বড়গল্প "আমাজনের হৃদয়" [Story "The Heart of Amazon"] - পর্ব ০১

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago (edited)


Copyright Free Image Source: pexels


পর্ব ০১

ভোর হয়ে আসছে । ভ্যাপসা একটা গরম ভাব এখনো কিছুটা রয়ে গিয়েছে । ম্যাকাওদের একটানা কর্কশ ডাক আর বাঁদরদের হুপ হাপ্ শব্দ ভেসে আসছে । সহসা একটা হার্পি ঈগলের তীক্ষ্ণ চিৎকারে ছুটতে ছুটতে মাথা উপরের দিকে একবার তাকিয়ে আকাশ দেখার বৃথা চেষ্টা করলেন ক্যাপ্টেন ব্লাই । বিশাল বিশাল গাছের মাথা ওই উঁচুতে জটলা পাকিয়ে একটা ঘন চাঁদোয়া তৈরী করেছে । প্রখর দুপুরবেলাও সামান্য আলো চুঁইয়ে ভেতরে ঢুকতে পারে এ মহারণ্যের পেটের ভেতর ।

সর্বদা একটা আলো-আঁধারি ঘিরে রাখে চারিপাশটা । সঙ্গীদের যথা সাধ্য দ্রুত ছোটার নির্দেশ দিয়ে আবার দ্রুত চলা শুরু করলেন ক্যাপ্টেন । পদে পদে ঝোপ-ঝাড়, লতা-গুল্মের ঘন জঙ্গল । সাধ্য কি তার মধ্যে দিয়ে ছোটা । তবুও ধারালো লম্বা ছুরি দিয়ে দ্রুত ঝোপ-ঝাড় আলগা করে ছুটতে থাকলেন তারা । পেছনে সাক্ষাৎ মৃত্যু তাড়া করে আসছে । এখনও প্রায় আধ কিলোমিটার দূরে একটি খালে তাদের ক্যানো । কোনোমতে ক্যানোতে উঠতে পারলেই তারা নিরাপদ ।

ছুটতে ছুটতে তারা এক সময় খালের কাছে চলে এলো । এখানে গাছের জটলা কিছুটা কম । খালের ওপর এক টুকরো খোলা আকাশ যেন ঝুলে রয়েছে । অস্তগামী চাঁদের আলোয় ছেয়ে রয়েছে খালের নিস্তরঙ্গ জল । এই আবছা চাঁদের আলোতে দ্রুত অভিযাত্রী দলটি তাদের ক্যানো খুঁজতে লাগলো । সহসা এক অভিযাত্রীর নজরে এলো তাদের ছোট্ট ক্যানোটি ।

-"হো ক্যাপ্টেন, ওই যে আমাদের ক্যানো ।", চিৎকার করে সে ক্যাপ্টেনের দৃষ্টি আকর্ষণ করলো ।

ক্যাপ্টেন তাকালেন । প্রায় দু'শো গজ দূরে কালো মতো কি একটা জলের উপর দুলছে দেখা গেলো । একটি ক্যানো, মানে ছোট্ট একটি ডিঙি নৌকা । দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন জঙ্গলে আদিবাসীদের নৌকো এগুলো । খুব দ্রুত চলে জলের ওপর দিয়ে ।

ক্যাপ্টেন ইশারা করলেন সবাইকে ক্যানোতে যাওয়ার জন্য । পিছনের দুই আদিবাসীর পিঠে ঝুড়ি বাঁধা । ঝুড়িতে কি যেন সযতনে রাখা রয়েছে । ক্যাপ্টেন সবার আগে তাদের দুজনকে সামনে যাওয়ার জন্য সংকেত দিলেন ।

সবাই ধীরপায়ে ক্যানোর দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো । সহসা ম্যাকাও এর তীক্ষ্ণ চিৎকারে বনভূমি সচকিত করে তুললো । মুহূর্তের মধ্যে আদিবাসী দু'জন ঘুরে তাকালো ক্যাপ্টেনের পানে -

"সর্বনাশ হয়েছে বোয়ানা, আমাদের ঘিরে ফেলেছে ।"

শোনা মাত্র ক্যাপ্টেনের মুখ ছাইয়ের মতো ফ্যাকাসে হয়ে গেলো । দ্রুত তিনি সঙ্গীদের বন্দুক রেডি করে ক্যানোর দিকে ছোটার নির্দেশ দিলেন । যতটা দ্রুত সম্ভব সবাই ছোটা শুরু করলো ।

কয়েকটি মুহূর্ত মাত্র । সহসা শীষের মতো তীক্ষ্ণ একটা শব্দ উঠলো হাওয়ায় । খাটো একটা তীর বাতাস কেটে এসে ঝুড়ি বহন করা এক আদিবাসীর ঘাড়ের পেছনে গেঁথে গেলো । হুড়মুড়িয়ে ঘাড় গুঁজে পড়ে গেলো সে । তীব্র বিষে মুখ দিয়ে গ্যাঁজলা বেরিয়ে এলো । সারা শরীর বেঁকে চুরে যাচ্ছে যন্ত্রণার অভিঘাতে ।

ব্লো পাইপ । বিষাক্ত তীর ছুঁড়ছে ওরা ব্লো পাইপ দিয়ে । এক অভিযাত্রী দৌড়ে এসে পড়ে যাওয়া ঝুড়িটি সবে তুলে সোজা হয়ে দাঁড়িয়েছে সঙ্গে সঙ্গে আরেকটা তীর বাতাস কেটে এসে কণ্ঠনালীতে গেঁথে গেলো । নিঃশব্দে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লো সে ।

সবাই প্রাণপনে পা চালিয়ে ছুটছে । এসে গিয়েছে প্রায় । মাত্র দু'শো গজ দূরত্ব হলেও আমাজানের ঘন জঙ্গল এটি । অতো সহজ নয় খুব দ্রুত এই দুরুত্বটুকু অতিক্রম করা ।

নৌকোর খুব কাছে এসে গিয়েছে অভিযাত্রীদের ছোট দলটি । সহসা আবার বাতাসে শীষ কেটে দুটি বিষাক্ত ডার্ট এসে গেঁথে গেলো অপর দুই অভিযাত্রীর ঘাড়ের পিছনে । কাটা কলা গাছের মতো ঢলে পড়লো তারা মাটিতে । ক্যাপ্টেন ব্লাই আর অপর আদিবাসী ক্যানোটাকে ধাক্কা মেরে তীর থেকে খালের অগভীর জলে নিয়ে ফেললো ।

এবার ক্যানোতে ওঠার পালা । ক্যাপ্টেন উঠে গিয়েছেন । আদিবাসীটি উঠতে গিয়ে সহসা জলের মধ্যেই ঢলে পড়লো । আবার বিষাক্ত তীর । ক্যাপ্টেন হাত বাড়িয়ে জলের ওপর থেকে ঝুড়িটি ক্যানোতে তুলে নিলেন । ঘুরে যেই দাঁড় নিয়ে ক্যানো চালাতে যাবেন সহসা কানের নিচে তীব্র একটা কিসের দংশন অনুভব করলেন । মাথাটা বোঁ করে ঘুরে উঠলো । ক্যানোতে বসা অবস্থাতেই ঢলে পড়লেন কাৎ হয়ে ।

সারা শরীর অসহ্য যন্ত্রনায় জ্বলে যাচ্ছে । মাথা অসম্ভব ভারী, নিঃস্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে, চোখে ঝাপসা দেখছেন, হার্ট বিট অসম্ভব দ্রুত । সেই ঝাপসা দৃষ্টি আর মাথার মধ্যে ভোঁতা একটা অনুভূতি নিয়ে ক্যাপটেন ব্লাই দেখতে পেলেন, গাছের আড়াল থেকে অনেকগুলো কালো কালো ছায়ামূর্তি বেরিয়ে এলো ।

দ্রুত ছায়ামূর্তি গুলো শায়িত দেহগুলোর খুব কাছে এসে পড়লো । চাঁদের আলোয় ঝলসে উঠলো ধারালো পারাং । এক একটি নিষ্ঠুর কোপে মাথাগুলি ধড় থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলো । ক্যাপ্টেন ব্লাই বিস্ফারিত চোখে সব কিছু দেখলেন । ওরা তীরবিদ্ধ হলেও তাঁর মতোই তখনো সবাই জীবিতই ছিল, কিন্তু প্যারালাইজড অবস্থায় । জীবিত অবস্থাতেই প্রত্যেকের মাথা কেটে নিয়েছে ওরা ।

ধীর পায়ে মূর্তি গুলো এসে দাঁড়ালো ক্যানোর সামনে । ক্যাপ্টেন তাঁর চোখের সামনে দেখতে পেলেন সদ্য বিচ্ছিন্ন নরমুন্ডের চুলের ঝুটি ধরে ঝুলিয়ে হাসতে হাসতে এগিয়ে আসছে ওরা । কাটা মুন্ডগুলো থেকে তখনও রক্ত চুঁইয়ে চুঁইয়ে পড়ছে ।

স্নায়ুর ওপর অসম্ভব চাপ আর নিতে পারলেন না ক্যাপ্টেন । সহসা চারিপাশের সব কিছু আঁধার হয়ে এলো ।

[ক্রমশঃ ...]

Sort:  
 2 years ago 

ওমা কি ভয়ংকর গো !! কি লিখেছেন দাদা? গল্পটি পড়ে তো ভয়ে গা-হাত-পা শিরশিরিয়ে ওঠেছে। তাহলে ক্যাপ্টেন কি ভয়েই মারা গেল ?নাকি ক্যাপ্টেনেরও ওই একই অবস্থা হবে ?পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম। খুবই চমৎকার একটি গল্প পেলাম। পড়ে বেশ ভালো লাগলো ।ধন্যবাদ আপনাকে।

This post has been upvoted by @italygame witness curation trail


If you like our work and want to support us, please consider to approve our witness




CLICK HERE 👇

Come and visit Italy Community



 2 years ago (edited)

কি ভয়ঙ্কর গল্প রে বাবা। পড়ার সময় গা ছম ছম করছিলো। এমন গল্প কীভাবে লিখেন। কাটা মাথা হাতে নিয়ে ক্যাপ্টেন এর দিকে আসছে। ক্যাপ্টেন কি বাঁচতে পারবে এই বিপদ থেকে। এমন এমন জায়গায় গল্প শেষ করেন দাদা পরের পর্ব না পড়া পর্যন্ত শান্তি পাওয়া যায় না।

Hi @rme,
my name is @ilnegro and I voted your post using steem-fanbase.com.

Come and visit Italy Community

 2 years ago 

অনেক দিন পর ভিন্নধর্মী একটা লেখা পেলাম দাদা। সমসাময়িক ঘটনা গুলো থেকে ক্রমশ ঢুকে যাচ্ছিলাম লেখার ভেতর। কেমন একটা গা ছমছমে ব্যাপার পুরো লেখায়। তবে নাম গুলো খুব অদ্ভুত ধরনের। ক্যাপ্টেনের পরবর্তী অবস্থা জানার জন্য ছটফট করছি সত্যি। ভূতুড়ে ভূতুড়ে একটা গন্ধ,,,,,, পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম দাদা।

 2 years ago 

পড়তে পড়তে মনে হচ্ছে বেশ ভয়ংকর উত্তেজনা কাজ করছিলো।এমন এক জায়গায় থামলেন কেন🤔।ভাবছি মূতিগুলো কেমন ছিলো।মুন্ডগুলো দিয়ে কি করতো।পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায়। ধন্যবাদ

 2 years ago 

কল্পনা করতেই তো ভেতর থেকে কলিজা শুখে যাচ্ছে দাদা🤒।রাতের বেলা পড়লে যদি এমন কল্পনা করতে যেতাম, ব্যাস ঘুম হাওয়া হয়ে যেতো।
পরবর্তীতে কি আসছে?ক্যাপ্টেনের সাহসিকতার দৃষ্টান্ত নাকি তার জীবনাবসান।

 2 years ago 

নরমুন্ডের চুলের মুঠি ধরে ঝুলিয়ে হাসতে হাসতে এগিয়ে আসছে ওরা । কাটা মুন্ডগুলো থেকে তখনও রক্ত চুঁইয়ে চুঁইয়ে পড়ছে ।

দাদা আপনার এই লেখার মাঝে ভিন্নতা খুঁজে পেয়েছি। তবে যখন এই লেখাগুলো পড়ছিলাম গায়ের লোম একেবারে কাঁটা দিয়ে উঠছিল। খুবই ভয়ঙ্কর ছিল। আশা করছি পরবর্তী পর্বগুলো আরও বেশি আকর্ষণীয় হবে। ধন্যবাদ আপনাকে এবং শুভকামনা রইলো আপনার জন্য। ♥️♥️♥️

 2 years ago 

শুরুটা এককথায় চমৎকার হয়েছে। এ ধরনের গল্প পড়তে আমার কাছে নেশার মত লাগে। শুধু একটাই সমস্যা এক নিঃশ্বাসে পড়তে পারি না। কারণ গল্পগুলো পর্ব আকারে আসবে হাহাহাহা। যাইহোক এতদিন পরে মানুষ খেকোদের গল্প শুনতে পাচ্ছি বলেই মনে হলো। অনেকদিন যাবত অপেক্ষায় ছিলাম, অবশেষে অপেক্ষার অবসান হতে যাচ্ছে। ধন্যবাদ দাদা।

Coin Marketplace

STEEM 0.26
TRX 0.11
JST 0.033
BTC 63869.25
ETH 3055.04
USDT 1.00
SBD 3.88