আমার অনুভূতি ||| হঠাৎ বিপদের মুহূর্তে।
হ্যালো বন্ধুরা সবাই কেমন আছেন? আশা করছি আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যরা পরিবারকে নিয়ে সুন্দরভাবে দিন যাপন করছেন।
আজ মঙ্গলবার সকালে ঘুম থেকে উঠে কেন জানি শরীরটা ভালো লাগছিল না তাই ভাবছিলাম আজ স্কুলে বাচ্চাকে নিয়ে যাব না। কিন্তু নিরুপায় বাচ্চা স্কুলে যাবে বলে কান্নাকাটি শুরু করল। তাই বাচ্চাকে রেডি করে আমি রেডি হচ্ছিলাম স্কুলে যাব বলে। বাসা থেকে বের হয়ে একটি রিকশা নিচ্ছিলাম।তখন যাওয়ার পথে দেখি রাস্তায় প্রচন্ড জ্যাম। চার দিকটা শুধু হোন্ডা এবং মানুষজন ভরপুর। রিকশাওয়ালা ভাইকে বললাম এখানে কি হয়েছে বললো এক জায়গায় মারামারি হয়েছিল তাই ওখান থেকে সব লোকজন আসছে।
রীতিমতো একটু ভয় ও কাজ করছিল। কিন্তু তারপরও মনে সাহস নিয়ে রিকশাওয়ালা ভাইকে বললাম সাবধানে সামনের দিকে এগোতে থাকেন। ঠিক সেই সমস্যাগুলো অতিক্রম করে যখন একটু সামনের দিকে আজিজুল হক কলেজ গেটের সামনে চলে আসলাম তখন চারদিকে আরো ভয়ংকর অবস্থা। দেখি কলেজ গেটের সামনে প্রচন্ড মারামারি ককটেলের আওয়াজ এবং স্টুডেন্টরা দৌড়াদৌড়ি করছে। এদিকে পুলিশ ও গুলি ছুটছে। চার দিকটা এমন অবস্থা দেখে আমার ছোট্ট বাবু ভয় পেয়ে গুটিয়ে গেল। আমাকে বলল আম্মু স্কুলে যাব না চলো বাসায় চলে যাই।কিন্তু আমি নীরুপায় জ্যামের মধ্যে পড়ে গেছি সামনেও আগাতে পারছি না পিছনেও যেতে পারছিনা। এই কথা বলতে না বলতে আমার রিক্সার সামনে একটি ভ্যানে করে দুটো ছেলে রক্তাক্ত অবস্থায় পাশ দিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল।
কিন্তু আমাদের সমাজে মানুষগুলোর মন মানসিকতা দেখলে আসলেই অবাক হয়ে যাই।যেখানে ছেলেটির প্রাণের আশঙ্কা তাকে দ্রুত হাসপাতালে না নিয়ে চারদিকে ঘেরাও করে সবাই শুধু রীতিমত ছবি তুলছে।আসলে আমাদের সমাজটা এমন হয়ে গেছে যে ফেসবুকে প্রথম পোস্ট করতে পারলেই মনে হয় সে অনেক বড় হয়ে গেছে।
একটি জীবনের মূল্য কারো কাছে নেই। এই জীবনটি চলে গেলে একটি পরিবার কতটা অসহায় হবে। তার মা-বাবার কাছে সে কতটা হীরার টুকরা শুধু সেই মা বাবা ভাই জানে।লাল টুকটুকে রক্তে যখন তার শার্ট ও প্যান্ট ভেজা সেই অবস্থাটা দেখে রীতিমত আমার মাথা ঘুরে গেছে। আসলে এমন পরিস্থিতিতে কখনো পরিনি তো। তাই প্রথমবার দেখে খুব ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। আর আজকের দিনটা যে এমন হবে সেটাও বুঝতে পারিনি।চার দিকটা রিক্সা ভ্যান ও লোকজনের কোলাহল পুলিশ এবং পুলিশের গাড়ি।সেই জ্যামের ভেতর পড়েছিলাম।
পুলিশরা ছোটাছুটি করছে এবং পুরা কলেজ ক্যাম্পাস চার সাইড দিয়ে পুলিশ ঘিরে নিয়েছিল। আমার ছোট্ট আরাফ সেই মুহূর্তে আমাকে প্রশ্ন করছিল বার বার আম্মু আঙ্কেল টার কি হয়েছে আঙ্কেলের পা ও শরীরে রক্ত কেন আর আঙ্কেলকে হাসপাতালে নিচ্ছে না কেন। আঙ্কেল টা তো মরে যাবে আঙ্কেলকে হাসপাতালে না নিয়ে সবাই এত ছবি উঠাচ্ছে কেন। আসলে এই ছোট বাচ্চার প্রশ্নের কাছে আমি হেরে গেছি। সত্যিই আমরা কোন সমাজে কোন অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে। এই সমাজটা শুধু নিজে কিভাবে ভালো থাকা যায় কি করলে ভালো থাকবো। অন্যকে নিয়ে কারোর কোন ভাবার সময় নেই। এই হলো আমাদের দেশের অবস্থা।
আজ এই জায়গায় হয়তোবা আমার আমার ছোট্ট আরাফের জীবনটাও চলে যেতে পারতো হয়তোবা সৃষ্টিকর্তা আমাদের সহায় ছিল এজন্য বেঁচে গেছি। এই মুহূর্তগুলো সত্যিই অনেক কষ্টদায়ক। একজন দুজনের জন্য কত অসহায় প্রাণ চলে যায়। আর নিরবে নিভৃতে কত মায়ের বুক খালি হয় এবং সেই মায়েরা বুক চাপা কষ্ট নিয়ে শুধু দীর্ঘশ্বাস ফেলে যায়। আসলে আমাদের প্রত্যেকের জন্য দরকার নিরাপদ আশ্রয়ে সড়ক পথে চলাচল।রাস্তায় মারামারি এবং বিভিন্ন জায়গায় মারামারি এগুলো কত অসহায় প্রাণ নিয়ে নেয়।
যারা হয়তোবা এগুলোর সাথে জড়িত তাদের কোন সমস্যা না হয়ে যারা এগুলোতে জড়িত নেই তাদের প্রাণটাও চলে যাচ্ছে। তাই সুস্থ সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্য সবার আগে যেটি দরকার দেশ থেকে দুর্নীতি চলে যাওয়া। যখন তখন উত্তেজিত হয়ে যে কারো প্রাণ না নেওয়া। এই দেশে সঠিক আইনের ব্যবস্থা দরকার। তাহলে একটি সুন্দর সমাজ গড়ে উঠবে।পুরাতন শেষ হলে নতুন জন্ম নেয় এইতো জগতের রীতি কিন্তু এই নতুনদের মাঝে যদি হিংসা ও প্রতিহিংসার বাঁধ বাড়িয়ে দেওয়া হয় তাহলে যুবসমাজ আরো দিনে দিনে ধ্বংস হয়ে যাবে।তাই যুব সমাজকে ভালো কাজে লাগিয়ে তাদের উৎসাহ দিয়ে সমাজটাকে ভালোর পথে পরিচালিত করা উচিত।
তারপর সেখান থেকে রিক্সা নিয়ে যখন কিছুটা জ্যাম কমে গেল আস্তে আস্তে রিক্সাওয়ালা ভাই স্কুলের উদ্দেশ্য সামনের দিকে যেতে লাগলো। কিন্তু সামনে যখন যাচ্ছিলাম রাস্তাঘাট এতটা ফাঁকা ছিল।ভয় বা আতঙ্কে সবাই যে যার মত ছিল। আসলে বিপদ কখন কার আসে বলে কয়ে আসেনা হঠাৎ বিপদের সম্মুখীন হব এটা বুঝতে পারিনি।
আর একটা জিনিস আমি সব সময় সৃষ্টিকর্তার প্রতি বিশ্বাস রাখি রিযিক এবং জীবনের মালিক একমাত্র সে। সেটা যে কোনভাবে যেকোনো ওসিলায় হতে পারে। আর মৃত্যু সেটা তো অনিবার্য সত্য। যার যেখানে মৃত্যু আছে সেখানে হবেই। এ পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করলে মৃত্যুর স্বাদ তাকে গ্রহণ করতেই হবে।
আজ যাচ্ছি অন্য কোনদিন হাজির হব আবার নতুন কোন ব্লগ নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকবেন আল্লাহ হাফেজ।
আমার পরিচয়।
আমি মোছাঃ সায়মা আক্তার।আমি একজন ব্লগার, উদ্যোক্তা।কবিতা লিখতে, নতুন কোনো রেসিপি তৈরি করতে এবং নতুন নতুন ডিজাইন সৃষ্টি করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি।সব সময় অবহেলিত মানুষের পাশে থাকতে এবং অবহেলিত মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে পারলে খুব ভালো লাগে।তাই সব সময় অবহেলিত মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করি এবং তাদের সহযোগিতায় নিজেকে সব সময় সম্পৃক্ত রাখি।
আমাদের মৃত্যু যে কখন হয় সেটা বলা মুশকিল কিন্তু হঠাৎ করেই কোন মানুষ যদি কোন মানুষকে মেরে ফেলে এটা সত্যি আশ্চর্যজনক। মনে হয় হয়তোবা না মারলে মানুষ টির মৃত্যু হতো না। বর্তমানে আমাদের দেশটা দুর্নীতিতে ভরে গেছে। আপনার ছেলে আরাফের প্রশ্নগুলো শুনে আমিও অবাক হয়ে গেলাম। সত্যি আমরা একটা মানুষ মারা যাচ্ছে তারপরেও আমাদের কাছে ব্যস্ত থাকে তাকে একটু সাহায্য না করে। তবে আপনারা এই বিপদটা অতিক্রম করে যে ঠিকঠাক ভাবে পৌঁছে গেছেন এটা জানতে পেরে ভীষণ ভালো লাগলো।
এটা নতুন অভিজ্ঞতা,তবে আমি চাইনা কারো এ ধরনের অভিজ্ঞতা হোক।
বর্তমান মানুষ ছবি তুলে ভিডিও করে সবার আগে আপলোড করতে পারলে নিউজ করতে পারলে ভাইরাল হতে পারলে ভিউ বাড়াতে পারলেই যেন সব কাজ উদ্ধার করে ফেলে আমি মরে গেলাম তাতে তাদের আপসোস নেই আপসোস হবে যদি ভিডিও আপলোড করতে না পারে ফটো ভিডিও দিয়ে টাকা কামাতে না পারে।আপনার ছোট্ট শিশুর মাথায় এসেছে আঙ্কেল কে কেন হাসপাতালে নিচ্ছে না কেম ফটো তুলছে।আমরা লজ্জিত মানুষ জাতি হিসেবে।
ঠিক বলেছেন দিদি।আসলে সবাই মনে করে কত তাড়াতাড়ি আপলোড দিতে পারবে এবং ফোন থেকে ইনকাম করতে পারবে এটি সবার মাথায় কাজ করে।