মায়ের ঋণ গল্পের ষষ্ঠ পর্ব
হ্যালো বন্ধুরা,
আপনার সবাই কেমন আছেন? আশা করি, আপনারা সবাই ভালো আছেন সুস্থ আছেন। আজ আমি আপনাদের মাঝে এই গল্পের ষষ্ঠ পর্বটি উপস্থাপন করছি। আশা করি, আপনাদের সবার ভালো লাগবে তাই বিলম্ব না করে আমার পোস্ট লেখাটি শুরু করছি।
সোর্স
মিরা ওয়াশরুমে যেয়ে মনে মনে ভাবতে থাকে বিজয়কে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না একটি মুহূর্ত। কিন্তু বিজয়ের মা পরের বাড়িতে কাজ করে সেটা যদি আমার বন্ধুবান্ধব জানতে পারে তাহলে আমি তাদের সামনে মুখ দেখাবো কি করে। যে কোন উপায় আমাকে খুঁজতেই হবে। ফ্রেশ হয়ে মিরা আবারো বিজয়ের সঙ্গে দেখা করে। বিজয়কে বলে তোমার সঙ্গে আমার কিছু কথা আছে? বিজয় বলে কি কথা বলো। মিরা বলে আমি তোমার সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলতে চাই চলো কফি শপে। বিজয় বলে আচ্ছা কিন্তু কি এমন কথা যেটা তুমি এখানে বলতে পারছ না। বিজয় কিছুই বুঝতে পারে না যে, মিরা তার সঙ্গে আলাদাভাবে কি কথা বলবে যে কথাটা সবার সামনে বলা যাচ্ছে না। তাই সে একটু চিন্তাই করতে থাকে। মিরা ও বিজয় তারা একটি কপি শপে যায়। তারা কিছু খাবারও অর্ডার করে খেতে খেতে বিজয় মিরাকে বলে কথাটা বলো? মিরা বলে দেখো বিজয় আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি এবং আমি জানি তবুও আমাকে খুব ভালবাসো কিন্তু প্রবলেম হল আমাদের ভালোবাসার মধ্যে তোমার মা বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিজয় বলে কি বলছো আমাদের ভালোবাসার মধ্যে মা কিভাবে বাধা হলো। তুমিতো বললে মায়ের সঙ্গে নিজেই কথা বলবে। কিন্তু তুমি এখন এ কি বলছো?
মিরা বলে বিজয় তুমি জানো আমরা একটি সমাজে বসবাস করি। আর এই সমাজে আমার বাবা একজন সম্মানীয় ব্যক্তি। আমি চাইনা আমার জন্য আমার বাবার সম্মান নষ্ট হোক। বিজয় বলে মিরা তুমি কি বলতে চাও? মিরা বলে বিজয় তোমার মা পরের বাড়িতে কাজ করে এটা যদি আমার পরিবার অথবা আমার বন্ধুরা জানতে পারে তাহলে আমি যাদের সামনে মুখ দেখাতে পারব না। বিজয় বলে তুমি তো জানো আমার পরিবার গরিব। আর যদি আমার মাকে নিয়ে তোমার এতই প্রবলেম হয় তাহলে তুমি আমাকে ভুলে যাও। আমি চাইনা এমন ভালোবাসা যে ভালোবাসার জন্য আমার মাকে অপমানিত হতে হয়। মিরা বিজয়ের দুটি হাত ধরে বলে বিজয় তুমি আমাকে ভুল বুঝছো। দেখো আমি সেটা বলতে চাইনি তুমি যেটা ভাবছো। বিজয় বলে তাহলে তুমি আমাকে কি বোঝাতে চাচ্ছ? মিরা বলে তোমার মাকে আর পরের বাড়িতে কাজ করতে দিবে না। বিজয় বলে মা যদি কাজ না করে তাহলে আমাদের সংসার টা চলবে কি করে। মিরা বলে তোমাদের না একটা দোকান আছে সেখান থেকে চলবে। আর দোকানটা ঠিক করতে যত টাকা লাগবে আমি তোমাকে দিব। তুমি শুধু তোমার মাকে পরের বাড়িতে কাজ করতে বারণ করবে। আমাদের ভালোবাসার জন্য তুমি এটুকু করতে পারবেনা?
বিজয় কোন কথা না বলে চুপচাপ বেরিয়ে পড়ে পেছন থেকে মিরা ডাকতে থাকে কিন্তু বিজয় কোন কথাই শোনে না। বিজয় বাড়িতে এসে চুপচাপ তার রুমে যে শুয়ে পড়ে। সন্ধ্যা হয়ে এলে তার মা ও বাড়িতে ফিরে। মা বাড়িতে ফিরে দেখে বিজয় শুয়ে আছে। তার মা ভাবতে থাকে বিজয়ের শরীর খারাপ নয় তো। তাই সঙ্গে সঙ্গে বিজয়ের রুমে যে বিজয়কে ডাক দিতেই বিজয় মায়ের দিকে তাকায়। মা বিজয়ের দিকে তাকিয়ে বলে কি হয়েছে তোর? কান্না করছিস কেন? বিজয় বলে তেমন কিছু নাই মা। মা বলে তুই আমার কাছ থেকে কোন বিষয়ে আড়াল করছিস। ছোট থেকে এত বড় হয়েছিস এখনো পর্যন্ত তুই আমাকে কোন কথা আড়াল করিস নি। আমাকে বল কি হয়েছে কেউ কিছু বলেছে তোকে? বিজয় বলে মা কলেজের একটি মেয়েকে আমি ভালোবাসি। মা বলে তুই বড় হয়েছিস তোর কাউকে ভালো লাগতেই পারে স্বাভাবিক ব্যাপার তবে মেয়েটি তোকে কিছু বলেছে? মা আমি যে মেয়েটিকে ভালোবাসি সে এই সমাজের কোটিপতি বাবার একমাত্র মেয়ে। কথাটি শোনার পর তার মায়ের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। তার মা বিজয়কে বলে বিজয় ভালোবাসার আগে একটিবার তুই ভাবলি না যে, আমরা কোথায় আর ওরা কোথায়। বিজয় বলে মা মেয়েটি খুবই ভালো সে আমাকে খুব ভালোবাসে আমিও তাকে খুব ভালোবাসি। কিন্তু প্রবলেম হলো তুমি? তার মা বলে আমি তোদের মধ্যে সমস্যা? হ্যাঁ মা তোমার কাজটাই সমস্যা তুমি এই কাজ ছেড়ে দাও মা।
মা হাসতে থাকে আর বলতে থাকে ছোটবেলায় তোর বাবা মারা গিয়েছে। পরের বাড়ি কাজ করে করে আজ তোকে এত বড় করেছি। পরের বাড়ি কাজ করে তোর মুখে ভাত তুলে দেই তোর পড়াশোনার খরচ চালাই আর আজ তুই এই কাজটাকে ছোট করছিস। আমি পরের বাড়িতে কাজ করি বলে তোর মান সম্মান চলে যায়। আমি আগে বুঝতে পারিনি রে বিজয়। আমি যদি বুঝতে পারতাম যে আমি পরের বাড়িতে কাজ করাতে তোর সম্মান থাকে না। তাহলে বিশ্বাস কর বিজয় আমি কোনদিন এই কাজ করতাম না। আমি খুব গর্বিত হতাম জানিস রে যখন অন্যরা যখন বলতো যে কাজের মহিলার ছেলে এত বড় কলেজে পড়াশোনা করে। তখন না আমার খুব ভালো লাগতো। কথাগুলো বলতে থাকে আর দু চোখের জল পড়তে থাকে মায়ের। বিজয় বলে দেখো মা একদিন না একদিন তোমার এই কাজটা তো ছাড়তেই হবে না হয় আজই ছেড়ে দাও? আমাদের যে দোকানটি আছে আমি কিছু টাকা দেব সেই দোকানটা জাঁকজমক করে তুলবো। তখন মা বলে আমার বোঝার ভুল। আমার বোঝা উচিত ছিল আমার ছেলে এত বড় কলেজে পড়াশোনা করে আর সেখানে তার অনেক বন্ধু-বান্ধব রয়েছে। তারা যখন জানতে পারবে তার মা অন্যের বাড়িতে কাজ করে তখন আমার ছেলের মান সম্মান কি থাকবে থাকবে না। বিজয় আমি তোর মান-সম্মান নষ্ট হতে দিব না। আমি কাল থেকে আর অন্যের বাড়িতে কাজ করতে যাব না। মায়ের মুখে এই কথাটি শোনার পর সঙ্গে সঙ্গে বিজয় মাকে জড়িয়ে ধরে। সে বলে মা তুমি চিন্তা করো না আমি দোকানটি জাঁকজমক করে তুলবো। যত টাকা লাগে আমি তোমাকে দিব তুমি চিন্তা করো না। তখন মা বলে তোর কিছুই করতে হবে না। এত বছর যখন এত কষ্ট করে তোকে মানুষ করতে পেরেছি এই টুকু কাজেও আমি করে নিতে পারব।
মায়ের ঋণ কখনো শেষ করা যায় না। আপনার পোস্ট পড়ে অনেক ভালো লাগলো। আসলে ভাইয়া মা তো মাই। আমরা হাজার কিছু করলেও মায়ের ঋণ শেষ হবে না।দেখা যাক পরবর্তী পর্বে কি হয়।ধন্যবাদ আপনাকে।
মায়ের ঋণ গল্পের আজকের পর্ব পড়ে খুব ভালো লাগলো। আপনার এই গল্পের কয়েকটি পর্ব পড়েছি আমার কাছে বেশ দুর্দান্ত লাগছে। আসলে মা সন্তানের জন্য সবকিছু করতে পারে। সন্তানের মঙ্গলের জন্য মায়ের জীবনও দিতে পারে। দেখা যাক পরবর্তীতে কি হয়? আগামী পর্বের জন্য অপেক্ষা রইলাম। ধন্যবাদ আপনাকে।