ভারত পাকিস্তান ম্যাচ নিয়ে আমার বিশ্লেষণ।
স্ক্রিনশট নেয়া হয়েছে cricbuzz অ্যাপ থেকে
তবে এই খেলায় যে ভারত জিতবে সেটা নিয়ে আমার মনে ন্যূনতম সন্দেহ ছিলো না। যাই হোক ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়েছে হায়দ্রাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে। এই স্টেডিয়ামের দর্শক ধারণ ক্ষমতা এক লাখ লোকের উপরে। পাকিস্তানি সাপোর্টারেরা ভিসা না পাওয়ার কারণে স্টেডিয়ামে তাদের কোন উপস্থিতি ছিলো না বললেই চলে। যাইহোক টস জিতে ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা বোলিং করার সিদ্ধান্ত নেয়। প্রথম কয়েকটি ওভার মোটামুটি পাকিস্তান ভালোই খেলেছিলো। আগের ম্যাচে সেঞ্চুরি করা পাকিস্তানি ওপেনার আব্দুল্লাহ শফিক মোটামুটি ভালোই খেলছিলো। সেই সাথে তাকে দারুণভাবে সঙ্গ দিচ্ছিলো ইমাম উল হক। কিন্তু মোহাম্মদ সিরাজের একটি বলে এল বি ডব্লিউ হয়ে আউট হয়ে যান আব্দুল্লাহ শফিক। ৪১ রানে পাকিস্তানের প্রথম উইকেটের পতন ঘটে। তারপর বাবর আজম সঙ্গী হন ইমাম উল হকের। দলীয় ৭৩ রানে ইমামুল হক নিজের উইকেটটা ছুঁড়ে দিয়ে আসেন। এই টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত তিনি খুবই বাজে খেলেছেন। তারপর বাবর আজমের সঙ্গী হন পাকিস্তান ব্যাটিং অর্ডারের মূল ভরসা মোঃ রিজওয়ান। এই দুজন মিলে খুব সতর্কতার সাথে স্কোর বোর্ড এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলো।
স্ক্রিনশট নেয়া হয়েছে cricbuzz অ্যাপ থেকে
তবে রানের গতি ছিল খুবই ধীর। সকলে আলোচনা করছিল আসলে এইভাবে ব্যাটিং করে শেষ পর্যন্ত ইন্ডিয়ার বিপক্ষে লড়াইয়ের মত পুঁজি সংগ্রহ করা সম্ভব হবে কিনা। কিন্তু সমস্ত আলোচনা সমালোচনা কে ভুল প্রমাণিত করে বাবর আজম ৫০ রান করে আউট হয়ে যান মোঃ সিরাজের বলে। এরপরে পাকিস্তানি ব্যাটিং লাইন আপ তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে। ১৫৫ রানের তিন উইকেট হারানো দলটি ৪২.৫ ওভারে ১৯০ রানে অলআউট হয়ে যায়। সাথে সাথে ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে যায়। সবাই বুঝতে পারে এই ম্যাচটিতে এখন আনুষ্ঠানিকতা ছাড়া আর কিছুই নেই। জবাবে ব্যাটিং করতে নেমে ভারতীয় অভিনেতা স্বভাবসুলভ ভঙ্গিমায় দ্রুত গতিতে রান তুলতে থাকেন। যদিও সুভমান গিল এবং বিরাট কোহলি অল্প রানে তাদের উইকেট হারিয়ে বসেন। কিন্তু অপর প্রান্ত থেকে রোহিত শর্মার দুর্দান্ত ব্যাটিং ভারতীয় দলের উপর কোন চাপ তৈরি হতে দেয়নি। এই দুজন আউট হয়ে যাওয়ার পর রোহিত শর্মার সঙ্গী হন শ্রেয়াস আইয়ার। শ্রেয়াস আইয়ার গত কিছুদিন ধরে দারুন ফর্মে রয়েছেন। এই ম্যাচেও তিনি তার ফর্ম ধরে রেখেছেন। জয়ের খুব কাছাকাছি যাওয়ার পরেও রোহিত শর্মা অকারণ একটা বাজে শট খেলে তার উইকেটটা বিলিয়ে দিয়ে আসেন। না হলে একদিন ও তার সেঞ্চুরি পূর্ণ হয়ে যেত নিশ্চিন্তে। রহিত শর্মা আউট হওয়ার পর কে এল রাহুল শ্রেয়াশ এর সাথে জুটি বেঁধে বাকি কাজটুকু শেষ করেন। মাত্র ত্রিশ ওভার তিন বলে ভারত পাকিস্তানের দেয়ার লক্ষ টপকে যায় তিন উইকেট হারিয়ে। যার ফলে ভারত সাত উইকেটের বড় ব্যবধানে ম্যাচটি জিতে যায়।
স্ক্রিনশট নেয়া হয়েছে cricbuzz অ্যাপ থেকে
এই বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত ভারতের যে পারফরমেন্স তাতে মনে হচ্ছে না এই বিশ্বকাপে ভারতের সামনে কেউ দাঁড়াতে পারবে। ভারত একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে খেলছে এবং ভারতীয় ক্রিকেট টিমের প্রত্যেকটা প্লেয়ার তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সুচারু ভাবে পালন করে যাচ্ছেন। যার ফলে প্রতিটা দলকেই ভারত শুধু যে হারিয়ে দিচ্ছে তা নয় বরং বলতে গেলে উড়িয়ে দিচ্ছে। এই ম্যাচ থেকে ভারতের তেমন কোন দুর্বলতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে পাকিস্তান দলের ব্যাপক পরিবর্তন আনা অত্যন্ত জরুরী। সবচাইতে প্রথমে প্রয়োজন পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানদের মানসিকতার পরিবর্তন। আজকের দিনে আর রক্ষণাত্মক ভঙ্গিমায় খেলে আপনি ম্যাচ জিততে পারবেন না। বিশেষ করে ইন্ডিয়ার এই ধরনের পাটা উইকেটে। এই ধরনের উইকেটে খেলতে হলে আপনাকে দ্রুত গতিতে রান তোলা শিখতে হবে। এদিক থেকে পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানরা অনেক পিছিয়ে রয়েছে তাছাড়াও দ্রুত দু একটা উইকেট পড়ে গেলে তারপরে কিভাবে ইনিংসটা সামলাতে হয় সেটাও পাকিস্তানে ব্যাটসম্যানদেরকে শিখতে হবে। গতকালকের ম্যাচে বাবর আজম আউট হয়ে যাওয়ার পর যেভাবে পাকিস্তানী ব্যাটিং লাইন আপ ভেঙে পড়ল সেটা খুবই দৃষ্টিকটু ছিলো। এই ম্যাচ দেখে মনে হয়েছে পাকিস্তান ক্রিকেট টিমের ভারতের সাথে খেলার যোগ্যতাই নেই।
পাকিস্তানি ক্রিকেট টিমকে ভারতের সাথে জিতলে তাদের স্কিল ডেভেলপ করতে হবে সাথে মানসিকতার পরিবর্তন আনতে হবে। আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলা শিখতে হবে। আর বাবর আজম ব্যাটসম্যান হিসেবে হয়তো ভালো তবে ক্যাপ্টেন হিসেবে আমার কাছে তাকে মোটেও পছন্দ হয় না। ক্যাপ্টেন হওয়া উচিত এমন কাউকে যিনিপুরো দলকে উজ্জিবীত করতে পারেন। আর এই বিশ্বকাপে পাকিস্তানের খারাপ করার আরো একটা কারণ হচ্ছে বাবর আজমের রান না করা। বাবর আজম এখন ওডিআই রেংকিং এ নাম্বার ওয়ান ওডিআই ব্যাটসম্যান। কিন্তু তার ব্যাটিং দেখে মোটেও মনে হচ্ছে না সে নাম্বার ওয়ান ব্যাটসম্যান হওয়ার যোগ্য। আপনি যদি একজন গ্রেট ক্রিকেটার হতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই বড় মঞ্চে বড় দলের বিপক্ষে পারফর্ম করতে হবে। তখনই আপনাকে মানুষ গ্রেট ব্যাটসম্যান হিসেবে মানবে। যাই হোক আশা করি পাকিস্তান তাদের পরবর্তী খেলা গুলোতে উন্নতি করবে। আর ভারত তাদের এই দারুন আক্রমণাত্মক ক্রিকেটের ধারাবাহিকতা ধরে রাখবে।
আজকের মত এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
বর্তমানে পাকিস্তান টিমটা তেমন ভালো না। বাবর আজম ফর্মে নেই, তাছাড়া অন্যান্য ব্যাটসম্যানরাও তেমন ভালো করতে পারছে না। আফ্রিদির ইন সুইং ডেলিভারিও তেমন চোখে পড়ছে না। আর অপরদিকে ভারত সবদিক দিয়ে শক্তিশালী। আগে থেকেই জানা ছিলো পাকিস্তান হারবে, কিন্তু এতো বাজেভাবে হারবে সেটা আশা করিনি। যাইহোক পোস্টটি পড়ে খুব ভালো লাগলো ভাই। শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
খেলাটা আমি ভালোভাবে উপভোগ করছিলাম পাকিস্তান প্রথমের দিকে খুবই ভালো এবং সুন্দর ক্রিকেট খেলা আমাদেরকে উপহার দিয়েছিল। কিন্তু ভারতের যে খেলার পারফরম্যান্স সেটা সত্যি প্রশংসার দাবি রাখে। খুব সহজেই তারা খেলার দখল তাদের নিজেদের দিকে নিয়ে চলে আসলো এবং বিজয় লাভ করল।
মোট খেলায় পাকিস্তান এগিয়ে থাকলেও বিশ্বকাপের আট দেখাই একবারও জিততে পারেনি পাকিস্তান। আহমেদাবাদ এর নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে দর্শক উপস্থিতি ছিল প্রায় এক লক্ষ ৩০ হাজার। যা বিশ্বকাপ ইতিহাসে একটা রেকর্ড। যদিও খেলার মধ্যে ভারত পাকিস্তানের সেই দ্বৈরথ আর নেই। ভারতের একটা সহজ এবং কাঙ্খিত জয় ছিল।