||সত্যি গল্প!(সমাজের অবস্থা) আজকে একটা জীবনের গল্প বলবো।||১০% প্রিয় লাজুক খ্যাঁক এর জন্য


InShot_20211012_230824370.jpg


আমার এক বন্ধু আছে। তার নেশা সত্যি গল্প লিখা।সত্যি গল্প লিখা বলতে সত্যিকারের কাহিনী গুলোর উপরে গল্প লিখা। সে তাই মাঝেমধ্যেই এমন গল্প শুনতে যায়। তো তার সাথেই একদিন যাওয়া।
সে বার গেলাম এক মহিলার বাড়িতে। মহিলাটি বন্ধুর গ্রামের একই পাড়ার। তবে শহরে এসে এখন বুয়ার কাজ করছে। আবার ওই মহিলা আমার বন্ধুকে ছোট বেলা থেকেই বেশ আদর যত্ন করে। তো গেলাম তার ঝুপড়িতে একদিন।
আমরা যেতেই খানিকটা ব্যতিব্যস্ত হয়ে দুইটা চেয়ার টেনে দিলো বসার জন্য।চেয়ারের পা গুলো নড়বড়ে।সাবধানে বসতে হয়। বন্ধু মহিলাকে বলে উঠলো আন্টি এসব থাক আপনি বলেন।বুঝলাম আগেই কথা বলে এসেছে।

মহিলাটি বলা শুরু করলো,

বাবা আমি জানো কেলাস টেন পইরযন্ত পড়ালেহা করছি। এরপর বাপ মইরা গেছে আর মা এ এক বেডার লগে বিয়া দিয়া দিছিলো। প্রথম বছর হেয় আমারে মেলা দেখতে পারতো। আমার লাইগা ঈদে নতুন শাড়ি আনতো। বছরে একবার গরুর গোস্ত ও কিইন্না খাওয়াইতো। গরীব আছিলাম,ওইডাই সুখ আছিলো।তয় একদিন বেডার মা আইলো, বেডার মা আগে আছিলো বড় পোলার কাছে। আমার জামাই হের ছোড পোলা।বড় পোলা বাইর কইরা দিছে হুনছিলাম কারণ বউরে নাকি জ্বালাইতো বেশি।
তয় শাশুড়ি আইবার পর থেকে কেমুন যেনো আমারে দেখতে পারেনা তা বুঝবার পারছি। খালি কামে ভুল ধরে। আমি আব কাম ই ঠিক কইরা করতাম। তাও হের পছন্দ হইতোনা। আর মাঝেমধ্যে শুনতাম জামাইরে কইতাছে এই মাইয়া ভালা না, তোরে বড়লোক বাড়ি থেকে বিয়া করামু, অনেক কিছু দিবো। এইডারে ছাইরা দে।তাজ্জব হইতাম তহন যহন দেখতাম, জামাই চুপ কইরা মায়ের নেওটা হইয়া কথা হুনতেছে। কিন্তু এরপর থেকে আমার উপর দিনকে দিন নির্যাতন বাড়তে লাগলো।তার মা নতুন নিয়ম চালু করলো।এক কামে ভুল হইলে এক বেলার খাওন বন্ধ। জানো বাপ, মেলা দিন গেছে হারাদিন পানি ছাড়া কিচ্ছু খাই নাই। জামাই ও চুপ কইরা থাকতো।
এরপর মহিলাটি মাথার কাপড় সরালো। মাথার চুল সরিয়ে এক জায়গা দেখিয়ে বললো,

এই যে দেখছ এহানে চুল নাই।জামাই টান দিয়া ছিইড়া ফেলছিলো। হেরপর আর কোনোদিন চুল উডে নায় ওইহানে।
এরপর একবার খাওনা দেয় নায় পাঁচদিন। এক দানা ও না।রুমে কিছু শুকনা মুড়ি আছিলো ওইডাই খাইছি পাঁচদিন ।
এরপর ভাত দিছে নষ্ট হওয়া ডাইল দিয়া। ওইডাই খাইছি আমি।
এরপর একদিন পালাইয়া চইল্লা আইছি এহানে।
ভালায় আছি। খালি একজনরে মাঝেমধ্যে খুব মনে পরে।জরাইয়া ধরতে মন চায় মাঝেমধ্যে।

বন্ধু বলে উঠলো কাকে?

মহিলা বললো,
পাঁচ মাসের পোলা আছিলো একডা। জামাই এ মুখে নুন দিয়া মাইরা ফালাইছে। কারণ আমি অপয়া, পোলাও নাকি অপয়া হইবো।
ওই পোলারে আমি মরার পর তিন ঘন্টা হুদা বুকে জড়াইয়া ধইরা ছিলাম।আহা! মানিক আমার চইল্লা গেলো ছাইড়া আমারে।

দুইজন ই বাকরুদ্ধ হয়ে মাটির মেঝের দিকে তাকিয়ে রইলাম খানিকক্ষণ।জীবন বুঝি এমন ই!
এরপর আসি বলে উঠে চলে আসলাম।শান্তনার বাণী দিতে চেয়েও দিলাম না।ভাবলাম,
কাঁদুক, কাঁদলে যদি একটু হাল্কা হয়!

আমাদের সমাজে আজো এসব চলছে। ভবিষ্যৎ এও চলবে। আমরাও থাকবো নির্বিকার।

Sort:  
 3 years ago 

ভাই।আসলে এই সব গল্প শুনলে খুব খারাপ লাগে।কেন যে শাশুড়ীরা এমন হয়।আবার দেখা যায় অনে বউ শাশুড়ীকে নির্যাতন করে, খাবার দেয় না,,, ইত্যাদি।খুব সুন্দর একখান গল্প আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ভাই আমার গল্পটি পড়ার জন্য।

 3 years ago 

আসলে ভাই এগুলো সমাজে সচার আচার হয়।ভাই আপনার গল্পটি অসাধারণ হয়েছে আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে। শুভ কামনা রইল আপনার জন্য।

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.14
JST 0.029
BTC 60385.18
ETH 2658.57
USDT 1.00
SBD 2.47