বশিরের দিনকাল (প্রথম পর্ব)। ১০% প্রিয় লাজুক খ্যাক এর জন্য।
বশিরের পকেটে মোবাইল বেজেই চলেছে। কিন্তু সে ফোন রিসিভ করছে না। বশির এই মুহূর্তে রিক্সার উপরে বসে আছে। তার রিক্সাটি জ্যামে আটকে আছে। সে বারবার রিকশাওয়ালাকে বলছে ভাই একটু তাড়াতাড়ি চলেন। রিকশাওয়ালা বিরক্ত হয়ে তাকে বললো বেশী তাড়া থাকলে নাইমা হাইটা যান। সে বুঝতে পারল কথা বাড়িয়ে লাভ নাই। আসলে রিক্সাওয়ালার কিছু করার নেই। কারণ উল্টোদিক থেকে একটা গাড়ী এসে পুরো রাস্তা আটকে দিয়েছে। এই জন্য রাস্তায় জ্যাম সৃষ্টি হয়েছে।
বশির একজন ড্রাইভার। সে এক ব্যবসায়ীর ব্যক্তিগত গাড়ি চালায়। প্রতিদিন সকাল ৯ টা থেকে তার ডিউটি শুরু। তাকে প্রতিদিন তার মালিকের বাড়ি গিয়ে গাড়ি বের করে ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করতে হয়। মালিক দশটার দিকে বের হয়ে সোজা অফিসে চলে যায়। বশিরের মালিক এমনিতে মানুষ হিসেবে ভালো। কিন্তু কাজে দেরি করে যাওয়া সে মোটেই সহ্য করতে পারে না। দেরি করে ডিউটিতে গেলে বসিরকে অনেক রাগারাগি করে। বশিরকে ফোন দিচ্ছে ব্যবসায়ীর ম্যানেজার। ফোন ক্রমাগত বেজেই চলেছে।
বশির শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে ফোন রিসিভ করলো। রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ম্যানেজার তাকে কয়েকটা কুৎসিত গালি দিল। প্রায় দশটা বেজে গিয়েছে তুমি এখনো কাজে আসো না কেন? বশিরের প্রচন্ড মেজাজ খারাপ হল। কিন্তু মেজাজ খারাপ হলেও তার কিছু বলার উপায় নেই। যেহেতু সে দেরি করে ফেলেছে। সে ম্যানেজার সাহেব কে বলল স্যার জ্যামে আটকে আছি। এইজন্য দেরি হচ্ছে। ম্যানেজার তাকে জবাব দিলো। ওই মিয়া বাড়ি থেকে একটু আগে বের হইতে পারো না। তাইলে তো আর জ্যামে আটকে থাকতে হয় না। তারপর সে বশির কে বলল ১০ মিনিটের ভিতরে গাড়ির কাছে হাজির হবা। নইলে তোর চাকরি আজকেই শেষ।
এ কথা শোনার পরে বশির রিক্সাওয়ালার ভাড়া মিটিয়ে মালিকের বাড়ির উদ্দেশ্যে দ্রুত পা চালাতে লাগলো। বশির প্রায় দৌড়ে যাচ্ছিল। হঠাৎ করে রাস্তার উপর থাকা একটা ইটে বেধে বশির পড়ে গেল। পড়ে গিয়ে বশিরের পায়ে হাতে এবং মুখে বেশ চোট লাগল। হাত আর পায়ের দুই জায়গা থেকে রক্ত ঝরছিল। এর ভিতর পথচারী দু-তিনজন এসে বশিরকে টেনে তুলল রাস্তা থেকে। তারপর কাছের এক ফার্মেসিতে নিয়ে গেল। সেখানে যাওয়ার পর ফার্মেসির লোকজন বশিরের ক্ষতস্থান গুলো পরিষ্কার করে ব্যান্ডেজ করে দিল।
এই সমস্ত কাজ শেষ হতে বশিরের অনেকটা সময় লেগে গেল। তারপর বশির একটি রিকশা নিয়ে মালিকের বাড়ির উদ্দেশ্যে গেলো। গিয়ে জানতে পারল মালিক অফিসে চলে গিয়েছে। কারণ ইতিমধ্যে বেলা এগারোটা বেজে গিয়েছে। বশির পকেট থেকে বের করে দেখে ফোনটা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বশিরের সারা গায়ে প্রচন্ড ব্যথা ছিল। যার ফলে সে বাড়ি ফিরে গেল। বাড়ি ফেরার পথে দোকান থেকে কয়েকটি ব্যথার ওষুধ কিনে নিয়েছিল। বাড়ি ফিরে ওষুধ খেয়ে সে ঘুমিয়ে পড়লো। ঘুম ভাঙলো একবারে বিকেলে।
বশিরের মনে পড়ল তার মালিককে তো কিছু জানানো হয়নি। তাই সে ফোন অন করে মালিক কে ফোন দিল। কিন্তু তার মালিক ফোন রিসিভ করল না বশির মনে করল সে মনে হয় ব্যস্ত থাকার কারণে ফোন রিসিভ করতে পারেনি। মনে মনে চিন্তা করল কাল সকালে গিয়ে মালিককে সবকিছু খুলে বললেই হবে। যথারীতি পরদিন বশির সকালে মালিকের বাড়িতে গেল। যখন সে বাড়িতে ঢুকে গেল। তখন গেটের দারোয়ান তাকে ঢুকতে দিলো না। বশির অবাক হয়ে গেলো।
প্রতিদিন এই দারোয়ানের সাথে তার কতক্ষণ গল্প হয়। দুজনের ভেতর বেশ ভাল সম্পর্ক। বশির তাকে জিজ্ঞেস করল কি ব্যাপার কোন সমস্যা হয়েছে নাকি? দারোয়ান বলল বশির ভাই ম্যানেজার সাহেব বলেছে আপনাকে যেন বাড়িতে ঢুকতে না দেয়া হয়। বশির তখন ব্যাপারটা বুঝতে পারলো। এই ম্যানেজার তাকে একেবারেই পছন্দ করেনা। তাই সে সুযোগ পেলেই বশিরের ক্ষতি করার চেষ্টা করে। কিন্তু তার মালিক তাকে পছন্দ করার জন্য ম্যানেজার বশিরের ক্ষতি করার তেমন কোনো সুযোগ পায় না।
বশিরের মালিক তাকে পছন্দ করে কারণ বেশির ভাগ ড্রাইভারি বিভিন্ন রকম চুরি করে। কিন্তু বশির কখনো কোন অন্যায় করে না। সমস্ত টাকার হিসাব পরিষ্কারভাবে সবসময় ম্যানেজারকে বুঝিয়ে দেয়। এই কারণেই বশিরের মালিক বশিরকে পছন্দ করে। বশির চিন্তা করতে লাগল মালিকের কাছে পৌঁছতে না পারলে তার চাকরিটা আর থাকবে না। যেভাবেই হোক তাকে তার মালিকের সাথে দেখা করতে হবে। বশির মালিক কে ফোন দিল। কিন্তু মালিক তার ফোন রিসিভ করলো না। সে মন খারাপ করে বাড়িতে ফিরে গেলো।(চলবে)
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩
আমি রূপক। আমি একজন বাংলাদেশী। আমি বাঙালি। আমি বাংলায় মনের ভাব প্রকাশ করতে ভালোবাসি। আমি আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিকেও ভালোবাসি
অসাধারণ লিখছেন কিছুটা দুঃখজনক গল্প তবে ব্যাপারটা যে হলো যখন মজা পাইতে শুরু করলাম তখন লেখা শেষ হয়ে গেলো,ভারতবাংলায় যে সিরিয়াল নাটক গুলো হয়ে থাকে, যখন মজা পাইতে শুরু করি তখনী বলে আগামী পর্বে । আপনার লেখার আগামী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
বশিরের দিনকাল গল্পটি বেশ ভালই লেগেছে । পরতে আসলে বেশ ভালোই লেগেছে । এর মত মধ্যবিত্ত মানুষ গুলো পদে পদে মানুষের কাছে এরকম অপদস্ত হয় ।তারা চায় মানুষের ভাল করতে কিন্ত কিছু মানুষ ভালো থাকতে দেয়না ঐ ম্যানেজার এর মতো ।যাই হক পরবর্তী পর্বগুলো মনে হয় ভালোই হবে অপেক্ষায় রইলাম ভাই ।