হঠাৎ পাওয়া দুঃসংবাদ

in আমার বাংলা ব্লগlast year

নমস্কার,,

আমাদের জীবনটা বড্ড বেশি অনিশ্চিত। এখানে কখন কি হয়ে যায় কেউ বলতে পারে না। কখনো কখনো আচমকা কোন দুঃসংবাদে এসে সবকিছু যেন এলোমেলো করে দিয়ে যায়। হয়তো এটাও আমাদের জীবনেরই একটা অংশ। আজ গুছিয়ে লিখতে পারছি না ঠিক। ঘটনা টা একদিন আগের।

রাত সাড়ে আটটা বাজবে হয়তো। বাবার ফোনে ইন্ডিয়া থেকে একটা ফোন আসলো। প্রথমে আমি কিছু বুঝতে পারি নি। একটু পর বাবার চোখ মুখ দেখে কিছু বলার আগেই ঠিক বুঝে গিয়েছিলাম যে এটা কোন ভালো সংবাদ আসে নি। মনে মনে যা ধারণা করেছি তাই হয়তো ঠিক। অর্থাৎ আমার জেঠু ইহকালের মায়া ত্যাগ করে পরলোকে গমন করেছেন।

man-5640540_1280.webp

Source

আমার বাবারা চার ভাই। তার মধ্যে আমার বাবা সবার ছোট। সবার বড় যিনি অর্থাৎ বড় জেঠু দু বছর আগে মারা গেছেন। আমরা তো বাংলাদেশেই থাকি। আর বাকি দুই ভাই ইন্ডিয়াতে থাকেন। ৫-৬ দিন আগে হঠাৎ করেই সকালবেলা আমার জেঠুর ছেলে অর্থাৎ দাদা আমাকে ফোন দিয়ে বলল জেঠুর শরীর ভালো নেই। অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছেন। হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে। অবস্থা বেশি ভালো না। তার কিছুক্ষণ পরেই বাবা যখন আবার খোঁজ নেয়ার জন্য ফোন করল তখন শুনতে পাই এখন জ্ঞান ফিরেছে এবং মোটামুটি কথা বলতে পারছে।

বাবা ভিডিও কল করলো জেঠু কে। অনেক বার দাদা দাদা করে ডাকলো। কিন্তু আমার জেঠু আর চিনতে পরলো না। দাদা তখন জানালো যে সবাইকে ঠিক চিনতে পারছেনা। বাবা বলে দিল যত তাড়াতাড়ি পারে হসপিটালে নিয়ে যাওয়ার জন্য।

সেদিন রাত্রিবেলা যখন জেঠুর খোঁজ নেওয়া হল তখন জানতে পারলাম এখন আগের থেকে অবস্থা অনেক ভালো আছে। মোটামুটি সবাইকে চিনতে পারছে। ডাক্তার পরের দিনই বাড়িতে নিয়ে যেতে বলেছে। বাবা ঠিক করল তাহলে পরের দিনে আবার ভিডিও কলে কথা বলবে জেঠুর সাথে।

জন্মাষ্টমীর জন্য সারাদিন উপবাস থাকায় সকালে আর ফোন করে নি বাবা। সত্যি বলতে সেদিন সারা দিনের ব্যস্ততায় ঠিক ফোন করা আর হয়ে ওঠেনি। আর সন্ধ্যার পর পর অর্থাৎ রাত্রি সাড়ে আটটার দিকে হঠাৎ করে খবর আসলো জেঠু আর নেই। বাবার খুব কষ্ট হচ্ছিল যে শেষ দেখা টাও আর দেখতে পারলাম না।

man-7750139_1280.webp

Source

সত্যি বলতে দূরত্বটা অনেক বেশি। দুটো দেশের ব্যাপার। চাইলেও যাওয়া সম্ভব হয় না। তার মধ্যে বাবার পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ। নতুন করে করতে হবে আবার। তাই এখানে মুখ বুজে সব সহ্য করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই।

আমি জন্মের আগেই জেঠু ইন্ডিয়া চলে যায়। আমি প্রথম দেখেছি জেঠু কে ২০১৬ সালের দিকে। দুদিনের মত ছিলাম সেবার জেঠুর বাড়ি তে। আমাকে নিয়ে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ঘুরেছিল। আশেপাশের দুই তিনটে গ্রামে আমাকে নিয়ে গেছে যেখানে যেখানে বাংলাদেশের মানুষ আছে। খুব মনে পড়ছিল ঐ দিনের মুহূর্ত গুলো। এখন স্মৃতি ছাড়া আর কিছুই নেই আমাদের সাথে। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি তিনি যেন আমার জেঠু কে স্বর্গবাসী করেন। তার আত্মা যেখানেই থাকুক ভালো থাকুক।

Sort:  
 last year 

খুবই খারাপ লাগলো সংবাদটি পড়ে। দূরে থেকে আশীর্বাদ করুন এছাড়া তো আর করার কিছু নাই। যেহেতু দুটো দেশের ব্যাপার চাইলেই তো যেতে পারবেন না। তবে একটাই কষ্ট আপনার বাবা নিজের ভাইকে শেষ দেখাটা দেখতে পারলেন না। ঠিক বলেছেন ভাইয়া আমাদের জীবনের কখন কি ঘটে বলা যায় না। যাইহোক উনি পরপারে ভালো থাকুন এই প্রত্যাশাই করি।

Posted using SteemPro Mobile

 last year 

এই কষ্ট গুলো মেনে নেওয়া সত্যিই অনেক কঠিন আপু। দোয়া করবেন সব সময়। অনেক ভালো থাকবেন আপু।

 last year 

জীবন মানেই অনিশ্চিত। কখন কি ঘটে তা বলা যায় না। আপনার পোস্টটি পড়ে বেশ খারাপ লাগলো। বাংলাদেশে থাকলে আংকেল দেখতে যেতে পারতেন। কিন্তু দু'দেশ হওয়ায় যেতেও পারছেন না। এখন ওপারে যেন শান্তিতে থাকেন সেই কামনা করা ছাড়া আর কিছুই করার নেই। আংকেল যেন সেই শোক সইতে পারেন সেই কামনা করি।

 last year 

দোয়া করবেন আপু। আর অনেক ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য আপু।

 last year 

আসলে বিষয়টা জানতে পেরে খুবই খারাপ লাগলো ভাইয়া। আপনার জেঠু মারা গেল কিন্তু আপনার বাবার পাসপোর্ট এর মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার কারণে আপনারা দেখতে যেতে পারলেন না। দোয়া করি যেন মহান সৃষ্টিকর্তা আপনাদের স্বর্গবাসী করেন।

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.16
JST 0.029
BTC 67559.70
ETH 2674.90
USDT 1.00
SBD 2.70