আলোকচিত্র : শান্তিনিকেতনে কিছুদিন -০৮

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

এবার হাটের বর্ণনা দিই একটু । বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৫ কি:মি: দূরে সোনাঝুরি নামে একটি শালগাছের জঙ্গল আছে । এই জঙ্গলে রয়েছে খোয়াই । খোয়াই হলো বর্ষার মরসুমে শালবনের রাঙা মাটি বৃষ্টির জলে ক্ষয়ে ক্ষয়ে আঁকা-বাঁকা গভীর খাতের সৃষ্টি করে । এই খোয়াইয়ের শালবনবিথীতে সপ্তাহে দুই দিন হাট বসে । এটাই সোনাঝুরি হাট ।

আমরা গাড়ি থেকে নেমেই অমনি প্রথমে হাটের বিশাল লোকসমাগম দেখে একটুখানি ঘাবড়ে গেলুম । এত লোক ! কোভিডের সময় । তারপরেও মুখে মাস্ক পরে নেমে পড়লাম হাটের জনস্রোতের মাঝে । শুধু কিছু খাওয়ার সময় আর ছবি তোলার সময় ছাড়া সর্বক্ষণ মুখে মাস্ক পরেই রইলাম । মজার ব্যাপার হলো হাটের মাত্র ১ শতাংশ লোকের মুখে মাস্ক ছিলো ।

যে যার মতো আমরা আলাদা হয়ে গেলুম । আমি গেলুম খাবারের স্টলের দিকে । আমার ভাই গেলো স্টলগুলোর ছবি তুলতে, মা-তনুজা আর টিনটিন গেলো স্টল পরিদর্শন আর কেনা-কাটা করতে ।

আমি স্টলে ঢোকার আগে খাবারের স্টলগুলো একটু পরিদর্শন করতে গেলুম । প্রথমে মালাই ক্ষীর। এরপরে আখের রস, এরপরে বিভিন্ন ফলের জুস, ডাবের দোকান, আইসক্রিম স্টল, কাঁচা আমি মাখা, আনারস আর তরমুজের ককটেল এসবা কিছু একটু চোখে এবং চেখে দেখতে লাগলাম । বাইরের খাবার খাওয়া আমার একদম নিষেধ । তাও খেলাম বেশ কিছু ।

খেয়েদেয়ে এসে দেখি তনুজা আর মা এক জায়গায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আদিবাসীদের নৃত্য দেখছে । আমিও গেলুম ফোটো তুলতে । এমন সময় দেখি সুন্দর চেহারার এক সাঁওতাল তরুণী তনুজা'কে তাদের সাথে নাচার জন্য আহ্ববান করছে । আমাকে অবাক করে দিয়ে তনুজা রাজি হয়ে গেলো । সবাই হাত ধরাধরি করে গোল হয়ে দাঁড়ালো । ঢোল আর বাঁশির শব্দ হওয়া মাত্র নাচ আর গান শুরু হলো ।

সাঁওতালি রমনীদের হলুদ বাসন্তী রঙের শাড়ি পরা, মাথার চুলের খোঁপায় ফুল গোঁজা আর ঠিক ব্রম্মতালুর উপরে একটি ঝকমকে কাঁসা-পিতলের ঘট বসানো । সেই ঘটে আবার ফুল-লতা-পাতা দিয়ে সাজানো । মাথায় ওই ভারী ঘট নিয়েই নাচবে তারা । আশ্চর্য ব্যালেন্সিং ।

সাঁওতাল পুরুষদের পরনে পিরান বা গেঞ্জি, কোমরে লুঙ্গি, ধুতি বা গামছা । খালি পা । মাথার ঝাঁকড়া চুলে রঙিন গামছার পাগড়ি , আর তাতে পাখির পালক গোঁজা । বাদ্যযন্ত্র হাতে । কারো কাছে ঢোল, কারো কাছে করতাল আবার কারো কাছে বাঁশি ।

বাদ্যযন্ত্রের বাজনার তালে তালে প্রথমে শুরু হলো দেহাতি ভাষায় গান । সে এক অদ্ভুত গান । কথা বুঝিনি একটুও । কিন্তু, সুরে মাদকতা আছে ।প্রথম কলি গাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হলো সাঁওতালি নাচ । হাত ধরাধরি করে, হাত দুলিয়ে উপর নিচ করে, কোমর বিচিত্র ভঙ্গিতে নাচিয়ে শুরু হলো নাচ । পায়ের স্টেপগুলি দেখতে দারুন লাগছিলো । দেহমুদ্রা দারুন সুন্দর সবার । শুধুমাত্র আনাড়ি হলো তনুজা, আর তার মতো আরো দু'তিন জন শহুরে মেয়ে ।

দেখতে দেখতে নাচ বেশ জমে উঠলো ।


IMG_20220416_163240.jpg

IMG_20220416_163245.jpg

IMG_20220416_163249.jpg

IMG_20220416_163251.jpg

IMG_20220416_163324.jpg

IMG_20220416_163353.jpg

IMG_20220416_163401.jpg

IMG_20220416_163631.jpg

সোনাঝুরির হাটে আদিবাসী সাঁওতালিদের নাচ গানের কিছু খন্ড মুহূর্ত ক্যামেরা বন্দি করে রেখেছি । এদের মধ্যে তনুজাও আছে । খুঁজে বের করে নিতে হবে ।

তারিখ : ১৬ এপ্রিল ২০২২
সময় : দুপুর ৩ টা ৫৫ মিনিট
স্থান : শান্তিনিকেতন, বোলপুর, বীরভূম, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত ।


IMG_20220416_163710.jpg

IMG_20220416_163717.jpg

IMG_20220416_163752.jpg

IMG_20220416_163755.jpg

IMG_20220416_163759.jpg

নাচ গানের পরে এখন কিছুক্ষন বিশ্রামের পালা তাদের । এরপরে আবারো শুরু হবে নাচা-গানা । চলবে সেই সন্ধ্যে অব্দি ।

তারিখ : ১৬ এপ্রিল ২০২২
সময় : দুপুর ৪ টা ১০ মিনিট
স্থান : শান্তিনিকেতন, বোলপুর, বীরভূম, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত ।


ক্যামেরা পরিচিতি : OnePlus
ক্যামেরা মডেল : EB2101
ফোকাল লেংথ : ৫ মিমিঃ


Sort:  
 2 years ago 

দাদা যাই বলেন না কেন বৌদি কে লাগছে একেবারে হিরোইনের মত। মনে হচ্ছে সহ অভিনেত্রী দের কে নিয়ে কোন মুভির শুটিং করতে গেছে। সাঁওতাল মহিলাদের নাচের ভঙ্গি একটু ভিন্ন ধরনের। মেলার বিবরণ শুনে তো অবাক হয়ে গেলাম মনে হচ্ছে যে আদিবাসীদের মেলা। আরো বেশি অবাক হলাম করোনার ভিতর এক তৃতীয়াংশের মানুষের মুখে মাক্স নেই। দাদা বৌদির নাচ দেখেছেন অনুভূতি মনেহয় হয় অন্যরকম ছিল। আমাদের সাথে আপনার অনুভূতি গুলো শেয়ার করার জন্য, আপনার প্রতি রইল ভালোবাসা অবিরাম।

এখন মানুষজনের চলাফেরা করা দেখলে মনে হয় না করোনা বলে কোন ভাইরাস আমাদের অ্যাটাক করেছিল 🤪। অনেক মানুষের মাঝে যখন মাস্ক পরি তখন নিজেকেই বেমানান লাগে। আর সেখানে গ্রামগঞ্জে তো কথাই নেই। সাঁওতাল মেয়ে দের নাচ আমাকে সব সময় অবাক করে দেয়। মাথায় ঘট নিয়ে কিভাবে যে ব্যালেন্স করে ভগবান জানে। দিদিভাই যে ওদের ডাকে সাড়া দিয়েছিল এটা ভাবতেই তো বেশ মজা লাগছে 🥰। দারুন মজার ছিল ওই মুহূর্তটা নিঃসন্দেহে বলা যায়।

 2 years ago 

সাঁওতালি নৃত্যের ধারণকৃত ফটোগ্রাফি গুলো বেশ ভালোই হয়েছে, দাদা। সাঁওতালি রমণীদের এবং সাঁওতালি পুরুষদের পরিধানকৃত পোশাক বেশ অন্য রকম । শান্তিনিকেতনে গেলেই এই ব্যাপার গুলো সব সময় দেখা যায়। আমিও যখন শান্তিনিকেতনে করোনার সময় গেছিলাম অধিকাংশ মানুষের মুখে মাস্ক ছিলনা যা দেখে প্রথমে আমি ঘাবড়ে গেলও পরে সবকিছু মেনে নিয়েছিলাম।
image.png

 2 years ago 

আপনার পোস্টে যখন প্রথম হাটের কথা পড়েছিলাম তখন থেকেই এটি দেখার ইচ্ছে ছিল । তবে আপনি কিন্তু সবার থেকে আলাদা হয়ে বেশ কিছু খাবার চেখে দেখেছেন । যদিও তার ভেতর বেশিরভাগই ফল জাতীয় খাবার । গরমের সময় এই জাতীয় খাবার খেতে আপনার নিশ্চয়ই ভালো লেগেছে । বৌদিকে দেখে সবসময় খুব লাজুক মনে হয় । কিন্তু এখানে দেখি তিনি সাহস করে নাচতে শুরু করেছেন । সম্ভবত তাদের নাচ এবং গান বৌদির মনে ধরেছিল । ছবিগুলো খুব সুন্দর হয়েছে । ধন্যবাদ দাদা ।

This post has been upvoted by @italygame witness curation trail


If you like our work and want to support us, please consider to approve our witness




CLICK HERE 👇

Come and visit Italy Community



 2 years ago 

সাঁওতালি মেয়েরা এতগুলো কাঁসা-পিতলের ঘট মাথায় নিয়ে কিভাবে নাচে। এটি আশ্চর্যের বিষয়। এগুলো মাথা থেকে পড়ে যায় না? বৌদির নাচের ছবিগুলো বেশ চমৎকার হয়েছে। অনেক আনন্দ করেছে দেখেই বোঝা যাচ্ছে। তার থেকে বেশী আনন্দ পেয়েছেন আপনি এদের নাচ দেখে। আর এখনকার সময় লোকজন যেন মাস্ক পড়ার কথা ভুলেই গিয়েছে। রাস্তায় বেরোলে হাতে গোনা দুই একজনের মুখে মাস্ক দেখতে পাওয়া যায়।
খাবারের দোকানের সামনে গিয়ে কি কি চেখে দেখেছিলেন তা তো বললেন না।

 2 years ago 

দাদা আপনি খুবই আনন্দময় সময় পার করেছেন। বাদ্যযন্ত্রের সাথে সাথে শুরু হলো দেহাতি ভাষায় গান আর এই গানগুলো বোঝা খুবই কষ্টকর। আপনি গান গুলো বুঝতে পারছিলেন না তবে বাদ্যযন্ত্র তালে তালে শুনতে ভালই লাগতেছিলো। আসলে তাদের নাচ আমার ভালো লেগেছিল তার মাঝে বৌদিকে দেখতে পেয়ে আরো বেশী ভাল লাগল। গোলাপী এবং সাদা ড্রেস পরা বৌদি দেখে আমি চিনতে পেরেছি। খুবই আনন্দময় সময় পার করেছেন। সত্যিই এই মুহূর্তগুলো অনেক আনন্দের ছিল।

 2 years ago 

বৌদিভাই এর পোষ্টে কিছুটা পড়েছিলাম মনে পরে। দাদা তবে একটি কথা বলতে হয়। এই পৃথিবী হচ্ছে একটি রঙ্গমঞ্চ আর এই রঙ্গমঞ্চে আমরা যে যার অভিনয় করে যাচ্ছি। আমার মনে হয় পৃথিবীর সব দেশ বাদ দিলে ভারত দাড়িয়ে আছে এক বিশাল রঙ্গমঞ্চ নিয়ে। কত ভাষা কত ধর্ম কত বর্ন সত্যি ভারতের মাটিতে পা যে রাখেনি সে কখনও অনুধাবন করতে পারবে না। দু দুটো ঘট মাথায় নিয়ে কিভাবে ব্যালেন্স করে নাচে ওরা । অবাক করা বিষয়। আরো একটি নাচ দেখেছি দুটো দুটো মোট চারটে বাঁশের মাঝে নাচ। ওটার নাম মনে পড়ছে না।যদিও আমি শান্তিনিকেতনে গিয়েছি তবে সে তো ছোট বেলায়। অনেক পরিবর্তন হয়েছে। ভাল থাকবেন দাদা শুভেচ্ছা ও ভালবাসা নিবেন।

 2 years ago 

ইশ,আপনারে যদি একটু ঢোল বাজাতে দিত,আমরা দেখতে পারতাম কেমন পারেন আপনি 😉😉।যাই হোক কেমনে যে এরা কাঁসা-পিতলের ঘট মাথায় দিয়ে নাচে।বৌদিকে অনেক সুন্দর লাগছে।ভিডিও দেখতে পারলে ভালো লাগতো।বৃষ্টির জলে ক্ষয়ে ক্ষয়ে এত বড় খাত হয়,অবাক লাগলো একটু।ধন্যবাদ

 2 years ago (edited)

শান্তিনিকেতন ঘুরতে গেলে সোনাঝুড়ির হাট মাস্ট ভিজিট প্লেস। তাছাড়া সোনাঝুড়ির হাটের বেশ নামও রয়েছে। আমার যাওয়ার খুব ইচ্ছে, কবে হয় সেটাই দেখার।

কলকাতাতেই আর কেউ মাস্ক পড়েনা আর ওটা তো গ্রাম। এমনিও যা বাজে গরম মাস্ক পড়লে জীবন শেষ। দাদা তোমরা যে সময়টা গেলে সে সময়টায় রীতিমতো দাবহাদ চলছিলো, মাস্ক পড়ে থাকলে কিভাবে!?

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.13
JST 0.027
BTC 60340.89
ETH 2615.66
USDT 1.00
SBD 2.56