|| ঝাড়খন্ড সফর | পর্ব-০১||
নমস্কার, শুভ সকাল সবাইকে।
এর আগের পোস্টেই আমি আমার জগদ্ধাত্রী পূজার পর্ব শেষ করে দিয়েছি। আজকে আমি নতুন আরেকটি পর্ব আপনাদের সাথে শুরু করতে চলেছি। আমার এই পর্বটি নতুনএকটি ট্রাভেল ব্লগ নিয়ে। গত ডিসেম্বর মাসের ২৪ তারিখ থেকে ৩১ তারিখ পর্যন্ত আমাদের একটি ফ্যামিলি ট্যুর ছিল। আমার এর আগের পর্বের ট্যুরগুলিতে আমি যাদের সাথে গেছিলাম, এটিতেও তাদের সাথে গেছিলাম। আপনারা যারা আমার আগের পর্বের ট্রাভেল ব্লগগুলি পড়েছেন তারা এই সমস্ত পুরো বিষয়টাই হয়তো জানেন।
আমার এই ট্যুরটা ছিল ঝাড়খণ্ডে, এবং পুরোটাই ছিল বাসে। সব মিলিয়ে মোটামুটি জনা ত্রিশ জন আমরা এই ট্যুরে গেছিলাম। আমি প্রথমেই বললাম যে, এটিও একটি ফ্যামিলি ট্যুর ছিল। আমার ফ্যামিলি থেকে আমি আমার বাবা আমার দিদি এবং আমার ভাগ্নে গেছিলাম।
এই ট্যুরের শুধুমাত্র নতুন তিনজন ছাড়া আমরা প্রত্যেকেই প্রত্যেকের পূর্ব পরিচিত। আমি আমার আগের ট্রাভেল ব্লগেই বলেছিলাম যে আমাদের নির্দিষ্ট একটি গ্রুপ আছে,যারা প্রত্যেকে মিলে আমরা বছরে ছোট-বড় মিলিয়ে দুটি-তিনটি ট্রিপ করে থাকি। স্বভাবতই আমাদের মধ্যে একটা ফ্যামিলিগত ব্যাপার ও এসে গেছে। তাই এই ধরনের ট্যুর গুলিতে আমরা সবাই মিলে খুবই মজা করি। তবে এইবারের ট্যুরে আমার দিদি আর দিদির ভাগ্নে প্রথম সঙ্গ দিয়েছে, তাই আরো বেশি মজা হয়েছে।
২৪ তারিখ রাত ১০ টার সময় আমরা রওনা দিই। আমাদের প্রথম গন্তব্য ছিল ঘাটশিলা।ঘাটশিলা, হচ্ছে ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের পূর্ব সিংভূম জেলার একটি শহর। এই শহরটি সুবর্ণরেখা নদীর তীরে এবং এটি বনভূমি এলাকায় অবস্থিত। মোটামুটি সকাল ছটা সাতটা নাগাদ আমাদের ঘাটশিলার হোটেলে পৌঁছে যাওয়ার কথা।
২৪ তারিখ রাত্রেবেলা আমরা প্রত্যেকে যে যার বাড়ি থেকে ডিনার করে রওনা দিয়েছিলাম। রাত দশটায় বাস ছাড়ার কথা ছিল বলে সেদিন আমরা রাত সাড়ে আটটা-নটার মধ্যে ডিনার সেরে ফেলেছিলাম। সবাই সময় অনুযায়ী চলার ফলে মোটামুটি দশটা দশ নাগাদ আমাদের গাড়ি যাত্রা শুরু করে। ঘাটশিলা পৌঁছানো আগে প্রায় আট নয় ঘন্টা জার্নির মাঝে মোটামুটি চার-পাঁচটা ব্রেক হয়েছিল। যার প্রথম ব্রেক তাই হয়েছিল দু'ঘণ্টার মাথায়,অর্থাৎ বারোটা বাজার একটু আগে। আমরা সবাই মিলে রাস্তার ধারে একটি হোটেলে চা খাওয়ার জন্য দাঁড়ালাম। হোটেলটি খুব বড় জায়গা জুড়ে না হলেও, ছোটর মধ্যেই বেশ সুন্দর করে সাজানো। আমার দেখে বেশ পছন্দই হলো।
আমি নেমে দেখলাম সেখানে কিছু লোকজন বসে তরকা-রুটি খাচ্ছে। রাস্তার হোটেলগুলির তরকা-রুটির প্রতি আমার আলাদা একটা দুর্বলতা কাজ করে। আমি বেশ খানিক চেষ্টা করলাম নিজেকে সেখান থেকে দূরে রাখার, কিন্তু একটা সময়ের পরে আর পারলাম না। আমি আমার জন্য এক প্লেট অর্ডার করে দিলাম। প্রথমে একটু লজ্জা লাগিয়েছিল কেউ খাচ্ছে না বলে, তারপর দেখলাম আমার দেখাদেখি আরো ৫-৭ জন অর্ডার করলো। তারপরে বুকে একটু বল পেলাম অন্তত বকা খেলে আমি একা খাব না এই ভেবে😂।
যাইহোক মোটামুটি ৩০ থেকে ৪৫ মিনিটের মধ্যে আমরা সেখান থেকে আবার রওনা দিলাম।বাসের মধ্যে পুরো রাতটা আমরা সবাই আনন্দ করতে করতে, বিভিন্ন ধরনের গল্প করতে করতে,গান শুনতে শুনতে যাচ্ছিলাম। এভাবেই বেশ কেটে যাচ্ছিল। কিন্তু রাত বাড়ার সাথে সাথে প্রত্যেকের চোখে হালকা ঘুমও আসছিল। কিন্তু আমার কিছুতেই ঘুম আসছিল না। আসলে প্রচন্ড ক্লান্ত না থাকলে আমার ট্রেনে বা বাসে সহজে ঘুম আসতে চায় না। তাই আমি অধিকাংশ রাতটা জেগেই কাটিয়েছি।
সারা রাতে বাসটা দু-তিন ঘন্টা চলার পরে 10-15 মিনিটের জন্য দাঁড়াচ্ছিল। ড্রাইভার আর খালাসী বারবার নেমে চা খাচ্ছিল কারণ তারা সারারাত জেগেছিল। সাথে আমাদের মধ্যে থেকেও কেউ কেউ নামছিল চা খাচ্ছিল, আমি প্রায় প্রত্যেকবারই নেমেছি এবং বেশ কয়েকবার চাও খেয়েছি। এইভাবে একটা টাইমে চলতে চলতে হঠাৎ ভোরের আলো দেখতে পেলাম। বাইরে রাস্তার দিকে তাকিয়ে দেখলাম মাটির রং লালচে, বুঝে গেলাম আমরা ঝাড়খন্ড এরিয়াতে ঢুকে গেছি। ভোর ছয়টা সাড়ে ছটার দিকে একটি পেট্রল পাম্পে আমাদের বাসটি দাঁড়ালো পেট্রোল ভরার জন্য।
এখানে যখন নামলাম প্রচন্ড ঠান্ডা লাগছিল। আসলে বাসের ভিতরে জানালা দরজা সব বন্ধ থাকায় বুঝতে পারিনি বাইরের ওয়েদারটা। যাইহোক সেখান থেকে ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে আমরা পুনরায় আমাদের গন্তব্যে রওনা দিলাম। মোটামুটি সকাল সাতটা সাড়ে সাতটার মধ্যে আমরা আমাদের হোটেলে পৌঁছে গেলাম। হোটেলে পৌঁছে আমাদের সবাইকে টিফিন দিয়ে দেওয়া হলো। টিফিনে ছিল কেক কলা ডিম সেদ্ধ এবং মিষ্টি।
আমাদের সবাইকে টিফিন খেয়ে একটু ওয়েট করতে হল রুম পাওয়ার জন্য কারণ সেখানে দশটার আগে চেকি ইন করার নিয়ম নেই। ন'টার মধ্যে আমরা টিফিন করে হোটেলের বাইরে রোদে দাঁড়িয়ে সবাই মিলে গল্প গুজব করছিলাম। তারপরে নির্দিষ্ট সময়ে আমাদের প্রত্যেককে যে যার রুম দিয়ে দিল।
তো বন্ধুরা এই ছিল আমার আজকের গল্প, এর পরের অংশটুকু আমি পরপর শেয়ার করতে থাকবো। আজকে এখানেই শেষ করছি।
আপনার ঝাড়খন্ড ট্যুরের পুরো পোস্ট পড়ে খুব ভাল লাগল। আমারো এরকম পরিবার নিয়ে অনেক মানুষের সাথে গ্রুপ ট্যুর দিতে ইচ্ছে করে কিন্তু হয়ে উঠে না। আপনারা খুব আনন্দ করেছেন তা পোস্টের লেখা এবং ছবি দেখে বোঝা যাচ্ছে। আপনারা রাস্তায় অনেক মজার মজার খাবারও খেয়েছেন দেখছি। ধন্যবাদ দাদা।