জীবনের গল্প -- " যেকোনো কঠিন বিপদেও নিজেকে স্থির করে রাখার গল্প "
শুভ সন্ধ্যা সবাইকে
আমার বাংলা ব্লগে স্বাগতম সবাইকে
হ্যালো বন্ধুরা,
মাতৃভাষা বাংলা ব্লগিং এর একমাত্র কমিউনিটি আমার প্রিয় "আমার বাংলা ব্লগ"এর ভারতীয় এবং বাংলাদেশী সদস্যগণ,কেমন আছেন সবাই?আশা করি সবাই ভাল আছেন।আমিও আলহামদুলিল্লাহ্ আল্লাহ্র অশেষ রহমতে বেশ ভাল আছি।আর প্রতিনিয়ত ভালো থাকার চেষ্টা করে যাচ্ছি। আশাকরি আপনারা ও এমনটাই চেষ্টা করে যাচ্ছেন ভালো থাকার।
আমি @shimulakter,আমি একজন বাংলাদেশী। আমার বাংলা ব্লগএর আমি একজন নিয়মিত ইউজার।আমি ঢাকা থেকে আপনাদের সাথে যুক্ত আছি। প্রতিদিনের মত আমি আজও নতুন একটি ব্লগ নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হয়েছি।আমি প্রতিনিয়ত চেষ্টা করি পোস্টের ভিন্নতা আনার।আজ ও এর ব্যতিক্রম হয়নি।আজ আমি লাইফ স্টাইল পোস্ট নিয়ে হাজির হলাম।তবে চলুন কথা আর না বাড়িয়ে আজকের লাইফ স্টাইল পোস্টটি শেয়ার করি।
যেকোনো কঠিন বিপদেও নিজেকে স্থির করে রাখার গল্পঃ
বন্ধুরা,আজ আমি আমার জীবনের একটি গল্প আপনাদের সাথে শেয়ার করবো।সত্যি কথা বলতে জীবন আছে বলেই সুখ, কষ্ট দুটোই নিয়ে আমাদের চলতে হয়।আমাদের জীবনে যেকোনো সময় যেকোনো বিপদ এসে আমাদের কে বিচলিত করে তুলতে পারে।কিন্তু সেই কঠিন অবস্থাতে ও আমি কি করে নিজেকে স্থির রেখে চলতে পারি। সেই গল্পটি আজ আপনাদের মাঝে শেয়ার করবো।
আমার আজকের এই গল্পটি ২০১৪ সালের। আপনারা অনেকেই আমার ছেলেকে দেখেছেন।ওর বয়স এখন প্রায় ১০ বছর।তখন ওর বয়স ৭/৮ মাস। আমার এই কঠিন হওয়ার গল্পটি মূলত ওকে কেন্দ্র করেই।ছেলেবেলা ও খুব শান্ত স্বভাবের ছিল।আর আমার কাছে থাকতেই ও বেশী পছন্দ করতো।একদিন দুপুরের ঘটনা সুস্থ মানুষ আমি ওকে ঘুম পাড়িয়ে রেখে ঘরের সব কাজ একদম নিঃশব্দে করার চেষ্টা করি।যাতে ওর কানে কোন শব্দ না যায়।ওই সময়টাতে নিজেকে চোর চোর লাগতো। এতো শব্দ ছাড়া কাজ করতে গিয়ে।যাই হোক ওকে ঘুম পাড়িয়ে দিলেও সব সময় এসে দেখতাম উঠে আবার পরে গেলো কিনা।
আমি কাজ করছিলাম। হঠাৎ ওর শব্দ পাচ্ছিলাম।দৌড়ে গিয়ে দেখি ও খিচুনি দিচ্ছে।আমি ওকে কোলে নিয়ে রামিন রামিন করছিলাম।কিন্তু ওর চোখ বন্ধ। ঠোঁট গুলো নীল হয়ে গিয়েছিল।আমি জোরে জোরে রামিন রামিন করাতে আমার শ্বাশুড়ি পাশের ঘর থেকে এসে জানতে চাইল কি হলো? তখন রামিনকে আমার কোল থেকে নিয়ে আমাকে বলল ওর মাথায় পানি দিতে হবে।আমি এমন পরিস্থিতিতে কখনও কাউকে দেখিনি।আমার হাত-পা অবশ হয়ে আসছিলো। আমি যে কিভাবে পানি এনে ওর মাথায় দিয়েছি আমি জানি না।পানি দিতে গিয়ে ওর জামা কাপড় সব ভিজে গেছে।আমার ও তেমন হলো।ঘরে ও পানিতে ভরে গেলো।
এভাবে ১০/১২ মিনিট থাকার পর ছেলে আমার স্বাভাবিক হলো।আমি সেদিন এতোটাই ভেঙ্গে পরেছিলাম বোঝাতে পারব না।তখন আমার শ্বাশুড়ি বলল,ওর পাপার ও নাকি এমন এক,দুইবার হয়েছিল। অনেক আগের ঘটনা।তখন আমার শ্বাশুড়ি তাদের এলাকার একজন ভালো ডাক্তার ছিল তার ঔষধ খাওয়ানোর পর আর এমনটা নাকি হয়নি। এই কথা শুনে আমি ওকে আর ওর পাপা কে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাই।
আমি ডাক্তারের কাছে গিয়ে বলি জ্বর হলে যদি মাথায় পানি না দেয়া হয় তখন হয়ত খিচুনি হয় এমনটা শুনেছি।কিন্তু জ্বর নেই তাকে মাথায় পানি দেওয়ার কথা তো মাথায়ই আসেনি।খিচুনি শেষ হয়ে যাওয়ার পর দেখি শরীর একটু গরম।যাই হোক ডাক্তার বলল, জ্বর এলে নাপা দিতে আর সাথে ভেলেক্স নামের একটি সিরাপ দিল।আর বলল এটা থেকে এক চামচ খাইয়ে দিতে।এতে করে মাথা ঠান্ডা থাকবে।ছেলে ঘুমাবে।আর এটা প্রায় সাত বছর চালিয়ে যেতে হবে।যাই হোক সেদিনের মতো আমরা চলে এলাম।
এরপর আরেক দিনের ঘটনা। সেদিন বাসায় কেউ ছিল না।ছেলের সামান্য একটু সর্দি ছিল।আমি গোসল না করিয়ে শরীর হাত-পা মুছিয়ে খাবার খাইয়ে দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে কাজ করছিলাম।হঠাৎ দেখি খাটের উপর বসে সেই রকম খিচুনি দিচ্ছে।চোখ খোলা কিন্তু উল্টে যাচ্ছে।আর ঠোঁট নীল হয়ে গেছে।দেখে মনে হচ্ছিল ও আর নেই।আমি এক সেকেন্ড ও দেরি না করে ওকে কোলে নিয়ে ওয়াশরুমে বসে এক হাতে ওর মাথা রেখে অন্য হাত দিয়ে মাথায় পানি দিচ্ছিলাম।আমার সেদিন হাত ভেঙে চুরে আসছিলো। আমি এক মিনিট ও থামিনি।একবার এ হাতে একবার অন্য হাতে ওর মাথা রেখে পানি দিয়েই যাচ্ছিলাম।আর রামিন রামিন করছিলাম।
এরপর আবার ডাক্তারের শরনাপন্ন হই।ডাক্তার তখন বলল,আপনি এখন থেকে জ্বর আছে কিনা দেখার দরকার নেই।শরীরে যেকোনো সময় হালকা জ্বর,সর্দি হলে জ্বর মাপার দরকার নেই নাপা আর ভেলেক্স খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেবেন।তিনি আরো বললেন,জ্বর ছাড়া জ্বরের ঔষধ খাওয়ালে যে ক্ষতি হবে।তার চাইতেও বেশি ক্ষতি হবে খিচুনি হলে।কারন এতে ব্রেনে চাপ পরে।সেই থেকে প্রায় সাত বছর আমার ব্যাগে থার্মোমিটার,নাপা সিরাপ ও ভেলেক্স সব জায়গাতে ই বয়ে নিয়ে যেতাম।
ওর এমন খিচুনি ২ বার হওয়ার পর সাত বছর হওয়া পর্যন্ত যখনই কিছু হতো আমি আগে থেকেই ঔষধ খাইয়ে দিতাম।তারপরেও ওই যে আতঙ্ক তাতো ছিলই আবার ওমন না হয়।এমনভাবে ছেলেকে দেখলে কোন মা ঠিক থাকতে আসলে পারে না।আমি যখন যেখানে যেতাম কারো সাথে গল্প করছি বা কোন কাজ করছি আমার চোখ একটা ওর দিকেই থাকতোই সব সময়।এভাবে সাত সাতটি বছর পার করে আজ আমি এতোটা কঠিন হতে পেরেছি।একজন মায়ের কাছে তার সন্তানই সব।সেই সন্তানের এমন অবস্থা দেখলে কোন মা ই স্থির থাকতে পারবে না।সেই থেকে ই আমার এই কঠিন হওয়ার গল্পটি শুরু।তাই আজ আমি যতো কিছুই হোক ঘাবড়ে যাই না।আমি স্থির থেকে সবকিছু করি।সাত বছর কেটে গেছে।এখন আর জ্বর এলেও এমন কিছু হয়না।তবে আমি আজও জানতে পারিনি কেন আসলে এমনটা হতো।প্রচন্ড জ্বর ছাড়া কিভাবে খিচুনি হতো আজ ও আমার অজানাই রয়ে গেলো।কিন্ত কঠিন বিপদে ও আমি স্থির হয়ে থাকা শিখে গেছি।
আজ আর নয়।আশাকরি আমার পোস্ট আপনাদের কাছে ভালো লেগেছে। আপনাদের কাছে মনের অনুভূতি গুলো শেয়ার করতে পেরে ভীষণ ভালো লাগলো। সবাই ভালো থাকবেন,সুস্থ থাকবেন।আমার ছেলের জন্য সবাই দোয়া করবেন।আবার কোন নতুন ব্লগ নিয়ে হাজির হবো।
পোস্ট বিবরন
শ্রেনি | লাইফ স্টাইল |
---|---|
ফটোগ্রাফির জন্য প্রয়োজনীয় ডিভাইস | samsungA20 |
ফটোগ্রাফার | @shimulakter |
স্থান | ঢাকা,বাংলাদেশ |
আমার পরিচয়
আমি শিমুল আক্তার।আমি একজন বাংলাদেশী।বাংলাদেশ ঢাকা থেকে আমি আপনাদের সাথে যুক্ত আছি।আমি এম এস সি ( জিওগ্রাফি) কমপ্লিট করি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। আমি বিবাহিতা।আমি একজন গৃহিণী।আমি একজন স্বাধীনচেতা মানুষ। ভালোবাসি বই পড়তে, নানা রকমের রান্না করতে আর নতুন নতুন রেসিপি করে সবাইকে খাওয়াতে ভালোবাসি।ফটোগ্রাফি করতে আমি ভীষণ পছন্দ করি।বাংলায় লিখতে আর বলতে পারার মধ্যে অনেক বেশী আনন্দ খুঁজে পাই।নিজের মধ্যে থাকা সৃজনশীলতাকে সব সময় প্রকাশ করতে পছন্দ করি।এই বাংলার মাটিতে জন্মগ্রহণ করেছি বলে নিজেকে অনেক ধন্য মনে করি।
সত্যি আপু কঠিন বিপদে ভেঙে না পড়ে আমাদের ধৈর্য্য করতে হবে। তবে কঠিন বিপদে ধৈর্য্য ধরা কঠিন ব্যাপার। সত্যি আপু এমন খিচুনি কেন হলো বুঝতে পারলাম না।যাইহোক বিপদ কেটে গেছে এখন ভালো আছে জেনে অনেক ভালো লাগলো। ধন্যবাদ আপু পোস্টটি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
আসলেই আপু একজন মায়ের কাছে সন্তান সবকিছু। আমিও বুঝলাম না আপনার ছেলের সাথে কেনো এমনটা হতো। শুনেছি তীব্র জ্বর হলে নাকি মানুষের খিচুনি উঠে। তবে আপনি অনেক কঠিন সময় পার করেছেন জীবনে। মায়ের চোখের সামনে সন্তানের এমন অবস্থা দেখলে, যেকোনো মা ঘাবড়ে যাবে একেবারে। দোয়া করি কখনো যেন আপনার ছেলের সাথে এমনটা আর না হয়। যাইহোক পোস্টটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
Twitter link
আপনার গল্পটি আমাদের জন্য আদর্শ আপু । আসলে আমরা কঠিন সময়ে নিজেকে স্থির রাখতে পারি না । এই যে আপনার জীবনে কয়েকবার হুঁচট খেয়ে এখন আপনি অনেকটাই স্থির হয়ে গেছেন । আসলে ছোটবেলায় রামিনের অবস্থাটা দেখে আমার এই খারাপ লাগছিল ।এভাবে হঠাৎ করে খিঁচুনি উঠলে যে কেউ আতঙ্কিত হয়ে যাবে । সাত বছর চলে যাওয়ার পর এখন রামিন ভালো আছে এজন্য ভালই লাগলো । একজন মায়ের কাছে আসলেই এত সন্তান এই সব ❤️