জেনারেল রাইটিং - আমাদের হুজুগেপনা
আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন আপনারা? আশা করি ভালো আছেন। আজ আপনাদের সাথে একটি জেনারেল রাইটিং নিয়ে হাজির হয়েছি।

বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারী প্রাদুর্ভাবের কিছুদিন আগে, হঠাৎ করেই শুনা যায় বাংলাদেশে লবণের সংকট হয়েছে। সারাদেশে তখন লবণ কেনার হিড়িক পড়ে যায়। ঠিক কোথা থেকে কিংবা কিভাবে এই সংকট সৃষ্টি হয়েছে তা মানুষ না জেনেই লবণ কেনার প্রতিযোগিতায় নামে। অবস্থাটা এমনও হয়েছে, যে লবণের কেজি ছিল ১০ টাকা, তা ৫ থেকে ১০গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ৫০ থেকে ১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছিল, লবনের কোন সংকট আমাদের জানা নেই। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশে যে পরিমাণ লবনের মজুত রয়েছে, তাতে যদি নতুন লবন আহরণ নাও করা হয়, তবেও অন্তত আগামী দুই বছর বাংলাদেশ সুন্দর ভাবে লবন ব্যবহার করতে পারবে। কিন্তু তবুও মানুষ লবণ কিনে মজুত করে রেখেছিল। পরবর্তীতে জানা যায় ঘটনাটি আসলেই গুজব ছিল।
করোনার সময় একটি তথ্য সামনে এসেছিল। পুদিনা পাতা এবং থানকুনি পাতা খেলে করোনা হয় না। এজন্য তখন পুদিনা পাতা আর থানকুনি পাতার এত পরিমান চাহিদা বেড়ে যায় যা বলা বাহুল্য। অনেককেই দেখা যায় পুদিনা পাতা বা থানকুনি পাতা না চেনার কারনে বিভিন্ন রকমের ঘাস খেয়ে ফেলেছিল পুদিনা পাতা মনে করে। এই ঘটনার সত্যতা যদিও পরবর্তীতে আর জানা যায়নি। তবে পুদিনা পাতা এবং থানকুনি পাতা নিয়ে সেই হৈচৈ এখনো মনে পড়লে এক ধরনের হাঁসি অনুভব করি।
এতক্ষণ তো হাস্যকর দুটি ঘটনা বললাম। এখন একটি লোম হর্ষক ঘটনার কথা বলি। ঘটনাটি কবেকার তা ঠিক আমার মনে নেই। তবে একবার রাজধানী ঢাকা শহরের বাড্ডা এলাকায় একজন মাকে গণপিটুনিতে হত্যা করা হয়। তখন আমাদের দেশে হুট করে ছেলে ধরার গল্প চাউর হয়ে যায়। উনি যখন তার ছেলেকে নিয়ে স্কুল থেকে যাচ্ছিলেন, তখন কে বা কারা সুর তুলে তিনি একজন ছেলে ধরা এবং একটি ছেলেকে কিডন্যাপ করে নিয়ে যাচ্ছেন। আশেপাশে থাকা মানুষ তখন তাকে পিটিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে। এই ঘটনা আমাদের বিবেককে নাড়া দেয়। এমন বহু ঘটনা রয়েছে যা আমাদের হুজুগের জন্য অন্যের বিশাল ক্ষতি করেছে।
বর্তমানে আমাদের দেশে হুজুগের এতটাই প্রচলন রয়েছে, যে আদর করে হুজুগে বাঙ্গালী শব্দটাই প্রণয়ন করেছে। সারা পৃথিবীতে কমবেশি হুজুগ চোখে পড়লেও আমাদের দেশে মনেহয় হুজুগেপণার পরিমাণ একটু বেশি। যেমনটা কবি শামসুর রহমান বলেছেন, চিলে কান দিয়ে গেছে বলে সারাদিন চিলের পিছনে দৌড়ালাম। একটা বারও নিজের কানে হাত দিয়ে দেখলাম না আমাদের কানের জায়গায় আছে কিনা। বাংলাদেশে ঠিক এমন ঘটনাই ঘটে। আমরা সত্য-মিথ্যা যাচাই না করেই যেকোনো কাজ অপরের কথায় প্ররোচিত হয়ে করে ফেলি। পরবর্তীতে দেখা যায় ঘটনাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা অথবা গুজব ছিল। আমাদেরকে এসব বিষয়ে যথেষ্ট খোঁজখবর নিয়ে কাজ করতে হবে।

হুজুগে বাঙালি নামটা কি আর এমনি এমনি এসেছে ভাই? যে দুটি উদাহরণ দিয়েছেন সেখান থেকেই স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে আমরা কতটা হুজুগপ্রবন মানুষ। আমাদের এলাকায় লবণ কেনা নিয়ে তো দারুন হাঙ্গামা শুরু হয়ে গিয়েছিল। আর পুদিনা পাতার কথা তো নাইবা বললাম। অনেকজনতো পুদিনা পাতা নিয়ে এসে ফ্রিজ আপ করে রেখে দিয়েছিল হা হা হা। যাইহোক সুন্দর একটা হাস্যকর স্মৃতি মনে করিয়ে দিলেন পোষ্টের মাধ্যমে। আসলে আমাদের নিজেদের সচেতন হতে হবে তাহলেই এ সকল হুযোগ থেকে বাঁচতে পারব আমরা।
দারুণ বলেছেন ভাই। ধন্যবাদ ভাই আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
বহু বছর পর আবারো সেই মায়ের মুখ টা যেনো চোখের সামনে ভেসে উঠলো ভাই আপনার লেখা পড়ে। আসলেই বাঙালির হুজুগেপণা একদম বাড়াবাড়ি পর্যায়ে। শোনামাত্র একশন শুরু! অথচ একবার বিচার-বিবেচনা বা সত্য-মিথ্যাও যাচাই করার হুশ থাকে না!
খুবই দুঃখজনক ঘটনা ছিল তা। যারা এই ঘটনা সম্পর্কে জেনেছে তাদের কারোই এটা ভুলার কথা নয়। ধন্যবাদ আপু আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য।