জেনারেল রাইটিংঃআজ বিশ্ব পরিবেশ দিবস।
সবাইকে পরিবেশ দিবসের শুভেচ্ছা।
আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা কেমন আছেন?,আশাকরি সবাই ভালো আছেন।সবাই ভালো থাকুন এই প্রত্যাশা করি সবসময়। আমিও ভালো আছি ।আজ ২২শে জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ। ৫ ই জুন, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ। সকালে নিউজে চোখ বোলাতেই দেখলাম বায়ুদূষণে আজ সকাল ১০ টায় ঢাকার অবস্থান ছিল নবম। ভারতের দিল্লির অবস্থান ছিল প্রথম। অবশ্য ঢাকার অবস্থানও এক/দুইয়ের মধ্যে থাকে প্রায়ই। আমরা যারা ঢাকায় বসবাস করি, তারা দূষিত শ্বাস নিচ্ছি প্রতিনিয়ত। এমনি এক পরিস্থিতিতে আজ সারা বিশ্বের মত বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে বিশ্ব পরিবাবেশ দিবস। আর বিশ্ব পরিবেশ দিবস নিয়েই আমার আজকের উপস্থাপন একটি জেনারেল রাইটিং।
মোবাইল ফটোগ্রাফিঃSamgung A10
১৯৬৮ সালে সুইডেন সরকার প্রথম জাতিসংঘের অর্থনীতি ও সামাজিক পরিষদের কাছে আবেদন করে পরিবেশ বিষয়ে তাদের উদ্বেগের কথা জানান। তার পর বিভিন্ন সেমিনার-সম্মেলন- আলোচনার পরে ১৯৭৩ সালে জাতিসংঘ ৫ই জুনকে বিশ্ব পরিবেশ দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। তারপর ১৯৭৪ থেকে ৫ই জুন বিশ্বব্যাপি দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। মূলত পরিবেশ সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করাই এই দিবসের উদ্দেশ্য। আমরা অনেকেই জানি সারা বিশ্বেই এখন আলোচনার অন্যতম ইস্যু পরিবেশ। উন্নত দেশ গুলো তাদের আরাম আয়েশের জন্য প্রথম পরিবেশের ক্ষতি শুরু করে। যদিও সেই ক্ষতি করা থেকে তারা বেরিয়ে এসে পরিবেশ রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে অনেকটা ভালো আছেন। বিপদে পরেছি আমাদের মত স্বল্পোউন্নত ও উন্নয়নশীল দেশ গুলো।এই দেশ গুলোতে এখন পরিবেশের ভয়ংকর অবস্থা। চেষ্টা চলছে এর থেকে বের হওয়ার। কিন্তু কতটা সফল হতে পারবে তা সময়ে বলে দিবে।
পরিবেশ দিবসে পালনে প্রতি বছর একটি থিম বা প্রতিপাদ্য থাকে। এসব প্রতিপাদ্য দেশ গুলো সে দেশের পরিবেশে পরিস্থিতি বিবেচনা করে নির্ধারণ করে থাকেন। যাতে বিষয়টি সম্পর্কে ব্যাপক মানুষকে সচেতন করে তোলা যায়। এবার আমাদের দেশে প্রতিবাদ্য করা হয়েছে "করবো ভূমি পুনরুদ্ধার, রুখবো মরুময়তা/ অর্জন করতে হবে মোদের খরা সহনশীলতা"।আমার মনে হয়েছে প্রতিপাদ্যটি সময়োপযোগি। আমরা যে যাই করি না কেন, যত বড় অট্টালিকায় থাকিনা কেন বা কংক্রিট বিছানো রাস্তায় , এসি গাড়িতে চলি না কেন আসল জায়গা কিন্ত মাটি। একারণেই বলা হয়ে থাকে মাটির পৃথিবী। প্রাণ-প্রকৃতি-পরিবেশ-জয়বায়ু যে যাই বলি না কেন এসব ভালো থাকার প্রধান উপদান কিন্ত মাটি ও পানি। পরিবেশ দূষণের কথা উঠলেই মাটি ও পানি দূষণের কথা চলে আসে। তাই আমাদের পরিবেশ রক্ষা করতে গেলে মাটি ও পানি রক্ষা করতে হবে। আর মানুষের জীবন নির্ভরশীল মাটি ও পানির উপর।
এবারের প্রতিপাদ্যে ভূমি পুনরুদ্ধারের কথা বলা হয়েছে। অথচ বনভূমি উজার হয়ে যাচ্ছে দিনকে দিন। বনভূতিতে তৈরি হচ্ছে আলিশান রিসোর্ট। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে বাংলাদেশের ফুসসুস বলে খ্যাত সুন্দরবনের মত জায়গায় ইকো রিসোর্ট ও তার পাশে বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি হয়েছে। মানুষের আরাম আয়েশের জন্য বা প্রয়োজনেই প্রকৃতির পরিবর্তন ঘটায়। নদ-নদী,খাল-বিল,বন-জঙ্গল,পাহাড়-দখল করে উজার করে দিচ্ছে, বিভিন্ন হোটেল মোটেল-রিসোর্ট নির্মাণ করছে। মানুষ তার সুবিধার জন্য নদী শাসন করছে , বড় বড় রাস্তা করছে কিন্তু প্রকৃতি ও পরিবেশ তার চিরচেনা রুপ হারাচ্ছে। আগে যেভাবে বন জঙ্গল দেখা যেত এখন নেই। সব মানুষের দখলে উজার হয়ে গেছে। মানুষ বরং পরিবেশকে হত্যা করে চলছে দিনের পর দিন। গ্রাম গঞ্জের দিক যদি আমরা তাকাই তাহলে দেখতে পাবো ভূমি উজার হয়ে যাচ্ছে। অপরিকল্পিত ভাবে দিন দিন বসতবাড়ি- ইটভাটা সহ বিভিন্ন কল কারখানা গড়ে উঠছে। দেখার কেউ নেই। শুধু ভূমি পুনরুদ্ধারের কথা কাগজে কলমে,বক্তব্যে দিলে কোন কাজ হবে না -যদি না আমরা যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে না পারি।জয়বায়ুর বিরুপ প্রভাবে যেভাবে আস্তে আস্তে মরুময়তার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ তা থেকে রক্ষা পেতে এখনেই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে, তা না ভুগতে হবে অদূর ভবিষ্যতে। অথচ মরুময়তা রুখবে যে জলাধার তা দিন দিন ভরাট করে ফেলছি আমরা।
পরিবেশ রক্ষায় বা জলবায়ুর বিরুপ প্রভাব থেকে বাঁচতে সমন্বিত উদ্যোগের বিকল্প নেই। সরকার ও জনগনের সচেতনতা ও যৌথ উদ্যোগেই রক্ষা করতে পারে আমাদের পরিবেশ। দুটি উদাহরণ দিয়ে আজকের লেখা শেষ করবো। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত পৃথিবীর দীর্ঘতম প্রাকৃতিক সমুদ্র সৈকত। প্রতি বছর দেশ বিদেশের অসংখ্য মানুষ অবকাশ কাটাতে এই সৈকতে যান। কিন্তু অবাক করার বিষয় আমরা এই মানুষরা ভ্রমণে যেয়ে প্লাস্টিকের বর্জ্যসহ অসংখ্য বর্জ্যে নোংরা করে আসছি সৈকতের পরিবেশ।শুধু আইন দিয়েই সবকিছু হবে না। এক্ষেত্রে আমরা নাগরিক হিসেবে সচেতন ভূমিকা রাখছি না। আইনের চেয়ে দায় আমাদের বেশি। আবার আইনের প্রয়োগের অভাবে সারাদেশে অসংখ্য ইটভাটা চলছে যার অধিকাংশের পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই। আইন প্রয়োগকারি ব্যক্তিরা অদৃশ্য কারণে ব্যবস্থা না নিয়ে নাকে তেল দিয়ে ঘুমান। পরিবেশ রক্ষায় নাগরিক হিসেবে যেমন আমাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে তেমনি আইনের যথাযথ প্রয়োগ ঘটাতে হবে। তাহলেই কার্যকর রেজাল্ট আসবে। আজকের পরিবেশ দিবস সফল হোক। শুধু কথামালায় সীমাবদ্ধ না থেকে পরিবেশ রক্ষায় আজ থেকেই কার্যকর ভূমিকা নিয়ে এগিয়ে আসবে বিশ্ব পরিবেশ দিবসে এই হোক আমাদের অঙ্গীকার।
পোস্ট বিবরণ
পোস্ট | জেনারেল রাইটিং |
---|---|
পোস্ট তৈরি | selina 75 |
তারিখ | ৫ই জুন ,২০২৪ |
লোকেশন | ঢাকা |
আমার পরিচয়
আমি সেলিনা আখতার শেলী। বর্তমানে গৃহিনী। জন্মসূত্রে বাংলাদেশী। জন্ম,বেড়ে ওঠা চট্রগ্রাম শহরে। চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনশাস্ত্রে অনার্স-মাস্টার্স। দীর্ঘ দিন সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের অধিকার রক্ষায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় কাজ করেছি।স্বামীর বাড়ী দিনাজপুরে,বর্তমানে ঢাকায় থাকি।ঘুরে বেড়ানো,বই পড়া,অজানাকে জানা,নিত্য নতুন রান্না ও বিভিন্ন ধরণের হাতের কাজ করা আমার শখ।দেশাত্ববোধ,দেশীয় শিল্প,সাহিত্য ও সংস্কৃতি আমার অন্যতম ভালো লাগা।এদেশে জন্মগ্রহণ করে আমি গর্বিত।
https://x.com/selina_akh/status/1798305670552539423
আসলে আপু আমাদের পরিবেশ কিন্তু একটা উপাদানের গঠিত নয়, এর পেছনে অনেক কিছু রয়েছে। আর তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় গাছ,আর প্রাকৃতিক পরিবেশ। আর এস পরিবেশটা সুন্দরভাবে টিকিয়ে রাখতে হলে মানুষের অনেক অবদান রয়েছে। আর এজন্য বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন করা হয় যেন সবাই পরিবেশের প্রতি গুরুত্ব রেখে পরিবেশের সৌন্দর্য বজায় রাখে। যাইহোক এ বিষয়ে খুব সুন্দর আলোচনা করেছেন দেখে অনেক অনেক ভালো লেগেছে।
বিভিন্ন দিবস পালন করা হয় জনগনকে সচেতন করার জন্য।যাতে জনগন সেই বিষয়ে সচেতন হয়। যাই হোক আমার পোস্টটি আপনার ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগলো। ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
আজকে পরিবেশ দিবস কথাটি জানা ছিল না আর এ কথাটি জেনে আমার খুব ভালো লাগছে আমাদের পরিবেশ আমাদের প্রকৃতির অংশ । আর আপনি আমাদের পরিবেশ সম্পর্কে বেশ সুন্দর সুন্দর কিছু কথা লিখেছেন যেগুলো পার্সোনাল ভাবে আমার অনেক ভালো লেগেছে আপনার প্রত্যেকটা কথাকে আমি সম্মান জানাই।
আমরা সবাই যদি পরিবেশ রক্ষায় সচেতন হই তবেই এই দিবস পালন স্বার্থক হবে। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ভাইয়া।
আপু আপনি আজকে আমাদের মাঝে খুব সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন। আপনার পোস্টে দেখে জানতে পারলাম একটা বিষয় যে আজকে হচ্ছে পরিবেশ দিবস। আজকে বিশ্ব পরিবেশ দিবস আসলে বর্তমানে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য বেশি বেশি গাছ লাগানো অবশ্যই আমাদের প্রয়োজন। খুব সুন্দর একটি পোস্ট লিখে আপনি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন দেখে খুবই খুশি হলাম। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য।
পরিবেশ রক্ষায় গাছ লাগানোর পাশাপাশি কলকারখানার বিভিন্ন বর্জ্য ও ধোয়া বন্ধেও জনগকে সচেতন হতে হবে। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ভাইয়া।