ভোগান্তির অপর নাম আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস
নমষ্কার,,,
আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যকে পৌষের এই ঠান্ডায় উষ্ণ শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আশা করছি সকলে খুব ভালো আছেন। আমিও ভালো আছি। বিগত দুই তিন দিন খুব দৌড়ের উপরে গেল। সেই ব্যাপারটি নিয়েই আজকের আলোচনা করছি।
আমরা মোটামুটি সবাই জানি যারা পাসপোর্ট করতে বা লাইসেন্স করতে বাংলাদেশে আবেদন করেন তাদের নানান ধরনের হয়রানির শিকার হতে হয় প্রতিনিয়ত। যদি কেউ দালাল ধরে কাজ করে তাহলে তাদের এই ভোগান্তি পোহাতে হয় না কিন্তু সেই ক্ষেত্রে আপনাকে গুনতে হয় অতিরিক্ত বড় রকমের অর্থের একটি টাকা।
আমার একটি পাসপোর্ট আগে থেকেই ছিল। এই বছরে সেটি মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যায়। তাই আমি নতুন একটি পাসপোর্ট এর জন্য আবেদন করি। অনলাইন এবং ইউটিউবে দেখে প্রথমে ভালো একটি ধারণা নিয়ে নেই কি কি ডকুমেন্টস আমার লাগবে এবং কিভাবে ফরম ফিলাপ করতে হবে। আর আমার একটি বিশ্বাস ছিল যে যেহেতু পুরনো পাসপোর্ট আমার ছিল সুতরাং আমি অলরেডি ভেরিফাইড। তাই বেশি ভোগান্তি পোহাতে হবে না।
কিন্তু পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে আমার চিন্তা ধারা পুরো বদলে গেল। বাংলাদেশের সরকারি অফিস গুলোর বেহাল অবস্থার কথা অনেক আগে থেকেই শুনে আসছি। স্বচক্ষে দেখার সৌভাগ্য অতটা না হলেও এবার বেশ ভালোভাবে বুঝতে পেরেছি। সকাল ৯:৩০ থেকে পাসপোর্ট এর জন্য আবেদন পত্র গ্রহণ করার সময় দেয়া থাকলেও দায়িত্বে কর্মরত লোকটি এসে কাজ শুরু করেন সকাল দশটা সাত মিনিটে। আগে থেকে শুনেছিলাম পাসপোর্ট অফিসে বেশ ভিড় হয় তাই আমি সকাল সকাল বেরিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। সকাল ৮ টা ৩০ মিনিটের ভেতর আমি অফিসে পৌঁছে যাই এবং লাইনে দাঁড়িয়ে যাই। আমার সিরিয়াল ছিল ১২ জনের পরে। যথারীতি আমি যখন আমার আবেদনপত্রটি জমা দিতে গেলাম তখন শুরু হয়ে গেল আমার বিড়ম্বনা। আমি সাথে করে সব ধরনের কাগজপত্র এবং তথ্যাদি সাথে করে নিয়ে গিয়েছিলাম যাতে করে আমাকে কোথাও আটকাতে না পারে। কিন্তু তারপরেও আমার অজান্তে ছোট একটি ভুল হয়ে যায়। আমার নাগরিকত্ব সনদপত্রে চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর করা থাকলেও তার সিল দেওয়া ছিল না। ওটাই আমার কাল হয়ে দাঁড়ালো। আমার আবেদন জমা নিবে না আর। আমি অনেকভাবে তাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করলাম। আমার পুরাতন পাসপোর্ট আছে তার পরেও কেন নাগরিকত্ব সনদ পত্রের দরকার আছে। এছাড়া যেখানে আমি আমার এনআইডি কার্ড দিয়ে দিচ্ছি তার মানে আমি তো অলরেডি বাংলাদেশের নাগরিক। নাগরিকত্ব সনদপত্রে এই সিলমোহর দেওয়া না দেওয়া কি যায় আসে। আমি তাদের সাথে পেরে উঠলাম না। আমাকে ডেস্কে থাকা লোকটি বলল, আপনি একবার সহকারী পরিচালকের সাথে কথা বলে আসুন। তারপর আমি সহকারী পরিচালকের রুমে গেলাম। সবকিছু খুলে বলার পর তিনিও মানতে চাইলেন না। শেষমেষ নিরুপায় হয়ে আমাকে পুনরায় ফিরে আসতে হলো এবং চেয়ারম্যানের সিলমোহর দিয়ে পুনরায় নিয়ে গেলাম আবেদনপত্রটি জমা দেয়ার জন্য। এবার অবশ্য আর ঝামেলা করলো না আমার সাথে। সাথে সাথে সবকিছু তথ্যাদি এবং আমার আবেদনপত্র জমা নিয়ে নিল।
তার কিছুক্ষণ পর উপর থেকে সিগনেচার হয়ে আসলো আমার আবেদনপত্রটি এবং সেটি আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলা হলো বায়োমেট্রিক রেজিস্ট্রেশন এর জন্য লাইনে দাড়াতে। তখন দুপুর ২ ঘটিকা। খিদে পেটে আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না। যে লম্বা লাইন। মোটামুটি ১১০ জনের পেছনে গিয়ে দাঁড়াতে হবে। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলাম। ভাবলাম আজকে আর সম্ভব না। পরদিন সকাল সকাল আসবো। আমার মামাতো বোনের বাড়ি পাসপোর্ট অফিসের কাছাকাছি হওয়ায় সেখানে চলে গেলাম এবং রাত্রি যাপন করলাম। তারপর সকাল সকাল আবার বেরিয়ে পড়লাম। সকাল সাড়ে আটটার ভেতরে আমি অফিসে পৌছে গেছিলাম বায়োমেট্রিক রেজিস্ট্রেশন এর জন্য। আমি সিরিয়ালে দুইনাম্বার থাকলেও আমার সম্পূর্ণ কাজটি শেষ হতে বেশ সময় লেগে যায়। কারণ ওপর মহলের অনেক পার্সোনাল রিকুয়েস্ট আসে, যাদের কাজ আগে করে দিতে বাধ্য হন। এছাড়াও দালালদের দালালিতে কিছু কিছু ফর্ম আগে থেকেই রুমের ভেতরে থেকে যায়। ফলে যারা কষ্ট করে আগে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকে তাদের আর কিছুই করার থাকেনা। চোখ বুজে সব দেখতে হয়।
সবকিছুর পর সকাল ১১ টায় আমার কাজ সম্পূর্ণ হয়ে যায়। মোটামুটি ভালই বেগ পোহাতে হয়েছে দুই দিন।
সবকিছুর পর এতোটুকুই আত্মতৃপ্তি যে দালাল ছাড়া নিজে নিজে সম্পূর্ণ কাজটি সম্পন্ন করতে পেরেছি। তবে খারাপ লাগছিল এটা দেখে কিছু কিছু মানুষ চার পাঁচ দিন ধরে পাসপোর্ট অফিসে ঘুরে চলেছে। কিন্তু তাদের কাজ অহেতুক হয়রানির জন্য আটকে দিচ্ছে। সরকারি অফিস গুলো কবে যে নির্ভেজাল ভাবে চলবে এটা যেন স্বপ্নেও ভাবতে পারিনা এখন। তবুও মানুষ আশা নিয়েই বাঁচে। আমিও সেই আশাতেই রইলাম। একদিন হয়তো সব ঠিক হয়ে যাবে।
এতো সুন্দর একটি পোস্ট ক্রিয়েট করছেন এখানে কোনো কমেন্ট না দেখে আমি হতাশ। যাইহোক, আমি ভাবছিলাম আপনি ইন্ডিয়াতে থাকেন। আজকে জানলাম আপনি বাংলাদেশেরই ছেলে। 😜
হয়তো কারো ভালো লাগেনি তাই কমেন্ট করেনি। যাইহোক এতদিন পরে আপনার কমেন্ট পেয়ে আমি নিজেও হতাশ। 😊😊
আর হ্যাঁ আমি বাংলাদেশের ছেলে, বাংলাদেশ আমার মাতৃভূমি এবং বাংলা আমার অহংকার।