স্টিমিটে আপনার একাউন্টের নিরাপত্তার A টু Z - এপিসোড ০৩
কপিরাইট ফ্রী ইমেজ সোর্স : Pixabay
স্টিমিট এর পাসওয়ার্ড এবং কীগুলোর (keys)সুরক্ষিত স্থানে সংরক্ষণ
স্টিমিটে পাসওয়ার্ড এবং কী (key) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়ে থাকে । অন্যান্য প্ল্যাটফর্ম গুলিতে ফরগেট পাসওয়ার্ড নামে একটা ফিচার থাকে যার মাধ্যমে আপনারা অতি সহজেই লস্ট পাসওয়ার্ড রিকোভারি বা একাউন্ট একসেস রিকোভারি করতে পারেন । কিন্তু, স্টিমিট একটি ডিসেন্ট্রালাইজড এবং ব্লকচেইন ভিত্তিক প্লাটফর্ম হওয়াতে এখানে সে ধরণের কোনো ফিচার উপলব্ধ নেই ।
যতক্ষণ আপনার স্টিমিট একাউন্টের পাসওয়ার্ড এবং কীগুলো আপনার কাছে আছে ততক্ষণই আপনি আপনার স্টিমিট আইডিটার প্রকৃত মালিক । যখনই কেউ আপনার পাসওয়ার্ড অথবা কীগুলো চুরি করতে সমর্থ হবে সেই মুহূর্ত থেকে সেই হবে আপনার স্টিমিট একাউন্টটার মালিক ।
যেহেতু স্টিমিট এ পাসওয়ার্ড রিকভারির সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ এবং খুবই জটিল একটা প্রসেস সেহেতু আপনার চুরি যাওয়া একাউন্টটি আর ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে । এজন্য আপনার স্টিমিট একাউন্টের পাসওয়ার্ড এবং কী গুলো অত্যন্ত সুরক্ষিতভাবে সংরক্ষণ করা উচিত ।
এখন আসুন দেখে নেওয়া যাক কীভাবে আপনার স্টিমিট একাউন্টটির পাসওয়ার্ড এবং কীগুলো কি ভাবে সংরক্ষণ করবেন ?
০১. স্টিমিটের কী এবং পাসওয়ার্ড বোঝা : পাসওয়ার্ড এবং কী সংরক্ষণের আগে এটা জানা দরকার কোনো কীর কি কাজ ? কোন কীর গুরুত্ব কতটুকু ? মাস্টার পাসওয়ার্ড আর কী-র মধ্যে পার্থক্য । তো চলুন জেনে নেওয়া যাক ।
স্টিমিটে আপনি যখন একাউন্ট create করেন তখন আপনাকে একটা পাসওয়ার্ড দিতে বলা হয়ে থাকে । এটাই মাস্টার পাসওয়ার্ড । এই মাস্টার পাসওয়ার্ড দ্বারাই সিস্টেম অটোমেটিক্যালি কিছু কী জেনারেট করে থাকে । একাউন্ট ওপেন হওয়ার সাথে সাথেই আপনাকে একটা পিডিএফ ডাউনলোড করতে বলা হয়ে থাকে । এই পিডিএফ এর মধ্যেই আপনি যাবতীয় প্রাইভেট এবং পাবলিক কীগুলো পেয়ে যাবেন ।
(i) মাস্টার পাসওয়ার্ড : এই মাস্টার পাসওয়ার্ড দিয়েই আপনি আপনার স্টিমিট একাউন্টটি খুলেছিলেন । এবং এই পাসওয়ার্ড দ্বারাই বাকি সব কী গুলো জেনারেট করা হয়েছে । এই মাস্টার পাসওয়ার্ড এর গুরুত্ব অপরিসীম । কোনো ভাবে এই পাসওয়ার্ড যদি কেউ পেয়ে যায় তাহলে আপনার স্টিমিট একাউন্টটি তার দখলে চলে যাবে তখন । এই মাস্টার পাসওয়ার্ড দিয়ে পাসওয়ার্ড রিসেট করে নতুন পাসওয়ার্ড দিতে পারবেন । এর ফলে বাকি কীগুলো অটোমেটিক্যালি চেঞ্জ হয়ে যাবে ।
(ii) ওনার প্রাইভেট কী : ওনার প্রাইভেট কী হলো আপনার স্টিমিট একাউন্টের ওনারশিপ প্রমাণের কী । এই কী আপনার হাতে থাকার অর্থ আপনি আপনার স্টিমিট একাউন্টটির প্রকৃত মালিক । যে এই কী হাতিয়ে নেবে একাউন্টের মালিকানাও তার হাতে চলে যাবে । এই কী দিয়ে মাস্টার পাসওয়ার্ড এবং ওনার কী সহ যাবতীয় কী চেঞ্জ করা যাবে ।
(iii) এক্টিভ প্রাইভেট কী : এক্টিভ প্রাইভেট কী হলো যাবতীয় ফাইনান্সিয়াল কাজগুলো সম্পাদনের চাবি । এই কী ব্যবহার করে স্টিম ও এসবিডি ট্রান্সফার, পাওয়ার আপ, ইন্টারনাল মার্কেটে স্টিম/এসবিডি ট্রেডিং, পাওয়ার ডাউন, সেভিংস ওয়ালেটে ফান্ড ট্রান্সফার, সেভিং ওয়ালেট থেকে ফান্ড উইথড্র, পাওয়ার ডেলিগেশন করা, ডেলিগেশন ক্যানসেল করা এই কাজগুলি সম্পাদন করা হয়ে থাকে ।
(iv) পোস্টিং প্রাইভেট কী : পোস্টিং প্রাইভেট কী দিয়ে আপনি পোস্ট করা, এডিট করা, ডিলেট করা, রিস্টিম করা, পিন করা ,কমেন্ট করা, রিপ্লাই দেওয়া, আপভোট/ডাউনভোট দেওয়া, পোস্ট মিউট/আনমিউট করা, রোল ও ট্যাগ প্রদান করা এইসব কাজগুলি করতে পারবেন ।
(v) ট্রন প্রাইভেট কী : ট্রন প্রাইভেট কী দিয়ে আপনি আপনার স্টিমিট ওয়ালেটের ট্রন ওয়ালেট থেকে ফান্ড ট্রান্সফার করতে পারবেন । এছাড়াও ট্রন ষ্টেকিং/আনষ্টেকিংও করতে পারবেন ।
মোটামুটি এই হলো আপনার যাবতীয় স্টিমিট পাসওয়ার্ড এবং প্রাইভেট কী । পাবলিক কীগুলো আপনি ওপেনলি শেয়ার করতে পারবেন । কিন্তু, প্রাইভেট কীগুলো কোনো অবস্থাতেই রিভিল করবেন না বা কারোর সাথে শেয়ার করবেন না ।
০২. মাস্টার পাসওয়ার্ড এবং ওনার প্রাইভেট কী সংরক্ষণ : যেহেতু এই দুটি কী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তাই আমি রেকমেন্ড করবো এই দুটো কী অফলাইনে সেভ রাখতে । অনলাইনেও সেভ রাখতে পারেন, তবে সেক্ষত্রে কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্টেপ নিতে হবে আপনাকে ।
(i) অফলাইনে সেভ (প্রিন্টেড কপি) : প্রথমে পিডিএফ টি প্রিন্ট করে নিন ল্যাপটপ এবং প্রিন্টার দুটোই অফলাইনে রেখে । কোনো সাইবার ক্যাফে, অফিস বা বাইরের কারো প্রিন্টার ইউজ করবেন না । সম্পূর্ণ নিজের ব্যক্তিগত প্রিন্টারে প্রিন্ট করবেন । একাধিক কপি প্রিন্ট করবেন । এরপরে সেগুলিকে আলাদা আলাদা ফাইলে রেখে বাড়িতে একাধিক লকারে রাখুন । এবং বাকি কপি গুলো আপনার একাধিক ব্যাংকের লকারে সেভ রাখুন ।
(ii) অফলাইনে সেভ (ডিজিটাল কপি) : কমপক্ষে দু'টি এক্সটার্নাল হার্ডডিস্ক অথবা পেনড্রাউভ কিনুন । এবার সেগুলো খুব ভালোভাবে ফরম্যাট করুন । ফরম্যাট করার পরে পিডিএফটির ডিজিটাল কপিটি ট্রান্সফার করুন । এরপরে, কয়েকবার কানেক্ট ডিস্কানেক্ট করে ভালোভাবে দেখে নিন পিডিএফটি সঠিকভাবে সংরক্ষিত আছে কি না । সব শেষে বাড়ির লকারে একটি আর ব্যাংকের লকারে আরেকটি আপনার এক্সটার্নাল হার্ডডিস্ক অথবা পেনড্রাইভটি রেখে দিন ।
(iii) অনলাইনে সেভ : অনেকভাবে সেভ রাখতে পারেন ।
এক. Winrar ইনস্টল করে নিন । পিডিএফটি একটা আর্কাইভে অ্যাড করে নিন । একটা স্ট্রং পাসওয়ার্ড সেট করুন ওই আর্কাইভে । আপনার হার্ডডিস্কে এক কপি আর আপনার গুগল ড্রাইভ অথবা ওয়ান ড্রাইভে আরেকটা কপি সেভ রাখুন ।
দুটি ক্ষেত্রেই খেয়াল রাখবেন যাতে আপনার জিমেইল বা লাইভ মেইলটি Two Factor Authentication দ্বারা প্রোটেক্টেড আছে ।
দুই. যে কোনো একটি শক্তিশালী ফাইল ভল্ট সফটওয়্যার ইনস্টল করে নিন । এই ধরণের ডাটা এনক্রিপশন টুল প্রচুর আছে । যেমন - Kaspersky Data Encryption Tool, Windows BitLocker, VeraCrypt, DiskCryptor, File & Password Vault
ইত্যাদি । ফাইল ভল্টে একটি শক্তিশালী পাসওয়ার্ড দিয়ে আপনার পিডিএফটি সেখানে সংরক্ষণ করুন ।
০৩. এক্টিভ প্রাইভেট কী, পোস্টিং প্রাইভেট কী এবং ট্রন প্রাইভেট কী সংরক্ষণ : উপরোক্ত তিনটি পদ্ধতিতেই আপনি আপনার স্টিমিটের যাবতীয় কীগুলি সংরক্ষণ করতে পেরেছেন । এরপরেও আলাদা করে বাকি কী গুলো সংরক্ষণ করা দরকার । কারণ এই কী গুলো প্রায় প্রতিনিয়ত আমাদের ব্যবহার করতে হয় । এবং সেটা অনলাইনে । এ জন্য আপনি কখনোই আপনার ব্রাউজার-এ এই কীগুলো সেভ রাখবেন না ।
বর্তমানে প্রচুর অফলাইন পাসওয়ার্ড ম্যানেজার টুল পাওয়া যায় । এখন প্রায় প্রত্যেকটা এন্টিভাইরাস এর প্রিমিয়াম ভার্শনে একটা করে শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ম্যানেজার থাকে । যেমন - Bitdefender Password manager, Eset Smart Security Password manager, Kaspersky Password manager ইত্যাদি । এসব পাসওয়ার্ড ম্যানেজারে আপনার এক্টিভ প্রাইভেট কী এবং পোস্টিং প্রাইভেট কী সেভ রাখতে পারেন । খুব securely ওয়েতে আপনি স্টিমিটের যাবতীয় কাজ করতে পারবেন এই ধরণের Password manager ইউজ করে ।
এছাড়াও আপনি চাইলে STEEM KEYCHAIN ইউজ করতে পারেন । এটি একটি ক্রোম এক্সটেনশন । খুব সিকিউর ওয়েতে আপনার কীগুলো ইউজ করতে পারবেন এই STEEM KEYCHAIN দিয়ে । google web store -এ STEEM KEYCHAIN দিয়ে সার্চ করলে এক্সটেনশনটা পেয়ে যাবেন ।
আর বাকি থাকলো ট্রন প্রাইভেট কী । গুগল ক্রোম এ tronlink ইনস্টল করে tron private key টা ইম্পোর্ট করে ট্রন ওয়ালেটটা চালু করে নিন । মোবাইলের ক্ষেত্রে Trust Wallet app টা ইনস্টল করে tron private key টা ইম্পোর্ট করে ট্রন ওয়ালেটটা চালু করে নিতে পারেন ।
পরিশিষ্ট
প্রতিদিন ৪২৫ ট্রন করে জমানো এক সপ্তাহ ধরে - ৪র্থ দিন (425 TRX daily for 7 consecutive days :: DAY 04)
সময়সীমা : ১৬ অক্টোবর ২০২২ থেকে ২২ অক্টোবর ২০২২ পর্যন্ত
তারিখ : ১৯ অক্টোবর ২০২২
টাস্ক ৯৫ : ৪২৫ ট্রন ডিপোজিট করা আমার একটি পার্সোনাল TRON HD WALLET এ যার নাম Tintin_tron
আমার ট্রন ওয়ালেট : TTXKunVJb12nkBRwPBq2PZ9787ikEQDQTx
৪২৫ TRX ডিপোজিট হওয়ার ট্রানসাকশান আইডি :
TX ID : 2506004b3a9c5ae2689e74417d9af11e4bd5863aee55f8833dfdea339b87b413
টাস্ক ৯৫ কমপ্লিটেড সাকসেসফুলি
Account QR Code
VOTE @bangla.witness as witness
OR
দাদা এই পোস্টটা অনেক মনোযোগ দিয়ে পড়েছি।আসলে আমাদের সকলের এসব বিষয়ে মনোযোগ দেওয়াটা খুবই জরুরি।এতো কষ্টের অর্জিত জায়গাটা এতো দ্রুত হারিয়ে যেতে দেওয়াটাই যাবেনা।তাই সবার ক্লিয়ার হওয়া উচিত আর সচেতনতা বৃদ্ধি করা উচিত।
This post has been upvoted by @italygame witness curation trail
If you like our work and want to support us, please consider to approve our witness
Come and visit Italy Community
Hi @rme,
my name is @ilnegro and I voted your post using steem-fanbase.com.
Come and visit Italy Community
দাদা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আপনি খুবই সুন্দরভাবে কি এগুলো আমাদের বুঝিয়ে দিলেন। কোন কী দিয়ে কি কি কাজ হয়। সেগুলো বুঝিয়ে দিলেন এবং কিভাবে গুলো আমাদের সংরক্ষণ করতে হবে তা খুবই ভালো ধারণা দিলেন। এই পোস্টটি পড়ে খুবই ভালো লাগলো এবং অনেক কিছু জানতে পারলাম এবং আমাদের পাসওয়ার্ড কী গুলো কিভাবে সংরক্ষণ করব তা ভালোভাবে বুঝতে পারলাম।
অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে জানতে পারলাম আজকের এই পোস্টে STEEM KEYCHAIN একটি রিভিউ কিংবা এর ডিটেইলস ব্যবহার সম্পর্কে জানতে চাই।
দাদা আমাদের স্টিমিট একাউন্টটির ১০০% নিরাপ্তার জন্য আজকের এপিসোডটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মাস্টার পাসওয়ার্ড সহ অন্যন্য কী গুলো যতক্ষন সেইব থাকবে ততক্ষন একাউন্টের মালিক আমি। আর বর্তমানে অনেক বড় বড় হ্যাকার বাহির হয়েছে। তাদের থাবা কখর কার উপর পড়ে সেটা বলা যায় না। তাই আমাদের আপনার দেওয়া নির্দেশনা গুলো মানা খুবই জরুরী। ধন্যবাদ দাদা।
আসলে দাদা আমাদের অ্যাকাউন্ট ভ্যালু খুব বেশি না থাকায় আমরা বেশিরভাগ মানুষই এত গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করি না। তবে আপনার পোস্ট পড়ার পর বুঝতে পারছি আমাদের এই ব্যাপারে আরও অনেক সতর্ক হওয়া দরকার। চমৎকারভাবে নিরাপত্তা বিষয়ক বিষয়গুলো বর্ণনা করেছেন। আশা করি সকলে অনেক উপকৃত হবে।
আসলে আপনি যে ব্যাপারগুলো উল্লেখ করেছেন , তা প্রত্যেকটাই বেশ যুক্তিযুক্ত । তবে তার ভিতরে যে যেভাবে সহজ বুদ্ধিটা বেছে নিয়ে নিজের একাউন্টের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে , সেটাই তো বুদ্ধিমানের কাজ হওয়া উচিত । একদম সময় উপযোগী উপদেশ ও পরামর্শ ছিল ভাই ।
দাদা আপনার স্টিমিটে আপনার একাউন্টের নিরাপত্তার A টু Z - এপিসোড ০৩ পর্বটি পড়ে আমার বাংলা ব্লগের সকল ইউজার অতি সহজেই অনুধাবন করতে পারবেন কি সংরক্ষণের বিষয়গুলো। সত্যি দাদা আপনাকে ধন্যবাদ দেয়ার ভাষা নেই। আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির ইউজারদের সেভ করার জন্য আপনি প্রাণপণের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল দাদা।