ট্রাভেলিংঃ- রাঙ্গামাটির আদিবাসী গ্রামে ঘোরাঘুরি।
আসসালামু আলাইকুম
প্রিয় বন্ধুরা আশা করি আপনারা সকলে ভাল আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভাল আছি। লেখার শুরুতে সবাইকে শুভেচ্ছা ও স্বাগতম জানাচ্ছি আমার আজকের ব্লগিং পর্বে। প্রতিনিয়ত চেষ্টা করি ভিন্ন কিছু বিষয় আপনাদের সাথে তুলে ধরার। আমরা চেষ্টা করি সবার মাধ্যমে খুব সুন্দর সুন্দর দৃশ্য দেখার। এবং সেই দৃশ্যের সাথে অনেক কিছু তথ্য আদান-প্রদান হয়। ব্লগিং মানে যে শুধু উপভোগ করা কিংবা আনন্দ নেওয়া তা একদম নয়। আমি মনে করি এই ব্লগিংয়ের মাধ্যমে অনেক তথ্য আদান-প্রদান হয়। যার মাধ্যমে অনেক কিছু জানা অজানার থাকে। যা আমরা একে অপরের মাধ্যমে জানতে পারি শিখতে পারি। অনেক ভালো লাগে কারণ অন্য একজনের মাধ্যমে যখন আমি কোন কিছু জানতে পারবো সেটা আমার জন্য উপকারে আসে। এছাড়াও আমি যা জানি তা যদি আমি অন্যদের কাছে শেয়ার করি তাহলে আমার মাধ্যমে নতুন কিছু জানতে পারবে শিখতে পারবে সবাই।
আজকে আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করব রাঙ্গামাটি ভ্রমণের আরও একটি ব্লগ। আপনারা তো জানেন রাঙ্গামাটি বিশাল একটি এরিয়া। যেখানে ২-১ দিন ভ্রমণ করে শেষ করার মত জায়গা নয়। একটি লেক এর মধ্যে গেলে হয়তো একটা দিনও লেগে যেতে পারে এমন অবস্থা। কারণ ভালোভাবে যদি প্রাকৃতিক দৃশ্য গুলো এবং উপজাতিদের পরিবেশ গুলো উপভোগ করতে হয় তাহলে সেখানে যথেষ্ট পরিমাণ সময় দিতে হয়। অনেক কিছু জানা অজানার থাকে তাদের মাধ্যমেও। তাই আমি মনে করি দুই একদিনে হবে না। পর্যাপ্ত পরিমাণ সময় নিয়ে এসব ভ্রমণ এলাকায় যাওয়া উচিত। আবার অতিরিক্ত বেশি থাকলেও বিপদ হি হি হি। তো আমরা বোট নিয়ে ভ্রমণ করেছিলাম লেকের মধ্যে।
আমরা সারাদিনের জন্য একটি বোট রিজার্ব করে নিয়েছিলাম। সেই বোট নিয়ে আমরা এক লেক থেকে অন্য লেক এ যাচ্ছিলা। সেখান থেকে শেষ করে অন্য একটি লেক এভাবে দেখতে থাকছিলাম। আমাদেরকে বোটের মাঝি বললেন আদিবাসী গ্রামে নিয়ে যাবে। পাহাড়ি আদিবাসী গ্রামে আমাদেরকে নামিয়ে দিল। সেই বোটের মাঝি সাম্পানওয়ালা বোটের মধ্যে অপেক্ষা করছিলেন। আমরা প্রথমে স্বর্ণ মন্দির দেখতে যাই। সেই মন্দির দেখে আসার পথে আমরা আবারও আদিবাসী পাহাড়ি গ্রামে দিকে ছুটে যায়। যদি আপনারা বিষয় গুলো লক্ষ্য করেন তাহলেই বুঝতে পারবেন যে এক এক মানুষের জীবনযাত্রার মান একেক রকমের। তবে কারও জীবন কোন দিক থেকে থেমে নেই।
সৃষ্টিকর্তা এই পৃথিবীতে প্রতিটি মানুষকে তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য নিয়ে সৃষ্টি করেছেন। এবং যে এলাকার মানুষ সেই এলাকার সাথে পরিচিত এবং সেই পরিবেশের সাথে বসবাস করতে অভ্যস্ত। হয়তো সেই আদিবাসী লোকজনদেরকে আমাদের শহরে এনে শান্তি দিতে পারবেন না। কেন জানেন? কারণ তারা জন্মগত ভাবেই সেখানে বড় হয়েছেন তারা সেই পরিবেশের সাথে অভ্যস্ত। হয়তো তারা দুই এক দিনের জন্য শহরে আসতে পারে তাদের প্রয়োজনীয় কাজ কর্মের জন্য। কিন্তু শেষ মুহূর্তে দেখবেন তারা তাদের সেই গন্তব্যস্থলে গিয়ে শান্তি পাবেন। আদিবাসী গ্রামে যাওয়ার পরেই দেখেছি সবাই খুব সুন্দর সুন্দর দোকান দিয়েছে।
সেই পাহাড়িদের তৈরি করা তাঁতের কাপড় গুলো তাদের হচ্ছে ইনকামের প্রধান উৎস। তাছাড়া তারা পাহাড়ের ঢালে বিভিন্ন ধরনের চাষ করে থাকেন। সেগুলো আবার তারা বান্দরবান/রাঙ্গামাটির মেইন শহরে এসে বিক্রি করে চলে যায়। তাছাড়া তাদের তৈরি করা সেই তাঁতের কাপড় গুলো বিভিন্ন জায়গায় সাপ্লাই দিয়ে থাকেন। যেমন তাদের কাপড় গুলো আমাদের বার্মিজ মার্কেট কিংবা সমুদ্র সৈকতের সব দোকানে পাওয়া যায়। বলতে পারেন তাদের তাঁতের কাপড় গুলো দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। আমি তাদের কাছ থেকে জিজ্ঞেস করেছি তারা বিদ্যুৎ ছাড়া কিভাবে জীবন যাপন করেন। ওনারা বললেন, তাদের কাছে সেটা অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে। তাছাড়া ও খাবার পানির অনেক কষ্ট। এছাড়াও গোসলের পানির অনেক কষ্ট।
বিশেষ করে তারা ব্যবহারের জন্য যে পানি সংগ্রহ করেন তা লেক থেকে নিয়ে থাকেন। তারা তাদের প্রয়োজনীয় পানি গুলো কলসি নিয়ে কোমরে করে পাহাড়ের উপরে নিয়ে যায়। বুঝতে পারছেন তাদের জীবনযাত্রা কত কঠিন। কিন্তু তারা সেই পরিবেশের সাথে অভ্যস্ত। তারা সেগুলো করতে অভ্যস্ত। তারা রাত দিন পরিশ্রম করে কাপড় তৈরি করেন। তাছাড়া ও তারা পাহাড়ে বিভিন্ন ধরনের চাষ করেন। সত্যি কথা বলতে একটা বিষয় আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে। তারা এত সতেজ/ফ্রেশ খাবার গুলো খাই। উপজাতিরা যে মাছ খাওয়া দাওয়া করে তা লেকের মাছ। এছাড়াও উপজাতিরা খাওয়া দাওয়া করে তাদের চাষের বিভিন্ন শস্য। শাকসবজি গুলো তাদের নিজেদেরই চাষ করা ফ্রেশ সবজি খাওয়া দাওয়া করেন।
আমি তাদেরকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, তারা মোবাইল ব্যবহার করে কিনা। তখন তারা উত্তর দিল হ্যাঁ মোবাইল ব্যবহার করে। তাহলে তাদের কাছে যেরকম নেটওয়ার্কের সুযোগ সুবিধা আছে সেই ধরনের সিম ব্যবহার করেন। তাছাড়া তারা মোবাইলে চার্জ দেওয়ার জন্য সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহার করে থাকেন। বিকল্প হিসাবে তাদের সেখানে কোন বিদ্যুৎ সাপ্লাই যায়নি। হয়তো কখনো যাবে কিনা সেটা সন্দেহ। কারণ এমন ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা লেক এর মধ্যে/ দীপ অঞ্চলের মধ্যে কিভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া সম্ভব সেটা আমি নিজেও জানিনা।
হয়তো মানুষের সম্ভবের বাইরে কিছু নেই। কিন্তু চেষ্টা করলে সব কিছু সম্ভব হয়। তবে তাদের জীবন যাত্রার মান গুলো খুবই অদ্ভুত ধরনের। খাওয়ার পানির কথা জিজ্ঞেস করেছি তারা খাবার পানি খায় টিউবওয়েল থেকে। পাহাড়ের ঢালে তারা টিউবওয়েল স্থাপন করেছেন। সেখান থেকে তারা পানি সংগ্রহ রাখেন এবং খেয়ে থাকেন। তাছাড়াও পাহাড়ের ঝর্ণার পানি রয়েছে। আপনার অবশ্যই অনেকেই জানেন আবার অনেকে জানেন না পাহাড়ি অঞ্চলে যে টিউবওয়েল গুলো স্থাপন করা হয় সেগুলো চাপতে অনেক কষ্ট হয়। কারণ সেই টিউবওয়েল গুলো থেকে পানি অনেক কম আসে খুব কষ্টকর একটি বিষয়।
আজকে এই পর্যন্ত বন্ধুরা আশা করি পরবর্তী পর্বে আবার উপস্থিত হব—--------
ডিভাইসের নাম | Wiko,T3 |
---|---|
মডেল | W-V770 |
Location | রাঙ্গামাটির আদিবাসি গ্রাম |
ফটোগ্রাফার | @samhunnahar |
ক্যাটাগরি | ট্রাভেলিং |
সবাইকে অনেক ধন্যবাদ সময় দিয়ে আমার লেখা পড়ার জন্য।
💘ধন্যবাদ সবাইকে💘
আমার পরিচয়
আমি সামশুন নাহার হিরা। আমার ইউজার আইডি @samhunnahar। আমি আমার বাংলা ব্লগে কাজ করছি বাংলাদেশের কক্সবাজার থেকে। আমি বাংলা ভাষায় লিখতে-পড়তে ভালবাসি। আমি রান্না করতে পছন্দ করি। ভ্রমণ আমার কাছে অনেক ভাল লাগে। আমি সব ধরনের ফটোগ্রাফি করতে পছন্দ করি। আমি গান গাইতে এবং কবিতা আবৃত্তি করতে ভীষণ ভালবাসি। আমার মনের ভাব বাংলায় প্রাকাশ করতে পেরে অনেক আনন্দিত। তার জন্য আমার প্রাণের কমিউনিটি "আমার বাংলা ব্লগ"কে অনেক ভালবাসি।
https://twitter.com/nahar_hera/status/1759830775518924999?t=XHTTAavTafo0JG9zdWcXsg&s=19
আপু রাঙ্গামাটি কখনো যাওয়া হয়নি। তবে আপনার পোস্ট পড়ে অনেক অনেক কিছু জানতে পারলাম। সত্যি রাঙ্গামাটির আদিবাসীরা এখনো অনেক কষ্ট করে। আসলে আমরা বিদ্যুৎ ছাড়া একমিনিট ও থাকতে পারিনি আর এরা সারাবছর থাকে। তারপর আবার খাবার পানির অভাব। ধন্যবাদ আপু পোস্টি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
ওদের জীবন যাত্রার মান খুবই কষ্টের বলতে হয়। তাদের তুলনায় আমরা হাজার গুনে ভালো আছি।
প্রথমত বলবো রাঙামাটি আদিবাসি গ্রাম ঘোরাঘুরি মূহুর্ত টা সত্যিই দারুন ছিল ৷ যা আপনার পোষ্টে লেখা এবং ফটোগ্রাফি গুলো দেখে বুঝতে পারছি ৷ আর পাহাড়ি জায়গা গুলো ঘুরতে আমরাও অনেক ভালো লাগে ৷ যা হোক এটা ঠিক বলছেন ৷ জীবনযাত্রা যেখানে যেমন তারা হয়তো তেমন ভাবেই অভ্যস্ত ৷
তাদের নিজ হাতে বানোনো তাতের শাড়ি কাপড় দোকান ৷ সবমিলে ফটোগ্রাফি গুলো দেখে অনেক ভালো লাগলো ৷
পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম আশা করি পাহাড়ি জায়গা মানুষের জীবন গাথা নিয়ে অনেক জানতে পারবো ৷
অসংখ্য ধন্যবাদ আপু
রাঙ্গামাটিতে যখন ঘুরতে গিয়েছিলাম সময় গুলো খুবই আনন্দের ছিল। তাছাড়া বিভিন্ন পরিবেশের সাথে পরিচিত হয়েছি। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
রাঙ্গামাটি কখনো যাওয়া হয়নি। তবে শুনেছি জায়গাটি বেশ সুন্দর। বিদ্যুৎ ছাড়াই এখনো থাকে বিষয়টি পড়ে অবাক হলাম। আবার খাওয়ার পানির জন্য টিউবওয়েল চেপে পানি আনতে হয় সেটিও অনেক কষ্টের। রাঙ্গামাটির যে ফটোগ্রাফি গুলো শেয়ার করেছেন আপনি ফটোগ্রাফি গুলো খুব চমৎকার লাগছে। সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।
হ্যাঁ আপু অনেক সুন্দর একটি জায়গা। তাদের আপু বিদ্যুৎ নেই তারা বিশেষ করে সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহার করে থাকেন। তাদের জীবন তাদের জন্য স্বাভাবিক তবে আমরা দেখলে সত্যি আমাদের অবাক লাগে।