ছোট গল্প ||| একজন মানুষ গড়ার কারিগর পর্ব-০৩।
আসসালামু আলাইকুম।আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির সকল ভাই ও বোনেরা আশা রাখি সকলেই সকলের পরিবার নিয়ে সুস্থ আছেন এবং সুন্দর সময় অতিবাহিত করছেন।আমিও মহান সৃষ্টিকর্তার রহমতে ও আপনাদের ভালোবাসায় সুস্থ আছি এবং সুন্দর সময় অতিবাহিত করছি।
আজকে আমি আবারো আপনাদের মাঝে "একজন মানুষ গড়ার কারিগর পর্ব-০৩" নিয়ে উপস্থিত হলাম।গত দুইটি পর্বে আপনাদের সুন্দর সুন্দর মন্তব্য ও গঠনমুলক আলোচনা পড়ে গল্প লেখার আগ্রহ অনেক অনেক গুন বেড়ে গিয়েছে।চলুন আর কথা না বাড়িয়ে "একজন মানুষ গড়ার কারিগর পর্ব-০৩" এ কি আছে তা দেখে নেওয়া যাক।
এদিকে মাস্টার মশাই তার পেনশনের টাকা উঠিয়ে মোটামুটি সকল ছেলেমেয়েদের মাঝে ভাগ বাটোয়ারা করে তার হাতে তেমন একটা টাকা রইলো না।কিন্তু টাকা পয়সা গুলো যখন তার ছেলে মেয়েদের মাঝে সমান ভাগে ভাগ করে দিল।তখন কিন্তু কেউ একবার বলল না যে সেই সেনাবাহিনীতে চাকরিরত ভাইটাকে একটু বেশি পরিমাণে টাকা দেওয়া হোক কারণ তার অর্থ তো আমরা সবাই ভোগ করছি।মাস্টার মশাই এই বিষয়টিও তার ছেলের কাছে উত্থাপন করলো।
যে দেখো টাকাগুলো আমি ভাগ করে দিলাম কিন্তু কেউ তো একটিবারের জন্যও বলল না তোমাকে একটু বেশি পরিমাণে দেওয়ার জন্য।অতএব তুমি তোমার উপার্জিত টাকা আর তোমার ভাইবোনদের মাঝে খরচ করো না কিছু তোমার ভবিষ্যতের জন্য রেখে দাও।কারণ তোমার দুইটি মেয়ে আছে।আজকে তারা ছোট কিন্তু ভবিষ্যতে তারা বড় হবে লেখাপড়া করতে তাদের পিছনে অনেক টাকা খরচ করতে হবে এবং তাদের বিয়ে-শাদীর একটা বিষয় আছে তুমি কিছু বিষয়টি চিন্তা কর আর আমি যে কথাটা বললাম বাবা তুমি একটু আমার কথাটাকে শোনো।
এতকিছু বলার পরও মাস্টার মশায়ের ছেলে মাস্টার মশায়ের কথাগুলোকে কর্ণপাত করলেন না এবং হেঁসে উড়ে দিলেন।বাবা তুমি চিন্তা করো না দেখো আমি অনেক ভালোভাবে আমার সন্তানদের মানুষ করবো এবং আল্লাহ আমাকে সব সহযোগিতা করবে।তখন মাস্টার মশাই অনেক বড় নিশ্বাস ফেলে বললেন আল্লাহ যেন তোমার মনের আশা পূর্ণ করে বাবা।
এর কিছুদিন পরে দেখা গেল বড় ভাইয়ের দুই ছেলেই গার্মেন্টসে চাকরি নিলেন এবং তার দুই ছেলে মোটামুটি মাসে বেশ টাকা ইনকাম করা শুরু করলেন। তখন তার বড় ভাই তাদের সঙ্গে আস্তে আস্তে সম্পর্ক ছিন্ন করতে শুরু করলেন।বিষয়টি দেখে মাস্টার মশাই অনেক চিন্তায় পড়ে গেলেন এবং ভাবতে শুরু করলেন যে আমি যেটা ভেবেছিলাম সেটিই তো আস্তে আস্তে হতে যাচ্ছে তাহলে এখন আমার করনীয় কি? এই ভাবতে ভাবতে মাস্টার মশাই তখন চিন্তা করলেন যে আমার কিছু জমি জমা আছে এখান থেকে আমার ওই ছেলের দুই মেয়ের নামে কিছু জমি লিখে দিবো।যাতে আমার ওই নাতনী দুইজন ভালোভাবে লেখাপড়া করতে পারে এবং ছেলের সংসারে একটু আয় উন্নতির ব্যবস্থা হয়।
মাস্টার মশাই একদিন তার চার ছেলে এবং দুই মেয়ে সহ তার বউকে এক জায়গায় একত্রিত করলেন।আর সবার মাঝে তার মনের আশাটি সে প্রকাশ করলেন।যে আমি আমার দুই নাতনীর নামে কিছু জমি লিখে দিতে চাই তোমরা কি বলো?তখন দেখা গেল সবাই চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে রইল এবং কেউ কোন কথা বলছিল না।তখন মাস্টার মশাইয়ের বউ বললেন যে কে কি বলবে তুমি তোমার জমি যাকে দিতে চাও তুমি দিবা এতে তো কেউ আটকানোর অধিকার রাখে না।
তখন হঠাৎ করে বড় ছেলে বলে বসলেন যে কেন তুমি তোমার জমি শুধু ঐ নাতনীদের নামে দিবা আরও তো তোমার নাতি নাতনি আছে তাদের নামেও তো দিতে পারো।তখন বাকি ছেলেমেয়েরা তার বড় ভাইয়ের কথায় সাইদিয়ে সবাই একই সুরে একই কথা বলতে শুরু করলেন।তখন মাস্টার মশাই বললেন যে দেখো এতদিন তোমাদের জন্য ওর সকল উপার্জন তোমাদের পিছনে খরচ করেছে আর আজকে আমি একটু জমি ওর মেয়েদের নামে দিতে চাচ্ছি। সেটা কেউও তোমরা বাধা দিচ্ছ তাহলে আমার অবর্তমানে তোমরা কিভাবে তোমাদের মধ্যে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখবে এটি তো বড় বিষয়!*
আজকের মত এখানেই শেষ করছি আগামীতে আবার চতুর্থ পর্ব নিয়ে হাজির হব সে পর্যন্ত আপনাদের কাছে থেকে বিদায় নিচ্ছি।
আমার পরিচয়।
আমি মোছাঃ সায়মা আক্তার। আমি একজন ব্লগার, উদ্যোক্তা।কবিতা লিখতে, নতুন কোনো রেসিপি তৈরি করতে এবং নতুন নতুন ডিজাইন সৃষ্টি করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি।সব সময় অবহেলিত মানুষের পাশে থাকতে এবং অবহেলিত মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে পারলে খুব ভালো লাগে।তাই সব সময় অবহেলিত মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করি এবং তাদের সহযোগিতায় নিজেকে সব সময় সম্পৃক্ত রাখি।