বনলতা সেন
নমস্কার,,
আমার বাংলা ব্লগের সকল সকল সদস্যকে জানাচ্ছি আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। তাপদাহে অতিষ্ঠ জনজীবন। বৈশাখের আগে থেকেই যেভাবে এভাবে গরম শুরু হয়েছে , না জানি কয়দিন পর কি অপেক্ষা করছে আমাদের কপালে। বৈশ্বিক উষ্ণতা চরম পর্যায়ে পৌছে যাচ্ছে প্রতিটা বছর। আর আমরা মানুষ নিজেদের ক্ষতি নিজেরা ডেকে নিয়ে আসছি দিনের পর দিন। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের অস্তিত্ব যে বিলীন হয়ে যাবে দিনে দিনে এটা নিয়ে আর কোন সন্দেহ নেই।
গতবছরের তুলনায় লোড শেডিং যে খুব বেশি পরিমাণে হচ্ছে এটা ঠিক হবে না বলা। তবে অল্প যে সময়ের জন্যই কারেন্ট চলে যাচ্ছে ঐ সময়টুকুই আর কাটানো যাচ্ছে না । অবস্থা এতটাই বেগতিক। আমাদের এখানে মোটামুটি মাঝ রাতের দিকে একবার হলেও লোড শেডিং হবেই। গতকাল যখন এমন লোড শেডিং হলো তখন কবি জীবনানন্দ দাশের বিখ্যাত কবিতা বনলতা সেন কবিতা টা পড়ছিলাম। ইচ্ছে করলো একবার আবৃত্তি করি। প্রথমে যদিও একটু ভয় পাচ্ছিলাম কারণ এই কবিতা আবৃত্তি করার মতো আবেগ দেওয়ায় ক্ষমতা আমার এখনো হয় নি। তবুও করেই ফেলি সাহস করে একবার। আজ সেটাই সকলের সাথে শেয়ার করে নিচ্ছি।
বনলতা সেন
হাজার বছর ধ’রে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে,
সিংহল সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয় সাগরে
অনেক ঘুরেছি আমি; বিম্বিসার অশোকের ধূসর জগতে
সেখানে ছিলাম আমি; আরো দূর অন্ধকারে বিদর্ভ নগরে;
আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন,
আমারে দু-দণ্ড শান্তি দিয়েছিলো নাটোরের বনলতা সেন।
চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা,
মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য; অতিদূর সমুদ্রের ’পর
হাল ভেঙে যে-নাবিক হারায়েছে দিশা
সবুজ ঘাসের দেশ যখন সে চোখে দেখে দারুচিনি-দ্বীপের ভিতর,
তেমনি দেখেছি তারে অন্ধকারে; বলেছে সে, ‘এতদিন কোথায় ছিলেন?’
পাখির নীড়ের মতো চোখ তুলে নাটোরের বনলতা সেন।
সমস্ত দিনের শেষে শিশিরের শব্দের মতন
সন্ধ্যা আসে; ডানার রৌদ্রের গন্ধ মুছে ফেলে চিল;
পৃথিবীর সব রং নিভে গেলে পাণ্ডুলিপি করে আয়োজন
তখন গল্পের তরে জোনাকির রঙে ঝিলমিল;
সব পাখি ঘরে আসে— সব নদী— ফুরায় >এ-জীবনের সব লেনদেন;
থাকে শুধু অন্ধকার, মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন।
এই কবিতাটাকে অনেকেই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম প্রেমের কবিতা বলে অভিহিত করেন। আমি নিজে কবিতা পড়তে ভীষণ পছন্দ করি কিন্তু তারপরেও জীবনানন্দ দাশের এই লেখাটা যতবার পড়ি ততবারই যেন মনটাকে ছুঁয়ে যায় নতুন করে। কি অদ্ভুত একটা ব্যাপার যেন লুকিয়ে আছে পুরো লেখনীর মাঝে। ভীষন স্নেহ আর মায়া ডোরে বেঁধে নেয় প্রতিটি চয়ন।
আজ এ পর্যন্তই রাখছি। পরবর্তীতে আবার নতুন কোন কবিতা নিয়ে হাজির হওয়ার চেষ্টা করব। সকলে ভালো থাকবেন এবং সুস্থ থাকবেন।