নদীর পাড়ে খোলা হাওয়ায় ইফতারের অভিজ্ঞতা। ১০% সাইফক্স।

কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


রমজান মাসে আমাদের সবারই রুটিন প্রায় একই রকম থাকে। রোজা থাকা প্রতিদিন সময়মতো ইফতার করা। কিন্তু প্রতিদিন একই ইফতার খেতে খেতে এক সময় কিছুটা বিরক্তি চলে আসে। তখন মন কিছুটা বৈচিত্র খোঁজে। তখন মনে হতে থাকে যদি অন্য কোন পরিবেশে গিয়ে ইফতার করতে পারতাম। তাহলে হয়তো ভালো লাগতো।

IMG_20220417_182042.jpg

যদিও কয়েকদিন আগে বন্ধু ফেরদৌসের সঙ্গে রেস্টুরেন্টে গিয়ে ইফতার করে এসেছি। কিন্তু আমরা দুজনই প্রকৃতিপ্রেমী মানুষ। তাই রেস্টুরেন্টে ইফতার করে আর খুব একটা তৃপ্তি আমরা পায়নি। গত বছর রোজার সময় আমরা বেশ কিছু বন্ধু-বান্ধব মিলে একবার পদ্মা নদীর তীরে একটি ট্রলার এর ছাদে ইফতার করেছিলাম। সে স্মৃতি এখনো মনে পড়ে। নদীর পাড়ে খোলা আকাশের নিচে খোলা হাওয়ায় বসে ইফতার করার মজাই আলাদা।

IMG_20220417_182053.jpg

যদিও গত বছর যখন ইফতার করেছিলাম তখন রমজান মাস প্রায় শেষের দিকে ছিলো। তাই অনেকেই ঈদের ছুটিতে এলাকায় চলে এসেছিলো। যার ফলে বেশ কয়েকজন বন্ধুবান্ধব একসাথে হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলাম। কিন্তু এবার এখনো বন্ধু-বান্ধব কেউ এলাকাতে আসেনি। তার পরেও বন্ধু ফেরদৌস বললো চলো একদিন বাইরে বসে ইফতার করি। আমি সাথে সাথেই তার প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেলাম। তারপরে যোগাযোগ করলাম আমাদের অন্য বন্ধুরা রাফসানের সঙ্গে। তাকে বলতে সেও রাজী হয়ে গেলো। ফেরদৌস আমাদের অন্য আরেকজন বন্ধুর সঙ্গে যোগাযোগ করলো। যে সে আমাদের সঙ্গে ইফতারে অংশগ্রহণ করবে কিনা। কিন্তু সে ব্যক্তিগত কারণে অপারগতা প্রকাশ করলো। অগত্যা আমরা ঠিক করলাম আমরা তিনজনেই ইফতার করতে যাবো পদ্মার পাড়ে।

IMG_20220417_182045.jpg

যথারীতি নির্ধারিত দিনে আমরা সবাই প্রথমে রাফসানের শোরুমে উপস্থিত হলাম। সেখানে কিছুক্ষণ আড্ডা দেয়ার পর আমরা নদীর পাড়ের দিকে রওনা দিলাম। যদিও তখন পর্যন্ত আমরা ঠিক করিনি যে ইফতারে কি কি আয়োজন থাকবে। কিন্তু নদীর পাড়ের কাছাকাছি পৌঁছানোর পরে আমরা জানতে পারলাম রাফসান শ্বশুরবাড়িতে আগে থেকে ফোন দিয়ে বলে রেখেছিল কিছু ফলের ব্যবস্থা করার জন্য। সেজন্য তারা আমাদের জন্য একটি গামলায় কয়েক রকমের ফল কেটে রেখেছিলো। আর আমরা অন্যান্য আইটেমগুলি নদী সংলগ্ন বাজার থেকে কিনে নিলাম।

IMG_20220417_182542.jpg

সব কিছু কিনে আমরা নদীর ঘাটে উপস্থিত হলাম। সেখানে দেখলাম বেশ কয়েকটি ট্রলার নদীর ঘাটে ভেড়ানো আছে। ট্রলার গুলি সাইজে বেশ বড়। আমরা ট্রলার এর ছাদে গিয়ে বসলাম। ট্রলারের ছাদে উঠে চারপাশে তাকিয়ে মনটা জুড়িয়ে গেলো। চমৎকার দৃশ্য সেখান থেকে দেখা যাচ্ছে। পদ্মার পাড়ে খোলা হাওয়ায় মনে হয় শরীরটা মুহূর্তেই জুড়িয়ে গেলো। আমরা সবকিছু গোছগাছ করে বসতে বসতে আজান দেয়ার সময় হয়ে গেলো। এর ভেতর বন্ধু ফেরদৌস গিয়েছিল শরবত বানানোর জন্য কিছু উপকরণ কিনতে। আমরা একটি ঠান্ডা পানির বোতল কিনে এনেছি। কিন্তু শরবত বানানোর জন্য সেখানে আরও কিছু উপকরণ প্রয়োজন।

IMG_20220417_182035.jpg

ফেরদৌস এলে আমরা তিনজনে সবকিছু গুছিয়ে বসে পড়লাম। তবে সেখানে শুধু আমরাই ছিলাম তা নয়। আমাদের পাশেই একটি ট্রলারে ৮/১০ জন ছেলে এসেছিলো। তারাও আমাদের মত ট্রলার এর ছাদে ইফতার করার জন্য এসেছে। তাদের দেখে আমাদের গত বছরের কথা মনে পড়ে গেলো। গত বছর আমরা যখন এইভাবে ট্রলারের ছাদে নদীর পাড়ে বসে ইফতার করছিলাম। তখন পাশেই আরো একটি গ্রুপ এভাবে ইফতার করছিলো। আমাদের ইফতার আয়োজনে ছিলো ছোলা, পেয়াজু, বেগুনি, আলুর চপ, কিমা চপ, সিঙ্গারা, তরমুজ, বাঙ্গি, কলা আর মুড়ি। আজান দেয়ার সাথেই আমরা প্রথমে কিছুটা ঠান্ডা পানি খেয়ে নিলাম। তারপর অন্যান্য ইফতার আইটেম এর উপর ঝাঁপিয়ে পড়লাম।

IMG_20220417_182039.jpg

আমাদের আমাদের খাওয়া-দাওয়ার এক পর্যায়ে দেখতে পেলাম পাশের ট্রলারের উপর তিনটি লোক বসে আছে। আমরা আমাদের ওখান থেকে কিছু খাবার তাদের সাথে শেয়ার করলাম। আমরা যে খাবার কিনে ছিলাম সেটা তিনজনের জন্য যা প্রয়োজন উপরন্তু কিছু বেশি হয়েছিলো। ইফতার শেষ করার পরে আমরা ট্রলারের উপরে নামাজ পড়ে নিলাম। নামাজ শেষে আমরা কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দিলাম। যদিও সেখান থেকে ফিরতে মন চাইছিল না। কারণ নদীর পাড়ের মৃদু বাতাসে একটা অন্যরকম ভাললাগা কাজ করছিলো।

আজকের মতো এখানে শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন।


ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইসহুয়াই নোভা 2i
ফটোগ্রাফার@rupok
স্থানহাজিগঞ্জ,ফরিদপুর

logo.png

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

standard_Discord_Zip.gif


🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩


@rupok

Sort:  
 3 years ago 

অনেক ভাল লাগল ভাই,, এরকম অভিজ্ঞতা আমি এখন পযন্ত অর্জন করতে পারেনি তবে একদিন ইচ্ছা আছে আপনাদের সাথে এরকম ট্রলারে করে ঘুরবো। সত্যি বলতে খোলা আকাশের নিচে ইফতার করার মজাই আলাদা। আপনার বন্ধুর সাথে অনেক সুন্দর একটি সময় অতিবাহিত করেছেন, শুভকামনা আপনার ও আপনার বন্ধুর জন্য।

চলে আসেন আমাদের এলাকায়। আপনাকে সাথে নিয়ে ট্রলারে করে ঘুরবো।

 3 years ago 

একদিন অবস্বই যাবো ভাই।

 3 years ago 

নদীর পাড়ে ইফতারের অভিজ্ঞতা দেখে অনেক ভালো লাগলো ভাইয়া। এরকম অভিজ্ঞতা আমিও এখন পর্যন্ত অর্জন করতে পারিনি ভাইয়া। আপনি আপনাদের ইফতার লোকেদের সাথে ভাগাভাগি করে নিয়েছেন শুনে অনেক ভালো লাগলো ভাইয়া। নদীর পারে আপনার এই ইফতারের সুন্দর মুহূর্ত আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া। আপনার জন্য আমার পক্ষ থেকে অনেক অনেক শুভকামনা রইল।

আমি নিজেও ব্যাপারটা অনেক উপভোগ করেছি। আর খাবার ভাগাভাগি করার কারণে। আনন্দটা আরো বেশি পেয়েছি।

 3 years ago 

ছোটবেলায় শুনতাম,আযানের পর তেলের জিনিস বাহিরে খেলে ভূত ধরে,😀।যাই হোক ভাইয়া আপনার পোস্ট পড়ে আমার ইচ্ছে করছে এভাবে বন্ধুরা মিলে ট্রলারের ছাদে প্রকৃতির মাঝে ইফতার করতে পারতাম।ঝাপিয়ে পরলেন সবাই মিলে,এটা কিছু হইলো।😀।কলা ও ছুলে নিয়ে আসছে, দেখি,😆।ভালো ছিলো।পোস্ট পরে বেশ ভালো লাগলো।

 3 years ago 

হাহাহা ফ্রিতে একটা বিনোদন পেয়ে গেলাম এই রমজান মাসে ভূত কোথা থেকে আসবে আবার।

সারাদিন রোজা থাকার পর ব্যাপারটা এমনই ছিলো। আক্ষরিক অর্থেই ঝাঁপিয়ে পড়ে ছিলাম।

 3 years ago 

না, ভালো ছিলো।আমি মজা করলাম।আমার কাছে পড়ে খুব ভালো লেগেছে।ছেলে হইলে, অনেক কিছু করা যায়,যা মেয়েরা পারে না।,🙄🙄।ধন্যবাদ

 3 years ago 

রোজার সময় আমাদের এদিকে একদম সিঙ্গারা পাওয়া যায়না।আর আমার যে কতো প্রিয় তা বলে বুঝানো সম্ভব না।এভাবে আপনাদের মতো কখনো ইফতার করা হয়নি আমার।

রোজার সময় আমাদের শহরেও সিঙ্গারা খুব একটা দেখা যায় না। তবে এটি গ্রামের দিকের একটি বাজার হওয়ায় সেখানে পেয়ে গেলাম। আপনার মত সিঙ্গারা আমারও খুব পছন্দের একটি খাবার। একটা সময় ছিলো যখন প্রতিদিন আমি সিঙ্গারা খেতাম।

নদীর পাড়ে খোলা আকাশের নিচে খোলা হাওয়ায় বসে ইফতার করার মজাই আলাদা।

প্রকৃতির কাছে আসলে অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করে আপনি আপনার বন্ধু ফেরদৌসের সঙ্গে রেস্টুরেন্ট এবং পদ্মা নদী প্রকৃতির সাথে ইফতার করেছেন। আপনি খুব সুন্দর এবং চমৎকার ভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন যে কংক্রিটে ঘেড়া আবদ্ধ এর চেয়ে খোলা আকাশের নিচে প্রকৃতির সাথে ইফতার করা মজাই অন্যরকম। আপনার এই দুই রকমের অভিজ্ঞতা এবং ভালোলাগা আমাদের মাঝে খুব সুন্দর ভাবে শেয়ার করেছেন। আপনাদের জন্য শুভকামনা রইল।

আসলেই এই ধরনের পরিবেশে ইফতার করার একটি আলাদা মজা আছে। যদি কখনও সময় সুযোগ পান তাহলে এ ধরনের আয়োজনে শামিল হয়ে দেখবেন ভালো লাগবে।

 3 years ago 

আমরা আমাদের ওখান থেকে কিছু খাবার তাদের সাথে শেয়ার করলাম।

যখন এ লাইন টুকু পড়ছিলাম বেশ ভালো লেগেছিল ভাইয়া। যখন আপনাদের খাবারটুকু শেয়ার করলেন নিশ্চয়ই ওনারা অনেক খুশি হয়েছিল। আসলে ইফতার মানে সবার সাথে ভাগাভাগি করে হাসি আনন্দে খাওয়া। যাইহোক ভাইয়া আপনারা তিন বন্ধু মিলে অনেক ধরনের আইটেম নিয়ে একসাথে হাসি-আনন্দে ইফতারের মুহুর্তে কাটিয়েছেন। আপনাকে ধন্যবাদ আপনার সুন্দর মুহূর্তে আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল।

পাশের লোকজনকে খাবার দিতে পেরে আমাদের কাছে ও অনেক ভালো লেগেছিলো। যদিও তারা সম্ভবত রোজা ছিলো না।

 3 years ago 

আহ কিযে ভালো লাগতো যদি এমন একটি সুযোগ আমি পেতাম। নিশ্চিই অনেক প্রশান্তি কাজ করেছে এমন একটি সুন্দর মুহূর্তের উপভোগ করতে পেরে। ইফতার শেষে আবার নামাজ সেখানেই আদায় করেছেন। খোলা আকাশে বাতাসে এমন মুহূর্ত গুলো যদি আমিও পেতাম। আচ্ছা ভাইয়া সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ার অন্ধকার হয়ে গিয়েছিলোনাহ? যাইহোক বন্ধুদের সাথে আপনি ভালোই সময় কাটিয়েছেন। শুভকামনা রইল ভাইয়া।

কিছুটা আলোর স্বল্পতা ছিলো। কিন্তু পুরোপুরি অন্ধকার ছিল না। সবকিছু মোটামুটি ভালই দেখা যাচ্ছিলো।

 3 years ago 

দারুন একটা সময় ছিল। আপনাদের একটা জিনিস ভালো যখন যেখানে ইচ্ছা গিয়ে ইফতার করতে পারেন, কিন্তু আমরা সারাক্ষণ ঘরে বসেই। আপনার ফটোগ্রাফি দেখে বোঝা যাচ্ছে কতটা আনন্দের মুহূর্ত কাটিয়েছেন। ধন্যবাদ ভাইয়া।

এটা ঠিক বলেছেন। পুরুষ হওয়ার এটা একটা বড় সুবিধা। যখন যেখানে খুশি যেতে পারি।

 3 years ago 

নদীর পাড়ে ট্রলারের ছাদে মুক্ত আকাশের নিচে খোলামেলা আবহাওয়ায় ইফতারের আয়োজন এ এক অন্যরকম অনুভূতি। এরকম আয়োজন করে নদীর পারে আমার কখনও ইফতার করা হয়নি। কিন্তু নদী পার হয়ে যখন গ্রামের বাড়ি যাচ্ছিলাম তখন এক সময়ে নদীর পারে ছোট হোটেলগুলোতে ইফতার করেছিলাম। আজকে সেই স্মৃতিটা মনে পড়ে গেল। যাইহোক আপনার পোষ্টটি পড়ে বুঝতে পারলাম আপনি অনেক আনন্দ করে আজকে ট্রলারের ছাদে বসে ইফতার করেছেন। আপনার আনন্দঘন মুহূর্তটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

সুযোগ পেলে কখনো এভাবে ইফতার করে দেখবেন। নিশ্চিত করে বলতে পারি ভালো লাগবে।

 3 years ago 

আসলে ভাইয়া আপনি আপনার বন্ধুকে সাথে নিয়ে রেস্টুরেন্টে ইফতার করেছিলেন। আসলে রেস্টুরেন্টে ইফতার করার আর নদীর পাড়ে খোলা আকাশের নিচে ইফতার করা অনেক পার্থক্য। আসলে গত বছরও আপনি পদ্মা নদীর পাড়ে ট্রলারের ছাদে বন্ধুদের সাথে ইফতারের আয়োজন করেছিলেন।এবার সকল বন্ধু আসেনি তারপরেও আপনি কয়েকজন বন্ধু নিয়ে খোলা আকাশের নীচে এই প্রকৃতির মধ্যে ইফতার করলেন। দেখে খুবই ভালো লাগলো। আসলে প্রকৃতি খোলা আকাশের নিচে ইফতার করার মজাটাই আলাদা।

ঠিকই বলেছেন চারদেয়ালের ভিতর আবদ্ধ হয়ে ইফতার করা। আর বাইরে খোলা আকাশের নিচে নদীর পাড়ে ইফতার করার ভিতরে আকাশ পাতাল পার্থক্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.21
TRX 0.20
JST 0.035
BTC 91178.33
ETH 3192.43
USDT 1.00
SBD 2.96