কিছুক্ষণের জন্য শৈশবে হারিয়ে যাওয়া।
শুভ সকাল বন্ধুরা। কেমন আছেন সবাই? আমাদের কমিউনিটিতে যারা কাজ করে তাদের বেশিরভাগই ১৮ প্লাস। শৈশব পার করে এসেছে সবাই। রেখে এসেছে বহু স্মৃতি। স্মৃতিগুলো স্মৃতির ফ্রেমে বাঁধানো আছে এখনো। মনে পড়ে মাঝে মাঝে। হাতছানি দিয়ে ডাকে সেই গোল্ডেন বয়স। ছেলেবেলার চেয়ে মধুর সময় আর কি পাওয়া যায় কখনও ? সবার স্মৃতিতেই মিশে আছে তার নিজ নিজ উচ্ছল শৈশব । যে যত বড়ই হয়ে যাক না কেন তার ভেতরে ছোটবেলার সেই মধুর মুহূর্তগুলো ঠিকই ঘোরাফেরা করে।
নব্বই দশকের ছেলে-মেয়েদের ছিল সোনালী শৈশব। ছোটবেলায় বাড়ি বাড়ি থেকে পিকনিকের চাউল তুলে ডিম ভুনা আর আলু ভর্তা করে কলার পাতায় খাওয়া, বন্ধুদের সাথে লাটিম ঘুরানো, বড়শি নিয়ে মাছ ধরতে যাওয়া, ডুমুরের ফল আর আম পাতা দিয়ে গাড়ি বানানো, কাদামাটি দিয়ে খেলনা বানানো, বিকেলে মাঠে গিয়ে গোল্লাছুট, বৃষ্টি এলেই কাদা মাটিতে ফুটবল নিয়ে নেমে পড়া, ক্রিকেটের ব্যাট নিয়ে মাঠে ছুটে চলা, বিকেলবেলায় লাটাই ঘুড়ি নিয়ে সবাই একসাথে মাঠে ঘুড়ি উড়ানো, ঝিনুক ঘষে ছুরি বানিয়ে আম ছুলে খাওয়া, পটকা ফাটানো, মিথ্যে বন্দুক দিয়ে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা, মাঠের খ্যর একত্রিত করে বাসা বানিয়ে লুকিয়ে থাকা, তিলের ফুলে মৌমাছি ঢুকলে ফুল আটকে ধরা, চোর-পুলিশ, কলম ছুড়াছুঁড়ি, কুতকুত, লুকোচুরি, দৌড়ে গিয়ে পুকুরে ঝাঁপ দেওয়া, কিছুদিন পরপর পাখির বাসার ডিমের খোঁজ নেওয়া, ঘেমে-নেয়ে বাড়ি এসে মায়ের হাতের মার খাওয়া। আরো কত কি!!!!!! আহ্ কতই না সুন্দর ছিল দিনগুলি। ওই দিনগুলোর কথা চিন্তা করলে কোথায় যেন হারিয়ে যাই।
গতকাল বিকেলে বাড়িতে গরম লাগছিল তাই চিন্তা করলাম একটু মাঠের দিক থেকে ঘুরে আসি। আমাদের বাড়ির পাশে একটি মাঠ আছে। সে মাঠের মাঝখান দিয়ে সরু একটি রাস্তা। ওইখানে একটি বসার জায়গাও আছে। গরমের সময়ে ওই খানটাতে বসার মজাই আলাদা। প্রচুর বাতাস, প্রাণ জুড়িয়ে যায়। আজ ওখানটাতে গিয়ে দেখি ছোট ছোট অনেকগুলো ছেলেপেলে খেলাধুলা করছে। কেউ ঘুড়ি উড়াচ্ছে, কেউ বসে বসে দেখছে আবার কেউ ডিগবাজি খেলছে।
ওরা চিল ঘুড়ি ওড়াচ্ছিল। দুজনের কাছে দুইটা চিল ঘুড়ি ছিল। কিন্তু দুঃখের ব্যাপার হচ্ছে কিছুক্ষণ পরেই একজনের ঘুড়ির সুতা কেটে গেল । অনেক সুতো ছেড়েছিল। টুটার সুতো হওয়ায় বেশি টান লেগে ছিড়ে চলে গেছে। কিন্তু এতে অবশ্য ওদের কোন দুঃখ নেই। চিলে ঘুড়ি বানাতে বেশি সময় লাগে না। দুই তিন পেজ কাগজ, তিন-চারটা শলা আর অল্প কিছু ভাতের আঠা হলেই হয়ে যায়।
যত রকম ঘুড়ি আছে তার মধ্যে সবচেয়ে সহজেই বানানো যায় এই চিলে ঘুড়ি। উড়ানো যায় টুটা সুতো দিয়ে। যদি ছিড়ে চলেও যায় তাহলে বেশি একটা ক্ষতি নেই। মাত্র ৫ টাকার সুতো কিনে অনেকদূর উঠানো যায় ঘুড়ি। আর এই কারনেই ঘুড়ি ছিঁড়ে যাওয়ায় ওদের কোন কষ্ট লাগেনি বরং বেশ মজাই পেয়েছে দেখলাম।
অনেকক্ষণ ছিলাম আমি ওদের সাথে। অনেক মজা করেছি বিকেলটা জুড়ে । মনে হচ্ছিল যেন আমি ছোটবেলায় হারিয়ে গিয়েছি। প্রতিদিনতো অন্যত্র গিয়ে ঘুরে বেড়ানো হয়। কিন্তু বাচ্চাদের সাথে এভাবে সচরাচর মেশা হয় না। আজকে ওদের সাথে খুব মজায় মেতে উঠেছিলাম। ওরা আমার ফোনে ছবি তুলতেও মজা পাচ্ছিলো। সবমিলিয়ে বিকেলটা অসাধারণ ছিলো। ওদের মতো নিষ্পাপ বাচ্চাদের সাথে সময় কাটালে কিছু সময়ের জন্য হারিয়েছে যেতে হয়।
যাইহোক, মাঠের মধ্যে প্রাণ জুড়ানো বাতাস, বাচ্চাদের সাথে খুনসুটি, ছোটবেলায় হারিয়ে যাওয়া। সব মিলিয়ে বিকেলটা অসাধারণ ছিল। এখন থেকে মাঝেমধ্যেই মাঠের মধ্যে গিয়ে বাচ্চাদের সাথে এরকম সুন্দর সময় কাটাতে হবে। আর যদি আমি নিজেও একটা ঘুড়ি বানাতে পারি তাহলে মাঝেমধ্যে ঘুড়ি উড়াবো চিন্তা করেছি। যাইহোক শেয়ার করব সবকিছু। আজ এ পর্যন্তই। বিদায় নিচ্ছি, দেখা হবে আবার নতুন কোন বিষয় নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকবেন , সুস্থ থাকবেন। আল্লাহ্ হাফেজ।
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
আপনার পোস্ট পড়তে পড়তে সেই সোনালী অতীতে হারিয়ে গিয়েছিলাম। খুবই মজার সময় পার করেছি। চাল তুলে রান্না করার বিষয়টা অনেক মিস করি। আমাদের এলাকায় এইটা কে চড়ইভাতি বলে। ধন্যবাদ ভাই সেই স্মৃতিগুলো মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য।
আমরা মাঝেমধ্যেই এরকম চাল তুলে পিকনিক করতাম সবাই।
এই জীবনের কত পরিবর্তন শৈশব-কৈশোর-যৌবন পেরিয়ে যাচ্ছে আরো অনেকগুলো ধাপ পেরোতে হবে। এভাবেই শেষ হয়ে যাবে মানুষের জীবন। আপনার শৈশবে ফিরে যাওয়ার স্মৃতিবিজড়িত গল্প যা আমার শৈশবের অতীতের দিনগুলোর কথা মনে করিয়ে দেয় ।অনেক ভালো লাগলো ভাইয়া শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।
আহা জীবন-সবুজ বাংলা রুপ যেমন
আহা জীবন- শৈশবের আনন্দ যেমন
সত্যি চমৎকার কিছু সময় দারুণভাবে উপভোগ করেছেন, এটা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই আর ফটোগ্রাফিগুলো বরবরের মতো দারুণ ছিলো। ধন্যবাদ
আমরা যত বড় হয় ততই শহুরে জীবনযাপনের সাথে অভ্যস্থ হয়ে যাই। কিন্তু ছোট বেলার সে দিনগুলো যখন মনে পড়ে তখন সত্যিই আবার হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে সেই শৈশবে।
সব মিলিয়ে সময়টা ভালোই উপভোগ করেছেন মনে হচ্ছে। আসলে শিশুদের সঙ্গে মেশার আনন্দই আলাদা। শৈশবে তো আর কোনোভাবেই ফিরে যাওয়া সম্ভব না কিন্তু চাইলেই শিশুদের সঙ্গে শৈশবের কিছু আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয়া সম্ভব। আমারও মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে আবার যদি শৈশবে ফিরে যাওয়া সম্ভব হতো কোনভাবে তাহলে কতই না মজা হত
জি ভাই শৈশব তো আর চাইলেও ফিরে পাওয়া যাবে না । তবে ওদের শৈশবে নিজেকে খুঁজে পেতে ভালই লাগে।
ভাইয়ার বেশ ভালো একটা সময় কাটিয়েছেন আপনি। ছোট ছোট শিশুদের সাথে। তার সাথে আমরাও শৈশবে ফিরে গেলাম। ভাইয়া শৈশবে ফিরে যাওয়ার মত কোন উপায় নেই কিন্তু শৈশবের অনুভূতি গুলো অনুভব করতে পারি সর্বদা। গ্রামীন পরিবেশের মধ্যে সুন্দর সময় পার করেছেন ভাইজান। ধন্যবাদ আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।
আপনার পোস্টটি পড়ে কিছুক্ষণের জন্য শৈশবে হারিয়ে যাচ্ছিলাম। সত্যিই এসব অনুভূতি মনে পরলে কেমন হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে ☺️
যাক আপনার অনেক গুলো চমৎকার পরিকল্পনা কথা জানলাম। অপেক্ষায় রইলাম পরবর্তী পোস্টগুলোর জন্য 💌
সত্যি এখন যে গরম পড়ছে তাতে করে থাকাটাই মুশকিল। আপনিতো দেখছি একদম সবুজ পরিবেশে হাঁটতে বের হলেন। আর ছোট বাচ্চাদের খেলাধুলা দেখতে এমনিতেই ভীষণ ভালো লাগে। নিজের ছোটবেলার কথা মনে পড়ে যায়। ছোট বাচ্চাদের ফটোগ্রাফি গুলো বেশ ভালো লেগেছে। ওরা নিশ্চয়ই ঘুড়ি উড়াতে অনেক মজা পাচ্ছিল। তার সাথে আপনার সময় কাটানোর বেশ ভালো লেগেছে। আমাদের মাঝে মুহূর্তটার শেয়ার করার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
জি ঠিক বলেছেন। ওদের সাথে কাটানো সময় গুলো আসলেই অনেক সুন্দর হয়ে যায়।
সত্যি ভাইয়া আজকে আপনার পোস্ট দেখে এবং দারুন সব ফটোগ্রাফিগুলো দেখে ছেলেবেলার কথা মনে পড়ে গেল। আসলে এভাবে ছেলেবেলায় সবার সাথে হাসি আনন্দে কেটে যেত দিন। বন্ধুবান্ধব সবাই যেন আজ হারিয়ে গেছে। সময়ের সাথে সাথে আমাদের জীবনের পরিবর্তন হয়েছে। তবে ছেলেবেলাকে খুবই মনে পড়ে। আর আপনার লেখাগুলো যখন আমি পড়েছিলাম তখন বারবার সেই স্মৃতিগুলো মনে পড়ছিল। অনেক সুন্দর ভাবে আপনি এই পোস্ট আমাদের মাঝে উপস্থাপন করেছেন এ জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি ভাইয়া। সেই সাথে আপনার জন্য শুভকামনা ও ভালোবাসা রইলো। ♥️♥️♥️♥️
আবারো যদি আমরা সেই শৈশবে হারিয়ে যেতে পারতাম তাহলে কতই না ভালো হতো।
শৈশবে কাটানো সুন্দর মুহূর্ত গুলো যেন আবার পুনরায় মনে করিয়ে দিলেন ভাই। তবে লুঙ্গি পড়ে এক হাত দিয়ে লুঙ্গি উচু করে ধরে পেছনের দুষ্টু ছেলেটির সাথে সেলফি নেওয়া টা বেশ সুন্দর ছিল।
হাহাহাহা৷ 😆
আসলে আমি লেখাটি যখন পড়ছিলান তখন ভাবছিলাম এই শহরের বাচ্চাগুলোর সাথে গ্রামের বাচ্চাগুলোর কতোটা তফাৎ!
পুরোটাই আনন্দের!
শহরের বাচ্চাগুলো সম্পূর্ণই বন্দি।প্রাণটা জুড়িয়ে গেলো এদের দেখেই।
ঠিকই বলেছেন। শহরের বাচ্চা আর গ্রামের বাচ্চাদের মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য আছে। গ্রামের বাচ্চারা প্রচুর স্বাধীনতা পায় আর যেটা সারা জীবন গোল্ডেন সময় হিসেবে স্মৃতিতে রয়ে যায়।
আমরাও পেলাম না আসলে।