SBD recovery case #1 : beneficiary rme [round 33]
This post is made for recovering lost SBD : 1470
Recovered so far : 1116.942 SBD
গল্প (রক্ত তৃষা) - পর্ব ৩২
Copyright Free Image Source : PixaBay
ভাঙের শরবত খাওয়ার পরে ঠিক সেই জায়গাতেই বসে রইলেন কমলাদেবী । ধীরে ধীরে তিনি নেশাগ্রস্তের মতো টলতে লাগলেন । দু'চোখের পাতা ভারী আর আড়ষ্ট হয়ে এলো, মাথার মধ্যে চিন্তা-ভাবনা কেমন যেনো সব জট পাকিয়ে যাচ্ছে । আরো কিছুটা সময় পরে তিনি একদম আচ্ছন্নের মতো হয়ে পড়লেন । নিজের স্বাধীন চিন্তা ভাবনা লোপ পেতে বসেছে এখন । তীব্রভাবে শুধু মন চাইছে চন্ড কিছু বলুক আর তিনি তা তৎক্ষণাৎ পালন করবেন । তাঁর মনে হচ্ছে চন্ডই বুঝি তাঁর একমাত্র প্রভু । আর প্রভুর সব আদেশ তাঁর কাছে শিরোধার্য । কেন তিনি শ্মশানে এসেছেন, কী তাঁর উদ্দেশ্য এসব কিছুর তাঁর আর মনে রইলো না । সারাটা মন জুড়ে শুধু একটা বোধই তীব্র হয়ে উঠলো - "চন্ড তাঁর প্রভু, আর প্রভুর আদেশ পালনে তিনি বাধ্য ।" এ ভিন্ন আর সব বোধবুদ্ধি তাঁর দ্রুত লোপ পেয়ে গেলো ।
এতোক্ষণ অসীম ধৈর্য্য নিয়ে চন্ড একই স্থানে ঠাঁই দাঁড়িয়ে ছিল । মশালের নিভু নিভু আবছায়া আলোয় সে শ্যেন-দৃষ্টিতে চেয়ে রয়েছে কমলাদেবীর মুখপানে । বাজের মতো তীক্ষ্ণ দৃষ্টি তার, কমলাদেবীর চোখের মণির ক্রমশঃ সঙ্কোচন পর্যবেক্ষণ করছে সে অসীম ধৈর্য নিয়ে ।
ওই তো, ওই তো কমলার চোখের মণি কুঁচকে ছোট হয়ে এসেছে, মাথা টলছে, হাত-পা গুলো এলিয়ে পড়ছে, পরনের শাড়ি অসংবৃত, কেশ আলুলায়িত । এটাই উপযুক্ত সময় । কমলা এখন সম্পূর্ণরূপে বশে এসে গিয়েছে তার । আর মাত্র কিছুটা সময় বাকি, তারপরেই সেই মহাশুভক্ষণের সূচনা চন্ডের জীবনে ।
দ্রুত চন্ড আরো দু'টি মশাল এনে জ্বালিয়ে দিলো কমলাদেবী যে স্থানে বসেছেন তার মাত্র হাত দু'য়েকের মধ্যে । এখন তাকে বেশ কিছুটা ব্যস্ত সময় কাটাতে হবে । আর এই অবসরে যদি আবার নরভুক সেই হতচ্ছাড়া শেয়ালগুলো উপদ্রব শুরু করে তো মুশকিলে পড়ে যাবে চন্ড । তাই কমলাদেবীর দু'পাশে দুটো জ্বলন্ত মশাল জ্বেলে দিলো সে, শয়তানগুলো তফাতে থাকবে ।
এরপরে আবার আঁধারে সুট করে মিলিয়ে গেলো চন্ড । রাত্রির শেষ যাম এখন । বলির সময় আগত ।
এদিকে তো এই চলছে আর ওদিকে ভূপতিবাবুর শ্বশুরবাড়িও মহা ধুমধামের সঙ্গে পুজো চলছে । মধ্যরাত্রে যেসব গ্রামবাসী আর ছেলেছোকরার দল একটুখানি ঘুমিয়ে নেওয়ার জন্য বাড়ি চলে গিয়েছিলো তারা এখন সব এক এক করে আবার পূজাস্থলে ফিরছে । বলি এখনই শুরু হবে । ওরা সবাই তাই দলবেঁধে বলি দেখতে আসছে ।
ভূপতিবাবুর কাছে বলি ভালো লাগে না । পুজো একটা পবিত্র অনুষ্ঠান, আর সেই অনুষ্ঠানে নিরীহ জীবের দেহ থেকে মস্তক ছিন্ন করে রক্তারক্তি এই বিশ্রী কান্ডগুলো ঘটানো আদৌ তিনি পছন্দ করেন না । তাই বলির সময় হয়ে এলে তিনি ছেলেমেয়ে দু'টিকে ভেতর বাড়িতে পাঠিয়ে দিলেন । তিনি চান না পৈশাচিক এইসব পশুহত্যার দৃশ্য দেখে তাঁর ছেলেমেয়েদের মনে কোনো খারাপ প্রভাব পড়ুক । ফুলের মতো নির্মল ওদের মন । সেই মনে কোনো কলুষতা যেন বিন্দুমাত্র স্পর্শ না করতে পারে !
বিশাল খড়গ । ক্ষুরধার । পুরোহিত এসে সেই খড়গে সিঁদুর লেপন করলেন । পুজোর আশীর্বাদক জবাফুল ছোঁয়ালেন আর খড়গ পুজোর মন্ত্রোচ্চারণ করলেন - "ওঁ ঐং হ্রীং ক্লীং ফট !" । এরপরে যে দু'জন বলি দেবে তাঁদের কপালে সিঁদুরের লাল তিলক এঁকে দিলেন । জবাফুলের মালা গলে পরে নিলো দুই জোয়ান । ১০৮ টা পাঁঠা বলি হবে, সোজা কথা তো নয় । তাই, পালাক্রমে দুই জোয়ান বলির কার্য্য সমাধা করবে ।
[চলবে]
এদিকে যেমন রাজবাড়ীতে নিরীহ জীবের বলি চলবে, ঐদিকে তখন কমলাদেবীকে বলি করবে চন্ড। ইস্ ব্যাপারটা ভাবতেই কেমন জানি লাগছে।
ভূপতিবাবু পাঠা বলি পছন্দ নয়। আর সে যদি জানতে পারে তার কমলাদেবীকে বলি দেওয়া হয়েছে তাহলে কি হবে। কিন্তু চন্ড মনে হচ্ছে এত বোকা নয় যে কোন প্রমাণ রেখে দেবে। কমলাদেবী কি কোনোভাবে সেখান থেকে বেঁচে ফিরতে পারবে।
bucuo o
চন্ডের মনের আশা মনে হচ্ছে খুব শীঘ্রই পূরণ হবে। কমলাদেবীর বাঁচার কোনো রাস্তা দেখতে পাচ্ছি না। কমলাদেবীর কিছু হলে ভূপতিবাবু তো পাগল হয়ে যাবে। ভূপতিবাবু অবশ্যই এর প্রতিশোধ নিবে। যাইহোক পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম দাদা।
গল্প হলেও নিশ্চয়ই অনেক জায়গায় এভাবে ১০৮ টা বলি হয়। আমি ভাবছি এতে কতো বেশি সময় লাগে! দাদা নেক্সট পর্বের জন্য অপেক্ষায় রইলাম।