"আমার বাংলা ব্লগ" প্রতিযোগিতা - ৪৩ || শেয়ার করো তোমার প্রথম অনলাইন ইনকামের অভিজ্ঞতা।
আসসালামু আলাইকুম।
আজকে আমি আমার বাংলা ব্লগ প্রতিযোগিতা-৪৩ এ অংশ গ্রহণ করছি। আমি এখন স্টিমিটে আছি কিন্তু স্টিমিট থেকে আমার প্রথম ইনকাম ছিলো না। আমার প্রথম ইনকামের গল্প আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করবো।
image source & credit: copyright & royalty free PIXABAY
সাল ২০১৫, অনলাইন ইনকামের প্রতি প্রথম আগ্রহ জন্ম নেয়। বাড়ি থেকে টাকা নেওয়ার থেকে হাত খরচের জন্য নিজে ইনকাম করার প্রতি একটা আগ্রহ তৈরি হয়। আমি যেখানে থাকতাম সেখানে আমার দুটো বড় ভাই ছিলো। এদের মধ্যে যে সবচেয়ে বড় ছিল তার নাম ছিল আরিফুল ইসলাম। আরিফ ভাই আমাদেরকে খুবই ভালোবাসতেন। আমি ওই সময়ে কম্পিউটার, ইন্টারনেট সম্পর্কেও খুবই কম ধারণা রাখতাম। আরিফ ভাই কম্পিউটার সম্পর্কে বিভিন্ন বিষয়ে শিখাতেন মাঝেমধ্যেই। ওই সময়ে দেখতাম আরিফ ভাই অনলাইনে কিছু একটা কাজ করে। উনি গ্রাফিক্স ডিজাইন, অ্যাপস রিভিউ ইত্যাদি কাজ করতেন।
একটা সময়ে গিয়ে আমি আর আরেক ভাই লিটন আহমেদ কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করি আরিফ ভাইয়ের কাছে। আরিফ ভাই আমাদের আগ্রহ দেখে বেশ খুশি হন। তিনি আমাদের অ্যাপস রিভিউ এর কাজ শিখিয়ে দেন। এই অ্যাপস রিভিউ হচ্ছে মেইনলি Apple এর অ্যাপ্লিকেশনে পজিটিভ রিভিউ দেওয়া। আর এই কাজগুলো আমরা করতাম Fiverr মার্কেটপ্লেসে। দুই ধরনের কাজই ছিলো। ios অ্যাপ রিভিউ এবং এন্ড্রয়েড অ্যাপস রিভিউ। প্রথমে ফাইবারে একাউন্ট খুলে গিগ দিতে হতো। প্রথম অবস্থায় সবটা আরিফ ভাই করে দিতেন। আর আমরা বিষয়গুলো দেখে শিখে রাখতাম। তো আমরা দুজন আরিফ ভাইয়ের দেখানো পদ্ধতি অনুযায়ী গিগ দিয়ে রেখে দিয়েছিলাম। অপেক্ষায় ছিলাম কখন কাজ আসবে।
ওই সময়ে তোলা আরিফ ভাইয়ের সাথে একটি ছবি
হঠাৎ কোন একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে আমার মেইল চেক দিচ্ছিলাম। দেখলাম পাঁচ ডলারের একটি কাজ এসেছে। সম্ভবত ৪/৫ টা অ্যাপস রিভিউ দিতে হবে। মানে একটা অ্যাপসেই চার পাঁচটা রিভিউ দিতে হবে। আর অবশ্যই সেগুলো ফাইভ স্টার রেটিং সহ। সেদিন মেইলটা পেয়ে দ্রুত আরিফ ভাইয়ের কাছে নিয়ে গিয়ে দেখাইলাম। আরিফ ভাই বলল এইতো কাজ এসেছে, এখন কাজ করতে হবে। শুরু করে দিলাম কাজ করা। আগে থেকেই অভিজ্ঞতা ছিল যেহেতু আরিফ ভাই থেকে মাঝেমধ্যেই কাজ দেখে নিতাম। মাঝেমধ্যে টুকিটাকি হেল্প ও করতাম আমাদের ডিভাইস দিয়ে। আমার সাথে আরেকটি যে বড় ভাই ছিলো উনি অবশ্য আমার আগেই কাজ পেয়েছিলেন। যাইহোক এরপর আমি কাজ স্টার্ট করি, আমার অনলাইনে প্রথম কাজ।
খুব সুক্ষভাবে যত্ন সহকারে কাজগুলো শেষ করে ডেলিভারি দিই। ফাইবার এক ডলার কেটে নিয়ে চার ডলার আমার একাউন্টে জমা করে দেয়। বাইয়ার কাজ পেয়ে খুশি। আমাকে সম্ভবত ফাইভ স্টার রেটিং দিয়েছিলেন। আরিফ ভাই মাঝে মধ্যে বলতেন এমন কিছু বাইয়ার ধরতে হবে যারা ফাইবারের বাহিরে থেকেই কাজ দেবে। এতে ফাইবার এক্সট্রা টুয়েন্টি পার্সেন্ট কেটে নিতে পারবে না। আর এর জন্য অবশ্যই কাজের মাধ্যমে বাইয়ারকে খুশি করতে হবে। প্রথম কাজ শেষ করার পর আমি অনেক আনন্দে ছিলাম। আর আমি অপেক্ষা করছিলাম পরবর্তীকাজ কখন আসবে। যত বেশি কাজ করা যায় তত বেশি কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। আর ভালো কাজের মাধ্যমে ফাইভ স্টার রেটিং পেলে সেই একাউন্টে বেশি বেশি কাজ আসে।
আমি এবং আরিফ ভাই নদীর পারে দাড়িয়ে।
তো এরপরে আরো একদিন এরকম সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে মেইল চেক করে দেখি আরও একটা অর্ডার পেয়েছি। সেটাও ভালোভাবে ডেলিভারি দিয়ে দিয়েছিলাম কাজ শেষ করে। এরপরে একদিন সকালবেলা আমি এক্কেবারে চমকে যাই একটা অর্ডার পেয়ে। অর্ডারটি ছিল ২০ ডলারের। ২০ টি রিভিউ দেয়ার কথা ছিল একটি অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ্লিকেশনে। এই অর্ডারটি পেয়ে আমি প্রথমেই দৌড়ে গিয়েছিলাম আরিফ ভাইকে দেখাতে। আমি খুবই এক্সাইটেড ছিলাম। যাইহোক, যথারীতি আমি চেষ্টা করছিলাম ভালোভাবে কাজটি শেষ করার। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে আমি যখন কাজটি ডেলিভারি দেই তখন বাইয়ার আমাকে আবার নক দিয়ে বলল কাজ ওঠেনি। আমি যাচাই করে দেখলাম বিষয়টি সত্যিই। উনি মিথ্যে বলছে না। আমি দুঃখ প্রকাশ করলাম এবং বললাম আপনার যেই কাজটি আমি রিসিভ করেছিলাম সেটি আমি আবার কমপ্লিট করে দিব। যদিও অলরেডি উনি পেমেন্ট দিয়ে দিয়েছিলেন আমাকে। আর উনি লিখেছিলেন আমি যদি এই কাজগুলো আবারো ভালোভাবে করে দিতে পারি তাহলে পরবর্তীতে উনি আরো কাজ দিবেন। আর এভাবেই আমি আস্তে আস্তে ফাইবারে বেশ একটিভ হয়ে যাই। যদিও পরবর্তীতে বেশিদিন কাজ করা হয়নি।
একটা সময় গিয়ে অ্যাপস রিভিউ এর মার্কেট টা নষ্ট হয়ে যায়। তখন কাজ আসতো না। আর প্রচুর অ্যাকাউন্ট নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল। অন্যান্য যাদের হাই রেটিং এর একাউন্ট ছিলো তারা ছোট একাউন্টগুলোকে রিপোর্ট করে নষ্ট করে দিত। পরবর্তীতে জানতে পেরেছিলাম এগুলো বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সারেরা বেশি করে কারন তারা যেন বেশি বেশি কাজ পায় অন্যরা যেন মার্কেট দখল না করতে পারে। যাইহোক এরপর ফাইবার ছেড়ে দিতে হয়েছিল।
আরিফ ভাই
অনলাইনের এটাই ছিল আমার প্রথম ইনকাম। একদিন আমার টাকার প্রয়োজন ছিল আর সেদিন আমি টাকাটা ওঠানো চেষ্টা করছিলাম। আরিফ ভাই আমাকে হেল্প করেছিলেন। উনার মাস্টার কার্ড ছিল। উনার মাস্টার কার্ড আমার একাউন্টে অ্যাড করে ডলার ট্রান্সফার করেছিলেন। এরপর আমরা সবাই একসাথে গিয়ে একটা এটিএম বুথ থেকে ৫০০ টাকা উঠিয়েছিলাম। এই টাকা উঠানোর মুহূর্ত টা আমার কাছে অনেক বেশি সুন্দর ছিলো। ওই দিনটির কথা মনে থাকবে সারা জীবন। অনেক খুশি হয়েছিলাম সেদিন প্রথমে ইনকাম উঠাতে পেরে।
এটাই ছিলো আমার অনলাইন থেকে প্রথম ইনকামের গল্প। এটা আগে কখনো অনলাইনে আমি শেয়ার করিনি আজ প্রথম আপনার সাথে শেয়ার করলাম। আমার গল্পটি কার কাছে কেমন লাগবে জানিনা তবে আমার অনুভূতিটা আমার কাছে সেরা ছিল। আজ এখানেই বিদায় নিচ্ছি। আল্লাহ হাফেজ।
VOTE @bangla.witness as witness
OR
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
দারুন একটি রিভিউ ছিল ভাইয়া পড়ে অনেক বেশি অনুপ্রেরণা পেয়েছি। আসলে ফাইবারে কাজ পাওয়া খুবই কষ্টের। আমিও অনেক গুলো গিগ দিয়েছিলাম। তাছাড়া প্রতিদিন চেক করতাম কাজ আসছে কিনা। আসলে এগুলো অনেক ধৈর্যের ব্যাপার তাই আর ট্রাই করিনি। যাক আপনি অবশেষে ৫০০০ টাকা তুলতে পেরেছিলেন সেটা হচ্ছে অনেক আনন্দের সংবাদ। খুবই ভালো লাগলো আপনার অনুভূতি পড়ে। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
Fiverr থেকে আপনার প্রথম ইনকাম বাহ। আসলেই ভাই এই দিন গুলো ভোলার নয়। মনে থাকবে সব সময়। ফাইভারে রিভিউ এর কাজ আমিও করেছিলাম। কিন্তু কিছু বাংলাদেশীর জন্য এই মার্কেট প্লেস এর অবস্থা খারাপ হয়ে গিয়েছে।
ভাইয়া আপনার পোস্ট পড়ে অনেক ভালো লাগল। সত্যি ভাইয়া সবাই চায় বাবা মার কাছ থেকে টাকা না দিয়ে নিজে যদি কিছু ইনকাম করা যায় তাহলে অনেক ভালো লাগে। আর নিজের প্রথম ইনকামের টাকা তুলতে পারা সত্যি অনেক আনন্দের। তখনকারের ৫০০ টাকা এখন লক্ষ টাকার চেয়ে বেশি। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া পোস্ট টি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
ঠিক বলেছেন আপু। ধন্যবাদ।
আপনার অনলাইনে প্রথম ইনকামের পথ এবং তার অনুভূতি পড়ে খুবই ভালো লাগলো সুমন ভাই। বেশ কষ্ট করেই ইনকাম করেছেন এবং তখন এভাবে আয় করা টাকা তোলার প্রসেসটাও এখনকার মতোন এত সহজ ছিলো না মনে হচ্ছে। আপনার জন্য শুভকামনা। তবে ভাইয়া, প্রথম লাইনেই একটা সংখ্যা উলোটপালোট হয়ে গিয়েছে, প্রতিযোগিতা- ৪৩ না হয়ে ৩৪ হয়ে গিয়েছে।
আসলেই। তখন টাকা তোলা অনেক কঠিন ছিলো।
তাহলে অনলাইন ইনকাম শুরু করেছেন আরিফ ভাইয়ের মাঝে দিয়েই আর আপনার প্রথম ইনকাম ছিল চার ডলার। গল্পটা পড়ে বেশ ভালো লাগলো তবে এখন তো বেশ বেশি কামান 😆
হুম আরিফ ভাইয়ের মাধ্যমে শিখেছিলাম কাজ।
এমন ছেলে কিন্তু বেশ কমই পাওয়া যায় যারা পরিবারের কাছ হতে হাত খরচ নিতে সংকোচ বোধ করে। আমি কিন্তু বেশ ভাগ্যবান যে আরিফ ভাইয়ের মত এমন একজন বড় ভাই পেয়েছেন যারা উপলক্ষ্যে ফাইভারে এ্যাপস্ রিভিউ করার কাজ পেয়েছিলেন। ভাইয়া প্রতিযোগিতায় আপনাকে দেখে বেশ ভালোই লাগলো। শুভ কামনা রইল।
ধন্যবাদ আপু সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।
প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার জন্য প্রথমে আপনাকে জানাই আমার পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। ভাই সত্যি আপনার প্রথম অনলাইন থেকে ইনকামের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন পড়ে বেশ ভালো লেগেছে। আপনি প্রথম আরিফ ভাইয়ের কাছ থেকে অনলাইনে কাজ শিখেছেন জেনে বেশ ভালো লাগলো। যেদিন সকাল বেলায় ঘুম থেকে উঠে আপনি মোবাইল চেক দিয়ে দেখলেন আপনার মোবাইলে পাঁচ ডলারের একটি কাজ এসেছে তখন আপনার অনুভূতি কেমন ছিল ভাই। আসলে ভাই ছাত্র জীবনে সবাই চেষ্টা করে নিজে অনলাইন থেকে কিছু ইনকাম করে নিজের হাত খরচে নিজের চালানোর জন্য। ধন্যবাদ ভাই এত সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য।
আপনার প্রথম অনলাইন ইনকামে আরিফ ভাইয়ের বেশ ভালো একটা ভূমিকা ছিল। আপনার জার্নিটা আমার বেশ ভালো লেগেছে। পরোক্ষভাবে আমারও অনলাইন ইনকামের শুরু হয় ফাইবারের মাধ্যমে। ধন্যবাদ ভাই আপনার অভিজ্ঞতা টা আমাদের সঙ্গে শেয়ার করে নেওয়ার জন্য।।
প্রথম ইনকামের অনুভূতি গুলো পড়ে ভীষণ ভালো লাগলো। একদমই ঠিক বলেছেন ভাইয়া নিজে কাজ করে হাতখরচ চালানোর মজাই আলাদা। আপনার আরিফ ভাইয়া আপনাকে অনেক হেল্প করেছেন জেনে খুশি হলাম। আপনার লেখা গুলো পড়ে বুঝতে পারছি অনেক আবেগ নিয়ে লেখা গুলো লিখেছেন। আপনার জন্য শুভ কামনা রইল ভাইয়া।
আপনার সেই বড় ভাই অর্থাৎ আরিফ ভাইয়ের মাধ্যমে আপনি অনলাইন জগতে প্রবেশ করেন জেনে সত্যি ভালো লাগলো। তবে ফ্রিল্যান্সাররা অন্যান্য ছোট ছোট আইডি গুলো নষ্ট করে দিয়েছে এটা শুনে সত্যিই খারাপ লেগেছে। আসলে মানুষ স্বার্থের জন্য অনেকটা নিচে নামে। ভাইয়া আপনার অভিজ্ঞতার কথা জেনে সত্যি অনেক ভালো লাগলো। আরিফ ভাইয়ের মত একজন মানুষ পাশে ছিল বলেই আপনি সেই জগৎটার সাথে পরিচিত হতে পেরেছিলেন।