ব্লাডলাইন ( পর্ব ১ )

ব্লাডলাইন প্রথম পর্ব ❤️

1000027142.png

'ইয়াফির চোখের সামনেই জলজ্যান্ত এক ছেলের গলা কে/টে নদীতে ছুঁড়ে ফেলে দেয় এক যুবতী মেয়ে। ইয়াফি হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে মেয়েটার দিকে। মেয়েটার ভিতরে এক চিলতে পরিমাণ আক্ষেপ নেই ইয়াফির উপস্থিতিতে। উল্টো সে ক্রাইমের চিহ্ন মিটাতে ব্যস্ত। ছেলেটার বিশাল দেহের বডিটাকেও মেয়েটা উঠিয়ে নদীতে ফেলে দেয়। ছেলেটার কোনো ছিটেফোঁটাও ক্রাইম স্পটে নেই। ইয়াফি আগের তুলনায় আরো কিছুটা অবাক হয় মেয়েটার নিখুঁত কাজকর্ম দেখে। একটা মেয়ের পক্ষে এতোটা নিপুণতার সহিত ক্রাইম করা কিভাবে সম্ভব ইয়াফির মনে সেই প্রশ্নটাই বিদ্যমান। মেয়েটা দেখতে একেবারেই সাদামাটা। কেউ কোনোদিন হয়তো কল্পনাও করতে পারবে না এই মেয়ে একটু আগেই কাউকে চিরনিদ্রায় শায়িত করেছে। রক্তের নিশান ও সরিয়ে ফেলে মেয়েটা তার কাছে থাকা একটা লিকুইডের সাহায্যে। ইয়াফির মনে চলতে থাকা প্রশ্নের কিছুটা উত্তর মিলে। কাউকে একেবারে শেষ করে দিয়ে রক্তের নিশান পর্যন্ত সম্পূর্ণ রূপে মুছে ফেলা কোনো সাধারণ মানুষের কাজ নয়। মেয়েটা আগ থেকেই হয়তো এই পেশায় দক্ষ কারিগর। মেয়েটার দিকে দৃষ্টি অটুট রাখে ইয়াফি। মেয়েটা নিজের কাজ মিটিয়ে ইয়াফির দিকেই আসছে। ইয়াফির চাহনিতে আরো আক্রোশ যুক্ত হয়। বেচারা ইয়াফি এসেছিল নিরিবিলিতে একাকী কিছুটা সময় কাটাতে। তা আর হয়ে উঠলো না। মেয়েটার নজরে পড়ে ইয়াফি দিকে। হাঁটার জোর বাড়িয়ে ইয়াফির একদম নিকটে এসে দাঁড়ায় মেয়েটা। ইয়াফির দৃষ্টিপাত আরো গভীর হয়। হাবাগোবার মতন এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে মেয়েটার দিকে। মেয়ের কথায় ইয়াফির ধ্যান ফিরে আসে।

--"কিরে তুই কি আমায় কিছু করতে দেখেছিস?"

--"হুম।"

--"তার মানে একটু আগে আমি যেই কাজ করেছি সেই কাজের একজন সাক্ষী তুই?"

--"তা জানি না! আমি এসেছি একাকী সময় কাটাতে কিন্তু আপনার কর্মকান্ড আমার চোখে পড়ে গেছে।"

মেয়েটা ইয়াফির কথা শোনা মাত্রই একটু আগে ব্যবহার করা ছু/রিটা ইয়াফির পেটে চেপে ধরে বলে উঠে,

--"হায়রে আরো একটা কাজ বেড়েছে। তবে যাক ভালোই হয়েছে। নয়তো তোর কারণে আমি ফেঁসে যেতাম।"

'ইয়াফির ভিতরে যেনো অস্থিরতা বলতে কিছুই নেই। এমন পরিস্থিতিতে যে কোনো মানুষের শরীরে কাঁপুনি চলে আসার কথা। সেখানে ইয়াফি একদম শান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মনে হচ্ছে যেনো ডিপ্রেশনের অন্তিম স্টেজের ক্লাইন্ট ইয়াফি। ইয়াফির হাবভাব দেখে মেয়েটা ছুরিটা সরিয়ে প্রশ্নের রেখা টানে...

--"কিরে পাগল নাকি তুই? এমন বেকুমের মতন আচরণ করছিস কি কারণে? তুই কি বুঝতে পারছিস না আমি যে তোকেও শেষ করে ফেলতে চাইছি? কারণ তুই আমার কৃতকর্মের একমাত্র সাক্ষী। কিন্তু তোর ভিতরে আমি কোনো হেলদোল দেখছি না কেন?"

--"আসলে মানুষের মৃত্যুটা আগ থেকেই লিখা থাকে। আমি যদি আগ থেকে আসতাম তাহলে হয়তো এখানে আসতাম না নিজের আত্মরক্ষার জন্য। কিন্তু ইতিমধ্যেই আমি ফেঁসে গেছি। এখন আমার মৃত্যু যদি এভাবেই লিখা থাকে তাহলে সেটাকে তো ঠেকাতে পারবো না।"

--"এই ছেলে তুই কি সাইকো নাকি রে? তোর কথা যুক্তিসঙ্গত। তাই বলে ভয় নামক জিনিসটাও কি হারিয়ে যাবে নাকি তোর ভিতর থেকে?"

--"না আসলে ব্যাপারটা তেমন নয়। ভয় আমি পাচ্ছি তবে সেটা হয়তো আমি প্রকাশ করতে পারছি না!"

--"আচ্ছা যাই হোক ছাড়। তোর এসব আবোল-তাবোল কথা আমার মাথায় ঢুকবে না। কিন্তু তোকে যেটা বলার আছে সেটা তুই ভালো করে শোন। তোকে দেখে আমার ডিপ্রেশনের রোগী বলে মনে হচ্ছে। তাই তোর কোনো ক্ষতি আমি করবো না। কিন্তু তার বিনিময়ে তুই আমার কিছুই দেখিস নি।"

--"ঠিক আছে।"

--"আচ্ছা আমি চললাম।"

--"হুম কিন্তু আমার একটা প্রশ্ন ছিল।"

--'কি বলবি তাড়াতাড়ি বল।"

--"আপনার পোষাক আর একটু আগের কাজকর্মের সাথে কোনো কিছুই আমি মিল পেলাম না। দেখতে একদম সাদামাটা মনে হয় আপনাকে। কিন্তু একটু আগে যেই কাজটা করলেন সেটার সাথে আপনাকে কোনো ভাবেই মিলাতে পারছি না। আপনি কি আমাকে এর রহস্যটা একটু বলবেন?"

--"শোন আমাকে দেখতে আলাভোলা মনে হলেও আমি কি জিনিস সেটা তো দেখতেই পেয়েছিস। অধিকাংশ মানুষদের স্বভাব হচ্ছে পোশাক দেখে মানুষ বিচার করা। আমি সেই ফায়দাটাই উঠিয়েছি। তোর মতন সেই মুরগীটাও ভেবেছিল আমি আলাভোলা কিন্তু বেচারার সময়টাকে যে আমি এভাবে আঁটকে দিব সেটা সে কল্পনাতেও রাখেনি। তাই আমার পোষাক দেখে আমাকে ওজন করিস না। আর তোকে একটা গোপন কথা বলি। আমি এই বেশেই মুরগীকে ফাঁদে ফেলি।"

--"ওহ।"

--"থাক এবার চললাম। আর আমার বলা কথা গুলা মনে রাখিস। ভুলেও যদি কোনো ভাবে আমাকে নিয়ে দুই অক্ষর ও বের হয় মুখ থেকে তাহলে তোর পরিণতিটাও খারাপ হবে।"

মেয়েটা ইয়াফিকে শেষ বারের মতন কথা গুলো মনে করিয়ে দিয়ে চলে যেতে শুরু করে। ইয়াফিও আর কথা বাড়ায় না। পিছন থেকে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে অস্বাভাবিক একটা হাসি দেয়। ইয়াফি কোন অর্থে হেঁসেছে সেটা একমাত্র ইয়াফিই ভালো জানে। পর্যায়ক্রমে মেয়েটাও ইয়াফির হাসির উৎপাতটা দেখেনি। দেখলে হয়তো মেয়েটা নিশ্চিত সাময়িক একটা সময়ের জন্য ডিপ্রেশনে চলে যেতো। কারণ একটু আগেই সে ছেলেটাকে না মে/রে ছেড়ে দিয়েছে৷ ভয়ের শোকতাপ যেখানে এখনো বিদ্যমান থাকার কথা সেখানে অস্বাভাবিক এই হাসি নিশ্চিত মেয়েটাকে চিন্তায় ফেলে দিতো।

ইয়াফি ঘুমিয়ে আছে। ঘড়ির কাটা এগারোটা ছুঁবে। ইয়াফির ফোন বাজছে সেই সকাল নয়টা থেকে। ইয়াফির ঘুমের কাছে যেনো ফোনের শব্দ অসহায়। ইয়াফিকে ফোন দিয়ে সকালে কেউ পেয়েছে সেটা যেনো এক প্রকারের বিলাসিতা। ইয়াফি সম্পূর্ণ রূপে মানুষ হলেও তার স্বভাব নিশাচরের মতন। কারণে অকারণে সে রাত জেগে বেড়ায়। সাধারণ মানুষের ন্যায় জলদি ঘুমিয়ে যাওয়া সেটা যেনো ইয়াফির ডিকশনারিতে এক দূর্লভ শব্দ। সে ঘুমায় দিনে। একারণে তাকে সকালে কখনোই পাওয়া যায় না। ভাগ্য করে আজকে তাও ঘুমটা ভেঙ্গেছে। তাও সেটা এগারোটা নাগাদ। ফোন রিসিভ করে ইয়াফি। অপরপ্রান্ত থেকে ক্রুদ্ধ কন্ঠ কানে এসে পৌঁছায়। ঘুমের ঘোর কাটে ইয়াফির। তাড়াহুড়ো করে শোয়া থেকে উঠে বসে ইয়াফি। ফোনের অপরপ্রান্ত থেকে লোকটা তিক্ততার সহিত প্রশ্ন ছুঁড়ে ইয়াফির দিকে...

--"এই ইয়াফি তোর সমস্যাটা কোথায়? তোকে সেই সকাল নয়টা থেকে ফোন করে যাচ্ছি তুই ফোন উঠাচ্ছিস না। এতো কমনসেন্সের অভাব কেন তোর মধ্যে? একটা মৃত মানুষও তো এতো গুলো ফোন পেয়ে জীবিত হয়ে যাবে। সেখানে তুই তো জীবিত একটা মানুষ। এতো নির্বোধ স্বভাবের কেন তুই?"

--"সরি ভাই আসলে ঘুমের কারণে টের পাইনি।"

--"ইয়াফি বাহানা দেওয়া বন্ধ করে জলদি এসে ভাইয়ের সাথে দেখা কর। রানা ভাই তোকে বাতি জ্বালিয়ে খুঁজছে।"

--"ঠিক আছে ভাই আমি এখুনি আসছি।"

ইয়াফি ফোন রেখে রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়ে রানা নামক ব্যক্তির সাথে দেখা করতে৷ উপযুক্ত স্থানে পৌঁছানোর পর রানা জলদি করে ইয়াফিকে বাকিদের থেকে একটু আড়ালে নিয়ে যায় কথা বলার জন্য। ইয়াফির মনে প্রশ্ন জাগে কাহিনী কি সেটা জানার জন্য। রানা নামক সেই ভাই ইয়াফিকে আলাদা করে ডেকে নেওয়ার পর বলে...

--"তোকে এতোবার ফোন করার পরেও তোর খোঁজ পাওয়া যায় না কেন?"

--"সরি বস ঘুমাচ্ছিলাম সেকারণে টের পাইনি।"

--"আচ্ছা ছাড় সেসব কথা। তোকে একটা উপকার করতে হবে আমার।"

--"কি উপকার বস?"

--"দ্যাখ আগেই বলছি কোনো কিছু নিয়ে প্রশ্ন করবি না। আমি যেটা বলি সেই কথাটা শুধু তোর রাখতে হবে।"

--"আচ্ছা বস বলেন সমস্যা নাই।"

--"তোকে একটা খুনের দায় নিতে হবে। যার বদৌলতে তোকে বিপুল পরিমাণে একটা অর্থ দিব আমি। তুই এটুকু নিশ্চিত থাক তোর ক্ষতি কেউ করতে পারবে না। তুই প্লিজ আমার জন্য এই কাজটা কর।"

ইয়াফি কিছুটা চিন্তিত হয় রানার কথা শুনে। রানা ব্যাপারটা বুঝতে পারে। যেকারণে রানা ইয়াফিকে বলে উঠে...

--"আসলে আমার খুব কাছের একজন কেউ একটা
মা/র্ডার করেছে৷ আর যাকে মা/র্ডার করেছে সে একটা গ্যাংস্টারের কাছের লোক। যাকে কিনা আমি নিজেও বস বলে সম্মোধন করি। তোকে শুধু তার সামনে গিয়ে জবানবন্দি দিতে হবে। নয়তো আমার উপরে অনেক বড় ধরনের মুসিবত আসবে। প্লিজ আমার জন্য এই কাজটা কর। আমাকে বাঁচা। তবে তোর টেনশনের কোনো কারণ নেই। বাকি সমস্ত কিছু আমি সামলে নিব। তোর উপরে বড় ধরনের কোনো আঘাত আসবে না।"

ইয়াফি সামান্য কিছুটা সময় বিষয়টা নিয়ে ভেবে সম্মতি জানায়। রানা ইয়াফি আর তার দু'জন লোককে সাথে নিয়ে রওয়ানা হয় সেই গ্যাংস্টারের কাছে মা/র্ডারের জবানবন্দি দিতে। গন্তব্যে পৌঁছে শুরুতে রানা নামক লোকটা গ্যাংস্টারের সঙ্গে আলাদা করে একটা কক্ষে গিয়ে দেখা করে। কিছুক্ষণ পর ইয়াফিকে ডাকা হয় দেখা করার জন্য। আর তাকে ডাকার জন্য রানা নিজে আসে। ইয়াফি লক্ষ্য করে তার বস অর্থাৎ রানার চেহারায় অন্য ধরণের এক আতঙ্কের চিহ্ন। সেই সাথে গালের মধ্যে হাতের আঙ্গুলের ছাপ বসে আছে। ইয়াফির ধারণা করতে সমস্যা হয় না যে তার বসের গালে থা/প্পড় পড়েছে। ইয়াফির কাছে সম্পূর্ণটাই এখন স্পষ্ট যে ঘটনা বড়সড় আকারে মোড় নিয়েছে। ইয়াফির বস রানা তার ভিতরে সত্যিকার অর্থেই আতঙ্ক বিরাজমান। কি যে ঘটতে চলেছে সেটা নিয়ে ধারণা করেও ব্যর্থ সে। তবে ইয়াফি কোনো প্রকার দ্বিধাবোধ ছাড়াই কক্ষে প্রবেশ করে। আর সাথে সাথেই যেনো পরিস্থিতি অন্যরকমের একটা রূপ নেয়। রানা ইয়াফিকে যার কাছে জবানবন্দির জন্য এনেছে সে ইয়াফিকে দেখা মাত্রই হুড়মুড় করে চেয়ার ছেড়ে উঠে নিজেই ইয়াফির কাছে চলে আসে। রানা হতবাক তার বসের অস্বাভাবিক আচরণ দেখে। যেখানে সে নিজেই কক্ষে ঢুকে ভয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। সেখানে ইয়াফিকে দেখা মাত্রই তার বস উল্টো চেয়ার ছেড়ে হুড়মুড় ইয়াফির সামনে এসে হাজির হয়েছে...

চলবে....

সূচনা_পর্ব

ভুল-ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো।

1000027059.jpg

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.14
JST 0.030
BTC 58802.33
ETH 3158.99
USDT 1.00
SBD 2.42