আমার সাজেক ভ্রমণের অভিজ্ঞতা (দ্বিতীয় পর্ব)। ১০% প্রিয় লাজুক খ্যাঁক এর জন্য।
ভোরবেলা রাঙ্গামাটি পৌঁছানোর পর সবাই দেখি নাস্তা করার জন্য ব্যস্ত হয়ে গিয়েছে। কিন্তু আমাদের দুজনের তেমন খিদে ছিলনা। যার ফলে আমরা সাজেক পৌঁছানোর জন্য বাহন জোগাড়ের চেষ্টা করছিলাম। আমরা যেহেতু মাত্র দু'জন এসেছি সে ক্ষেত্রে আমাদের আগে থেকেই ধারণা ছিল সাজেক পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা আমাদের জন্য একটু মুশকিল হতে পারে। কারণ সাজেক সবাই যায় সাধারণত গ্রুপের মাধ্যমে। কিন্তু আমরা দুজন গ্রুপ ছাড়াই গিয়েছিলাম। যাতে আমরা নিজেদের মতো করে সাজেক ঘুরেফিরে দেখতে পারি।
স্থান- লিংক
খাগড়াছড়ি শহর থেকে কিছুদূর আগানোর পর দীঘিনালা নামক স্থানে আমাদের অপেক্ষা করতে হয়েছিল বেশ কিছুক্ষণ। কারণ সেখান থেকে আর্মি স্কর্ট আমাদেরকে সাজেক নিয়ে যাবে। কারণ পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদীরা মাঝে মাঝে ঝামেলা করার চেষ্টা করে। সেজন্যই আর্মির এই পাহারার মাধ্যমে সাজেক যেতে হয়। যদিও এখন পর্যন্ত পর্যটকদের কোন সমস্যা হয়নি। সেখানে যাত্রাবিরতিতে বেশ কিছুক্ষণ আশেপাশে ঘোরাফেরা করেছি। দেখলাম পাহাড়িরা রাস্তার পাশে বসে বিভিন্ন রকমের ফল বিক্রি করছে। তাদের কাছ থেকে কিছু ফল কিনে ফেললাম। ফলগুলি আসলেও অনেক সুস্বাদু ছিল। । প্রায় আড়াই ঘণ্টার এই রোলার কোস্টার রাইড এর পর আমরা সাজেক পৌঁছলাম। সেখানে পৌঁছে সাজেকের সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ বিস্ময়ে নির্বাক তাকিয়েছিলাম দীর্ঘক্ষন।
স্থান- লিংক
বাসের ভেতরে এক ভদ্রলোক এবং ভদ্রমহিলার সঙ্গে আমাদের পরিচয় হয়েছিল। তাদের সাথে রাস্তাতেই কথা হয়েছিল যে আমরা সাজেক একসাথেই যাব। তারাও আমাদের মত দুজন এসেছে। যার ফলে রাঙ্গামাটি শাপলা চত্বরে নেমে আমরা চারজন মিলে লোক খুজতে লাগলাম। বেশ কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজির পর সাতটা ছেলের একটি দলকে পেলাম। যারা আরো কয়েকজন খুঁজছে তাদের সাথে যাওয়ার জন্য।
স্থান- লিংক
কারণ খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক যাওয়ার ভাড়া সাত থেকে এগারো হাজার টাকা। একটা গাড়িতে যাওয়া যায় ১২-১৫ জন। যদি লোক একটু বেশি নেয়া যায় তাহলে জনপ্রতি খরচ কম পড়ে। আমাদের সাথে ওই ভদ্রলোকের সাথে মহিলা থাকায় ছেলেরা একটু সংকোচ বোধ করছিল। আমরা তাদেরকে বললাম কোন সমস্যা হবে না চলুন যাওয়া যাক। পরে ছেলেরা হাসিমুখে রাজি হয়ে গেল। ছেলেগুলি সদ্য এইচএসসি পরীক্ষা শেষ করেছে। খুবই চমৎকার স্মার্ট কিছু ছেলে। তাদের ব্যবহার মুগ্ধ হওয়ার মত।
স্থান- লিংক
অল্প সময়ে আমাদের ভেতরে খুব ভালো সম্পর্ক হয়ে গেলো। পরে সকলে মিলে রওনা দিলাম সাজেকের উদ্দেশ্যে। আমরা সবাই সমতলের লোক। পাহাড়ি রাস্তা সম্বন্ধে কারোরই তেমন কোন ধারণা নেই। কিছুদূর আগানোর পর আমরা এমন রাস্তা দেখতে পেলাম যা আমরা কেউই আশা করিনি। মনে হচ্ছিল আমরা কোন রোলার কোস্টারে চড়ে বসে আছি। কিছুক্ষণ গাড়ি ওপরে ওঠে তো পরক্ষণেই ঝপ করে নিচে নামতে শুরু করে। আবার একদম খারা আকাশের দিকে উঠে যাচ্ছে রাস্তাটা। ভয়ঙ্কর সুন্দর মনে হয় এই ধরনের দৃশ্যকেই বলে। যাত্রাপথের পুরোটাই দুপাশে পাহাড় দিয়ে ঘেরা এক অপরূপ দৃশ্য। যা আসলে বর্ণনা করা দুঃসাধ্য ব্যাপার।
স্থান- লিংক
এমন চমৎকার প্রাকৃতিক পরিবেশে এসে আমরা বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছি। সাথে থাকা ছেলেগুলি ক্ষণে ক্ষণে আনন্দে চিৎকার করে উঠছে। কয়েকজনতো জিপের ছাদে চড়ে বসলো। ওদের কথা চিন্তা করে আমার খুবই ভয় লাগছিল। এমন বিপদজনক রাস্তায় কখন কি হয়ে যায় সেটা বলা যায় না।। আর এক চিন্তা ছিলো যেই জিপে বসেছিলাম সেটার চেহারা দেখে। অত্যন্ত জরাজীর্ণ চেহারার এইগুলি দেখে বোঝার উপায় নেই এমন কঠিন রাস্তায় সেগুলো চলতে সক্ষম। কিন্তু ড্রাইভার এর সাথে কথা বলে জানতে পারলাম চেহারা জরাজীর্ণ হলেও সেগুলির ইঞ্জিন জাপানি। পাহাড়ি রাস্তায় চলাফেরা করার জন্য এই এগুলি বিশেষভাবে তৈরি। দীর্ঘদিন ধরে তারা এই রাস্তায় চলাফেরা করে অভ্যস্ত। যার ফলে তারা আমাদের বারবার করে অভয় দিচ্ছিল।
স্থান- লিংক
স্থান- লিংক
আজ এ পর্যন্তই। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে এই ভ্রমণ অভিজ্ঞতার দ্বিতীয় পর্ব নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন।
ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত যন্ত্র | হুয়াই নোভা ২আই |
---|---|
ফটোগ্রাফার | @rupok |
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩
আমি রূপক। আমি একজন বাংলাদেশী। আমি বাঙালি। আমি বাংলায় মনের ভাব প্রকাশ করতে ভালোবাসি। আমি আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিকেও ভালোবাসি।
ভাইয়া আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। অনেক সুন্দর একটা পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য। খাগড়াছড়ি রাঙ্গামাটি পাহাড় গুলো অনেক সুন্দর কিন্তু কখনো আমার যাওয়া হয়নি আপনার পোস্টটি পড়ে আমি কিছুটা জ্ঞান অর্জন করলাম। ভাইয়া অনেক সুন্দর করে ফটো গুলো তুলছেন বিশেষ করে পাহাড়ের ফটোগুলো আমার কাছে অনেক ভালো লাগছে। অবশ্যই পরের পর্ব টা আমাদের মাঝে শেয়ার করবেন ভাইয়া। আপনার জন্য শুভকামনা রইল।
সাজেকের প্রাকৃতিক দৃশ্য অনেক সুন্দর। আপনার সাজেক যাওয়ার অভিজ্ঞতা নিয়ে পর্ব দুই খুব ভালো লাগলো। পোস্টটা অনেক সাজানো গোছানো ছিল। পাহাড়ের দৃশ্যটা সবচেয়ে বেশি পছন্দ হয়েছে আমার। আমারও ভ্রমণে যেতে ইচ্ছা করছে৷ যাইহোক ধন্যবাদ আপনাকে শেয়ার করার জন্য।
প্রথম ও দ্বিতীয় পর্ব পড়লাম। মনে হচ্ছে আমিও গল্পের সাথে সাথে নিজেকে দেখতে পাচ্ছি সাজেকের যাত্রী হিসেবে। একটা অন্য রকম মজাও কাজ করছে। সব খুঁটিনাটি যে ভাবে তুলে ধরেছেন লেখনীতে তাতেই লেখা গুলো পড়তে পড়তে চোখের সামনে ভেসে আসছিল কল্পনার আরেক সাজেক। খুব সুন্দর ছিল সব টা। পরবর্তি লেখার অপক্ষায় রইলাম।
জীপ গুলোকে সেখানে চানদেরগাড়ি বলা হয়ে থাকে। আপনি ঠিকই বলেছেন এগুলো দেখতে দুর্বল মনে হলেও আসলে ইঞ্জিন জাপানি।
সদ্য ইন্টারমিডিয়েট পাশ করা ছেলেদেরকে পাওয়াতে আপনার প্রতি অনেক সুন্দর হয়েছে এবং তাদের চিৎকার-চেঁচামেচি উৎফুল্ল আপনাকে অনেক আনন্দ দিয়েছে এটা অনেক বড় বিষয়।
সাজেক আসলে ভাললাগা ও ভালবাসার জায়গা কারন আমি তিনবার গেছি তারপরও বারবার যেতে চায় মন।
সাজেক এমন একটা জায়গা যেখানে গেলে সবারই ভালো লাগে। সাজেকের রুপ বিভিন্ন ঋতুতে বিভিন্ন রুপ ধারন করে। আপনার যাত্রা শুভ হোক দাদা।
ভাইয়া আপনার পোস্টটি পড়ে মনে হচ্ছে সাজেক অনেক ভালোলাগা এবং ভালবাসার জায়গা। আমি কখনো এরকম জায়গা ভ্রমন করতে পারেনি। সদ্য ইন্টারমিডিয়েট পাশ করা ছেলেদের চিৎকার-চেঁচামেচি , আনন্দ-উৎফুল্ল আপনাকে অনেক আনন্দ দিয়েছিলো এটা জানতে পেরে আমার অনেক ভালো লাগলো। ভাইয়া আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল।
You have been upvoted by @sm-shagor, a Country Representative of Bangladesh. We are voting with the Steemit Community Curator @steemcurator07 account to support the quality contents on steemit.
Follow @steemitblog for all the latest update and
Keep creating qualityful contents on Steemit!
Joining #club5050 for Extra vote.😊