আমরা এবং আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম ফার্মের মুরগী হওয়ার পথে ধাবিত হচ্ছি নাতো?

in Incredible India7 months ago
children-5537106_1280.jpg

pixabay

পহেলা বৈশাখ এর দিন গ্রামে গিয়েছিলাম। সেদিন বিকেলের দিকে সেখানে ঝড় -বৃষ্টি হচ্ছিলো। আমি আমার ফুপু শাশুড়ীর বাসায় ছিলাম ওই সময়। তখন দেখলাম আমার ফুপু শাশুড়ীর ছেলের বউ তার ছেলের নিয়ে বাবার বাড়িতে যাবে। এর জন্য অটো এসেছে বাড়ির সামনে। তখন গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছিলো।কিন্তু ছাতা ছাড়া অটো পর্যন্ত কয়েক ফিট জায়গা যাওয়ার সাহস পাচ্ছে না ছেলের মাথায় পানি বৃষ্টির পানি লাগলে অসুস্থ হয়ে যাবে বলে। ছেলের বয়স ৬/৭ বছর হবে।মা হিসেবে সাবধানতা অবলম্বন করতেই পারে।
কিন্তু প্রশ্ন হলো মাঝে মাঝে বাড়াবাড়ি করছি নাতো? এর কারণে তার ইমিউনিটি সিস্টেম দূর্বল হয়ে যাচ্ছে নাতো।
অতিরিক্ত রোদে কিংবা বৃষ্টিতে ভেজাকে আমি সাপোর্ট করছি না তবে এগুলোর প্রয়োজন আছে সুস্থতার জন্য। সারাক্ষণ বাচ্চাদেরকে এসি কিংবা ফ্যানের মাঝে আটকে না রেখে তাদের স্বাভাবিক আলো বাতাস কিংবা বৃষ্টিতে ভেজানোরও প্রয়োজন আছে।

ai-generated-8708420_1280.jpg

pixabay

আমার ছোটবেলায় মনে পরে বৃষ্টি নামলে ঝুম বৃষ্টিতে ভিজতাম।তখন এখনকার মতো কয়েক মিনিটের বৃষ্টি হতো না।ভিজতে ভিজতে হাতে পায়ের আঙ্গুলগুলো কেমন যেন চিপসে সাদাটে হয়ে যেত।মা মাঝে মাঝে এসে হুমকি দিয়ে যেত মার দেয়ার কিন্তু সেটাকে থোড়াই কেয়ার করতাম।এতে করে অসুস্থ হয়ে থাকতাম এমন না।আবার হেঁটে হেঁটে দলবেঁধে গল্প করতে করতে স্কুল থেকে বাড়ি ফিরতাম।অথচ রিকশা ভাড়া সাথেই থাকতো।
বিকেলে শীত গরম কিংবা বর্ষা সারাবছর মাঠে খেলতাম।শুধু খেয়াল রাখতাম আজান হয় কিনা।কারন আজান এর আগ দিয়ে বাসায় পৌঁছাতে হবে। যদিও সেই বাসায় ফেরা প্রায় প্রতিদিনই আজানের পরে হয়ে যেত।

আমি আমার ছেলেদেরকেও এভাবেই বড় করার চেষ্টা করেছি। সুযোগ পেলে ঝুম বৃষ্টিতে গোসল করতে দিয়েছি আর ওদের সাথে নিজেও ভিজেছি। রাস্তায়, পাশের বাড়ির ছাদে, মাঠে, সব জায়গাতে খেলতে দিয়েছি।
স্কুল থেকে আমার ভাইয়ের ছেলেসহ ৩ জনকে নিয়ে ফিরতে হতো। ওদের স্কুল ছুটি হতো ২টার পরে। জ্যামের ভয়ে ৩ টাকে নিয়ে রোদ বৃষ্টির মাঝে হেঁটেই বাড়ি ফিরতাম। প্রায় দিনই ফেরার পথে লেকের ভেতরের খালি জায়গাতে নিয়ে ৩টাকে ছেড়ে দিতাম খেলার জন্য। ঢাকার বাচচাদের বিশেষ করে ইংরেজি মাধ্যমের বাচচাদের ফার্মের মুরগী বলে মানুষ। খুব যে একটা ভুল বলে এমনও না।

এক ভাবির সাথে তার ছেলেদেরকে নিয়ে আবাহনী মাঠে কথা হয়েছিল। তখন সে বলেছিলো যে, আমার দুই ছেলেকে কখনো আমি আমাকে ছাড়া নিচেও নামতে দেই না ।এখন বার বার অসুস্থ হয়ে পরছে এজন্য ডাক্তার বলেছে ওদেরকে যেন কমপক্ষে দিনে ১ ঘন্টা রোদ খাওয়াই। এজন্যই ফুটবল খেলতে দিয়েছি।

road-2672029_1280.jpg

pixabay

বাচচারা সময় পায় না এটা একটা বিষয় কিন্তু ইচ্ছে থাকলে এর মাঝেই অনেক কিছু করা সম্ভব। আমার ছেলেদের আমি বাসার সামনে রাস্তায় খেলতে পাঠিয়েছি খুব ছোট বেলা থেকেই। কারন আশেপাশে খেলার মাঠ ছিলো না। নিচে পাঠিয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকতাম। যখন আমাদের বাবার বাড়িতে যেতাম তখন শুধু খেতে ঢুকতো রুমে ,আর বাকি সময় খেলতো। । সন্ধ্যার পরে ভাইয়ের ছেলেদের সহ সবকটাকে একসাথে গোসল করিয়ে রুমে ঢুকাতাম।ওদেরকে কখনোই ফার্মের মুরগী বানাতে চাই নাই।

আসলে এত কিছু বলার কারণ হলো আমাদের জীবনে সব কিছুরই প্রয়োজন আছে। আর এটা আমাদের সুস্থ থাকার জন্যই। যদি রাস্তায় বড় হওয়া ছেলে মেয়েদের খেয়াল করেন দেখবেন ওদের ওপর শীত, গরম কিংবা বৃষ্টি তেমন কোন প্রভাব ফেলতে পারে না।

সর্দি কাশির ভয়ে যদি আপনি যদি নিজে এবং আপনার সন্তানকে একদমই বৃষ্টির পানিতে না ভিজতে দেন তাহলে অনেক কিছুকেই মিস করে যাবেন। গুগল করে জানতে পেরেছি যে,

এটা আপনার চুল ভালো রাখবে, ভিটামিন বি এর অভাব পূরন করবে, অবাক করার মত বিষয় হলো এটা কানের ইনফেকশন ও সমস্যা দূর করতেও সাহায্য করে, ত্বকের সৌন্দর্য, চুলকানি দূর করতে এবং আনন্দ সৃষ্টিকারী ডোপামিনের মতো হরমোনগুলোর ক্ষরন বৃদ্ধি করে,যার কারনে মানসিক অবসাদও দূর করে থাকে।

football-390945_1280.jpg

pixabay

তাই মাঝে মাঝে ভিজতেই পারেন। পাশাপাশি রোদও আমাদের জন্য খুব উপকারী। এটা আমাদের শরীরের ভিটামিন ডি এর ঘাটতি পূরন করে এটাতো সবাই জানে।

এছাড়াও এটা আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখতে , রক্ত চলাচল ঠিক করতে ও এলার্জির সমস্যা দূর করার পাশাপাশি রোদের ছটা আমাদের শরীরে 'হ্যাপি হরমোন' বাড়াতে সাহায্য করে। এটি মস্তিষ্কের নিউরোট্রান্সমিটার যেমন সোরোটোনিন, মেলাটোনিন, ডোপামিন ক্ষরণ বাড়ায়। এর ফলে আমাদের মন মেজাজ ভালো থাকে।

আর এসির বাতাস আপনার চুল, ত্বক থেকে শুরু করে নিউমোনিয়া পর্যন্ত বানিয়ে ছাড়তে পারে।
তাই ফার্মের মুরগীর মতো না বেচে যতটা সম্ভব স্বাভাবিক আলো বাতাসে বাঁচার চেষ্টা করুন।

family-591581_1280.jpg

pixabay



Thank You So Much For Reading My Blog

HfhigaP72YBd6w1Kgyw9eMoDygDx869D1PKa6jG8D9C9MQ5rA8UuUvaGRermEeDs8YYv1jb4TX4QUAAbRoaAJFmmUaGZUojU1gWvH66zbc...wdYfZe5zwHZgv7fSFyfX5YWvwFGCJXq8EuycKeaUaXARJjpb61mUGxLAjp1XsJ6PQbzF28Bu6LQTgryC3MSekzsBvnPpE3TAcMAMTMQbf9uvFuTHezySGMDKr6.png

Sort:  
 7 months ago 

চমৎকার লিখেছেন আপু। একেবারে সময়োপযোগী লেখা এটি। আসলেই আমরা বাচ্চাদের এমন ভাবে বড় করছি যেমন ভাবে ফার্মের মুরগি পালা হয়। অথচ রাস্তাঘাটে দেখি কত ছোট ছোট বাচ্চা একাকী দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে। আর আমরা আমাদের বড় বাচ্চাগুলো কেও বাসার নিচে একা ছাড়তে ভয় পাই। এর জন্য অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমাদের মন মানসিকতাই দায়ী। খুব সুন্দর ভাবে আপনি বিষয়টি তুলে ধরেছেন। খুব ভালো লাগলো লেখাটি পড়ে।

Loading...

You have a very nice idea about outdoor and natural fun which is necessary for the mental and physical development of children as well as grown-up ones. You have used your relatives to make things clear and I loved the way of your narrative. My best regards.

 7 months ago 

Thank you so much, sir.

 7 months ago 

একটা গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। বর্তমান সময়ে আমরা দিন দিন ফার্মের মুরগি হওয়ার দিকে ধাবিত হয়ে যাচ্ছি।
আমার মনে হয় যারা গ্রামে বসবাস করে তারা ছোটবেলায় সবাই বৃষ্টি আসলে বৃষ্টিতে ভিজতো।
বিকেল বেলা খেলতে যেত। দেখা যায় সব সময় প্রাকৃতিক আবহাওয়ার মাঝেই দিন পার করত।

কিন্তু এখন বিশেষ করে যারা ঢাকা শহরে থাকে তাদের বাচ্চাদের ঘরের বাইরে বের হতে দেয় না। আসলে এটা ঠিক না, বাচ্চাদের একটু স্বাধীনতা দেওয়া উচিত।

সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

 7 months ago 

সত্যি আমাদের বাচ্চাদেরকে আমরা যেন দিন দিন রোবটে পরিণত করে ফেলেছি ।ওরা প্রকৃতির ছোয়া থেকে অনেক দূরে চলে যাচ্ছে ।দিন দিন তাদেরকে আমরা মোমের মত তৈরি করে ফেলছি।

সারাক্ষণ এসির বা বৈদ্যুতিক পাখার নিচে না রেখে স্বাভাবিক প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে মানিয়ে নেওয়ার অভ্যাসটা তৈরি করা উচিত তাহলে তারা যেকোনো পরিবেশে গিয়ে নিজেদেরকে মানিয়ে নিতে পারবে।
আমরা মায়েরা মাঝে মাঝে যত্ন নেয়ার ক্ষেত্রে অতিরিক করে ফেলছি যা তাদেরকে অলস করে দিচ্ছে। আমাদের গ্রামে সব বাড়িতে এসি থাকে না ।সেখান থেকে আমরা বড় হয়েছি প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে সাথে।

দেখা যাচ্ছে শহরের বাচ্চাদের থেকে কিন্তু গ্রামের বাচ্চারা কম অসুখে ভুগছে। তারা কিন্তু সব ধরনের পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে পারে নিজেদেরকে।
আপনার পোস্টটি পড়ে অনেক ভালো লাগলো। আপনার জন্য রইল শুভকামনা ।

 7 months ago 

একদম ঠিক বলেছেন। আমি মাঝে মাঝে আমার শশুড় বাড়ির গ্রামে যাই।কিন্তু সেখানেও অনেকটা একই অবস্থা দেখি।সেখানে ঘরে ঘরে এসি নাই কিন্তু বাবা মায়েরা দেখা যায় যে, আমারা আগে যেভাবে খেলতাম কিংবা বৃষ্টিতে ভিজে গোসল করতাম ওই জিনিসগুলো ওই ভাবে করতে দেয় না। শহর এর ছোয়া ও লেগেছে।
যার কারনে আমরা শিগগিরই হয়তো জাতি হিসেবে ননীর পুতুলে পরিনত হবো।

Coin Marketplace

STEEM 0.21
TRX 0.20
JST 0.034
BTC 90550.95
ETH 3108.45
USDT 1.00
SBD 2.92