নেই। পার্শ্ববর্তী জেলায় তার নতুন কর্মস্থল। আগে প্রতিনিয়ত মাঠ পর্যায়ে ঘোরাঘুরি করতে হতো, এখন শুধুমাত্র ঋণ যখন দিতে যাবে তার আগে গ্রাহকের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা এবং অফিসিয়াল কাজেই সে এখন নিযুক্ত থাকবে।
যদিও মাঠ পর্যায়ে ঘোরাঘুরির মত এখন আর সেই চাপটা নেই, তবে বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র এসে তার মনটা কিছুটা নড়বড়ে হয়ে গিয়েছে। এমনটা হওয়া অস্বাভাবিক না। তারপরেও নতুন জায়গায় এসে সে বেশ ভালই মানিয়ে নিয়েছে। এই অফিসের সব থেকে বড় কর্মকর্তা সে। মোটামুটি সবাই তাকে বেশ সম্মান করে। যেহেতু খুবই সাম্প্রতিক সময়ে সে এখানে এসেছে, তাই এসেই সে ভাবছে আশেপাশে কোন একটা ভালো বাসা দেখে উঠে পড়বে, পরিবারকেও তেমনটাই জানিয়ে ছিল।
কিছু সুখকর বিষয়ে হঠাৎই যেন বিষাদের ছাপ পড়ে যায়। হারুন চাকরিটাও পেয়েছিল বেশ কষ্টে, বলা যায় চাকরির বয়স যখন একদম শেষের দিকে ঠিক তখন। তারপরে তো দীর্ঘ সময় মাঠ পর্যায়ে কাজ করা, একটা সময় গিয়ে নতুন মানুষ কে ঘরে নিয়ে আসা এবং সংসার শুরু করা। সময় বেশি দিন যেতে না যেতেই, নতুন অতিথির আগমন। সব মিলিয়ে হারুনের সুখী পরিবার।
পদোন্নতি পাওয়ার পর নতুন যে জায়গাটাতে এসেছে, মোটামুটি সেখানেও বেশ ভালো একটা বাসা দেখেছে, ইচ্ছে ছিল আগামী মাসেই তার বউ-বাচ্চাকে নিয়ে নতুন ভাড়া বাসায় উঠে যাবে। তেমনভাবে কথাও হচ্ছিল পরিবারের সঙ্গে। সবাই বেশ ভালই খুশিও হয়েছিল। যেহেতু নতুন অফিস, নতুন পরিবেশ সবকিছু মানানসই হতে খুব একটা সময় লাগেনি। তাছাড়াও সহকারী যারা আছে, তারাও বেশ ভালই আন্তরিক। সবাইকে নিয়ে কাজ করতে বেশ ভালই লাগছিল হারুনের।
হারুনের অফিস থেকে এক কিলোমিটার দূরের একজন গ্রাহক প্রতিনিয়তই ঋণ গ্রহণের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছিল। যেহেতু এতদিন এই অফিসে হারুনের পদটা ফাঁকা ছিল এবং আগেরজন চলে যাওয়ার পরে হারুন আসা পর্যন্ত বেশ কিছুদিন ঋণ দেওয়া প্রায় বন্ধই ছিল। তাই হারুন আসার পরে প্রথম সেই গ্রাহকের বাড়িতেই হারুন এবং তার সহকর্মীরা যাওয়ার চেষ্টা করেছিল ঋণ সংক্রান্ত বিষয়ে কথা বলার জন্য।
লাল রংয়ের দুটো মোটরসাইকেলে চড়ে তিনজন সহকর্মীসহ হারুন সেদিন সেখানে উপস্থিত হয়েছিল, গ্রাহকের বাড়িতে। মোটামুটি ভালই আপ্যায়ন করেছিল গ্রাহক, কথা অনুযায়ী আগামী মাসেই সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে, গ্রাহক ঋণটা পেয়ে যাবে। দীর্ঘ সময় যেহেতু গ্রাহকের বাড়িতে সময় কাটিয়েছে তারা, তাই অবশেষে দুপুরবেলা খাওয়া দাওয়ার পরে তারা সবাই মিলে অফিসের উদ্দেশ্যে আবারো ফেরত চলে আসছিল।
এই এলাকা থেকে প্রচুর পরিমাণে অবৈধ বালু উত্তোলন হয় ড্রাম ট্রাকে করে। হঠাৎই দুপুরবেলা একটা বালু বোঝাই ড্রাম ট্রাক সজোরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ধাক্কা দিয়েছিল হারুনদের চলন্ত মোটরসাইকেল দুটোতে। চার জনের কাউকেই বাঁচানো যায়নি, হারুন এবং তার মোটরসাইকেলে যে ছিল সে অ্যাক্সিডেন্টের জায়গাতেই মারা গিয়েছে। আর বাকি দুইজন হসপিটাল নেওয়ার পথে।
এক নিমিষেই কতগুলো স্বপ্ন ছাই, তাই না। জীবন কত অনিশ্চিত, তারপরেও আমরা কত স্বপ্ন দেখে যাই। কারো স্বপ্ন পূরণ হয় আবার কারো স্বপ্ন হারিয়ে যায়।
ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
VOTE @bangla.witness as witness
OR
https://twitter.com/sharifShuvo11/status/1712404167002865742?t=_ZYcsHyTxQ3FCPio_d6A8g&s=19
আসলে ভাইয়া আপনার পোস্ট পড়ে অনেক খারাপ লাগল। সত্যি ভাইয়া মানুষের জীবন অনিশ্চিত। জীবনে কতো স্বপ্ন থাকে, কতো আশা থাকে সব নিমেষে শেষ হয়ে যায়। আর এই ধরনের মৃত্যুর জন্য সবচেয়ে বেশি খারাপ লাগে। নিমেষেই চারটি প্রাণ শেষ হলো।দোয়া করি আল্লাহ উনাদের জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন, আমিন।
সব মৃত্যুই কষ্টদায়ক আপু, যার যায় সেই আসলে বোঝে।
জীবনটা আসলেই অনিশ্চিত! কার কখন মৃত্যু চলে আসে বলা যায় না। হারুন সাহেবের মতো প্রতিনিয়ত এভাবেই সড়ক দূর্ঘটনায় প্রাণ হারায় অনেকে, নিমিষেই ভেঙে যায় স্বপ্নগুলো।
এভাবে ভাবলে আসলেই বেশ জটিলতা সম্পন্ন লাগে সবকিছু, কিছু যেন মুহূর্তের মাঝেই শেষ।
নিমিষেই শেষ হয়ে গেল চারটি পরিবারের স্বপ্ন। আসলে এই পরিবারগুলোর দায়িত্ব নেওয়ার মতো আর কেউ রইল না। সেই অসাধু বালু ব্যবসায়ীরাও আর তাদের খবর রাখবে না। আসলে দুর্ঘটনার কথা শুনলে হৃদয় কেঁদে ওঠে। মনে হয় এই বুঝি আমাদের কোন প্রিয়জনের এরকম অবস্থা হচ্ছে। কারণ আমাদের সেই আপন মানুষগুলো হয়তো প্রতিনিয়তই এভাবে প্রয়োজনে ছুটে চলেছে। ভাইয়া আপনার লেখা পড়ে সত্যিই চোখে পানি চলে এসেছে।
পৃথিবীতে কেউ কারো খবর রাখে না, শুধুমাত্র অনেকটা অভিনয় করে যায়।
মাঝেমধ্যে নিজে নিজেই ভাবি যে এক সেকেন্ডের ভরসা নেই জীবনের, সেই জীবন নিয়ে কতো পরিকল্পনা করি। যাইহোক যতদিন বাঁচবো ততদিন হয়তো এগুলো ভেবেই যাবো। কারণ জীবন নিজস্ব গতিতে চলে, আর সেই গতিপথ অনেক সময় চাইলেও পরিবর্তন করা যায় না। হারুন একটা সময় চাকরি জীবনে বেশ সংগ্রাম করেছে। অবশেষে সুখের মুখ দেখলেও, হারুনের কপালে সুখ সইলো না বেশিদিন। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা আসলেই মারাত্মক। পোস্টটি পড়ে আসলেই মর্মাহত হলাম। তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। যাইহোক পোস্টটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
কখন কার কি হয়ে যাবে তা তো বলা মুশকিল।
আসলে মৃত্যু যে কখন আসবে সেটা বলে আসেনা। বর্তমান সময়ে বাইক এক্সিডেন্ট গুলোর কথা শুনলে খারাপ লাগে। কত সুন্দর একটি সাজানো গোছানো সুখের জীবনে একেবারেই শেষ হয়ে গেল। খুব সুন্দর ভাবে বর্ণনা দিবেন আপনি। পুরো লেখাটি পড়ে খুবই খারাপ লাগলো। ট্রাক ড্রাইভার গুলো খুবই জঘন্য বলা যায়। যত ধরনের এক্সিডেন্ট হচ্ছে সব গুলো ট্রাকের কারণেই হচ্ছে। আসলে দেশ থেকে ট্রাক গুলো একেবারে বাতিল করে দেওয়া উচিত ছিল।
এটা সত্য বাইক এক্সিডেন্ট গুলো খুবই মারাত্মক হয়ে থাকে।