ছোট গল্প - "সোনার পাহাড়ের পাখি" || ( ১০%লাজুক খ্যাকের জন্য)
আসসালামু আলাইকুম
আমার প্রিয় বন্ধুরা,
আমি@ripon40 বাংলাদেশের নাগরিক
- সোনার পাহাড়ের পাখি
- ১৭, মে ,২০২২
- মঙ্গলবার
আপনারা সবাই কেমন আছেন। আশাকরি আল্লাহর রহমতে ভালোই আছেন। আমিও ভালো আছি। আজ আমি "সোনার পাহাড়ের পাখি " গল্প শেয়ার করছি । আশাকরি আপনাদের কাছে ভালো লাগবে।
আমি মনে করি গল্প মানেই কোন বাস্তব চরিত্র বা ঘটনার সাথে পরিচিত হওয়া।জীবনের ইতি হয়ে যাবে কিন্তু থেকে যাবে স্মৃতি বিজরিত অতীত বা জীবনের গল্প। বেশিরভাগ মানুষ জীবনের বাস্তবতা উপলব্ধি করার চেষ্টা করে নাহ।আমি গল্প পড়তে পছন্দ করি কারণ বাস্তবতার সাথে নিজেকে বিলিয়ে দিতে পারি।জীবনে লুকিয়ে থাকা ঐতিহাসিক বড় ঘটনা গুলোই হলো অনেক বড় গল্প।বাস্তব জীবনের সাথে জড়িত জীবন চিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরা হলো।
গল্প - সোনার পাহাড়ের পাখি
একদা দুই ভাই শৈশবে তাদের পিতা - মাতাকে হারায় । তাদের সামান্য কিছু জমিজমা ছিল । তার আয় দিয়ে কোনোরকমে দিন জীবন - যাপন করতে লাগল তারা । তারপর তারা যখন বড় হলো তখন বড়ভাই সম্পত্তি ভাগাভাগির কথা তুললো । বড় ভাইটি ছিল লোভী ও স্বার্থপর । কিন্তু ছোট ভাইটির কোনো লোভ লালসা ছিল না । বড় ভাই লোভের বশবর্তী হয়ে অল্প যা কিছু পৈতৃক বিষয় সম্পত্তি ছিল তা নিয়ে নিল । তার ছোট ভাইকে দিল ছোট একটি কুঁড়েঘর আর সেই ঘরের উঠোনের ছোট একটি চারাগাছ ।
ছোট ভাই বিয়ে করে সেই কুঁড়েঘরে বাস করতে লাগল । তারা সন্তুষ্টচিত্তে সংসার করতে লাগল । ছোট ভাই সকাল হলেই কাজ করতে যেত আর তার স্ত্রী সেই গাছটিতে পানি ও সার দিত এবং খুব যত্ন করত গাছটিকে । দেখতে দেখতে থোকা থোকা ফল ধরল গাছটিতে । কিন্তু ফলগুলো না পাকতেই কোথা থেকে একটি বিরাট পাখি এসে সেই ফলগুলো খেতে লাগলো । ছোট ভাই ও তার স্ত্রী গাছের তলায় পাখিটার ফল খাওয়া দেখত । কিন্তু পাখিটাকে তাড়াবার জন্য ঢিল ছুঁড়তে পারত না । কারণ তারা ভাবলো ঢিল ছুঁড়ে পাখিটাকে তাড়াতে গেলে ফলের ক্ষতি হবে । পেট ভরে ফল খেয়ে আপনা থেকে কোথায় উড়ে যায় পাখিটা ।
একদিন পাখিটা যখন গাছে ফল খাচ্ছিল ছোট ভাই ও তার স্ত্রী গাছের তলা থেকে তা দেখছিল । তাদের দেখে পাখিটা মানুষের গলায় বলল কী ব্যাপার আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছ কেন ? পাখির গলায় মানুষের কথা শুনে তারা আশ্চর্য হল । ক্রমে তারা পাখির সামনে গিয়ে বলল , এই গাছটা আমাদের । আমরা অনেক যত্ন করে এটিকে বড় করেছি , কিন্তু এর একটা ফলও আমরা পাই না । তুমিই সব ফল খেয়ে যাও । তখন পাখি বলল এর জন্য তোমায় ভাবতে হবে না । প্রতিটি ফলের জন্য আমি তোমাদের তিন আউন্স করে সোনা দেব । আগামীকাল একটা বড় থলে আনবে তাতে যত খুশি সোনা আনবে । ছোট ভাই ও তার স্ত্রী একটা বড় থলে সেলাই করে রাখল । পরদিন পাখি এসে ছোট ভাইকে বললো আমার পিঠে চড়ে বস ।
আমি তোমাকে নিয়ে যাব বহুদূরে এক সোনার পাহাড়ে । ছোট ভাই তার পিঠের ওপর বসলে পাখিটা উড়তে শুরু করল । অনেক পাহাড় পর্বত , প্রান্তর ও নদী সমুদ্র পার হয়ে অবশেষে পৌঁছল একটা খাঁটি সোনার পাহাড়ে । সেখানে কোনো পাথর নেই । পাথর এর পরিবর্তে শুধু সোনার তাল আর হীরের টুকরো । পাখিটা বলল তোমার থলে যত ধরবে তত সোনা ও হীরা ভরে নাও । তারপর তোমাকে বাড়ি পৌঁছে দেব । থলে ভর্তি হলে ছোট ভাইকে পিঠে করে বাড়ি পৌঁছে দিল । প্রচুর ধনরত্ন পেয়ে ছোট ভাই ধনী হয়ে গেল । সেই কুঁড়েঘর ও গাছটা রেখে দিয়ে পাশে একটা বড় পাকাদালান ঘর তৈরী করল । ছোট ভাই এর ধনসম্পদ দেখে আশ্চর্য হলো বড় ভাই । বিরাট বাড়ি , চাকর , দামি খাবার দেখে সত্যি সত্যিই অবাক হলো বড় ভাই । প্রচুর ভালো খাবার দেওয়া সত্ত্বেও বড় ভাই ও তার স্ত্রী কিছুই খেল না । ঈর্ষায় জ্বলে যাচ্ছিল তাদের গা।
বড় ভাই ছোট ভাই এর কাছ থেকে এর রহস্য জানতে চাইলে তারা সব খুলে বলে । বড় ভাই বলল যে কোনো দামে আমাকে তোমার কুঁড়েঘর আর গাছটা দাও । ছোট ভাই বলল , দাম দিতে হবে না , এই ঘর ও গাছ এমনিতেই নাও । পরদিন থেকে তারা সেই ঘরে থাকতে শুরু করল । আর সেই গাছটার যত্ন করতে লাগলো । বছর খানেক পর গাছে ফল ধরল । পাখিটা আবার ফল খেতে এল । গাছের তলায় বড় ভাই ও তার স্ত্রীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলে পাখিটা বলল , এই গাছটা তোমাদের । বড় ভাই বলল , হ্যাঁ গাছটি আমাদের । পাখিটা বলল , কাল একটা থলে আনবে তাতে যত সোনা ধরবে আনবে । পরদিন বড় ভাই দুটো থলে যোগাড় করে রাখল । তার লোভ লালসা অনেক বেশি । পাখিটা যথাসময়ে এসে বড় ভাইকে তার পিঠে চেপে বসতে বললে তার স্ত্রী ও যেতে চাইল সোনার পাহাড় দেখতে ।
দু'জনে দুটো থলে নিয়ে পাখির পিঠে চেপে বসল । পাখিটা কিছু বলল না সে উড়তে শুরু করল । পাখিটা সোনার পাহাড়ে গিয়ে পৌঁছালে বড় ভাই ও তার স্ত্রী দুটো থলেতে যত পারল সোনা ও হীরা ভরে নিল । থলে দুটো অনেক ভারী হয়ে গেল । তারা যখন বাড়ি ফেরার সময় দুটো থলে নিয়ে পাখির পিঠে চেপে বসল তখন পাখির উড়তে অনেক কষ্ট হচ্ছিল । তবুও অতি কষ্টে পাখিটা উড়তে লাগলো । অর্ধেক পথে পাখিটা এত বোঝা সহ্য করতে না পেরে পাখি তখন তার সব বোঝাই পিঠ থেকে ফেলে দিল । বড় ভাই ও তার স্ত্রী তাদের অতি লোভের ফলে ধন ও জীবন দুই হারাল ।
আশাকরি গল্পটি আপনারা পড়বেন। গল্প পড়তে আমি খুবই পছন্দ করি। যেটা প্রায়ই পড়া হয়ে থাকে ভালো লাগে পড়তে।গল্প পড়া মানেই নতুন কোন কিছু ঘটছে তার সাথে পরিচিত হওয়া। আমার লেখা গল্প পড়ে ভালো লাগলে নিশ্চয় মতামতের মাধ্যমে জানাতে ভুলবেন নাহ।
প্রথম গল্প:-গোয়েন্দা রহস্য গল্প - "এলাচির উইল"( শেষ পর্ব) |
source |
দ্বিতীয় গল্প:-ছোট গল্প - "অশ্রুর তির্থস্থানে একদিন"( শেষ পর্ব) |
source |
আমার পোষ্ট দেখার জন্য আপনাদের অনেক ধন্যবাদ। আমি আশা করছি আপনারা সবাই আমার পোষ্ট উপভোগ করবেন এবং আপনারা সবাই আমাকে অনুপ্রাণিত করবেন
বিভাগ | ছোট গল্প । | |
---|---|---|
বিষয় | ছোট গল্প - "সোনার পাহাড়ের পাখি") | @ripon40 |
গল্প তৈরি করার অবস্থান | লিংক |
ধন্যবাদ সবাইকে
আমি মোঃ রিপন মাহমুদ। আমার স্টীমিট একাউন্ট@ripon40। আমি একজন বাঙালি আর আমি বাঙালী হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ব বোধ করি। আমি স্টীমিটকে অনেক ভালোবাসি। ভালোবাসি পড়তে, লিখতে, ব্লগিং,ফটোগ্রাফি,মিউজিক,রেসিপি ডাই আমার অনেক পছন্দের। আমি ঘুরতে অনেক ভালোবাসি। আমার সবচেয়ে বড় গুণ হলো কারোর উপর রাগ করলে সহজেই ভুলে যাই।
অনেক সুন্দর ও শিক্ষনীয় একটা গল্প লিখেছেন ভাইয়া। আমাদের সবারই আসলে ছোট ভাইটির মত নির্লোভ হওয়া উচিত। কথায় যেমন আছে লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু। পরিনতি আসলে এটাই। লোভ কখনো ভাল কিছু বয়ে আনেনা। জীবনকে জীবনের মত চলতে দেওয়া উচিত। এত সুন্দর গল্প শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ ভাইয়া।
হ্যাঁ আপু সবারই উচিত লোভ লালসা থেকে দূরে থাকা মানুষের বিপদের দিকে ঠেলে দেয় সেটা কোনভাবেই কাম্য নয় গল্পটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
ছোটবেলায় যখন প্রাইমারি স্কুলে পড়তাম তখন কাঠুরের একটি গল্প পড়েছিলাম যেটাতে লোভের পরিণতি কী সেটা প্রকাশ পেয়েছিল। আবার সততার ফল হিসেবে এই গল্প থেকে একটা শিক্ষা লাভ করা যায়।
আপনার প্রতিভা তুলে ধরার জন্য অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।
হ্যাঁ ভাই সেই গল্পটি আমি করেছি অনেকবার যেটা পড়তে খুবই পছন্দ করতাম সে সময় মনে হতো জলপরী ও কাঠুরিয়ার গল্প বাস্তব ছিল কিন্তু আসলে সেটা গল্প এটা বুঝে উঠতে পারছিলাম না।
বাহ বেশ ভালো লিখেছেন তো আপনি । গল্প থেকে আমাদের একটি শিক্ষা নেওয়া উচিত । কারণ কখনো বেশি লোভ করা ঠিক নয় । বড় ভাই ও তার স্ত্রী বেশি লোভের কারণে তারা জীবন ও সোনা দুইটি হারালো ।
শিক্ষনীয় আর উদ্দেশ্য করে এই গল্পটি লেখা হয়েছে আসলে মানুষের লোভ-লালসা তার বিপদের দিকে ঠেলে দেয় তাই শিক্ষা নেয়া উচিত।
গল্পের জগতে লোভ নিয়ে লেখা ,বলা ও অনেক গল্প কাহিনীর কথা উল্লেখ আছে। তার মধ্যে আপনার এই গল্পটি সেই সারিতে নতুন করে যোগ দিয়ে সাহিত্যকে একধাপ বাড়িয়ে দিল ।আশা করি বুঝতে পেরেছেন। এভাবেই এগিয়ে যান।
হ্যাঁ গল্পের জগতে লোভ নিয়ে লেখা অনেক ধরনের গল্প রচিত আছে আমিও চেষ্টা করলাম আলাদাভাবে একটা গ্রুপে পোস্ট আপন করা সুন্দর মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ ।
আপনার চেষ্টা কে স্বাগত জানাচ্ছি।
গল্পটা লোভে মানুষের জন্য শিক্ষনীয়। বেশি লোভের পরিণাম সবসময়ই মৃত্যু। যেমনটা গল্পের বড় ভাই এবং তার স্ত্রীর ক্ষেএে দেখা গেল। অনেক সুন্দর একটি গল্প লিখেছেন ভাই। ধন্যবাদ আমাদের সাথে শেয়ার করে নেওয়ার জন্য।
হ্যাঁ বেশি লাভের পরিমাণ সবসময় মৃত্যু যেটা কোনোভাবেই কাম্য নয় তাই অতি লোভে তাঁতি নষ্ট সবাইকে সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে।
অসাধারণ একটি গল্প লিখেছেন গল্পটা ভালো লাগলো সামনে দিন আরো সুন্দর সুন্দর গল্পের আশায় থাকলাম ধন্যবাদ আপনাকে।
গল্প সব সময় অসাধারণ হয় আপনার মন্তব্যটি ভাল লেগেছে ধন্যবাদ আপনার সুগঠিত মতামত পেশ করার জন্য।
ভাই সত্যি আপনি জিনিয়াস না হলে কেউ কি এত সুন্দর ছোট গল্প লিখতে পারে। পড়ে খুবই ভালো লাগলো আপনার জন্য শুভকামনা রইল।
কি যে বলেন ভাইয়া এই ধরনের সিম্পল গল্প আপনিও লিখতে পারবেন চেষ্টা করুন আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা।
তারপরও আপনি প্রফেশনাল হয়ে গেছেন গল্প লেখায়
তাই নাকি আপনিও থেকে গভীর মনোভাব নিয়ে লেখার চেষ্টা করেন আপনার মধ্যে অনেক প্রতিভা লুকিয়ে আছে সেটা প্রকাশ করছেন না।
ইনশাল্লাহ ভাই চেষ্টা করব একদিন আপনার মত গল্প লেখার।
গল্প গুলো পড়বেন সেটা থেকে অনেক কিছুই জানতে পারবেন আসলে চিন্তাভাবনার বহিরপ্রকাশ এই হল গল্প সেজন্য মানুষের চলাফেরা এবং নিত্যদিনের বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারলেই গল্প লিখতে পারবেন।
সত্যিই আপনার লেখা গল্পটি পড়ে খুব ভালো লাগলো আপনি খুব চমৎকার গল্প আমাদের মাঝে উপস্থাপন করেছেন। আসলে লোভে পাপ পাপে মৃত্যু। চাহিদা একটা নির্দিষ্ট সীমানা থাকা দরকার। এত অসাধারন পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই।
গল্পটি থেকে অনেক কিছু শেখার আছে ভাই সেটাই অনেক বড় পাওয়া যাই হোক সবাইকে লোভ লালসা থেকে একটু দূরে থাকাই উচিত।