বন্ধুদের সাথে বারবিকিউ পার্টি করা।
বেশ কিছুদিন থেকেই বন্ধুরা মিলে একটি বারবিকিউ পার্টি করার চিন্তা ভাবনা করছিলাম। খুব বড় কোন পার্টি নয়। কাছের অল্প কয়েকজন বন্ধু-বান্ধব মিলে বারবিকিউ পার্টি করার ইচ্ছা ছিল। এ সমস্ত প্রোগ্রাম করার জন্য আমরা সব সময় আমাদের বন্ধু রাফসানের বাড়িকেই বেছে নেই। কারণ ওর বাড়িটা গ্রামের ভেতরে। ওর বাড়ির আশেপাশে প্রচুর জায়গা আছে যেখানে খুব সহজেই এই ধরনের প্রোগ্রাম করা যায়। একটা সময় ছিল যখন প্রতিমাসে দুই তিনবার ওদের বাড়িতে যেতাম কয়েক বন্ধু মিলে। তারপর রাতভর আড্ডা চলতো। পরদিন গ্রামীণ পরিবেশে সারাটা দিন কাটিয়ে তারপর বাড়িতে ফিরতাম।
তবে দীর্ঘদিন হলো আর তেমনটা হয়ে উঠছে না। জীবন ও জীবিকার তাগিদে বন্ধুবান্ধবদের সবাই প্রায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গিয়েছে। তাই এবার যখন বারবিকিউ পার্টি করার পরিকল্পনা হলো। তখনই আমরা ঠিক করে রেখেছিলাম রাফসানের বাড়িতেই সেটা করা হবে। তবে আপনারা জানেন এই ধরনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা খুবই কঠিন। কারণ আমরা প্রথমে যেদিন বারবিকিউ পার্টি করতে চেয়েছিলাম। সেদিন দুই বন্ধুর ব্যস্ততার কারণে হয়নি। পরে যখন আর একদিন ঠিক করলাম। তখন ফেরদৌস বলল আমাদের আর এক বন্ধু রাসেল ঢাকা থেকে আসছে। ও আসার পর করলে ভালো হবে। আমরাও চিন্তা করলাম এমনিতেই আমরা সংখ্যায় খুবই কম। সাথে যদি আরো দুই একজন বন্ধু যোগ দেয় তাহলে ভালই হয়। শেষ পর্যন্ত বৃহস্পতিবার রাতে বারবিকিউ পার্টি করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু আমরা যে বন্ধুর জন্য দু'দিন দেরি করলাম শেষ পর্যন্ত সে আর বারবিকিউ পার্টিতে যোগ দেয়নি।
যাই হোক আমরা সর্বসাকুল্য মাত্র ছয় জন লোক ছিলাম। আমাদের পরিকল্পনা ছিল বৃহস্পতিবার বিকালে আমরা সবাই রাফসানের এলাকায় পৌঁছাব। তারপর সেখানে বারবিকিউ পার্টির সবকিছু গোছগাছ করব। তবে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে রাফসানের এলাকায় পৌঁছে শুনতে পেলাম ইতিমধ্যে রাফসান সবকিছু গুছিয়ে রেখেছে। বাজার থেকে মুরগি কিনে সেগুলো প্রসেসিং করে মেরিনেট করে রাখা হয়েছে। ব্যাপারটা শুনে আমার কাছে বেশ ভালই লাগলো। কারণ ইতিমধ্যে সবকিছু অনেকটা এগিয়ে রাখা হয়েছে। তবে আমাদের বন্ধুদের ভেতর প্রদীপ বাদে অন্য কারোরই তেমন রান্নাবান্নার বিষয়ে অভিজ্ঞতা নেই। তাই আমরা বন্ধু প্রদীপকেই বারবিকিউ করার দায়িত্ব দিয়েছিলাম।
আমরা সন্ধ্যা সাতটার দিকে রাফসানের বাড়িতে পৌঁছলাম। সেখানে পৌঁছে আমরা বারবিকিউ করার জায়গা পছন্দ করলাম। তবে রাফসানের বাড়িতে যাওয়ার আগে আমরা স্টিলের এক ধরনের নেট কিনে নিয়েছিলাম বারবিকিউ করার জন্য। রাফসানের বাড়িতে গিয়ে আমরা জায়গা পছন্দ করার পর কিছু ইট আনলাম। দুপাশে ইট দিয়ে তার উপরে নেট বিছিয়ে মুরগি পোড়ানোর ব্যবস্থা হল। তারপর রাফসানদের বাড়ির ভেতর থেকে কাঠ এনে তাতে আগুন ধরানো হলো। আমি প্রথমে মনে করেছিলাম আগুন জ্বলতে থাকা অবস্থায় বোধ হয় নেটের উপরে মুরগির টুকরো গুলো দেয়া হবে। কিন্তু বন্ধু প্রদীপ জানালো এভাবে দিলে সাথে সাথে মুরগি পুড়ে যাবে। সে আরো বললো যখন আগুনটা কমে আসবে তখন কাঠগুলো সব জ্বলন্ত কয়লায় পরিণত হবে। তখন মুরগির টুকরোগুলোকে নেটের উপরে দিতে হবে।
তবে এই কথা বলতে বলতে কয়েকটি মুরগির টুকরো নেটের উপরে দেয়া হয়ে গিয়েছিল। যার ফলে সেগুলি উপর দিকে কিছুটা পুড়ে গিয়েছিল। যদিও খেতে খারাপ লাগেনি। কারণ মুরগিগুলোর ভেতরে বেশ ভালোভাবে রান্না হয়েছিল। শীতের রাতে আগুন জ্বালানোতে আমরা সবাই চুলোর চার দিক দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। গ্রামের এই প্রচন্ড শীতের ভেতরে আগুনের তাপ সবাই বেশ উপভোগ করছিলাম। এর ভেতর ফেরদৌস আর রাফসান দুজন চলে গেল ব্যাডমিন্টন খেলতে। আমরা যেখানে বারবিকিউ করছিলাম তার একটু পাশেই ছেলেরা লাইট জ্বালিয়ে ব্যাডমিন্টন খেলার ব্যবস্থা করেছিল। প্রথমে আমি চিন্তা করেছিলাম খেলব না। পরে ওদের খেলা দেখে আর ঠিক থাকতে পারিনি। আমিও গিয়ে ওদের সঙ্গে দুটো গেম খেলে এলাম। যদিও খেলার সময় বুঝতে পারছিলাম পরের দিন সকালটা আমার জন্য খুবই ঝামেলা পূর্ণ হতে যাচ্ছে। কারণ অনেকদিন পরে খেলতে নামলে পরদিন শরীরে অনেক ব্যথা হয়।
যাই হোক দু গেম খেলে যখন চুলের কাছে ফিরলাম। তখন দেখলাম ইতিমধ্যে কয়েক টুকরো পোড়ানো হয়ে গিয়েছে। যদিও উপরটা দেখে মনে হচ্ছিল পুড়ে গিয়েছে। কিন্তু খেতে গিয়ে বুঝতে পারলাম জিনিসটা খেতে খারাপ হয়নি। উপরে হালকা একটা আবরণ কিছুটা পুড়ে গিয়েছিল। আমরা সেটুকু ফেলেই খেতে লাগলাম। ৬ জন মানুষের জন্য ছয়টা মুরগী আনা হয়েছিল। প্রথমে মনে করেছিলাম জনপ্রতি একটি মুরগি খাওয়া কোন ব্যাপারই হবে না। কিন্তু খেতে গিয়ে বুঝতে পারলাম আসলে কাজটা এতটা সহজ না। যদিও ছয় জনের ভেতর দুজন একেবারেই কম খেয়েছিল। আমরা বাকি চারজন বেশ অনেকটা খেয়েছিলাম। খাওয়া-দাওয়া শেষ হতেই ফেরদৌস বলল আমার একটি জরুরী কাজ আছে আমি এখন চলে যাচ্ছি। এদিকে ততক্ষণে হ্যাংআউট শুরু হয়ে গিয়েছিল। তাই আমি চিন্তা করলাম এখন যদি বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিই। তাহলে গিয়ে হয়তো হ্যাংআউটের অর্ধেকটা পাব। তাই খাওয়া দাওয়া শেষ হতে আমিও দ্রুত বাড়ির দিকে রওনা দিলাম।
আজকের মত এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।
ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইস | হুয়াই নোভা 2i |
---|---|
ফটোগ্রাফার | @rupok |
স্থান | গজারিয়া |
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
VOTE @bangla.witness as witness
OR
বোঝাই যাচ্ছে বন্ধুর বাসায় গিয়ে বারবিকিউ রান্না করার মুহূর্তে খুবই চমৎকার একটি মুহূর্ত অতিবাহিত করেছেন। আমার মনে হচ্ছে আপনি তখনই সবথেকে বেশি খুশি হয়েছিলেন যখন আপনি জানতে পারলেন যে আপনারা আসার আগেই আপনার বন্ধু সকল কিছু প্রসেসিং করে রেখেছেন। আসলে এরকম একটি বন্ধু পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার যে কিনা সকল কিছু প্রসেসিং করেই রাখবে যে শুধু রান্না করে খাওয়া দাওয়া হাহাহা। যাইহোক ব্যাডমিন্টন খেলবেন না ভেবেও পরবর্তীতে খেলেছেন আসলেই অনেকদিন পরে খেলাধুলা করলে শরীর ব্যথা হবে এটাই স্বাভাবিক।
ব্যাডমিন্টন খেলা দেখলে আসলেই খেলতে ইচ্ছা করে তবে দুটো গেম খেলেছেন জিতেছিলেন নাকি হেরেছিলেন 😂😂
আপনার পোস্ট পড়ছিলাম আর ভাবছিলাম আর কিছুদিন পর আমরাও বন্ধু-বান্ধব একেক দিকে ছড়িয়ে পড়বো, তখন বোধহয় এরকম পার্টি করার জন্য অপেক্ষা করতে হবে সবার ছুটি কবে হবে সেই আশাতে।
বারবিকিউ পার্টি করার মূহুর্ত গুলো দারুন ছিল ৷ আসলে বন্ধু বান্ধব মিলে রাতের খড় খুটোর আলোতে বেশ ভালোই লাগে এসব পার্টি ৷ তবে ভাই এসব পদ্ধতিতে কখনো খাওয়া হয় নি ৷ নেটের উপর মুরগী গুলোকে সিদ্ধ দারুন লাগলো ৷ সব বন্ধু মিলে বেস জমিয়ে আড্ডা হয়েছে ৷ অনেক ভালো লাগলো ভাই ৷ ধন্যবাদ দারুন কিছু মূহুর্ত তুলে ধরার জন্য ৷
আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া। আশাকরি ভাল আছেন। বন্ধুর বাসায় বারবিকিউ খাওয়ার অনুভূতি খুব সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে। খেলতে না চেয়েও অনেক দিন পর ব্যাডমিন্টন খেলেছেন।শীতে ব্যাডমিন্টন খেলা শরীরকে গরম করে দেয়।বন্ধুরা মিলে খুব সুন্দর মূহুর্ত কাটিয়েছেন পড়ে অনেক ভাল লাগলো। শেয়ার করার জন্য অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।