বড়গল্প "আমাজনের হৃদয়" [Story "The Heart of Amazon"] - পর্ব ০২
Copyright Free Image Source: pexels
গত পর্বের পর
ধীরে ধীরে চোখের পাতা খুললেন ক্যাপ্টেন ব্লাই । মাথার ভিতর এখনো একটা ভোঁতা অনুভূতি রয়েছে । প্রথম প্রথম তিনি বুঝতেই পারলেন না যে কোথায় আছেন তিনি । প্রথমে তাঁর মনে হলো তিনি তাঁর মানাউসের খামার বাড়িতেই রয়েছেন । ধীরে ধীরে কয়েক মিনিটের মধ্যেই তাঁর সব কিছু মনে পড়ে গেলো । নিজের অজান্তেই শিউরে উঠলেন তিনি ।
প্রখর সূর্যালোক তার ঠিক চোখের পাতাতেই এসে পড়ছে । খুব সম্ভবত এই তীব্র আলোর জন্যই খুব দ্রুত তাঁর মাথার ভিতরের ধোঁয়াশাভাবটা কেটে গিয়েছে । শুয়ে শুয়েই মাথা ঘোরালেন ক্যাপ্টেন । সারা শরীরে আড়ষ্টভাবটা এখনো পুরো যায়নি । আর অসম্ভব দুর্বল লাগছে ।
ডান দিকে মাথা ঘোরাতেই দেখতে পেলেন বিশাল একটা পর্ণকুটির । লম্বা লম্বা শুকনো ঘাসে ছাওয়া । কুটিরের পিছনে এবং আশেপাশে আরো কয়েকটা কুটীরকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে দেখতে পেলেন । একটা ব্যাপার দেখে শিউরে উঠলেন ক্যাপটেন । প্রায় প্রত্যেক কুটীরের বেড়ায় আর চালায় রয়েছে অদ্ভুতভাবে শুকিয়ে ছোট্ট এতটুকু হয়ে যাওয়া অনেকগুলো নরমুণ্ড । একেকটার সাইজ প্রায় একটা বড় আপেলের মতো । চুল, চোখ, নাক, ঠোঁট, মুখ সবই দৃশ্যমান । কিন্তু, কুঁচকে ছোট্ট এতটুকু হয়ে গিয়েছে । সানসা (tsantsa) ধাঁ করে মনে পড়ে গেলো ক্যাপ্টেনের । এগুলোকে বলে সানসা । মানুষের মুন্ড ধড় থেকে বিচ্ছিন্ন করে এরপরে এদের নিজস্ব গোপন পদ্ধতিতে একটা আপেলের সমান ছোট্ট আকারে নিয়ে আসে ।
সর্বনাশ ! তিনি তাহলে নরমুন্ডশিকারীদের পাল্লায় পড়েছেন । ভয়ে চোখ বুঁজে ফেললেন তিনি । হার্ট বিট বেড়ে গিয়েছে তাঁর । খুব দ্রুত স্পন্দিত হচ্ছে হৃদয় । ভয়ে এবং উত্তেজনায় ।
খুব ধীরে ধীরে বাঁ দিকে ঘাড় ঘোরালেন আবার । গভীর বনভূমির মধ্যে অনেকটা জায়গা একেবারে পরিষ্কার করে নিকানো । একটা গ্রাম । আমাজানের ভয়ঙ্কর নরমুন্ডশিকারীদের একটি গ্রাম এটি । একটাই স্বস্তির বিষয় এই যে এরা নরভূক নয় । মানুষের মাংস এরা খায় না । নরভুক গোষ্ঠীগুলো আরো ভয়ঙ্কর হয় । দয়া-মায়া হীন নিষ্ঠুর জাতি তারা । বাইরের পৃথিবীর মানুষকে ভালোবাসার চাইতে তাদেরকে খাদ্যবস্তু হিসেবে ভাবতেই পছন্দ করে তারা ।
ভাবতে ভাবতে একটু আনমনা হয়ে পড়েছিলেন তিনি । এমন সময়ে পদশব্দে ডান দিকে মাথা ঘুরিয়ে দেখতে পেলেন সেই বড় কুটীর থেকে একটি অল্পবয়সী তরুণী তাঁর দিকে আসছে । তরুণীটির বয়স বড়জোর কুড়ি হবে । গায়ের রং উজ্জ্বল তামাটে, মাথায় একরাশি কালো চুল তাতে রঙিন রিবন বাঁধা, মুখটি লাল-সাদা রঙে চিত্র-বিচিত্র করা । গলায় গোল একটা তামার নেকলেস, আর কিছু রঙিন পাথরের মালা । নাকের এ মাথা থেকে ও মাথা অব্দি একটা কাঠি গোঁজা । হাতের কব্জিতে পাখির পালক আর লোমের তৈরী ব্রেসলেট জাতীয় বস্তু । কোমর থেকে উপরিভাগ সম্পূর্ণ অনাবৃত । কোমরের নিচে লম্বা ঘাগড়া জাতীয় উজ্জ্বল হলুদ-কমলা পোশাক পরা ।
হাতে একটি বড় মাটির পাত্র । একটু দ্রুত পদক্ষেপে ক্যাপ্টেনের কাছে এসে বসে পড়লো মেয়েটি । একটু হাসলো । তারপরে ইশারায় পাত্রটিতে চুমুক দিতে বললো ।
ধড়মড়িয়ে উঠে বসলেন ক্যাপ্টেন । মাথাটা একটু দুলে উঠলো । অসম্ভব দুর্বল লাগছে তাঁর । তেষ্টায় গলা-বুক শুকিয়ে কাঠ একেবারে । মেয়েটির দিকে তাকিয়ে একটু হাসি দিয়ে প্রতিউত্তর করতে চাইলেন, কিন্তু, হাসিটা ফুটলো না তাঁর । শুধু হালকা ঠোঁটের কোনে একটু টান পড়লো । দ্রুত হাত বাড়িয়ে মেয়েটির হাত থেকে পাত্র নিয়ে চুমুক দিতে যাবেন এমন সময়ে তাঁর নজর পড়লো পাত্রের ভিতরের বস্তুটার দিকে ।
টকটকে লাল রঙের বস্তুটা যে রক্ত সেটা আর বলে দিতে হবে না । তবে, রক্তটা থকথকে কালচে রঙের নয়, বরং অনেকটাই লঘু আর কালচে নয় একটুও । একেবারে টকটকে লাল টাটকা রক্ত । কয়েক সেকেন্ডের দ্বিধা । এরপরে চোখ বুজে চোঁ করে পাত্রের সেই রক্তবর্ণ তরলটা গলায় ঢেলে নিলেন ।
একটা আঁশটে গন্ধ রয়েছে মিশ্রণে, তবে খেতে খুব একটা খারাপ লাগেনি তাঁর । কোনো পশুর দুধে মেশানো রক্ত এটি । সাথে কিছু ভেষজ মেশানো আছে । খেতে অদ্ভুত তবে খুব একটা খারাপ নয় । তেষ্টা অনেকটাই কমে গিয়েছে তাঁর । শরীরটাতে বেশ চনমনে ভাব এসে গিয়েছে এর মধ্যেই ।
হঠাৎ, একটা জিনিস মনে পড়তেই মাথাটা বোঁ করে ঘুরে উঠলো তাঁর । সর্বনাশ, এ কী পান করলেন তিনি ? তাঁর সঙ্গীদের শরীরের রক্ত নয় তো এটা ?
[ক্রমশ ...]
Thank You for sharing Your insights...
This post has been upvoted by @italygame witness curation trail
If you like our work and want to support us, please consider to approve our witness
Come and visit Italy Community
Thank You for sharing...
দাদা ব্লাই এখনো বেঁচে আছে সেটাইতো কম কিসের। তবে প্রথম পর্বে কিছু না বুঝলেও এখন অন্তত একটু আন্দাজ করতে পারছি মহান বন আমাজনের মানুষ খায় এমনই একটি গল্প আপনি আমাদেরকে উপহার দিচ্ছেন। তবে গল্পটা পড়ে যতটা না শরীরের পশম সিওড়ে উঠছে তার চাইতে বেশি মজাই লাগছে। তবে ব্লাই যে এখনো রক্তমাখা পানি খেয়ে সতেজতা বোধ করছে সেটাই অনেক ভালো লেগেছে এবং তার শরীর ের অনেকটা শক্তি ফিরে পেয়েছে। কিন্তু তার সহকর্মীদের রক্ত কিনা সেটা ভেবে আবারো শিওর উঠলো। গল্পটি দারুন লাগছে অপেক্ষায় রইলাম বাকি গল্প পড়ার জন্য।
Thank You for sharing Your insights...
যাক ক্যাপ্টেন যে এখন পর্যন্ত বেঁচে আছে এটা শুনে ভালো লাগলো। নর মন্ডগুলো শুকিয়ে একেকটা সাইজ আপেলের মতো হয়ে গিয়েছে এটা দেখে সত্যি অবাক হলাম আবার আবার চোখ নখমুখ সবই বোঝা যাচ্ছে ওরা মুন্ডু গুলো কেটে এনে মনে হয় এখানে শুকাতে দেয়। যাক শেষ পর্যন্ত ক্যাপ্টেন একটা তরুণীর দেখা পেল সেটা শুনে ভালো লাগছে। কিন্তু তরুণী তাকে রক্ত খেতে দিল আর ক্যাপ্টেন কেনই বা এই রক্ত খেয়ে ফেলল তাইতো বুঝলাম না। হতেও তো পারে এটা তার বন্ধুদের রক্ত। কিন্তু ক্যাপ্টেনের মুন্ডুটা কেন কাটেনি সেটা আমার একটা প্রশ্ন ।ভালই লাগছে গল্পটা দাদা আরেকটু থাকলে কি হতো একেবারে অল্পতেই যেন শেষ হয়ে গেল।
Thank You for sharing Your insights...
অ্যামাজনের গল্পটি সত্যিই অদ্ভুত বিষয় সম্পর্কে ধারণা দিয়েছে। নরমুন্ডু যাইহোক তারা মানুষের মাংস খায় না তাহলে তো ক্যাপ্টেনকে খেয়ে ফেলত। আমার কাছে একটা বিষয় খারাপ লেগেছে কোন পশুর দুধের সাথে রক্ত মিশিয়ে দিয়েছে। সত্যিই আমি হলে কি করতাম জানিনা সত্যিই এটা আমাকে অনেকবার ভাবিয়েছে। পরবর্তী পর্বের আশায় রইলাম দাদা।
দাদা আপনার বড়গল্প "আমাজনের হৃদয়" এই পর্বে ক্যাপ্টেন এখনো বেঁচে আছে শুনে বেশ ভালো লাগলো।আমাজানের ভয়ঙ্কর নরমুন্ডশিকারীদের একটি গ্রাম আমাজন ।
তবে এখানে একটাই স্বস্তির বিষয় এই যে এরা নরভূক নয় । মানুষের মাংস এরা খায় না । নরভুক গোষ্ঠীগুলো আরো ভয়ঙ্কর হয় । দয়া-মায়া হীন নিষ্ঠুর জাতি তারা । বাইরের পৃথিবীর মানুষকে ভালোবাসার চাইতে তাদেরকে খাদ্যবস্তু হিসেবে ভাবতেই পছন্দ করে তারা । অবাক করা এই গল্পটি পড়ে কেমন যেন লাগছে।অদ্ভুত একটা শিহড়ন কাজ করছে। তবে আগ্রহটা বেড়ে গেল পরবর্তী পর্ব পড়ার জন্য♥ ♥
Thank You for sharing Your insights...
নর মুন্ড স্বীকার করে তারা কি কারনে সানসা (tsantsa) বানিয়ে রাখে এই বিষয়টি জানার খুব আগ্রহ তৈরি হলো। আশা করছি ধীরে ধীরে জানতে পারবো। যাইহোক দাদা ক্যাপ্টেন ব্লাইকে হাতে পেয়েও মুন্ড বিচ্ছিন্ন করল না কেন ? আর ২০ বছর বয়সী তরুণীটি কি কারনে ক্যাপ্টেনকে সুস্থ করার চেষ্টা করছে। এ পর্বে অনেকগুলো প্রশ্ন মনের মধ্যে উঁকি দিচ্ছে। তবে ক্যাপ্টেন ব্লাই জীবিত আছে দেখে খুব ভালো লাগলো। সম্ভবত এই তরুণী ক্যাপ্টেনকে যে পানীয় পান করাচ্ছে হতে পারে কোন ঔষধ জাতীয় অথবা তৃষ্ণা মেটানোর জন্য। বেশি কিছু ভাবতে পারছি না দাদা পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম।
Thank You for sharing Your insights...
কি ভয়ঙ্কর বর্ণনা দিলেন দাদা! এর পরের পার্টটি পড়ার জন্য আমি যেন আর অপেক্ষা করতে পারছিনা। ক্যাপ্টেন এর সাথে ঘটা বিষয়গুলো জানতে ইচ্ছে করছে খুব।
কি একটা ভয়ানক পরিস্থিতি দাদা! ক্যাপ্টেন শেষ পর্যন্ত না তার সাথীদের রক্ত পান করল?? এর পরে কি হবে! জানার আগ্রহ জাগছে.. আপনি এত সুন্দরভাবে গল্পটিকে উপস্থাপনা করছেন, পড়ার সময় আমার গায়ের লোম পর্যন্ত দাঁড়িয়ে গিয়েছে। তবে মানুষের নরমুন্ডি গুলোকে ছোট্ট একটি আপেলের সাইজে নিয়ে আসার বিষয়টি যেনে অনেক অবাক হলাম
Thank You for sharing...
আমি গত পর্বে একটা আশা রেখেছিলাম যে ক্যাপ্টেন নিশ্চয়ই বেঁচে যাবে। তা না হলে গল্প কিভাবে আগাবে? কিন্তু ক্যাপ্টেন কে ওরা কেন মারলো না সেটা এখনো পরিষ্কার হল না। আগামী কোন পর্বে জানা যাবে নিশ্চয়ই। নাকি এই মেয়েটি ক্যাপ্টেনকে বাঁচিয়ে নিয়ে এসেছে।
সবই তো ঠিক ছিল কিন্তু শেষে এসে ক্যাপ্টেন এটা কি খেলো?
Thank You for sharing...