অশুভ ছায়া ( দ্বিতীয় পর্ব)।

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


ঢাকা থেকে সাব্বিরের কর্মস্থলে পৌঁছতে পৌঁছতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেলো। প্রথমে ঢাকা থেকে সে বাসে করে তাকে জেলা সদর পর্যন্ত যেতে হয়েছে। তারপর সেখান থেকে ভ্যানে করে দীর্ঘ পথ পার হয়ে সে তার কর্মস্থলে পৌঁছেছে। যখন সাব্বির নারায়ণপুরে পৌঁছেছে তখন বিকাল হয়ে গিয়েছে। এখানে পৌঁছানোর আগে অফিস সহকারি রিপনের সাথে তার কোনো কথা হয়েছিল না। তবে রিপন তার জন্য আগে থেকেই অপেক্ষা করছিল তার কর্মস্থলে। কিন্তু সেখানে পৌঁছে সাব্বিরের নিজেরই মনটা কিছুটা খারাপ হয়ে গেলো। কারণ সে দেখতে পেল প্রাচীন একটি ভাঙাচোরা বিল্ডিং কে কোনো রকম মেরামত করে হয়েছে।

Polish_20230126_003243767.jpg

আর বিল্ডিংটির অবস্থান যেখানে তার আশেপাশে তেমন কোনো লোক বসতি দেখতে নেই। সেখানে গাছপালা এতটাই ঘন দেখে মনে হচ্ছিল কোন জঙ্গলের ভেতর এসে পড়েছে সে। ভাংগা চোরা এই বিল্ডিংটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেকস। এখানেই তাকে গ্রামের লোকজনকে চিকিৎসা সেবা দিতে হবে। আর এই বিল্ডিং এর একটি পাশে তার থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই এলাকায় বিদ্যুৎ নেই। যার ফলে হারিকেনই একমাত্র ভরসা। জায়গাটি দেখে সাব্বির চিন্তা করতে লাগলো। সাদিয়া না আসায় ভালোই হয়েছে। যদি সে এসে দেখতো এমন জায়গায় থাকতে হবে। তাহলে সে সাথে সাথে এখান থেকে চলে যেত।

অফিস সহকারী রিপন তার কাছ থেকে ব্যাগ নিয়ে বলল স্যার চলুন আপনাকে আপনার রুম দেখিয়ে দিই। রিপন বাড়িটির ভিতরে ঢুকে প্রধান দরজা খুলে একটু ভিতরে গিয়ে একটি রুমের দরজায় তালা খুলল। তারপর রুমের ভেতরে ব্যাগ রেখে বলল স্যার এখানে আপনার থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে । সাব্বির তাকিয়ে দেখলো রুমটি মোটামুটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রয়েছে। তবে ছাদের দিকে তাকালে বেশ কিছু ফাটল লক্ষ্য করলো। এই বাড়িটির অবস্থা থেকে সাব্বির বুঝতে পারলো যে কেন কেউ গ্রামে পোস্টিং নিতে চায় না।

সাব্বির আনমনে বিভিন্ন জিনিস চিন্তা করছিল। এর ভিতর রিপন বলল স্যার আপনার কাজ করার জন্য একজন কাজের মহিলা ঠিক করা হয়েছে। তিনি প্রতিদিন সকালে এসে আপনার যা কাজ আছে সেগুলো করে নিয়ে যাবে। আর আমার বাড়ি এখান থেকে কাছেই। যে কোন সমস্যা হলে আমাকে ডাকলেই পাবেন। তখন সাব্বির রিপনকে জিজ্ঞেস করল এখানে আলোর ব্যবস্থা কি? রিপন বলল আমাদের এলাকাতে এখনো বিদ্যুৎ আসেনি। তাই কেরোসিনের হারিকেন একমাত্র ভরসা। অবশ্য গ্রামের অবস্থাপন্ন লোকদের বাড়িতে সোলার বসানো আছে।

তখন রিপন সাব্বিরকে জিজ্ঞেস করল স্যার আপনি কি হারিকেন জ্বালাতে পারেন? সাব্বির বলল কখনো তো জ্বালিয়ে দেখিনি। তখন রিপন বলল আমি আপনাকে দেখিয়ে দিয়ে যাচ্ছি। আপনি একবার দেখলে খুব সহজে নিজেই জ্বালাতে পারবেন। তখন সাব্বিরের মনে হল বুদ্ধি করে সাথে একটা টর্চ নিয়ে আসলে ভালো হতো। কারণ একা এই ঘন জঙ্গলের ভেতর তাকে থাকতে হবে। হারিকেনের উপর খুব বেশি ভরশা করা যায় না। সাথে একটা টর্চ থাকলে ভালো হতো। অবশ্য এই নিরিবিলি নির্জন পরিবেশ দেখে সাব্বিরের ভালোই লাগছিল। অন্য কেউ হলে যেখানে ভয়ে আধমরা হয়ে যেতো। সাব্বির সেখানে পরিবেশটা উপভোগ করছিল।

হঠাৎ করে রিপন বলে বসলো স্যার রাতের বেলা ঘর থেকে বাইরে না যাওয়াই ভালো। সাব্বির রিপনকে জিজ্ঞেস করলো কেন কি সমস্যা? রিপন তখন বলল স্যার আশেপাশে প্রচুর ঝোপঝাড় রয়েছে। এ অঞ্চলে বেশ সাপের আনাগোনা রয়েছে। তাই বাইরে কম যাওয়াই ভালো। কিন্তু রিপনের মুখের দিকে তাকিয়ে সাব্বির বুঝতে পারলো রিপন কোন কিছু চেপে যাচ্ছে। অবশ্য একা থাকার জন্য সাব্বিরের একটুও ভয় লাগছে না। কারণ সে কখনো ভূতে বিশ্বাস করে না। সাব্বির মনে মনে চিন্তা করছিল শুধু ডাকাত না এলেই হয়। রিপন সাব্বিরকে হারিকেন কিভাবে জ্বালাতে হয় সেটা শিখিয়ে দিয়ে। পানির ব্যবস্থা করে দিয়ে সেখান থেকে বিদায় নিল। যাওয়ার সময় রিপন সাব্বিরকে বলল স্যার মেইন দরজাটা বন্ধ করে দেন।

সাব্বির তার রুম থেকে বেরিয়ে রিপনের কিছু কিছু গিয়ে মেইন দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে নিজের রুমে ফিরে এলো। ইতিমধ্যে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। সারাদিন জার্নি করার কারণে তার প্রচণ্ড ক্লান্ত লাগছিল। দরজা আটকে সাব্বির বিছানায় শুয়ে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে বুঝতেই পারেনি। হঠাৎ করে অনেক জোরে শব্দ হওয়াতে সাব্বিরের ঘুম ভেঙ্গে গেল। ঘুমের ঘোরে এত জোরে শব্দ শুনে সাব্বির ধড়মড় করে উঠে বসলো। তার ঘরটা ছিল তখন প্রায় অন্ধকার। হঠাৎ করে ঘুম ভাঙ্গার কারণে সাব্বির প্রথমে বুঝতে পারছিল না সে কোথায় আছে। একটু ধাতস্থ হতেই তার মনে পড়ল যে সে তার নতুন কর্মস্থলে এসেছে। জানালায় চোখ পড়তেই সে দেখতে পেল জানালার নিচের কপাট যেটা আটকানো ছিল এখন সেটা পুরোপুরি খোলা রয়েছে। সাব্বিরের মনে হল হয়তো কোন কারনে জানাটা খুলে গিয়েছে। আর শব্দটা সম্ভবত অন্য কোন জায়গা থেকে এসেছে।

সাব্বির বিছনা থেকে উঠে হারিকেনের আলো কিছুটা বাড়িয়ে দিল। এখন ঘরের ভেতর সবকিছু মোটামুটি পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। সে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখল গাছের ফাঁক চুঁয়ে পূর্ণিমার আলো জায়গায় জায়গায় আলোকিত করে রেখেছে। সে চিন্তা করলো হারিকেন নিয়ে একবার বাইরে থেকে ঘুরে আসে। কিন্তু পরক্ষণেই তার রিপনের কথাটা মনে পড়ল। সাব্বির ভূত প্রেত বিশ্বাস করে না। কিন্তু সাপ সে প্রচন্ড ভয় পায়। তাই সে ঠিক করল পরদিন সে রিপনকে দিয়ে একটি টর্চ কিনে আনাবে। তারপর থেকে সে যখন খুশি তখন বাইরে যেতে পারবে।

সবে সন্ধ্যা হয়েছে রাতে কি খাবে সেটাই চিন্তা করছিল সে। সাথে অবশ্য সে কিছু হালকা খাবার নিয়ে এসেছে। বিস্কুট পাউরুটি এই টাইপের খাবার। সাব্বির মনে মনে ভাবল এগুলি খেয়ে রাতটা কাটিয়ে দেবে। এরপরে সে রুমটাকে তার নিজের মতো করে গুছাতে লাগলো। ঘন্টাখানিক পার হওয়ার পর হঠাৎ করে সাব্বির দরজায় আওয়াজ শুনতে পেল। সে জিজ্ঞেস করল কে ওখানে? দরজার ওপাশ থেকে রিপন বলল স্যার আমি এসেছি দরজাটা খুলুন। সাব্বির তখন তার রুম থেকে বাইরে গিয়ে দরজাটা খুলে দিল। সে দেখতে পেলো রিপন তার হাতে করে একটি টিফিন ক্যারিয়ার নিয়ে এসেছে। সাব্বির তাকে জিজ্ঞেস করল এগুলি কি? তখন রিপন বলল আপনার এখানে রান্না শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত আমি খাবার দিয়ে যাব। সাব্বির রিপনকে বলল তোমাকে শুধু শুধু এত কষ্ট করতে হবে না। (চলবে)

ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইসহুয়াই নোভা 2i
ফটোগ্রাফার@rupok

logo.png

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

standard_Discord_Zip.gif


break .png

Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote


VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png



🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩


@rupok

Sort:  
 2 years ago 

আসলে যে কেউ বিস্মিত হয়ে যাবে নতুন জায়গায় জঙ্গলের মত পরিবেশ যেটা মানিয়ে নিতে অনেক কষ্টকর। বিশেষ করে বিদ্যুৎ নেই যেটা বর্তমান সময়ে হলে কেউ টিকে থাকতে পারত না। যাইহোক , সাব্বিরের সাহসিকতা তার সততার অনেক বড় পরিচয় দিয়েছে। আশা করি, এরকম পরিবেশে তাকে খাপ খাইয়ে নিতে অনেক কষ্ট হবে। দেখা যাক পরবর্তী পর্বে কি হয় অপেক্ষায় রইলাম ভাই।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.13
JST 0.027
BTC 58572.58
ETH 2551.35
USDT 1.00
SBD 2.47