ভৌতিক গল্প : "মৃত্যুর কাছাকাছি" - পর্ব ০২

in আমার বাংলা ব্লগ3 years ago


copyright free image source pixabay

প্রথম পর্বের পর


এত রাতে মানুষের সাড়া পেয়ে প্রথমে কুকুর গুলো বীর বিক্রমে কাদা ভেঙে তেড়ে এলো । পরমুহূর্তেই তাদের সব বীরত্ব উবে গেলো, ঘেউ ঘেউ ডাক একটানা তীক্ষ্ণ করুন আর্তনাদে পরিণত হলো -

কেএএএএইউউউ ..........কেএএএএইউউউ..........কেএএএএইউউউ ।

চমকে উঠলো ভীষণ ভাবে দুলাল, বললো -

-"শুনলি নেতাই ? কুকুর গুলো কাঁদছে !!!"

-"ভয় পেয়েছে মনে হয়। ..."

দাঁত বের করে হাসলো নিতাই । ভয় ! ভয় কেন পাবে বুঝলো না দুলাল । এর আগে যতদিন রাত বিরেতে বাগদি পাড়ায় ঢুকেছে কুকুরগুলো সাড়া পেয়ে ডাকতে ডাকতে পাড়া মাথায় করে তুলেছে । নেহাত খেঁকি বলে কামড়ায়নি কিন্তু কখনই মানুষ দেখে ভয় পায়নি । আজকে পেলো কেন ?

যাই হোক, এসব তুচ্ছ ব্যাপার নিয়ে দুলাল খুব একটা মাথা ঘামালো না । বাগদি পাড়া খুব একটা বড় না । মিনিট পনের'র মধ্যে পার হয়ে এলো । সামনেই শালুক বিল ।

বিলের পাশ দিয়ে কাঁচা রাস্তা এঁকে বেঁকে চলে গেছে সেই হাটখোলা । শালুক বিল জলে টইটম্বুর থাকে এই সময়টায় । প্রচুর শাপলা ফোটে বলেই হয়তো বিলের নাম 'শালুক বিল' । ফাঁকায় এসে পড়াতে বাতাসের বেগ বেড়ে গেলো । দুলাল বললো নিতাইকে -

-""নেতাই, লণ্ঠনটা ধর তো আড়াল করে, বড্ড হাওয়া দিচ্ছে । আমি এক হাতে সামলাতে পারছি না । নিভে গেলে বিপদ ।"

কিন্তু শোনা মাত্রই যেন নিতাই হাঁটার বেগ ডবল করে দিলো কোনো কথা কানে না তুলেই । প্রাণের বন্ধুর আচরণে বেজায় রুষ্ট হলো দুলাল । এ কেমনতর ব্যবহার ! নিতাই তো একেবারে ঝাড়া হাত পা; আর দুলালের এক কাঁধে জাল, এক হাতে লণ্ঠন, কোমরে খালুই । যাই হোক চিরকেলে শান্ত স্বভাবের দুলাল কিছু না বলে হাঁটার গতি কিছুটা বাড়িয়ে দিলো নিতাই এর সাথে তাল মেলাতে । ঘেরা-ঢাকা লণ্ঠন তাই বাঁচোয়া, হাওয়ায় নিভে যাচ্ছে না । শুধু ক্ষনে ক্ষনে শিখাটা দপ-দপিয়ে উঠছে ।

বিলের পাশের রাস্তার ধারে ধারে মাঝে মাঝে দু'একটা তাল গাছ আছে । এখনো তাল পাকেনি, ভাদ্র মাসে পাকবে । যখনি কোনো তাল গাছের তলায় আসছে তখনি দেখে নিতাই তার জন্য দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে । এমনি একটা তাল গাছের তলায় এসে কিন্তু নিতাই এর দেখা মিললো না । সামনে মোটামুটি কিছুদূর আবছা দেখা যাচ্ছে । সেখানে অপসৃয়মান কোনো ছায়ামূর্তি দেখা যাচ্ছে না । তাহলে ? গেলো কোথায় নিতাই ?

-"নেএএএএএতাআআআইইইই ...........নিতেএএএএএ ....."

-"এই তো আমি" - বলতে বলতে সর-সর করে নিতাই তাল গাছের মগডাল থেকে নেমে এলো ।

-" এ কীরে নেতাই !!! তুই তাল গাছে উঠেছিলি কি করতে ? এই অন্ধকারে উঠলিই বা কি করে ?"

-"এমনি হাওয়া খেতে, আর আমার অন্ধকারে কোনো সমস্যা হয় না, দিব্যি দেখতে পাই সব। -- আবার দাঁত বের করে হাসলো নিতাই ।

এই প্রথম খটকা লাগলো দুলালের । নিতাই হলো একটু ভীতু টাইপের ছেলে, আজ হোলো কি নিতাই -এর ?

বাকি পথটা খুবই আনমনে কেটে গেলো দুলালের । শালুক বিল পার হওয়ার পর একটা কাঠের পোল পার হতে হয়, তারপরেই হাটখোলা ।

সপ্তাহের দুই দিন শনি আর বুধ বার হলো হাট বার । মস্ত হাট বসে হাটখোলায় । আজ রাতের বেলায় একেবারে সব শুনশান । শুধু ফাঁকা কিছু চালা ঘর পড়ে আছে । হাওয়ায় শন দিয়ে ছাওয়া চালা ঘর থেকে শোঁ শোঁ শব্দ উঠেছে । দুলাল একটা চালা ঘরের দাওয়ায় উঠে একটা বিড়ি ধরালো । নিতাইকে একটা বিড়ি সাধতে গিয়ে দেখে নিতাই চালা ঘর থেকে একটু দূরে একটা শিমুল গাছের তলে দাঁড়িয়ে আছে ।

-"য়্যাই নেতাই, বিড়ি খাবিনে ? আমি ধরাচ্ছি কিন্তু একটা ।"

-"না, তুই খা, বউ বকবে ।"

-"ব্যাটা এক্কেবারে সাক্ষাৎ যুধিষ্ঠির । একটা খেলে কি হয় ! বিয়ের তিন বছর পরেও বউকে এত ভয় !!"

-"না ভাই, বড্ড মুখ করে বউ, তুই খা "

-"ঠিক আছে, তা তুই চালার মধ্যে এসে বোস, বাদলার মধ্যে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছিস !"

-"এখানেই দিব্যি আছি; তুই তাড়াতাড়ি খা তো বাপু; বিড়ি খেতে খেতে রাত ভোর করে ফেলবি নাকি ?"

-"দাঁড়া না ! গা টা একটু গরম করে নিই, যা বাদলা আজকে ! একবার মাছ ধরা শুরু করলে আর খেতে পাবো না ।"

বলতে বলতে আরো গোটা তিনেক সুখ টান দিয়ে বিড়িটা ছুঁড়ে ফেললো দুলাল । লণ্ঠনটার আলো আর একটু উস্কে দিলো । তারপর আবার রাস্তায় নামলো দুই জন ।

রাস্তায় পড়েই আবার নিতাই অনেকটাই এগিয়ে গেলো দুলালকে পিছে ফেলে ।

-"ব্যাটা একেবারে ঘোড় দৌড় লাগিয়েছে আজকে । কীরে অন্যদিন দুই বন্ধু গল্প করতে করতে যাই । আজ কী হলো তোর বল তো ? একবারও আমার সাথে চলছিস না । সব সময় দূরে দূরে থাকছিস। বলি হলো টা কি আজকে তোর , বলতো ?"

-"কিছু না ভাই, চলতো । তাড়াতাড়ি চল ।"

বেশ কিছুক্ষন চলার পরে গ্রামের একেবারে পশ্চিমদিকে মনসাপোঁতার খালের ধারে এসে পড়লো দুই বন্ধু । খালের দু'পাশে ঝোপ ঝাড়ে ভর্তি । ওরই মাঝে কিছু ফাঁকা জায়গা আছে । তেমনি একটা ফাঁকা জায়গায় এসে দুলাল দ্রুত প্রস্তুত হয়ে নিলো । পরনের গামছাটা ভালো করে গুটিয়ে নিয়ে জলে নেমে পড়লো । খালে জাল পাতবে । এমন সময় পলকের জন্য সে যা দেখলো নিমেষে পাথর হয়ে গেলো ।


[চলবে ....]

Sort:  
 3 years ago 

এই ভূতের গল্পটি ধীরে ধীরে চরম মজার দিকে যাচ্ছে। বেচারী গরিব দুলাল এখনো আন্দাজ করতে পারছে না তার জন্য কি অপেক্ষা করছে। কিন্তু তার ভিতরে একটি সন্দেহের দানা বেঁধেছে যে হঠাৎ তার বন্ধু নেতাই এমন ব্যবহার করছে কেন? পরের পর্বের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় রইলাম। আশা করি ৩য় পর্বে দুলালের সাথে সাথে আমরাও এই গল্পের ভুতের দেখা পাবো।

 3 years ago 

গল্পটা পড়ে মনে হচ্ছিল আমি মৃত্যুর খুব কাছেই চলে গিয়েছিলাম,,তারাতাড়ি পড়ে হাফ ছেড়ে বাঁচলাম

 3 years ago 

নেতাই যে একটি ভূত তা আমি প্রথমে বুঝতে পেরেছিলাম, এখন বেচারা দুলালের কি হবে সেটাই চিন্তার বিষয়? আশা করা যায় সে ভূতকে জয় করতে পারবে।

 3 years ago 

এইত কেবল জমে উঠেছে আর লেখাও শেষ।🙂 পরের অংশের জন্য আর তর সইছে না কিন্তু।👻💀

 3 years ago 

গল্প দারুন জমে উঠেছে। কি হয় কি হয়! বেশ টানাটান একটা ব্যাপার রয়েছে। পরের পোস্টের জন্য অপেক্ষা করে আছি 😌

নিতাই যে আমি ই বুঝতে পারতেছি।কিন্তু বোকারাম দুলাল মিয়া বুঝতে পারতেছে না।বেচারার জন্য মায়া লাগতেছে🤨।
যে লোক রাতের অন্ধকারে তাল গাছে উঠতে পারে তাও আবার কোন অভিজ্ঞতা ছাড়া।সে তো নি সন্ধেহে ভুত ছাড়া কিছু হতে পারে না।নিতাই এর চাল চলন প্রমাণ করছে সেটা একটা ভুত।আমি চিন্তা করতেছি বেচারা দুলাল মিয়ার কতটাই না ভয়ংকর সময় পার করতে হবে।

খালে জাল পাতবে । এমন সময় পলকের জন্য সে যা দেখলো নিমেষে পাথর হয়ে গেলো ।

ভয়ের সূচনা মনে হচ্ছে এখন দুলাল মিয়ার মনে ডুকবে।

অসাধারণ দাদা পরের পর্বটা পড়ার অপেক্ষায় রইলাম

 3 years ago 

কি দেখলো?দাদা এমন সময় শেষ করলো!কি দেখলো দুলাল এই চিন্তা করতে করতেই আজকের দিন কাটবে আমার।খুবই ভালো হচ্ছে দাদা,অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

 3 years ago 

ওহ! কি ভৌতিক একটা ব্যাপার। আমার মনে আছে আমি যখন ছোট বেলায় গ্রামের রাস্তার পাশে যে তালগাছ থাকতো তার পাশ দিয়ে যখন হেটে যেতাম তখন চোখ বন্ধ করে দৌড় দিতাম ভয়ে। আগে আমরা এগুলাই শুনতাম তালগাছে নাকি ভূত থাকে। বেচারা দুলাল কি যে হয় তার। জানার জন্য অপেক্ষায় রইলাম। ধন্যবাদ দাদা আপনাকে।

 3 years ago 

নেতাই কে তো বুঝতেই পারলোনা বেচারা দুলালটা।আসলে বুঝার কথাও না কারণ সে তো রোজকার সঙ্গীই।তবে দুলাল একটু খেয়াল করলেই হয়তো ব্যাপারটা একটু হলেও আন্দাজ করতে পারতো। এখন দেখার বিষয় দুলাল কি দেখে ভয়ে পাথর হয়ে গেলো!!
খুব টানটান উত্তেজনায় দাদা পর্বের শেষটা লিখে,

 3 years ago 

দাদা আবার তো দিলেন বিপদে ফেলে। এখন কি করি? এমন জায়গায় আজকের পর্ব টা শেষ করলেন। নিতাই যে ভূত সেটা আগে থেকেই মনে হচ্ছিল। এতক্ষণ সম্ভবত দুলালের কাছে আগুন থাকার কারণে নিতাই দুলালের কাছ থেকে দূরে দূরে থেকেছে। পরবর্তী পর্বের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি। ধন্যবাদ দাদা।

Coin Marketplace

STEEM 0.30
TRX 0.12
JST 0.034
BTC 64513.75
ETH 3146.11
USDT 1.00
SBD 3.95