অদক্ষ জনশক্তি দেশ ও সমাজের বোঝা।
আসসালামুআলাইকুম। আজ ১১ই জুলাই। সরকারি স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ থেকে বার্তা পাঠিয়ে জানিছে আজ বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস। এই দিবসের এবছরের প্রতিপাদ্য হচ্ছে,
অন্তর্ভূক্তিমূলক উপাত্ত ব্যবহার করি, সাম্যের ভিত্তিতে সহনশীল ভবিষ্যৎ গড়ি।
বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম জনবহুল একটি দেশ। জনসংখ্যার ঘনত্বের দিক থেকে শীর্ষ কয়েকটি দেশের মধ্যে একটি আমাদের সুজলা সুফলা বাংলাদেশ।
কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, এত জনসংখ্যার মধ্যেও আমাদের দক্ষ জনশক্তি খুবই অপ্রতুল। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একবার জাপান সফর শেষে আসার পর এক সাংবাদিক তাকে জাপানে জনশক্তি রপ্তানির বিষয়ে প্রশ্ন করেছিলো। জবাবে উনি বলেছেন,
তারা দক্ষ জনশক্তি চায়। কিন্তু আমরা তো তা করতে পারিনা। এজন্য জাপানে আমরা শ্রমিক পাঠাতে পারিনা।
এইযে এভাবে ঘটা করে নিজেদের অসহায়ত্ব প্রকাশ, এর চেয়ে প্রতাপের বিষয় আর কী হতে পারে? এমন লজ্জার আর কী বাকী আছে? আমাদের এত এত মানুষ, তবুও দক্ষতার এত অভাব কেন? আপনি যেদিকেই তাকাবেন, দেখবেন যারা কাজ করছে তাদের ৮০ শতাংশই অদক্ষ। কিন্তু এরা আবার অনেক অভিজ্ঞ। আমরা এটাও বুঝি না যে, অভিজ্ঞতা আর দক্ষতার মধ্যে রয়েছে বিস্তর তফাৎ। উদাহরণ স্বরূপ অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার টিম ডেভিডের কথাই বলি। সিঙ্গাপুরের এই সাবেক ক্রিকেটার বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলেন। আমাদের মুশফিক কিংবা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ যতগুলো আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছে, এই লোক বোধকরি জীবনে ততগুলো কলাও খাননি। কিন্তু সে যেভাবে বল বাউন্ডারি পার করতে পারে, সেভাবে আবার আমাদের দেশি দুইজন পারেনা। অর্থাৎ, অভিজ্ঞতা থাকলেও তাদের টিম ডেভিডের মত দক্ষতা নেই।
আমাদের দেশে বহু কৃষক রয়েছে খুবই অভিজ্ঞ। কিন্তু তাদের দক্ষতা নেই আধুনিক মেশিন পরিচালনা করার। আমাদের দেশ পোশাক রপ্তানিতে দ্বিতীয়, কিন্তু নিজেদের ভালো মানের কোন আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড নেই। এমনকি এখনও ঈদের সময় মার্কেটে ইন্ডিয়ান ও পাকিস্তানি থ্রি-পিসের রমরমা ব্যবসা হয়। অর্থাৎ, এখানেও দক্ষ লোকের ঘাটতি।
দেশের জনগণের অভিযোগ, বেশির ভাগ বড় গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিগুলোতে কেন শ্রীলঙ্কান ও ভারতীয় দিয়ে ভরপুর? এজন্য তারা বেশ হা-হুতাশ করে। আমার পরিচিত এই সেক্টরে বটম লেভেল হেল্পার থেকে টপ লেভেল ম্যানেজার লেভেল পর্যন্ত পরিচিত আছে। তাদের কাছে জেনেছি, আন্তর্জাতিক বাজার থেকে অর্ডার নেয়ার জন্যই তাদের দারস্থ হতে হয়। আমাদের দেশেরও খুবই ভালো মানের বায়ার হায়ার করার দক্ষ লোক আছে, কিন্তু তা খুবই সামান্য প্রয়োজনের তুলনায়। এমন বহু ফ্যাক্টরি আছে, যারা এখনও সিঙ্গাপুরের বায়িং হাউজের উপর নির্ভরশীল।
আমাদের দেশে ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউশনের অভাব নেই। তবুও নকশার জন্য আমরা দারস্থ হই বিদেশীদের। এমনকি, আমাদের এমন কোন মেজর কন্সট্রাকশন নেই যেখানে বিদেশীরা সাহায্য করেনি। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের Ph.D করা নেই। যাদের আছে, বেশির ভাগের নামেই Plagiarism এর অভিযোগ আছে। অনেকের আবার ভুয়া Ph.D-র ও প্রমাণ মিলেছে। যারা দক্ষ জনশক্তি তৈরি করবে, তারাই দক্ষ নয়। কিংবা তারা চৌর্যবৃত্তি করে।
আমাদের অদক্ষতার উদাহরণ দিলে শেষ হবেনা। অভিযোগের ফিরিস্তিও বেশ বড়। আবার, কিভাবে দক্ষ জনগণ তৈরি হবে তাও বেশ সময় স্বাপেক্ষ বিষয়। অন্য কোন লেখায় তা নিয়ে আলোচনা করা যাবে। আজ এপর্যন্তই, সবাই ভালো থাকবেন এই কামনায়।
প্রত্যেকটি সেক্টরেই অদক্ষ লোকের অভাব নেই ভাইয়া। আসলে যেখানেই যান না কেন অদক্ষ লোকজন দিয়ে একেবারে ভরা। আপনি আপনার লেখার মাধ্যমে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো তুলে ধরেছেন এজন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি ভাইয়া।
বুঝার জন্য ধন্যবাদ আপু। এভাবেই চলছি আমরা।